সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস
নমস্কার বন্ধুরা। আমরা সকলেই একটি প্রবাদের সঙ্গে খুব পরিচিত প্রবাদটি এরকম- "সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস"এই প্রবাদটির পরিপ্রেক্ষিতে একটি প্রচলিত গল্প মাথায় এলো যেটি আজকে আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নেব।
ছোটবেলায় আমরা সকলেই অনেক গল্প শুনেছি। কেউ ঠাকুমার কাছে কেউ বা দিদার কাছে। তবে আমরা ঠাকুরমা দিদা এবং আরো একজনের কাছে গল্প শুনেছি তিনি হলেন আমার মায়ের ঠাকুমা মানে আমার মায়ের বাবার পিসি। অর্থাৎ আমাদের বড়মা। বড়মা যেহেতু খুব ছোট বয়সেই বিধবা হয়েছিলেন তাই তিনি বাপের বাড়িতে এসেই ছিলেন। তার কোন সন্তানাদি না থাকায় তিনি প্রথমে নিজের দাদা ভাইদের ছেলেমেয়ে মানুষ করেছেন তারপরে নিজের ভাইপো ,ভাইঝি দের ছেলে মেয়ে মানুষ করেছেন অবশেষে আবার ভাইপো ভাইঝিদের ছেলে মেয়ের ছেলে মেয়ে মানুষ করেছে। সুন্দর লাগের ছবি দেখতে।
ছোটবেলায় যখন মামার বাড়িতে যেতাম বা বড়মা আমাদের বাড়িতে আসতো আমি সর্বদাই বড়মার কোলের মধ্যে গিয়ে ঘুমাতাম। আমার নাম পাপিয়া কিন্তু বড়মা পাপিয়া না বলে তাপিয়া বলতো। বড়মা, সবসময়ই আমাকে বলতো পাপিয়া বন্ধু যেন ভালো হয় না হলে তুই ভালো হবি না। ভালো বন্ধু সবসময় ভালো জিনিস শেখায়। তাই সব সময় যেন নজরটা ভালোর দিকে থাকে। যেখানে মিথ্যে রয়েছে সেখানে কখনোই থাকা উচিত নয়।
আজ তারই পরিপ্রেক্ষিতে একটি গল্প মনে পড়ে গেল। একবার নারদ মনি ভগবান শ্রীবিষ্ণুর সাথে ভ্রমণে বেরিয়েছিলেন। তিনি তখন ভগবানের কাছে সৎসঙ্গ বিষয়ে প্রশ্ন করলেন। ভগবান তখন সেই প্রশ্নের উত্তরটি একটি মৌমাছির কাছে জানতে বললেন।
মৌমাছির কাছে যাওয়া মাত্রই মৌমাছিটি মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ল। তখন তিনি ভগবানের কাছে এসে বললেন যে মৌমাছিটি মারা গিয়েছে ।এবার ভগবান তাকে একটি বাছুরর কাছে প্রশ্নের উত্তরটি জানতে বললেন। কিন্তু নারদ মুনি বাছুরের কাছে গিয়ে যেইমাত্র তার প্রশ্নটি করেছে বাছুরটি তার উত্তর দেয়া তো দূরের কথা তার আগেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই মৃত্যুবরণ করেছ এই দেখে মুনির খুব দুঃখে ভগবানের কাছে তার সকল কথা জানালেন।
তার মনের মধ্যে খুব ভয় ও জন্মেছে কারণ তিনি মনে করছেন তিনি যার সামনেই যাচ্ছেন হয়তো সেই মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ছে। তারপর ভগবান তাকে রাজবাড়িতে রাজপুত্রের কাছে যেতে বললেন তখন তো নারদ মুনির প্রাণ ভয়ের তুকতুক করতে শুরু করল। কারণ তিনি জানেন তিনি যেইমাত্র রাজপুত্রের কাছে যাবেন রাজপুত্র যদি মারা যান তাহলে আর তার রক্ষে নেই। কিন্তু ভগবান তাকে খুব সাহস যুগিয়ে এবং তার সঙ্গে আছেন এই কথা বলে মুনিকে রাজবাড়ীতে প্রবেশ করতে বললেন। রাজবাড়ীতে যখন নারদ মনি প্রবেশ করলেন রাজা তো খুব সানন্দে তাকে অভ্যর্থনা জানিয়ে রাজপুত্রের কাছে পাঠালেন।
খুব ভয়ে ভয়ে রাজপুত্র সামনে যখন তিনি গেলেন তখন রাজপুত্র তাকে তার প্রশ্নের উত্তর দিলেন রাজপুত্র তাকে জানালেন প্রথমে যে মৌমাছিটির সঙ্গে তিনি সাক্ষাৎ করেছিলেন সেটি আর কেউ নয় রাজপুত্র স্বয়ং ছিলেন। তাকে দর্শন মাত্র মৌমাছির মুক্তি হয় এবং সে একটি গরুর বাছুর হিসেবে জন্মগ্রহণ করে তারপর যখন আবার তিনি সেই বাছুরের সামনে যাই তখন সেই বাছুরের মুক্তি ঘটে এই রাজপুত্রের জন্ম হয়।
এবার এই সকল বৃত্তান্ত শুনে নারদ মুনি ভগবান বিষ্ণুর সকল বৃত্তান্ত জানালেন। ভগবান তখন তাকে বললেন সৎসঙ্গের কেমন ফল। অর্থাৎ নারদ মুনী সর্বদা ভগবান বিষ্ণুর নাম সংকীর্তন সমাহিত থাকেন তিনি ভগবান এর নাম সংকীর্তন ছাড়া এক মুহূর্ত কাটান না তাই তাকে দর্শন মাত্র কীটপতঙ্গ সবকিছু মুক্ত হয়ে যাচ্ছিল।
আপনার বড়মা আপনাকে বেশ ভালো একটা উপদেশ দিত এবং সেই উপদেশটি আপনার আজকের টাইটেলের সাথে একদম মিলে যায়। সত্যিই জীবনে চলার পথে ভালো বন্ধুর দরকার। মানুষ যাদের সাথে চলে তাদের কাছ থেকে অনেক কিছুই শিখে। বন্ধুরা যদি খারাপ দিকে যায় তাহলে অনেক সময়ই খারাপ দিকে আপনারাও চলে যাওয়ার একটা আশঙ্কা থাকে। খুব ভালো লাগলো আপনার আজকের লেখাগুলো পড়ে ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর একটি কনটেন্ট আমাদেরকে উপহার দেওয়ার জন্য।
0.00 SBD,
1.26 STEEM,
1.26 SP
এই গল্পটি সত্যিই অনুপ্রেরণাদায়ক এবং জীবনকে সৎ পথে চলার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দেয়। সৎ সঙ্গে স্বর্গবাসপ্রবাদটি যে শুধুমাত্র একটি কথার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, তা এই গল্পের মাধ্যমে আরও সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। নারদ মুনি যেভাবে সৎসঙ্গের মাধ্যমে মুক্তি লাভ করেছিলেন, তা আমাদেরকে শেখায় যে ভালো সঙ্গ মানুষকে শুধুমাত্র ভাল জ্ঞানই দেয় না, বরং জীবনে শান্তি এবং মুক্তিও এনে দেয়। আপনাদের শেয়ার করা এই গল্পটি সত্যিই মনের গভীরে স্থান পেয়েছে।