মহাদেবের ভক্তদের শিব নিবাস যাত্রা
নমস্কার বন্ধুরা, সকলে কেমন আছেন ?আশা করছি সকলেই ভালো আছেন। আজকে আবারো নতুন একটা পোস্ট নিয়ে হাজির হয়েছি আপনাদের মাঝে আশা করছি সকলেরই ভালো লাগবে।
আজকে আপনাদের মাঝে শেয়ার করব মহাদেব ভক্তদের শিবনিবাস যাবার মুহূর্ত। প্রত্যেক বছর শ্রাবণ মাসকে স্বয়ং মহাদেবের মাস বলে মনে করা হয়। শ্রাবণ মাসে প্রত্যেক মহাদেবের মন্দিরের বহু ভক্তদের ভিড় জমা হয়। কোন কোন বছরে শ্রাবণ মাসে পাঁচ টা সোমবার পরে। আবার কোনো বছরে চারটে সোমবার পড়ে। এ বছরে চারটি সোমবার পড়েছিল। বহু দূর দূরান্ত থেকে অনেকে তারকেশ্বরে মহাদেবের মাথায় জল ঢালতে যাই। কিন্তু আমাদের কৃষ্ণনগর বা আশেপাশের বেশিরভাগ লোকজন শিব নিবাসে জল ঢালতে যায়। শিব নিবাসে এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শিবলিঙ্গ রয়েছে। শ্রাবণ মাসের শেষ সোমবার আগের দিন অর্থাৎ রবিবারে সকলে বাড়ি থেকে স্নান করে নিরামিষ আতপ চালের ভাত খেয়ে নতুন বস্ত্র পড়ে যায় নবদ্বীপে গঙ্গাস্নান করতে। গঙ্গাস্নান করতে যাবার সময় সকলে যেকোনো যান- বাহন করে নদী পর্যন্ত পৌঁছায়। এরপর নদীর ওপারে গিয়ে সকলে স্নান করে যে যার পাত্রে জল নিয়ে কাঁধে বাঁক নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বাড়ি ফেরে। কৃষ্ণনগর থেকে নবদ্বীপ প্রায় 18 কিলোমিটারে রাস্তা।
নবদ্বীপ থেকে বাড়ি ফিরে সকলে যে যার বাড়িতে একটু বিশ্রাম নেয়। আবারও রাতের বেলায় বেরিয়ে পড়ে পায়ে হেঁটে শিব নিবাস যাওয়ার পথে। কৃষ্ণনগর থেকে শিব নিবাস প্রায় ৩০ কিলোমিটার। রবিবার রাতে হাঁটতে শুরু করে পৌঁছাতে পৌঁছাতে সোমবার সকাল হয়ে যায়। যাই হোক প্রত্যেক শ্রাবণ মাসে প্রায় ৩৮ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে মহাদেবের প্রচুর ভক্তরা এই শিব নিবাসে মহাদেবের মাথায় জল ঢালে। ঠিক এই বছরেও তারই কিছু মুহূর্ত আপনাদের মাঝে শেয়ার করছি।এর মধ্যে বেশ কিছু দিন কেটে গেছে।ছোট থেকেই মামাকে দেখে আসছি শিব নিবাস যাওয়ার জন্য। তখন আমাদের পাড়া থেকে তেমন কোন লোক জন খুব একটা যেত না। আমার মামা প্রায় আঠারো বছর ধরে শিব নিবাসে পায়ে হেঁটে মহাদেবের মাথায় জল ঢালতে যায়। কিন্তু যত দিন যাচ্ছে শিব নিবাসে সব মানুষেরই উৎসাহ আরো বেড়ে চলেছে।
এ বছরে ছোট থেকে বয়স্ক, ছেলে থেকে মেয়ে দলে দলে লোকজন যাচ্ছিল। এটা ও বাঙালিদের একটা বিশেষ উৎসবের মধ্যে পড়ে।শিবনিবাসে মহাদেবের মাথায় জল ঢালার জন্য। এই দিন ভক্তদের পরিষেবা দেওয়ার জন্য নবদ্বীপ থেকে শিব নিবাস পর্যন্ত সব রকম ব্যবস্থা থাকে। অনেকে রাস্তায় যতদূর সম্ভব জল ঢালতে থাকে। কারণ রাস্তা গরম হয়ে গেলে ভক্তদের যাতায়াত করতে অসুবিধা হয়। আবার অনেকে নিরামিষ বিভিন্ন রকম খাবার বিতরণ করে। এছাড়াও ডক্টরের পরিষেবা বন্দোবস্ত থাকে, যতদিন যাচ্ছে ততই আরো উন্নত হচ্ছে। দুই থেকে তিন বছরের বাচ্চা থেকে শুরু করে কমবেশি সমস্ত বয়সের লোকজন চলছে বাবার মাথায় জল ঢালার জন্য। এছাড়াও যদি বাড়িতে ছোট বাচ্চা থাকে তাকে বাঁকের একধারে বসিয়ে আর অন্য ধারে জল নিয়ে ছুটছে শিবনিবাস যাওয়ার উদ্দেশ্যে।
অনেকে আবার স্বয়ং মহাদেবের মূর্তি কাঁধে নিয়ে চলছে। অনেকে দেশের পতাকা, কেউ আবার ব্রজ রংবলির পতাকা উড়িয়ে নিয়ে ছুটছে শিব নিবাসের দিকে। কেউ বানিয়ে নিয়ে যাচ্ছে নারকেল পাতা, তালপাতা দিয়ে কেদার নাথের মন্দির কেউ আবার রাধা কৃষ্ণ সুন্দর করে সাজিয়ে নিয়ে চলছে। এই অপূর্ব দৃশ্য নিজের চোখে না দেখলে একদমই বোঝা যাবে না ।আমি কয়েকটা ছবি তুলেছি সেগুলোই আপনাদের মাঝে শেয়ার করব। কিভাবে বাঁকে করে মহাদেবের ভক্তরা ছুটে চলে শিবনিবাস। এ বছরে আমি মামার মেয়ের আরও অনেকে মিলে গিয়েছিলাম ভক্তদের দেখার জন্য। দল বেঁধে যখন যায় দেখতে খুব ভালো লাগে ।তবে আমার নিজের কোনদিন যাওয়ার একদম ইচ্ছে জাগে না ।অতদূর রাস্তা শুনেই আমি আমি কোনদিন যাবার ইচ্ছে প্রকাশ করিনি। আমাদের পাড়াতে পাঁচ বছরের বাচ্চা থেকে শুরু করে সকলেই যায়। আসলে ভগবান না চাইলে কোন কিছু করা সম্ভব নয়। মহাদেবের আশীর্বাদ না থাকলে অতদূর পৌঁছানো একেবারে অসম্ভব। মহাদেব সকল ভক্তদের মনোস্কামনা পূর্ণ করুক।
আজ এই পর্যন্তই ।আবারো নতুন কোন পোস্ট নিয়ে হাজির হব আগামীকাল ।সকলে ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
Thank you for sharing on steem! I'm witness fuli, and I've given you a free upvote. If you'd like to support me, please consider voting at https://steemitwallet.com/~witnesses 🌟
Your post has been supported by SC-05. We support quality posts, quality comments anywhere, and any tags
Thank you 🙏