পরীক্ষার প্রথম দিনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি
নমস্কার বন্ধুরা। আপনারা সকলে কেমন আছেন? আশা করছি সকলেই ভালো আছেন। আজকে আপনাদের সাথে নতুন একটি ব্লগ শেয়ার করবো।
আপনারা যারা নিয়মিত আমার পোস্ট করেন তারা জানেন যে আমি ডি.এল.এড (Diploma in Elementary Education) করছি। সেই কোর্সটির ফাইনাল পরীক্ষা কয়েকদিন আগে শেষ হলো। সেই পরীক্ষার কথাও আপনাদের জানিয়েছিলাম। সেই সাথে পরীক্ষার কারণে বেশ কয়েকদিন আপনাদের সাথে কোন ব্লগ শেয়ার করাও হয়নি। আজকে আমি আপনাদের সাথে সেই পরীক্ষার প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা শেয়ার করব। আশা করছি আপনাদের সকলের ভালো লাগবে।
তবে পরীক্ষার প্রথম দিনের পরিস্থিতি খুব একটা শৃঙ্খলাবদ্ধ ছিল না। আমাদের পরীক্ষা শুরু হয়েছিল বারোটা থেকে। সেই মতো আমরা হাতে সময় নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলাম। আমাদের সিট পড়েছিল রানাঘাট ব্রজগোলা গার্লস হাই স্কুলে। আমাদের বাড়ি থেকে বাইকে করে স্টেশন যেতে সময় লাগে ১৬-১৮ মিনিট মতো। তবে সব দিন সমান সময় লাগে না। রাস্তায় জ্যাম থাকলে সময়টা আরো বেশি লেগে যায়। স্টেশনে গিয়ে টিকিট কেটে ট্রেনে উঠে বসে ছিলাম। রানাঘাট আমাদের শহর থেকে ট্রেনে করে ৩০ মিনিটের রাস্তা।
ট্রেন থেকে নেমে ওভারব্রিজ পেরিয়ে ১০-১৫ মিনিট পায়ে হেঁটে আমরা স্কুলে পৌঁছেছিলাম। অনেকে টোটো কিংবা রিক্সা করেও গিয়েছিল। তবে হাতে সময় থাকায় আমরা পায়ে হেঁটে গিয়েছিলাম। প্রথম দিন স্কুল খুঁজে পেতে একটু সমস্যা হচ্ছিল। খানিকটা গুগল ম্যাপের সাহায্য নিয়ে, আর রাস্তার লোকজনকে জিজ্ঞাসা করে আমরা অবশেষে স্কুলের কাছে এসে পৌঁছেছিলাম। আমাদের হাতে তখনো অনেকটা সময় ছিল। প্রথম দিনের পরীক্ষা তাই টেনশন তো একটু ছিলোই। তবে সবার প্রথমে আমরা খাবার খেয়ে নিয়েছিলাম কারণ আসার সময় আমি বাড়ি থেকে কোনো খাবার খেয়ে আসিনি, আমি প্রতিদিনই সঙ্গে করে খাবার নিয়ে যেতাম। সেখানে পৌঁছে আগে খেয়ে নিতাম।
খাওয়া শেষ হলে আমরা সবাই বই বের করে রিভিশন দিয়ে নিতাম একবার। তবে প্রথম দিন আমরা এই রিভিশন দিতে গিয়ে অনেকের সময় লাগিয়ে ফেলেছিলাম। যার ফলে স্কুল ক্যাম্পাসে ঢুকতে ঢুকতে আমাদের অনেকটা সময় লেগে গিয়েছিল। আমরা যখন স্কুল ক্যাম্পাসে ঢুকি তখন ঘড়িতে সময় ১১.৩৭।
