ছুটি শেষে,, ঢাকায় ফেরা।
Photo edited by canva
ঢাকায় যাওয়ার পরে, এই প্রথম বড় একটা লম্বা ছুটি কাটিয়েছি বলা যায় দীর্ঘ এক মাস। হাজবেন্ড এসেছিলো আমাকে দিতে এক সপ্তাহ বাদে চলে গিয়েছে। আর আমি একমাস পূর্ণ করে আজ ঢাকায় ফিরছি। এই কয়েক টা দিন আমি ভীষণ আনন্দে, সুখে এক কথায় বলা যেতে পারে পায়ের উপর পা রেখে খেয়েছি আর ঘুমিয়েছি।
তাও এই শান্তিটুকু করার সময় হয়েছে প্রায় অনেক বছর পরে কারণ, বিয়ের পরে আর এমন সুযোগ হয়নি আমার। এবার ছুটিতে বাড়িতে গিয়ে বাবার বাড়ি শশুর বাড়ি দুইটা জায়গাতেই আমি ভীষণ আনন্দে দিন কাটিয়েছি। এমন দিন জীবনে প্রতিটা সময় পেতে ইচ্ছা করে তবে, শুধু নিজেকে নিয়ে ভাবলে তো চলবে না সংসার ধর্ম হচ্ছে নাকি বড় ধর্ম।
শুধু কি নিজেকে নিয়ে ভাবলে চলবে আমার বেচারা হাজবেন্ড, আজ অনেক টা দিন ধরে রান্না করে খাচ্ছে তার কি জানি কতই না কষ্ট হচ্ছে। যে মানুষ টা আমার জন্য এত কষ্ট করছে, আমার পড়ালেখা আমার কাজের দিকে নজর দিচ্ছে। তাকে আর কয় টা দিনই বা কষ্ট দেওয়া যায়।তাই সব কথা চিন্তা করে আজ নিজের গন্তব্য ফেরার উদ্দেশ্যে নিজেকে তৈরি করছি।
তবে, ভীষণ রকমের খারাপ লাগছিলো যখন শ্বশুরবাড়ি থেকে এসেছিলাম আমার শাশুড়ির কান্না আর আমার শ্বশুরের মন খারাপ। এটা স্পষ্টভাবে প্রকাশ পায় তারা আমাকে মন থেকে অনেক ভালোবাসে। আবার এখন বাবার বাড়ি থেকে চলে যাচ্ছি সবকিছু নিয়ে রেডি হয়ে বের হওয়ার সময় আমার এত বেশি কষ্ট লাগছিলো মনে হচ্ছে যেন বুকটা ফেটে যাবে । এই প্রিয় মানুষগুলো প্রিয় মুখগুলো আবার না হয় কত দিন বাদে দেখবো এতো ভালোবাসা জন্য নিজেকে আবার অপেক্ষা করে রাখতে হবে।
তবুও কিছু করার নেই, যেতে তো হবেই তাই সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নিজের মনটা শক্ত করে বেরিয়ে পড়েছি আমরা ঢাকার আসার জন্য। আজ আমার সাথে আমার আম্মু যাবে সে গিয়ে আমাকে দিয়ে আসবে আবার আগামীকালকে। যদিও আমি একা যেতে পারতাম তবে যেহেতু আমি খানিক টা অসুস্থ বোধ করছিলাম।
আমি এত করে বললাম একটা বস্তা নিয়ে যাওয়া যাবেনা কে সোনে কার কথা। কিছু বললাম না কারণ তাহলে আবার রাগ করবে, হয়তো তিনি ভালোবেসে দিয়েছেন আর আমি যদি রাগ দেখাই তাহলে ব্যাপারটা কেমন হয়ে গেল না। তাই নিজেকে মানিয়ে নিয়ে এই বস্তা টা সাথে করে টিকিট কেটে গাড়িতে উঠে পড়লাম।
এরপর আমার আব্বু আমার শ্বশুর সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলেছি, চলেছি পদ জানোয়ার শেষ হচ্ছিল না আমার কাছে। ঘুমানোর চেষ্টা করছিলাম তবে আমার একটা অভ্যাস গাড়িতে উঠলে ঘুম খুব একটা আসে না, তাই একটু সময় চুপ করে থেকে বাইিরে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখার চেষ্টা করছিলাম।
