Better Life with Steem|| The Diary Game||2nd- June-2025||
![]() |
---|
Made by Canva |
Hello,
Everyone,
আশা করি সৃষ্টিকর্তার অশেষ কৃপায় সকলে ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন ।বিয়ে বাড়িতেই ততটা ঘুম হয় না কারণ গায়ে হলুদের প্রোগ্রাম শেষ হতে হতে রাত আড়াইটা বেজে গিয়েছিল। ডিজে গানের সাথে ছেলেদের নাচ আর বন্ধো যেন হচ্ছেনা। সবকিছু বন্ধ করে আমাদের ঘুমাতে তিনটা বেজে গেল ।
ভোর রাত ৫টায় আমাদেরকে ডেকে তোলা হলো। আজ প্রিয়ন্তীর শুভ বিবাহ তাই আজ ভোর রাতে ওদের “অধিবাস” আবার অনেকে বলেন ”দধিমঙ্গল” । সূর্য ওঠার আগে এই নিয়ম কাজগুলো সেরে নিতে হয় ।আজকে ওদের উপবাস থাকতে হবে। খুব সকাল বেলায় উঠে পড়লাম , উঠে প্রিয়ন্তীকে তৈরি করলাম এবং অধিবাসের সবকিছুই গুছিয়ে নেওয়া হল।
![]() | ![]() |
---|
প্রথমে নিয়ম-কানুন গুলো পালন করা হলো। নতুন একটি অধ্যায় শুরু করতে যাচ্ছে , রঙিন কুলায় সিঁদুর কৌটো, চাল ,কলা, প্রদীপ, রঙিন সরা ,জলঘট আরো অনেক কিছু দিয়ে বরণ কুলা সাজানো হয় ।বরণ কুলা দিয়ে তাকে বরণ করা হলো ।নতুন পরিচয়ে পরিচিত হওয়ার জন্য তাকে শাখা-পলা পড়ানো হল ।তুলসীর মালা পরানো হল ,এই নিয়ম পালন করার পরে দই, চিড়া, খই ও বিভিন্ন ধরনের মোয়া দিয়ে থালা সাজিয়ে দেওয়া হলো।
এই ভোর বেলা ততটা খাওয়া যায় না তাই নিয়ম অনুসারে অল্প কিছু খেয়েছিল। এরপরে বিভিন্ন রকমের ভাজি, শাক ,মাছ ,পায়েস ,দই ও মিষ্টি দেওয়া হলো ।তাও ততটা খেতে পারেনি । সবাই মজার ছলে বলছিল ,”এখন বেশি করে খেয়ে নাও আর কিন্তু কাল খেতে পারবে তার আগে খেতে পারব না”।
অধিবাসের পর্ব শেষ হওয়ার পরে আবার কিছুক্ষণ শুয়ে নেই । এক ঘন্টার মত ঘুমিয়ে ছিলাম ।সকাল বেলা উঠে ফ্রেশ হয়ে ফুলের ডালা নিয়ে আবার ফুল তুলতে গেলাম । সকালবেলা সূর্য উঠার দৃশ্য অনেক সুন্দর,আর সেই দৃশ্য ধরে রাখার জন্য কনেকে নিয়ে অধিবাসের শুট করার জন্য ওদেরকে সাজিয়ে দিলাম। আমি আর যেতে পারিনি কারণ আমাদের ”বৃদ্ধির ধান” ভাঙতে হবে ।
![]() |
---|
আমাদের বাড়িতে দেখেছিলাম ”বৃদ্ধি ধান” বিয়ের কিছুদিন আগে শুভ দিন দেখে ”এয়ো” নারীরা ধান ভেঙ্গে থাকেন। ধান ভেঙ্গে চাল তৈরি করেন এবং তারা সুন্দর সুন্দর গান করে থাকেন। কিন্তু ওদের এই অঞ্চলে বিয়ের দিন ভাঙার নিয়ম আছে তাই তো ওরা আজকে বৃদ্ধি ধান ভাঙছে। এরি মাঝে টুপটাপ বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো। গ্রামের রাস্তাঘাট কর্দমাক্ত ও পিচ্ছিল হয়ে গেছে । অবশ্য বিয়ের আঙ্গিনায় ত্রিপল দিয়ে ঢেকে দিয়েছিল কিন্তু গ্রামের বাড়িতে বৃষ্টির দিনে বেশি সমস্যা হয়ে থাকে ।
