||"একাকীত্ব" হলো মরণ ব্যাধি ক্যান্সারের সমতুল্য ||
![]() |
---|
Source |
Hello,
Everyone,
আমরা এই পৃথিবীতে একা এসেছি এবং একাই চলে যাব এ কথা আমরা সবাই জানি। আমরা যাবার সময় কাউকে সঙ্গে নিয়ে যেতে পারবো না । যতদিন আমরা বেঁচে থাকব ততদিন একা বেঁচে থাকতে পারবো না। কারণ সৃষ্টিকর্তা আমাদেরকে সেভাবেই সৃষ্টি করেছেন ।কারণ আমাদের সৃষ্টি হয়েছে বাবা-মায়ের ভালোবাসার মধ্য দিয়ে ।
বাবা-মায়ের ভালোবাসার ফসল হলো একটি সন্তান এর। জন্মসূত্র থেকেই আমরা দুজন দুজনের উপর নির্ভরশীল ।আমরা যতই বলি না কেন, ”১০ জনকে নিয়ে সুখে থাকা যায় না ,একা সুখে থাকার চেষ্টা করি”। একটু ভেবে দেখা যাক, আমার অনেক টাকা পয়সা রইলো কিন্তু আমার পাশে আপনজন বলতে কাউকে পেলাম না ।তখন সেই টাকাপয়সা আমাকে সুখ দিতে পারবে না, আমার রাতের ঘুম কেড়ে নেবে, আর যদি আমাদের কাছে অল্প সীমিত টাকা থাকে কিন্তু সুখ ভাগাভাগি করে নেয়ার জন্য আমার আপনজন থাকে ,যার সাথে আমার মনের কথাগুলো শেয়ার করা যায়, আমার কষ্টের কথাগুলো শেয়ার করা যায় এবং আমি দুঃখ পেলে যে আমাকে সান্ত্বনা দিবে ,আমার চোখে জল মুছিয়ে দেবে তাকেই তো ভরসা করা যায় ,তাকে আঁকড়ে ধরে বাঁচা যায় ।
এই পৃথিবীর জন্মলগ্ন থেকে মানুষের প্রতি মানুষের যে মায়া ছিল আস্তে আস্তে সে মায়া কমতে শুরু করেছে ।তবে এর বিশেষ কারণ অনেক খুঁজে পেতে পারি ।আগে যেমন আমরা, সকল বন্ধুরা মিলে একত্রে বসে বিভিন্ন ধরনের খেলা খেলতাম। আর এখন ,সে বন্ধুত্ব আছে কিন্তু সেই একত্রে মিলেমিশে আমদের কোন খেলার সময় নেই। সকল বন্ধুদের হাতে স্মার্টফোন ।আমরা যে যার মত সে স্মার্ট ফোনে ডুবে থাকি। আমরা একে অপরকে মেসেজ দিচ্ছি, ভার্চুয়াল খোঁজখবর নিচ্ছি কিন্তু তার কাছে গিয়ে পাশে বসে তার সাথে দুটো কথা বলার মত আমাদের সময় নেই।
![]() |
---|
Source |
এই একাকীত্ব মানুষকে গুমড়ে গুমড়ে খাচ্ছে। আমি মরণ ব্যাধি ক্যান্সারের সাথে একাকীত্ব বা নিঃসঙ্গতাকে
তুলনা করছি। হয়তোবা আপনারা এর কারণ জিজ্ঞাসা করতে পারেন্। আপনারা সকলেই জানেন, মরণব্যাধি ক্যান্সার যদি আমাদের দেহে বাসা বাঁধে তবে তার যদি শুরু থেকেই সঠিক চিকিৎসা করা না হয় তবে কিন্তু শেষ পর্যায়ে শত কেমো থ্রাপি দেইনা কেন তাকে আর বাঁচানো যায় না। তেমনি একাকীত্ব আমাদের জীবনে যদি একবার বাসা বাঁধে ,শুরু থেকে যদি একাকীত্ব দূর করতে না পারি তবে একদিন আমাদের জীবন শেষ হয়ে যেতে পারে।
আজ এমনই একটি ঘটনার কথা আমি শুনেছি যা আপনাদের সাথে শেয়ার না করে পারলাম না। আজ নারী-পুরুষ সবাই স্বাধীন ,সবাই স্বাবলম্বী ,সবাই ঘরে বাইরে সমানতালে কাজ করছে ।নারীরাও চাকরি করছে তাই একটি শিক্ষিত ফ্যামিলিতে আর্থিক সমস্যা থাকে না কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় তাদের ভালোবাসার অভাব । তারা দুজনে সাবলম্বী হওয়ায় এক অপরের সাহায্যের অপেক্ষা করেনা । কারণ সে নিজেই স্বাবলম্বী, তার ভরণপোষনের দায়িত্ব সে নিজেই বহন করতে পারে। তাইতো কথায় কথায় বিবাহ বিচ্ছেদ হচ্ছে। কথার মিল হচ্ছে না ,কাগজে ছোট্ট একটি স্বাক্ষর করে তোমার সাথে আমার সম্পর্ক এখানেই শেষ। তারা একবারও ভাবেনা তাদের সন্তানটির কি হবে? হয়তো তারা নতুন জীবন সঙ্গী অথবা সঙ্গীনি পাবে কিন্তু তাদের সন্তান কি পাবে।
