ভয় কে জয় করার গল্প (প্রথম পর্ব)
নমস্কার বন্ধুরা। আপনারা সকলে কেমন আছেন? আশা করছি সকলেই খুব ভালো আছেন। আমিও খুব ভালো আছি। আজকে আমি আবারো চলে এসেছি আপনাদের সঙ্গে নতুন একটি গল্প শেয়ার করে নেওয়ার জন্য। আশা করছি আপনাদের সকলের ভালো লাগবে।
দিনটা ছিল ২৬শে মে, ২০২২। এই দিনটা আজীবন আমার কাছে একটা স্মরণীয় দিন হিসেবেই গচ্ছিত থাকবে। কেন এই দিনটি আমার কাছে এত গুরুত্বপূর্ণ? কিই বা হয়েছিল সেই দিন! কেন এই দিনটিকে আমি 'ভয় কে জয় করার দিন' হিসাবে চিহ্নিত করছি? সেই সব কিছুই আজ আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করবো।
আমি ছোটো থেকেই ভীষণই ইন্ট্রোভার্ট ছিলাম। কারো সাথে ভালোভাবে কথা বলতে পারতাম না। কিছু বলতে গেলে আগেই ভয় পেয়ে যেতাম। পড়া জানলেও ক্লাসে পড়া বলতে পারতাম না, ভয় পেতাম যদি বাকিরা হাসে। পড়ার ব্যাচেও তাই---- সব লিখতে পারতাম কিন্তু প্রসঙ্গ যখন আসত মুখে বলার তখনই হাত - পা কাঁপত, খুব নার্ভাস হয়ে যেতাম। আর আমি ক্লাসে ফার্স্ট হতাম প্রতি বছর। এটা আমার কাছে খুবই লজ্জার ছিল। আমি মনে মনে খুবই হতাশ হতাম এটা ভেবে যে আমি কেন বাকি দের মতো একটু কনফিডেন্ট হতে পারি না?
এইরকম বহু বছর চলেছে। কিন্তু একটা পর্যায়ে এসে এইটা থেকে ওভারকাম করার একটা তীব্র আকাঙ্খা জন্মে ছিল। কারণ এত পড়াশোনা করে যদি এতটা under confident হই নিজেকে নিয়ে তাহলে বাইরের লোক তো পরের কথা বাড়ির লোকজনও গুরুত্ব দেবে না। তাই আসতে আসতে নিজেকে ইমপ্রুভ করা শুরু করেছিলাম। একেবারেই তো সব কিছু হয় না। আর নিজেকে ইমপ্রুভ করার মতো কাজ তো এত সহজ নয়। এটা ধীর গতিতেই হয়।
তাই বেশ কিছু মানুষকে পর্যবেক্ষণ করে বুঝলাম মানুষের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হল তার কন্ঠ। একটা মানুষের বাচনভঙ্গি তার জীবনকে অনেকটা বদলে দিতে পারে। মানুষ কি বলছে তার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হলো সে সেই কথাটি কিভাবে বলছে। আর এই কাজেই আমি এক্কেবারে অপটু ছিলাম। কারোর সামনে চোখ তুলে কথাই বলতে পারতাম না। কথা বলতে গেলে কথা জড়িয়ে যেত, খুব দ্রুত কথা বলতাম। কখনো কখনো তো নিজের কথা নিজেই বুঝতে পারতাম না। তাই অনেক সময় অনেকের সামনে খুব লজ্জায় পড়তে হতো। জীবনে একটুও কনফিডেন্স ছিল না। এতটাই আন্ডার কনফিডেন্ট ছিলাম যে কেউ যদি জোরপূর্বক বলে সূর্য পশ্চিম দিকে ওঠে আমি হয়তো সেটাই বিশ্বাস করে নিতাম। আর সবচেয়ে বড় কথা হল আমি ফোনে একদম কথা বলতে পারতাম না। খুবই লজ্জা পেতাম। এমনকি স্যারদের সাথে ফোনে কোনো কিছু জানার থাকলেও হয় মা কে নয়তো দাদাকে দিয়েই ফোন করাতাম। এই নিয়ে মা আর দাদার কাছে আমাকে ছোটো হতে হয়েছে। যদিও তারাও আমার ভালোই চাইত। এত বড় মেয়ে হয়ে স্যারদের সাথে ঠিক করে কথা বলতে পারেনা---- এটাতে বাড়ির লোকের ভীষণ আপত্তি ছিল।
হতাশাগ্রস্ত আমি |
---|
আর তাছাড়া যখন স্কুল বা কলেজে বা যেকোনো পড়ার ব্যাচে কোন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হতো তখন প্রত্যেকে কোনো না কোনো ইভেন্টে অংশগ্রহণ করতো। কিন্তু আমার এমন কোন স্কিল ছিল না যাতে আমি কোনো ইভেন্টে পার্টিসিপেট করতে পারি। তাই মনে মনে খুবই হীনমন্যতায় ভুগতাম।