![]() |
---|
দিদি বলল, আমাকে সকালবেলায় বিয়ের আসরে আলপনা দিয়ে রাখতে। আমিও স্নান করে আলপনা দিলাম ।আমি ততটা ভালো পারি কিনা তবে চেষ্টা করি। এই কাজগুলো করতে আমার খুব ভালো লাগে। আর বিয়ে বাড়িতে ঘরোয়া রান্নাবান্না করা আমার কাছে খুবই কঠিন লাগে । তার থেকে আমি সবাইকে খাবার পরিবেশন করি ।
![]() | ![]() |
---|
সবাইকে সাজিয়ে দিতে পারি, শাড়ি পরিয়ে দিতে পারি, নিজেও সাজতে পারি কিন্তু মাটির চুলায় লাকড়ি দিয়ে বড় হাঁড়িতে রান্না করা আমার পক্ষে খুবই কঠিন কাজ । এই কাজগুলো আমি কখনো করতে রাজি হই না । গতকাল রাত থেকে বিয়ের রান্না বান্নার আয়োজন চলছে ।বিয়ে রাতে হলেও রাত থেকেই সেই রান্নাবান্নার জন্য ধোয়া, কোটা-বাটা শুরু হয়ে গেছে। প্রায় ৬০০ থেকে ৭০০ লোকের আয়োজন ছিল।
মেয়ের বাবার এতকিছু আয়োজন করা সত্যি কি কঠিন বিষয় ।হয়তো তাদের সমর্থ্য আছে কিন্তু যাদের সমর্থ নেই সেই বাবাদের অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় ।এদিক থেকে আমি এক ভাবির কাছে শুনেছি মুসলিম মেয়ের বাবার বেশি খরচ হয় না। বেশি খরচ করতে হয় ছেলে পক্ষকে। এদিকে পূরোহিত ঠাকুর চলে আসলেন এবং বৃদ্ধির আয়োজন করতে বললেন। জীবন দাদা স্নান করে সাদা ধুতি পড়ে বৃদ্ধি আসনে বসলেন ।
বিয়ে বাড়িতে যেন সময় খুবই দ্রুত চলে যাচ্ছে। সমস্ত কাজ শেষ করে বিকেলবেলা একটু বিশ্রাম নেয়ার সময় পাইনি । মেয়েদের শাড়ি পরিয়ে দিয়ে আবার নিজে তৈরি হবো ।যেহেতু বিবাহের লগ্ন ছিল সন্ধ্যা আটটা থেকে দশটা পর্যন্ত । সীতাকুন্ড থেকে বরপক্ষ ইতোমধ্যে চলে এসেছে । তারা অনেক লম্বা জার্নি করার পরে সবাই ক্লান্ত ছিল, তারা সরাসরি আমাদের বাড়িতে আসেনি, তারা গৌরনদী এসে বিশ্রাম নেয় এবং পার্লার থেকে সেজেগুজে তৈরি হয়ে আসেন।
![]() |
---|
আমি পার্লারে সাজতে ততটা পছন্দ করি না ।সবাইকে সাজিয়ে দিলাম কিন্তু আমার খুব মন খারাপ ছিল। কারণ আমার ছোট দেবরের মেয়ে “সঙ্গীতাকে” বলেছিলাম, আসার সময় গাজরা এবং গোলাপ নিয়ে আসতে। যেহেতু প্রচন্ড গরম পড়েছে তাই চেয়েছিলাম তাজা ফুল দিয়ে সুন্দর একটি খোপা বাধবো। অবশ্য ওকে বলেছিলাম, আমরা একই রকম খোপা বাধবো। কিন্তু ও আসার সময় কিছুই নিয়ে আসেনি ।