![]() |
---|
Source |
একটি শিক্ষিত পরিবারে বাবা-মা দুজনেই চাকরিজীবী ।তাদের সংসার ভালই চলছিল হঠাৎ তাদের সংসারে ভাঙ্গন হলো। দুজনার বিচ্ছেদ হয়ে গেল ।দুজনেই নতুন করে আবার সংসার বাধল। তাদের একমাত্র মেয়ে ছিল লিমা । পড়াশোনার মাঝপথে তার মামারা তাকে ভালো পাত্র দেখে বিয়ে দিয়েছিলেন । লিশা চেয়েছিল সুন্দর ভাবে সংসার গুছিয়ে নিতে ।কিন্তু বিয়ের কিছুদিন পরে তার জীবনে কঠিন ঝড় আসে । শ্বশুরবাড়ি থেকে নানান কথা শুনতে হয় তাকে, ”ডিভোর্সী মায়ের মেয়ে, বাবা মেয়েকে রেখে আবার নতুন সংসার শুরু করেছে, এরকম নানান কথা থাকে শুনতে হচ্ছে।
তারা স্বামী সাধারণত কিছু বলে না কিন্তু যখনই কোন মনোমালিন্য হয় তখন সেও লিমার অতীত নিয়ে খোঁচা দিয়ে কথা বলে। লিমার আশেপাশে অনেক লোক আছে তারপরও লিমা দিন শেষে যেন একা থেকে যায়। সে তার এই মনের কষ্টগুলো কাউকে শেয়ার করতে পারছে না ।যাকে আঁকড়ে ধরে সে নতুন করে বাঁচতে চেয়েছিল সেই মানুষটিকেও আজকাল তার মনের কথাগুলো বলতে পারেনা। এভাবে লিমা দিন দিন একাকিত্ব হয়ে যাচ্ছে । তাকে যেন নিঃসঙ্গতা ঘিরে ধরেছে । নিমা 8 মাসে অন্তঃসত্ত্বা, এই সময়টা মেয়েদের মায়ের ভালোবাসা প্রয়োজন ও স্বামীর ভালোবাসা প্রয়োজন ।
পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা তাদের যার যার কাজ নিয়ে ব্যস্ত ।তাদের কারো হাতে সময় নেই লিমার সাথে একটু সময় কাটানোর। পরিবারের সকলের অবহেলা, সমাজের বিভিন্ন রকমের বিভিন্ন কথা শোনা,স্বামীর অবহেলা সব মিলিয়ে লিমা দিন দিন নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। অনেকবার তার স্বামীকে তার কষ্টের কথা বোঝাতে চেয়েছিল ।কিন্তু তার স্বামী এতটাই ব্যস্ত ছিল তার এগুলো শোনার মত সময় ছিল না ।বরঞ্চ সে লিমাকে বলতেন “জাস্ট নাটক করা বাদ দাও” এই বলে এড়িয়ে যেতন ।সকলের অবহেলা সহ্য করতে না পেরে একদিন এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো এবং কিছুদিন পর সে তাই করল ।
একাকীত্বের প্রথম পর্যায়ে তার পরিবার তাকে যদি সহযোগিতা করত তবে সে এই কঠিন সিদ্ধান্ত থেকে নিজেকে ফিরিয়ে আনতে পারত । তাকে এই কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হতো না। লিমা ও লিমার সন্তান এই সুন্দর পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে পারতো আরো অনেক বছর ।
আমাদের সমাজে এমন অনেক মানুষ আছে যারা বিবাহ বন্ধনকে এটি ”ডিপিএইচ” এর মত মনে করেণ। মনে চাইলে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হব আবার মনে চায় না, ভালো লাগছে না, বন্ধন ছেড়ে চলে যাবো। তাইতো যখন খুশি তখন বিয়ে নামক “ডিপিএস” ভেঙে ফেলবো। কিন্তু তারা একবারও ভাবেনা তাদের এই ভাঙ্গা গড়ায় সন্তানদের উপর কি প্রভাব পড়তে পারে ? যার করুণ পরিনতি হয়েছিল লিমার।
