অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার পরবর্তী কার্যক্রম।
![]() |
---|
নমস্কার বন্ধুরা,
মোবাইল হাতে নিয়ে গ্যালারি খুলতেই স্মৃতি জড়িত কয়েকটি ছবি দেখেই মনটা খারাপ হয়ে গেল। এই তো দুই দিনের পৃথিবী তবুও কতোই না ঝগড়া বিবাদ। আমরা সকলেই এটা জানি কিন্তু তারপরেও যেন অজ্ঞানতার পরিচয় দিই।
আমার আজকের লেখাটি আমার জ্যাঠাবাবুর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার একটি পর্বকে কেন্দ্র করে। আমি আগেও বহুবার এই জ্যাঠাবাবুর কথা আমার বিভিন্ন লেখাতে উল্লেখ করেছি। দুর্ভাগ্যবশত জ্যাঠাবাবুর মৃত্যুর পরে ছবিটা ও তুলতে পারিনি। ঐ অবস্থায় ছবি তোলার কোনো মানসিক অবস্থাই ছিল না।
![]() |
---|
এই রীতি বংশ পরম্পরায় আমরা পালন করে আসছি। যেহেতু, আমার জ্যাঠাবাবুর কোনো সন্তান নেই তাই অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সকল কাজই আমার এই ছোটভাই করছিল। এটা ছিল জ্যাঠাবাবুর মৃত্যুর এগারো দিনের ক্রিয়া। প্রকৃতপক্ষে এটাকে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার মধ্যে না ধরলেও হয় তবে আমার কাছে এটা অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার অংশই মনে হয়।
আমরা আরো একটা রীতি অনুসরণ করি সেইটা হলো যারা অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াতে স্ব-শরীরে অংশগ্রহণ করেন তাঁদেরকে আমিষ খাওয়ানোর আগ পর্যন্ত মাছ খাই না। এটা অনেককেই দেখেছি বলতে যে এটা নাকি কুসংস্কার। তবে তাদের উদ্দেশ্যে আমার অভিমত যে এটা একদমই ভুল ধারণা। কারণ আমাদের নিকট আমাদের মা-বাবাই আমাদের প্রথম সৃষ্টিকর্তা।
যেখান শুধুমাত্র বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে আমরা যেখানে ঈশ্বরের আরাধনার জন্য উপোস করি সেখানে মা-বাবার উদ্দেশ্যে করলে তো নেতিবাচক কিছু হতেই পারে না। যাইহোক, এটা ধর্মীয় একটা গভীর অনুভূতি যেটা আমার মতো অজ্ঞ কারো মাথায় না ঢোকারই কথা। কিন্তু আমি না বুঝলেও অনেক রীতিনীতি মেনে চলার চেষ্টা করি।
![]() |
---|
এই জ্যাঠাবাবু আসলে আমাদের বংশীয় নন তবে ছোটবেলা থেকে আমার এই বাড়িতে যাতায়াত অনেক বেশি। অন্যদিকে এই জ্যাঠাবাবুরা পাঁচ ভাই এবং বড় ভাইয়ের এক কন্যা সন্তান ছিল অর্থাৎ সম্পর্কে আমার দিদি। এই দিদির, বাবা-মা ভারতে বসবাস করতো ঐ সময়ে। আমি একদমই ছোট ছিলাম, এই দিদিই ছিলেন আমার প্রথম টিচার।
তিনি, আমার দেখা একজন সেরা শিক্ষিকা ছিলেন। কারণ আমি এতোটাই অস্থির প্রকৃতির ছিলাম তা স্বত্ত্বেও দিদি কখনো আমাকে বকতেনই না। এই কারণে দিদির আসেপাশেই বেশি সময় অতিবাহিত করতাম। এরপর দিদিও ভারতে চলে গেলেন তখন ঐ বাড়িতে কোনো শিশুই ছিল না। এক কথায় সম্পূর্ণ বাড়িতেই আমার একটা কর্তৃত্ব ছিল বলা যায়। এ কারণেই ঐ বাড়ির সকলের সাথে একটা অন্যরকম আত্মিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। যাইহোক, বলতে বলতে লেখার মূল্য বিষয় থেকে একটু বাইরেই চলে গিয়েছি।
একাদশার মন্ত্র শেষ কিন্তু আমিষ খাওয়া বন্ধ। ১৩ম দিনে কাঠুরিয়াদের(যারা অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াতে অংশগ্রহণ করে) নিমন্ত্রণ করা হয়েছিল আমিষ আহারের জন্য। আমি সন্ধ্যায় পৌঁছে ভাই-বোনদের সাথে আড্ডা এবং রান্নার দিকে মাঝে মাঝে নজর দিচ্ছিলাম।
![]() |
---|
![]() |
---|
যেহেতু, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার প্রথম পর্ব শেষ হওয়ার পরে ১১/১৩দিন অবধি আমিষ খাওয়া বন্ধ তাই একটু অন্যরকম অনুভূতি ঐ সময়ে কাজ করে। যেহেতু, শিশুরা তো আর এতো কিছু বোঝে না। ২দিন পার হতে না হতেই দেখা যায় আমিষের বায়না শুরু করে।
যাইহোক, ১৩তম দিনে কাঠুরিয়াদের সাথে কারে সকলেই আমিষ আহার গ্রহণ করা হয়েছিল। পাশাপাশি, কাঠুরিয়াদের আবার বস্ত্র দান করতে হয়। আমরা সেই ব্যবস্থা ও করেছিলাম। বর্তমানে উঠোনে বসে খাওয়ার রেওয়াজ যেন দেখাই যায় না। কিছু ঐ রাতে যেন সেই শৈশবের সময়কার দিনে ফিরে গিয়েছিলাম। সকলের আহার শেষ হতেই হাতে হাতে বস্ত্র তুলে নিয়েছিলাম। এভাবেই ঐ দিনের কার্যক্রম সমাপ্ত করেছিলাম।
আমার আজকের লেখাটি এখানেই শেষ করছি। সকলে ভালো থাকুন, সুস্থ্য থাকুন।
পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেছে আপনার ব্যথা পাব যেটা জানতে পেরে আসলে বেশ খারাপ লাগলো।অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার পরের কার্যক্রম গুলো আপনি আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন আসলে এই বিষয়গুলো সম্পর্কে আমার তেমন একটা ধারণা নেই তবে আপনার জ্যাঠা বাবুর জন্য দোয়া করি তিনি যেন পরকালে ভালো থাকেন।