দেবী : রহস্য, অতিপ্রাকৃত শক্তি ও মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণের এক অনন্য উপন্যাস
হুমায়ূন আহমেদের ‘দেবী’ বাংলা সাহিত্যের এক অনন্য সৃষ্টিকর্ম। এটি শুধু একটি উপন্যাস নয়, বরং এটি রহস্য, অতিপ্রাকৃত ক্ষমতা, এবং মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণের এক অপূর্ব মিশ্রণ। এই উপন্যাস পাঠককে এমন এক জগতে নিয়ে যায়, যেখানে যুক্তি এবং কল্পনার সীমানা একে অপরকে অতিক্রম করে। ‘দেবী’তে পাঠক যেমন এক অজানা রহস্যের সন্ধান পায়, তেমনি মানব মনের গভীর অনুভূতিগুলোও অত্যন্ত নিখুঁতভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
উপন্যাসের কেন্দ্রে রয়েছেন মিসির আলী, যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন যুক্তিবাদী অধ্যাপক। তিনি যুক্তি ও বাস্তবতাকে ভিত্তি করে মানুষের জটিল সমস্যার সমাধান করেন। তবে রানুর সমস্যার ক্ষেত্রে যুক্তি বারবার পরাস্ত হয়। রানু, সদ্য বিবাহিত নারী, যার মধ্যে রয়েছে অদ্ভুত কিছু ক্ষমতা। তিনি কখনো অজানা বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেন, আবার কখনো হঠাৎ করে ভীষণ অস্থির হয়ে পড়েন। এমনকি তার আচরণ ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। এই সমস্যার সমাধানে তার স্বামী আনিস সাহায্য চান মিসির আলীর কাছে। রানুর আচরণ এবং অতিপ্রাকৃত ক্ষমতা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করতে গিয়েই গল্পটি রহস্যময় মোড় নেয়।
রানুর অতীতের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা এক ভাঙা মন্দির এবং এক দেবীর গল্প পাঠককে কাহিনির গভীরে টেনে নিয়ে যায়। ছোটবেলায় রানুর জীবনে ঘটে যাওয়া একটি ভয়ঙ্কর ঘটনা তার মানসিক অবস্থা এবং বর্তমান ক্ষমতাগুলোর জন্য দায়ী হতে পারে বলে মিসির আলী মনে করেন। কিন্তু রানুর এই ক্ষমতাগুলো কি আসলেই তার মানসিক বৈকল্যের ফল, নাকি এটি কোনো অতিপ্রাকৃত শক্তির প্রকাশ? এই প্রশ্ন গল্পের উত্তেজনা বাড়িয়ে তোলে এবং পাঠককে ভাবতে বাধ্য করে।
রানুর পাশাপাশি কাহিনির আরেকটি উল্লেখযোগ্য চরিত্র হলো নীলু। সে রানুর বাড়িওয়ালার মেয়ে, যার শান্ত স্বভাব এবং নিরীহ ব্যক্তিত্ব গল্পে ভিন্নমাত্রা যোগ করে। নীলু একজন অজ্ঞাত যুবকের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করে, যা তাকে এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে নিয়ে যায়। নীলুর জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো তার ব্যক্তিত্ব এবং তার চারপাশের জগতের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের দিকেও ইঙ্গিত করে।
‘দেবী’র অন্যতম আকর্ষণীয় দিক হলো এর প্রতিটি চরিত্রকে বাস্তব ও রহস্যময়ভাবে পাঠকের কাছে তুলে ধরা। হুমায়ূন আহমেদ এমনভাবে চরিত্রগুলো তৈরি করেছেন যে পাঠক আপন অনুভূতি ও জীবনযাত্রার সঙ্গে সহজেই সংযোগ স্থাপন করতে পারবেন। প্রতিটি চরিত্রের জীবনের পেছনে একটি গল্প রয়েছে, যা আপনার মনে নতুন প্রশ্ন জাগায়। গল্পের প্রতিটি ধাপে এমন উত্তেজনা তৈরি হয় যে, বইটি শেষ না করে ওঠা প্রায় অসম্ভব।
‘দেবী’র অন্যতম চমক হলো এর অস্পষ্ট সমাপ্তি। গল্পের শেষে অনেক প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায় না, যা পাঠক হিসেবে আপনার মনে কৌতূহল এবং ভাবনার খোরাক জোগাবে রানু কি সত্যিই দেবীর প্রতিরূপ? নাকি তার অতিপ্রাকৃত ক্ষমতার পেছনে রয়েছে কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা? মিসির আলী কি এই রহস্য পুরোপুরি সমাধান করতে পেরেছিলেন? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর না পাওয়াই গল্পটিকে আপনার কাছে আরও মজার আর আকর্ষণীয় করে তোলবে।
হুমায়ূন আহমেদ তার অসাধারণ লেখনী দিয়ে কাহিনিকে এক ভিন্ন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। ‘দেবী’ এমন একটি উপন্যাস, যা একবার পড়া শুরু করলে শেষ না করা পর্যন্ত মন স্থির রাখা কঠিন। এটি বাংলা সাহিত্যের এক অনন্য সম্পদ এবং রহস্যপ্রেমী পাঠকদের জন্য এক অবশ্যপাঠ্য রচনা।
দেবী উপন্যাসের এমন বিশ্লেষণ সত্যিই প্রশংসনীয়! হুমায়ূন আহমেদের লেখা সবসময়ই পাঠককে এক অন্যরকম অনুভূতির জগতে নিয়ে যায়, আর দেবী তার মধ্যে অন্যতম সেরা। রানুর চরিত্র, তার অতিপ্রাকৃত ক্ষমতা ও মিসির আলীর যুক্তিবাদী দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে যে দ্বন্দ্ব, সেটাই কাহিনির রহস্যকে আরও গভীর করেছে।
আপনার লেখা পড়ে মনে হলো, বইটি নতুন করে আবার পড়তে হবে! ধন্যবাদ এমন সুন্দর পর্যালোচনার জন্য। শুভকামনা রইলো।
হুমায়ূন আহমেদ স্যারের প্রতিটা লেখা যেমন রয়েছে আপনার রহস্য ঘেরা ঠিক তেমনি রয়েছে অনেক রোমাঞ্চকর আজকে আপনি আমাদের সাথে দেবী উপন্যাসটি আলোচনা করেছেন যেটা সম্পর্কে আপনি মোটামুটি ধারণা আমাদেরকে দিয়েছেন আসলে এই ধরনের উপন্যাস পড়ার পর মনে হয় নিজেরাই কোন এক রহস্যের মধ্যে লুকিয়ে যাচ্ছি যাই হোক পরবর্তী লেখা পড়ার অপেক্ষায় রইলাম ভালো থাকবেন।