আমাদের সকল পিতা-মাতার উচিত বিবাহ বন্ধন ধরে রাখতে পারব কি পারব না সেই চিন্তা ভাবনা করে সন্তান নেওয়া । যদি আমরা বিবাহ বন্ধনকে ”ডিপিএস” মনে করি তবে কোন সন্তান এই পৃথিবীতে আনা উচিত নয়। ভাবীর বোনের মেয়ের এই করুন কথাগুলো শুনে তখন চোখের জল ধরে রাখতে পারলাম না। যদি আমার এই কথাগুলো কারো সাথে মিলে যায় আমাকে ক্ষমা করে দিবেন।
আমাদের জীবন সৃষ্টিকর্তার দান তাই আমাদের উচিত সৃষ্টিকর্তা যখন আমাদের তার কাছে নিয়ে যাবে সেই পর্যন্ত অপেক্ষা করা । আমরা এমন কোন সিদ্ধান্ত নেব না , অন্য কারো কথায় আমার এই সুন্দর জীবন শেষ করে দেবো না। নিজেকে খুশি রাখার চেষ্টা করব ।শত কষ্ট হোক, দুঃখ হোক, নিজেকে নিজের ভালোবাসতে হবে । শুধুমাত্র কারো অবহেলা ,কটুকথার জন্য নিজের জীবন শেষ করে দেওয়ার মতো মানসিকতা থেকে নিজেকে বের করে নিয়ে আসতে হবে । পোস্টটা অনেক বড় হয়ে যাচ্ছে তাই আজ এখানে বিদায় নিচ্ছি।
প্রথমে আমি আপনাকে বলব টাকা কখনোই আপনাকে সুখ দিতে পারবে না সুখ যদি আপনি জীবনে অর্জন করতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে আপনার প্রিয় মানুষের সঙ্গে অনেক বেশি প্রয়োজন টাকা শুধুমাত্র আপনার চাহিদা পূরণ করতে পারবে কখনোই আপনাকে ঘুম দিতে পারবে না টাকা হলে আপনার মাথা ভর্তি টেনশন থাকবে সঠিকভাবে ঘুমাতে পারবেন না দামি খাট দামি খাবার দামে বালিশ নিতে পারবেন কিন্তু সঠিক ভাবে শান্তি মত আপনি কোথাও গিয়ে কয়েকটা দিন বা কয়েকটা রাত কাটাতে পারবেন না।
একটা সময়ের পর আমরা যখন অনুভব করি একাকীত্ব আমাদের জন্য সবচাইতে ভালো একটা বিষয় এর মধ্যেও কিন্তু কিছু খারাপ জিনিস রয়েছে একা থাকার পর আপনি যখন অসুস্থ হয়ে পড়বেন তখন আপনাকে দেখার মত কেউ থাকবে না কিন্তু বাস্তবতার কাছে আমাদেরকে প্রতিনিয়ত হেরে যেতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত আমরা এমনভাবে হেরে যাচ্ছি তখন নিজেদেরকে একা রাখা ছাড়া আর কোন পন্থা অবলম্বন করতে পারি না।
আমি ঠিক জানিনা লিমা নামের মেয়েটার সাথে হয়তোবা আমার নিজেরও কিছুটা মিল রয়েছে তবে নিজের দুইটা সন্তান আছে বলে এই ধরনের বড় সিদ্ধান্ত বারবার নেয়ার পরেও অনেকবার পিছিয়ে এসেছিলাম তবে আমার বাবা-মা কখনো আলাদা হয়নি পারিবারিক কিছু সমস্যার কারণে নিজেকেই এই পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার চিন্তাভাবনা করছিলাম।
আপনি ঠিকই বলেছেন আমাদের সমাজে সবাই ভুল করে কিন্তু একটা মেয়ে যখন ভুল করে তখন তার ভুল সবার চোখে পড়ে তার স্বামী তার পরিবারের মানুষ যদি তার পাশে থাকতো তাহলে হয়তো বা সে এত বড় সিদ্ধান্ত কখনোই নিত না এই নিঃস্বার্থ পৃথিবীতে তার বাবা-মা তার পাশে ছিল না ছিল না তার সবচাইতে প্রিয় আপনজন আসলে বিয়ে নামক এই বন্ধনে মানুষ আবদ্ধ হয়ে ঠিকই কতজন মানুষই আর ভালো থাকে অসংখ্য ধন্যবাদ একাকিত্ব নিয়ে আপনার মনের অনুভূতি আমাদের সাথে তুলে ধরার জন্য ভালো থাকবেন।