![]() | ![]() |
---|
আর্মি বাবু যেহেতু আমাদের সাথে ছিল না আর বাড়ি থেকে ওদের বাজার অনেক দূরে তাই আমার পক্ষে আনাটা সম্ভব ছিল না । সঙ্গীতার বরকে দিয়ে ঠিকই গাজরা ও গোলাপ আনিয়েছিল। কিন্তু একটি মাত্র গাজরা আর পাঁচটি গোলাপ ছিল। আমি জানিনা ও কি শুধু ওর জন্যই বলেছি. না ওর বর নিয়ে আসেনি। ওকে আমি শাড়ি পরিয়ে দিয়েছি, যখনই ফুলের ব্যাগটা খুললাম দেখলাম যে, সেখানে একটি মাত্র গাজরা রয়েছে তখন আমার মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল।
তখন সত্যিই মনে মনে অনেক রাগ হলো। আমি ওকে আর খোপা বেধে দেইনি। মন খারাপ নিয়ে নিজেই তৈরি হচ্ছি, কাউকে বুঝতে দেইনি কিন্তু ভিতর থেকে কষ্ট পেয়েছি। আমি সবার উপকার করি ,সবাইকে ভালোবাসি , কিন্তু আমার ছোট্ট একটি অনুরোধ রাখতে পারল না । সত্যি-সঙ্গীতার উপরে আমার খুবই রাগ হয়েছে কিন্তু তা প্রকাশ করিনি যেহেতু আমি বড়মা হই।
![]() | ![]() |
---|
কনে পার্লার থেকে আসার পূর্বেই বরপক্ষ চলে এসেছে । বর পক্ষকে গাড়ি থেকে নামানো হলো না ।কিছুক্ষন পরে কনে চলে আসলো। কনে সামনের গেট থেকে আসেনি সে পিছন থেকে বাসায় ঢুকলো। কারণ সামনে থেকে আসলে যদি বরপক্ষ দেখে ফেলে । প্রিয়ন্তী পার্লার থেকে আসার সময় আমার জন্য একটি গাজরা ও অনেক গুলো গোলাপ নিয়ে এসেছিল । আর বলল, মামী তুমি সুন্দর করে খোপা বেধে নেও। সত্যি মেয়েটার কথা শুনে আমার খুবই ভালো লাগলো। আমি বুঝলাম না ,প্রিয়ন্তী কিভাবে বুঝলে যে আমার এগুলো প্রয়োজন ছিল।
![]() |
---|
সৃষ্টিকর্তা অনেক সময় আমার অজান্তে অনেক কিছু দিয়ে থাকেন তাই ফুল গুলো দেখে আমার মনটা সত্যি খুব ভালো হয়ে গেল। আমি ঝটপট করে খোপা বেঁধে নেই । আজ এই ছোট্ট একটি জিনিস দিয়ে আমার শিক্ষা হলো যে, কাউকে ভালবাসতে হলে অন্ধের মত ভালোবাসা উচিত নয়, কিছুটা হলেও কমতি রাখতে হয়। আপনি যদি কাউকে ১০০% দিয়ে ভালবাসেন তখন সে বুঝতে পারবে, তাকে ছাড়া আপনার কোন উপায় নেই ,তখন তার কাছে আপনার মূল্য থাকবে না তাই প্রয়োজন হলে ৯৯.৫% ভালোবাসবেন এবং নিজের জন্য ০.৫% রেখে দিবেন।
যাইহোক এবার বরকে বরণ করতে হবে তাই ঝটপট করে আমরা সবাই বরকে বরণ করার জন্য গেটে গেলাম ।গেটে কিকি মজা হল তা পরবর্তি পোষ্টে শেয়ার করব। কারন পোস্টটি অনেক বড় হয়ে গেছে । আজকে এখানে বিদায় নিচ্ছি বাকি ।