মূলত কলেজ লাইফ থেকে নিজেকে ইমপ্রুভ করার কাজ শুরু করি। এইসময় কলেজের দ্বিতীয় বর্ষে আমি একটি স্যারের কাছে ভর্তি হয়। স্যারের বাচনভঙ্গি, চিন্তা -ভাবনা আমাকে ভীষণভাবে অনুপ্রাণিত করে। আর এই স্যারের ব্যাচে মাঝে মাঝেই বিভিন্ন রকম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো। স্যার আমাদের অংশগ্রহণ করার জন্য অনুপ্রাণিত করতেন।
রবীন্দ্র জয়ন্তী, শিক্ষক দিবস, বনমহোৎসব ----এইরকমই নানা রকম প্রোগ্রাম পড়াশোনার পাশাপাশি এখানে চলতে থাকত। একবার রবীন্দ্র জয়ন্তীতে আমি নিজের লেখা একটি কবিতা পাঠ করেছিলাম। সবাই খুব প্রসংশা করেছিল। নিজেরও খুব ভালো লেগেছিল সবার সামনে বলার মতো সাহস জোগাতে পেরে। যদিও প্রথমে খুব ভয় পেয়েছিলাম। হাত - পা কাঁপছিল।
রবীন্দ্র জয়ন্তীতে নিজের লেখা কবিতা পাঠ |
---|
বনমহোৎসব এ চারাগাছ বিতরণ |
---|
একবার এই ব্যাচেই শিক্ষক দিবস উপলক্ষ্যে জুনিয়র ও সিনিয়ররা মিলে একটা নাটকের আয়োজন করেছিল। নাটকটি রবি ঠাকুরেরই রচিত। তবে এই মুহূর্তে নামটা মনে করতে পারছি না। এই নাটকে আমাকে একটি মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করার জন্য নেওয়া হয়েছিল। নাটকটা খুব ভালো ভাবেই উপস্হাপন করেছিলাম। প্রত্যেকে খুব ভালো অভিনয় করেছিল। এই ভাবেই ধীরে ধীরে নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস বাড়াতে থাকি।
নাটকের চরিত্রের সাজে |
---|
এরপর মনে হলো নিজের কথা বলার ভঙ্গির ওপরে একটু যত্ন নেওয়া উচিত। কথার জড়তা কাটাতে হবে। এইসব ভাবনা চিন্তা যখন করছি সেই সময়ে ফেসবুকে আমার এক দিদিমনির প্রোফাইলে 'কবিতা করি' নামে একটি ব্যানার সহ ওনার দুই মেয়ের ফটো দেখতে পাই। সেই ব্যানারে একটি মোবাইল নাম্বারও ছিল।" উঠল বাই কটক যাই"--- এর মতনই তৎক্ষণাৎ ভেবে নিলাম আমি আবৃত্তি শিখবো।
যেমন ভাবনা তেমন কাজ। কাউকে কিছু না জানিয়েই সেই নাম্বারে কল করলাম। আমি জিজ্ঞাসা করলাম----
আমি কি সুমনা মিসের সাথে কথা বলছি?"
-------হ্যাঁ। আপনি কে বলছেন?"
এইভাবে কিছুক্ষণ বার্তালাপ চলার পর যখন কবিতা শেখার প্রসঙ্গ এলো তখন উনি জিজ্ঞাসা করলেন-----
" কে শিখবে? আপনার মেয়ে?"
শুনে খুব হাসি পেয়েছিল।
যাইহোক পরে পরিচয় দেওয়ার পর উনি ভুল বুঝে বলা কথার জন্য মাফও চেয়েছিলেন। আসলে এত বড়ো বয়সে আবৃত্তি শিখতে যাওয়া স্টুডেন্ট খুব কমই ওনার কাছে যায় তাই উনি প্রথমেই বুঝতে ভুল করেছিলেন।
তারপর উনার সাথে কথা বলে নির্দিষ্ট টাইম ঠিক করে নিয়েছিলাম। তখনও বাড়ির কাউকে জানাইনি। ভেবেছিলাম প্রথম দিন ঘুরে আসি যদি ভালো লাগে তাহলে বাড়িতে জানাবো আর যদি ভালো না লাগে তাহলে শুধু শুধু বকা খাওয়ার জন্য বাড়িতে বলার প্রয়োজন নেই।
আবৃত্তি ম্যামের সাথে তোলা ফটো |
---|
এরপর সেখানে গিয়ে কেমন লাগলো আর কীভাবেই বা ভয় কে জয় করলাম সেটা জানতে হলে অবশ্যই আমার পরবর্তী পোস্টটি পড়বেন। আজ এখানেই শেষ করছি। সকলে ভালো থাকবেন।
স্কুল জীবনে আমি আপনার মত ছিলাম সবকিছুতেই অনেক বেশি ভয় পাইতাম বিশেষ করে ক্লাসে যখন সবার সামনে দাঁড়িয়ে পড়া বলতে হতো তখন জানা বিষয়গুলো ভুলে যেতাম।
ভয়কে জয় করার প্রথম পর্ব পড়ে বেশ ভালই লাগলো দ্বিতীয় পর্ব পড়ার অপেক্ষায় রইলাম ভালো থাকবেন।
0.00 SBD,
0.00 STEEM,
0.00 SP
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। দ্বিতীয় পর্ব পোস্ট করেছি। সময় পেলে অবশ্যই পড়বেন।