প্রিয় বান্ধবীর গায়ে হলুদ
নমস্কার বন্ধুরা। আপনারা সকলে কেমন আছেন? আশা করছি সকলেই খুব ভালো আছেন। আজ আবারো চলে এসেছি আপনাদের সাথে নতুন কিছু গল্প শেয়ার করে নেওয়ার জন্য। আশা করছি আপনাদের সকলের ভালো লাগবে।
কয়েকদিন আগের পোস্টেই আমি আমার এক প্রিয় বান্ধবীর মেহেন্দি অনুষ্ঠানের অভিজ্ঞতা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করেছিলাম। আজ চলে এসেছি সেই বান্ধবীটির গায়ে হলুদের দিনের অভিজ্ঞতা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করে নেওয়ার জন্য। আমি আমার আগের পোস্টেই জানিয়েছিলাম এই বান্ধবীটির আমার খুব ছোটবেলার একটি বান্ধবী এবং আমাদের বাড়ির কাছাকাছি বন্ধু বলতে এই একজনই আছে তাই সুখ-দুঃখের গল্পের সঙ্গী একমাত্র এই বান্ধবীটিই ছিল। আর এত কাছের বান্ধবীর বিয়েতে মজা করবো না তা আবার হয় নাকি । যেদিন থেকে জেনেছি ওর বিয়ে পাকা হয়ে গেছে সেদিন থেকেই আমরা দুজন মিলে পরিকল্পনা করতে শুরু করেছিলাম আমরা কবে কোন ড্রেস পরবো।
আমার মামাতুতো, মাসতুতো অনেক ভাই বোন থাকলেও কারোর বিয়েই আমি তেমন উপভোগ করিনি কারণ সব দাদা দিদিরাই আমার থেকে অনেক বড়। আর তাছাড়া স্কুল জীবনে আমি স্কুল কামাই করে ঘুরতে যেতে একেবারেই পছন্দ করতাম না তাই দাদা দিদির বিয়েতেও সারাদিন থাকতে পারতাম না। যার জন্য কারোর বিয়েই আমি কাছ থেকে উপভোগ করিনি। এই ছিল আমার প্রথম উপভোগ করা প্রথম বিয়ে। এই বান্ধবীটির পরিবার যেহেতু অনেক দিনের পরিচিত তাই আমাকেও তারা ফ্যামিলির একটা অংশ হিসাবেই ভাবে। আর যে কোন জায়গায় ইম্পর্টেন্স পেলে সেখানে যেতে সকলেরই ভালো লাগে। এই বান্ধবীটির পুরো বিয়ের সময়কালে বাড়ি প্রত্যেকটা সদস্যই কিন্তু আমাকে যথেষ্ট importance দিয়েছিল। যার ফলে অন্যান্য বান্ধবীরা কতটা ইনজয় করেছে আমি বলতে পারব না তবে আমি কিন্তু খুব খুব মজা করেছি।
আগেও জানিয়েছিলাম আমার এই বান্ধবীটি ছিল বিহারী। ওদের বিয়ের দুই দিন আগে গায়ে হলুদের প্রোগ্রাম থাকে। আমরা হিন্দুরা দেখে এসেছি বিয়ের দিনেই আমাদের মধ্যে গায়ে হলুদ হয়। তবে দুইদিন আগে গায়ে হলুদ হওয়ার ফলে বিয়ের দিনে কিন্তু খানিকটা হলেও ঝামেলা কম থাকে। আমরা হিন্দুরাই জানি একই দিনে দধিমঙ্গল, গায়ে হলুদ ও বিয়ে সব কিছু থাকলে কতটা তাড়াহুড়োর মধ্যে দিনটা কেটে যায়। তাই দুই দিন আগে গায়ে হলুদের প্রোগ্রাম টা আমরাও খুব ভালোভাবে উপভোগ করতে পেরেছিলাম। চলুন আজ আপনাদের সাথে সেই গল্পই শেয়ার করা যাক।
গায়ে হলুদের দিন আমরা দুপুরবেলায় রেডি হয়ে পৌঁছে গিয়েছিলাম বান্ধবীর বাড়ি। পৌঁছে দেখি তখন ও তার সাজা সম্পূর্ণ হয়নি। একজন মেকআপ আর্টিস্ট তখনও তাকে সাজাচ্ছিল। আমরা কয়েকজন তাড়াতাড়ি পৌঁছে গিয়েছিলাম। তারপর বান্ধবীর রেডি হতে হতে আমরা অনেক গল্প করেছিলাম এবং সেই সাথে বেশি কিছু ফটোও তুলেছিলাম।
এরপর বান্ধবী রেডি হয়ে নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে বসেছিল যেখানে ওদের কিছু রিচুয়াল ছিল। যেহেতু আমার এই প্রথম কোন বিহারী বিয়ে দেখা তাই এই সমস্ত রিচুয়াল গুলো আমার কাছে অনেক নতুন ছিল। সমস্ত রিচুয়াল আমি বুঝিও নি। ওদের যেহেতু অনেক রিলেটিভরা বিহারী ভাষায় কথা বলছিল তাই অনেক কথাই আমি বুঝতে পারছিলাম না। যায় হোক, বিয়ে ঠিক হওয়া থেকে শুরু করে গায়ে হলুদ পর্যন্ত কিন্তু আমার কোনো কষ্টই হয়নি বান্ধবীর বিয়ে বান্ধবী চলে যাবে বলে। তবে হঠাৎ করে ওকে কেঁদে উঠতে দেখে আমার এত কষ্ট হয়েছিল আমি হয়তো সেটা লিখে বোঝাতে পারবো না। সেই মূহূর্তেই যেন আমার মনে হলো আমার এত ভরসার জায়গাটা বোধ হয় আর পাবো না। এত সুখ -দুঃখের গল্প করার মানুষটাকে আমি হয়তো আর আগের মতো করে সব সময় চাইলেই পাবো না। এই ভাবনা চিন্তা আসতেই আমিও কেঁদে ফেলেছিলাম। বাকি বান্ধবীরা কেউ কল্পনাও করেনি এত আনন্দ করতে করতে আমি কান্না করে ফেলবো। যাইহোক একটা ইমোশনাল সিচুয়েশন তৈরি হয়েছিল সেই মুহূর্তে।