সেখানে গিয়ে দেখলাম শুধু আমরা নই। বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রীই ঐ সময়ে স্কুল ক্যাম্পাসে ঢুকেছে। আমাদের পরীক্ষার রুমে পাঠানোর আগে ওরা চেকিং করে, ফ্রিস্কিং করে। ফলত একটা লম্বা লাইন পড়ে গিয়েছিল। লাইন দেখেই আমার টেনশন আরো তিনগুণ বেড়ে গিয়েছিল। সে লাইন যেন কিছুতেই শেষ হচ্ছিল না। এদিকে ১১.৪৫ এর ঘন্টা পড়ে গেল। তখন সমস্ত টিচাররা খাতা ও প্রশ্নপত্র নিয়ে প্রতিটি রুমে চলে গিয়েছিল। তবে আমাদের লাইন কিছুতেই এগোচ্ছিল না। টেনশন ধীরে ধীরে আরো বাড়তে লাগলো। দেখতে দেখতে ১২ কার ঘন্টা পড়ে গেল। মানে আমাদের লেখা শুরু করার ঘন্টা পড়ে গেল। তবে তখনো আমরা লাইনে দাঁড়িয়ে।
অবশেষে আর লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব হলো না। কারণ লেখার সময় শুরু হয়ে গেছে। এখনো যদি লাইনে দাঁড়িয়ে থাকি তাহলে লেখার টাইম পাব না বেশিক্ষণ। তাই সবাই লাইন থেকে বেরিয়ে হুড়োহুড়ি করে সামনের দিকে এগোতে লাগলো। আর চেকিং করানো সম্ভব ছিল না কারণ হাতে আর সময় ছিল না। তবে ফ্রিস্কিং না করালে,( মানে অ্যাডমিট কার্ড ও আইডেন্টিটি কার্ড চেক করে অ্যাডমিট কার্ডের ওপর একটা স্টিকার বসানো) কোন মতেই টিচাররা পরীক্ষার হলে ঢুকতে দিচ্ছিল না।
তাই একপ্রকার লড়াই করে, ভিড় ঠেলে সামনের দিকে এগিয়ে গিয়ে, অনেক কষ্টে একটা স্টিকার জোগাড় করে নিয়েছিলাম যারা স্টিকার দিচ্ছিল তাদের কাছ থেকে। তারপর আবার সেই ভিড় ফেলে বাইরে বেরিয়ে এসেছি। এরপর আর কোনো দিকে তাকাইনি।রুদ্ধ শ্বাসে ছুটেছি পরীক্ষার হলের দিকে। তারপর ১২.১০ নাগাদ আমি পরীক্ষার রুমে পৌঁছাই। সেখানে গিয়ে দেখি আমার আগে মোটে দুইজন রুমে এসেছে। বাকি সবাই তখনও নিচে ছিল।
যে ১০ মিনিট লেটে এসেছিলাম, সেই ১০ মিনিটের গ্যাপ আমাকে যেকোনোভাবে পূরণ করতে হতো কারণ শেষে আমাকে অতিরিক্ত সময় তারা দেবে না। তাই আমি খুব স্পিডে লেখা শুরু করেছিলাম। এই প্রসঙ্গে বলে রাখি এত বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির জন্য কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষ একেবারেই দায়ী নয়। কারণ তারা ১০.৩০ মিনিট থেকে গেট খুলে দিয়েছিল। সেই সাথে বারবার অ্যানাউন্স করেছেন। তবে আমরা স্কুল থেকে একটু দূরে সকলে বসে রিভিশন করছিলাম তাই আমরা সেই অ্যানাউন্সমেন্ট শুনতে পাইনি।
তারপর যথাসময়ে পরীক্ষা শেষ হলো। তার মধ্যেই আমি সমস্ত প্রশ্নের উত্তর লিখে ফেলেছিলাম। তারপর পরীক্ষা শেষ হলে আমরা চলে গিয়েছিলাম একটি দোকানে সেখানে গোপাল ঠাকুরের পোশাক পাওয়া যাচ্ছিল। সেই দোকানে সামনেই কাঁচের মধ্যে বেশ কিছু মূর্তি রাখা ছিল। সেগুলো খুব সুন্দর দেখতে লাগছিল।
আজ তাহলে এখানেই শেষ করছি। আগামীকাল আবার অন্য কোনো লেখা নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হব। সকলে ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।*