মুসুর ডালের পকোড়া রেসিপি

in Incredible India4 days ago

নমস্কার বন্ধুরা, সকলে কেমন আছেন? আশা করছি সকলেই ভালো আছেন আজকে আবারও নতুন একটা রেসিপি নিয়ে হাজির হয়েছি আপনাদের মাঝে। আশা করছি সকলেরই ভালো লাগবে।

IMG20250613203857.jpg

এ বছরে আষাঢ় মাস শুরু হতেই প্রত্যেক দিনই চলছিল অঝোরে বৃষ্টি। প্রায় গত ২৫ দিন ধরে টানা বৃষ্টি শুরু হয়েছিল। গত দুদিন একটু বৃষ্টি থেমেছে। বৃষ্টি আমার ভীষণ ভালো লাগে । কিন্তু এই বৃষ্টিতে অনেকেরই অনেক ক্ষতি হয়ে গেল। এই বৃষ্টির দিনে ঘরে বসে মুখরোচক খাবার খেতে ভীষণ ভালো লাগে। সন্ধ্যা হলে এটা ওটা বানাতে ইচ্ছে করে। আমার শাশুড়ি মা পেঁয়াজ ,রসুন , ডিম, মাংস এই সমস্ত জিনিস খায় না বলে সচরাচর আমাদের বাড়িতে খুব একটা ভালো খাবার তৈরি করতে পারিনা। আসলে আমরা খাব আর উনি খেতে পারবেন না এটা ভেবেই খারাপ লাগে। আমার যখন ইচ্ছা হয় তখন শুধুমাত্র বরের জন্য আর শ্বশুর মশাইয়ের জন্য খাবার বানায়। সে দিন ভীষণ ইচ্ছে করছিল মুসুর ডাল দিয়ে কোন রেসিপি বানানোর। তাই সকাল বেলায় ঘুম থেকে ওঠার পরে খানিকটা মুসুর ডাল ভিজিয়ে রেখেছিলাম।

কোন জিনিস বানানোর নাম শুনলে আমার বর ভীষণ আনন্দ পাই ।কারণ ও তেলে ভাজা খেতে ভীষণ পছন্দ করে। ও মুখরোচক খাবার বানানোর জন্য মাঝে মাঝেই জেদ ধরে। আমি সচরাচর তেলেভাজা একদমই খেতে চাই না। তাই খুব একটা বানিয়েও দেওয়া হয় না। সেদিন হঠাৎই মনে হলো সন্ধ্যা বেলায় কিছু বানিয়ে দেওয়ার জন্য। তাই সমস্ত কিছু আগে থেকেই রেডি করে নিয়ে শুরু করে দিয়েছিলাম। রেসিপিটি মুসুর ডালের পকোড়া কিংবা অনেকেই মুসুর ডালের বড়া বলে। তবে আমি অনেকটা মুসুর ডালের পকোড়ার মতোই বাড়ানোর চেষ্টা করেছিলাম। আমার যখন যেটা মন চায় আমি তখন সেটা বানিয়ে ফেলার চেষ্টা করি। বাড়িতে খুব একটা মুসুর ডাল খাওয়া হয় না বললেই চলে ।আর মসুর ডাল থেকে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন পাওয়া যায়। তাই এভাবেই মসুর ডাল মাঝে মাঝেই খাওয়া হয়। আমরা বিভিন্ন ধরনের পকোড়া খেয়েছি।ভেজ পকোড়া , চিকেন পকোড়া, পনির পকোড়া ইত্যাদি।কিন্তু আজকে আমার মুসুর ডালের পকোড়া রেসিপিটি আশা করি সকলেরই ভালো লাগবে।

চলুন তাহলে শুরু করি আজকে মুসুর ডালের পকোড়া রেসিপিটি:-

উপকরণ
নংসামগ্রীপরিমাণ
মুসুর ডাল১০০ গ্ৰাম
ছোট সাইজের আলু১ টা
পেঁয়াজ৩ টে
কাঁচা লঙ্কা৫ টা
লবণ১ চামচ
হলুদসামান্য
শুকনো লঙ্কার গুঁড়োহাফ চামচ
কালো জিরে১ চামচ
জিরে গুঁড়োসামান্য
১০সাদা তেলপরিমাণ মতো
১১টমেটোর সসপরিমাণ মতো

IMG_20250711_213857.jpg

প্রথম ধাপ

আমি আগে থেকেই পরিমাণ মতো মুসুর ডাল ভিজিয়ে রেখেছিলাম। ডালগুলো খুব ভালো করে ভিজে গেলে ভালো করে দুই থেকে তিনবার পরিষ্কার জল দিয়ে ধুয়ে নিয়েছিলাম। এরপর সমস্ত উপকরণ রেডি করে নিয়েছিলাম। যেমন- আলু, পেঁয়াজ, কাঁচালঙ্কা সাথে কালো জিরে ,হলুদ আর শুকনো লঙ্কার গুঁড়ো ।