এরপর গায়ে হলুদের জন্য যে জায়গাটা ডেকোরেট করা হয়েছিল সেখানে ওকে নিয়ে যাওয়া হল ।এরপর শুরু হলো ফটোশুট।ক্যামেরাম্যান বিভিন্ন পোজে ফটো তুলছিল। প্রথমে ফ্যামিলি মেম্বার যারা ছিল তারা সকলে একে একে ওর সাথে ফটো তুলছিল। ওদের বাড়িতে ওদের একটি পোষ্য আছে। ওর নাম এঞ্জেল। বাড়িতে কোন পোষ্য থাকলে তারা অনেক বেশি আদরের হয়। আর সেই আদরের পোষ্যকে ছেড়ে যাওয়াটাও যে কতটা কষ্টের সেটা ওর কান্না দেখে বুঝতে পারছিলাম। এঞ্জেলেরও খুব মন খারাপ ছিল। এঞ্জেল কে সঙ্গে নিয়ে ওরা বেশ কিছু ফটো তুলেছিল।
ফ্যামিলি মেম্বারদের পরেই ডাক পড়লো আমাদের বান্ধবীদের। আমরা সকলে সেখানে গিয়ে অনেক অনেক ফটো তুলেছিলাম। বান্ধবীকে গায়ে হলুদ দিয়ে দিয়েছিলাম। আর তার সাথে বেশ কিছু রিলসও বানানো হয়েছিল। খুবই আনন্দঘন একটা মুহূর্ত ছিল।
তারপর একা একা সকলে হবু কনেকে হলুদ মাখিয়ে দিচ্ছিল। তারপর হলুদ মাখানোর প্রোগ্রাম শেষ হয়ে গেলে আমরা প্রচুর ফটো তুলেছিলাম। আর তার সাথে হাসি, আড্ডা তো ছিলই। তার মধ্যে অল্প কিছু ফটো আপনাদের সাথে শেয়ার করছি। ছবিগুলো দেখলেই আপনারা বুঝতে পারবেন আমরা ঠিক কতটা মজা করেছিলাম।
এখানেই শেষ নয়। এরপর আমরা সকলে চলে গিয়েছিলাম জল ভরতে। ওদের বাড়ি থেকে বেশ অনেকটা দূরে জলঙ্গি নদী বয়ে গেছে। আমরা অনেক মজা করতে করতে, নাচতে নাচতে অতটা পথ হাঁটতে হাঁটতে জল ভরতে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে ঘড়াই করে যে জল আনা হয় সেই জল দিয়েই কনেকে স্নান করানো হয়। সেখানে গিয়েও অনেক মজা হয়েছিল এবং আমরা অনেক ফটো তুলেছিলাম।
আমার এই বান্ধবীটির দুটি নিজের ভাই আছে। ভাই গুলোও খুব ভালো। আমাকে খুব ভালবাসে। ওদের সাথেও অনেক মজা হয়েছিল। ওদের সাথেও অনেক অনেক ফটো তুলেছিলাম।
এই ভাবেই খুব আনন্দের সাথে আমরা আমাদের প্রিয় বান্ধবীর গায়ে হলুদের দিনটি কাটিয়েছিলাম। আজ তাহলে এখানেই শেষ করছি। আগামীকাল আবার অন্য কোন লেখা নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হব। সকলে ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।
আপনার পোস্টটা সত্যিই খুব মিষ্টি এবং স্মরণীয় ছিল! বান্ধবীর গায়ে হলুদের দিনটির বর্ণনা শুনে মনে হলো, আপনি খুবই মজা করেছেন এবং আবেগী মুহূর্তগুলো খুব সুন্দরভাবে ভাগ করেছেন। গায়ে হলুদ, ফটোশুট, হাসি, আড্ডা সবই তো একদিকে আনন্দের আর অন্যদিকে কিছুটা আবেগময়। আর সেই বান্ধবীটির জন্য এত যত্ন এবং ভালোবাসা সত্যিই হৃদয় ছুঁয়ে যায়। আশা করছি, ভবিষ্যতে আরও এমন আনন্দময় মুহূর্তগুলি আপনার জীবনে আসবে। সুস্থ থাকবেন এবং ভালো থাকবেন!
আপনার ফটোগ্রাফি দেখেই বোঝা যাচ্ছে আপনি আপনার বান্ধবীর গায়ে হলুদে কি পরিমানে আনন্দ করেছেন আসলে ঠিক পরিবারের প্রতিটা সদস্য যদি আপনাকে এত বেশি ইম্পর্টেন্স দিয়ে থাকে তাহলে আপনার জায়গা থেকে আমি মনে করি আপনি বেশ ভালো একটা অবস্থানে ছিলেন অসংখ্য ধন্যবাদ আপনার বান্ধবীর বিয়েতে কাটানো আনন্দঘন মুহূর্তটা আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য ভালো থাকবেন।