IMG_20250711_214015.jpg

দ্বিতীয় ধাপ

এরপর একটা মিক্সার গ্রাইন্ডার মুসুর ডালটা খুব ভালো করে পেস্ট করে নিয়েছিলাম ।পেস্ট করার সময় সামান্য একটু জল দিয়েছিলাম ।বেশি জল দিলে পেস্ট একদম পাতলা হয়ে যাবে।

IMG_20250711_214144.jpg

তৃতীয় ধাপ

এরপরে পেস্ট করা মুসুর ডাল একটা পাত্রে ঢেলে নিয়েছি আর সমস্ত উপকরণ ওই মুসুর ডালের ব্যাটারের মধ্যে ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে। আমি মুসুর ডালের ব্যাটারের মধ্যে কালো জিরে ,শুকনো লঙ্কার গুঁড়ো ,হলুদ আর পরিমান মত লবণ দিয়েছি ।

IMG_20250711_214307.jpg

চতুর্থ ধাপ

এরপর সামান্য পরিমাণে জিড়ে গুঁড়ো, কাঁচা লঙ্কা কুচি কেটে রাখা পেঁয়াজ আর কেটে রাখা আলু সমস্ত উপকরণ দিয়ে হাত দিয়ে খুব ভালো করে মেখে নিতে হবে।

IMG_20250711_214510.jpg

পঞ্চম ধাপ

এবারে গ্যাস অন করে একটা কড়াই বসিয়ে দিয়েছি। আর কড়াই গরম হলে কড়াইতে পরিমাণ মতো সাদা তেল দিয়ে দিয়েছি। তেল গরম হলে এবারের বড়া কিংবা পকোড়ার সাইজ করে মুসুর ডালের ব্যাটারটা হাতের সাহায্যে অল্প অল্প করে তেলের মধ্যে দিয়ে দিতে হবে।

IMG20250613203427.jpg

ষষ্ঠ ধাপ

এরপর দুই পিঠ লাল লাল করে খুব ভালো করে ভেজে নিতে হবে। ভাজার সময় গ্যাস লো ফ্লেমে রাখতে হবে তাহলে বড়া ভিতরের সমস্ত উপকরণ খুব ভালো ভাবে সিদ্ধ হবে ।

IMG_20250711_213618.jpg

সপ্তম ধাপ

খুব ভালো করে ভাজা হয়ে গেলে তেল ঝরিয়ে একটা পাত্রে তুলে নিতে হবে।

IMG20250613203852.jpg

তৈরি

এরপর প্লেটে করে পকোড়া আর সাথে টমেটো সস দিয়ে সার্ভ করলেই তৈরি হয়ে যাবে গরম গরম মুসুর ডালের পকোড়া।

রেসিপিটি অত্যন্ত সুস্বাদু ।সন্ধ্যাবেলায় চা কিংবা কফি সমস্ত কিছুর সাথে খেতে খুব ভালো লাগে। টমেটো সস দিয়ে খেতে দারুন লাগে। আমাদের বাড়িতে ভাজতে ভাজতে আমার বর অর্ধেক খেয়ে শেষ করে ফেলেছিল। খেয়ে ভীষণ সুন্দর লেগেছিল। খেতে বেশ মুচমুচে হয়েছিল ।তবে শাশুড়ি মায়ের খেতে ভীষণ ইচ্ছে করছিল ।কিন্তু পেঁয়াজ দেয়ার কারণে খেতে পারেনি। আপনারাও বাড়িতে এই রকম সহজ পদ্ধতিতে মুসুর ডালের পকোড়া তৈরি করতে পারেন ।এমনকি অন্যদের তৈরি করে খাওয়াতে পারেন ।আশা করি সকলেরই ভীষণ ভালো লাগবে। ছোট থেকে বড় সকলেই খেতে ভীষণ পছন্দ করবে। তবে আপনারা চাইলে এর মধ্যে ধনে পাতা এড করতে পারেন। যেহেতু এখন অফ সিজন ।তাই হাতের কাছে সব সময় ধনে পাতা পাওয়া যায় না। তাই আমি ধনেপাতা এখানে ব্যবহার করিনি।

সমস্ত উপকরণ আমি আমার পছন্দমত ব্যবহার করেছি। আপনারা চাইলে আপনাদের পছন্দমত সমস্ত উপকরণ ব্যবহার করতে পারেন। আলু খেতে আমি ভীষণ পছন্দ করি। তাই এখানে পকোড়ার মধ্যে আলু দিয়েছিলাম। আলু দিলে পরিমাণে একটু বেশি হয়। আপনারা চাইলে নাও দিতে পারেন। মাঝে মাঝে বাড়িতে এরকম নিত্যনতুন রেসিপি বানিয়ে খেতে বেশ ভালো লাগে। রেসিপিটি আপনাদের কেমন লেগেছে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।


আজ এই পর্যন্তই ।আবারও নতুন কোন রেসিপি নিয়ে হাজির হব আপনাদের মাঝে ।সকলে ভালো থাকুন ,সুস্থ থাকুন।

Sort:  
Loading...