কি বলবো এক কথায় কিছু কিছু দৃশ্য দেখার মতো,কোথায় কোথায় সরিষা ক্ষেত, আবার মাঠের ভিতর দিয়ে বড় বড় তালগাছ, এছাড়াও অসংখ্য জমির উপর জমি রয়েছে পড়ে একদম পরিষ্কার করা যেখানে ছোট ছোট চারা রোপন করা হয়েছে একসাথে অনেক টা দূর নিয়ে সবুজে ঢাকা, এর মাঝ দিয়ে গিয়েছে আবার রেল লাইন, এসব দেখতে দেখতে কখন যেন গ্রাম ছাড়িয়ে শহরের পরিবেশ করলাম।
এবার দীর্ঘ সময় পার করে আমাদের নামার সময় হয়েছে, আমরা গুলিস্তান পর্যন্ত এসে পড়েছি। এবং এখানে নামার পরে আমার একটা সিএনজি নিলাম। পিলখানা বিজিবি নাম্বার গেট পর্যন্ত যাওয়ার জন্য, এরপরে গেটের কাছে হাসবেন্ড আসলো তিনি ভিতরে ঢুকিয়ে দিলেন এরপর তাকে সাথে নিয়ে আমরা বাসা নিচ পর্যন্ত চলে গিয়েছিলাম।
এরপরে সব বস্তা, ব্যাগ, সিএনজি থেকে নামিয়ে একদম সোজা আমরা উপরে চলে আসি। বাসায় ফিরে বাসার যা অবস্থা দেখি তা না হয় অন্য পোস্টে বর্ণনা করা যাবে,,আমি ফ্রেশ হয়ে বেশ খানিকটা সময় রেস্ট নিয়েছিলাম। এরপর আমার আম্মু এবং আমার হাজব্যান্ড মিলে সব কিছু গুছিয়ে রাখলেন। এবং পরবর্তীতে খাবার খেয়ে ফোন টা হাতে নিয়েছিলাম।
যাই হোক সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন, পরবর্তী পোস্টগুলো প্রতিদিন পাওয়ার জন্য সবাই বেশি বেশি দোয়া করবেন আমার জন্য। আল্লাহ হাফেজ।।
আপনার লেখাটি পড়ে মনটা ভরে গেল! এত সুন্দরভাবে অনুভূতিগুলো প্রকাশ করেছেন, যেন পুরো জার্নিটাই চোখের সামনে ভেসে উঠল। পরিবারের প্রতি আপনার ভালোবাসা এবং বিদায়ের কষ্ট সত্যিই হৃদয়স্পর্শী। আল্লাহ আপনাকে সুস্থ ও ভালো রাখুন। পরবর্তী পোস্টের অপেক্ষায় রইলাম!
আপনার পোস্টটি পরে জানতে পারলাম, অবশেষে ঢাকায় চলে আসলেন, যাই হোক দুলাভাইয়ের জন্য ভালই হবে। বেচারা প্রায় এক মাস ধরে বাইরের খাবার খাচ্ছে, আপন মানুষদের দূরে রেখে আসলে। মন তো একটু খারাপ হবেই, আর ঢাকা শহরে যেহেতুক, দুলাভাই আছে এই বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। আপনার পোস্টটি পড়ে মনটা খারাপ লাগলো, আবার ভালো লাগলো, কেন না দীর্ঘ এক মাস পর আপনি ঢাকায় আসলেন। ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন, আল্লাহ হাফেজ।
কথায় আছে ,দেখলে মায়া না দেখলে ছায়া আসলে আমাদের প্রিয় মানুষগুলো ছেড়ে আমরা দূর দেশে থাকি। ওদেরকে কাছে পাওয়ার একটা আকাঙ্ক্ষা থাকে। অনেকদিন পরে ওরা আমাদেরকে কাছে পেয়ে অনেক খুশি হয় ।
বাবা-মা বলেন কিংবা শ্বশুর শাশুড়ি বলুন সকলেরই ইচ্ছে তার ছেলে-মেয়ে সবাই কাছাকাছি থাকুক। আমরা কর্ম ব্যস্ততার জন্য হয়তোবা বছরে একবার যখন গ্রামে বাড়িতে যাই সেই আনন্দের দিনগুলো যেন দ্রুত শেষ হয়ে যায়।
যখন আবার সেই বাড়ি থেকে ফিরে আসি তখন ভীষণ কষ্ট হয়। ঠিক তেমনি আপনারও শ্বশুরবাড়ি ,বাবার বাড়ির সবাইকে ছেড়ে ঢাকা শহরে চলে আসার সময় খুব কষ্ট হয়েছিল ।যেহেতু আপনি এই অবস্থায় একা একা আসবেন তাই আপনার আম্মুকেও সাথে নিয়ে এসেছে ।
আম্মু কাছে থাকলে অনেকটা কষ্ট কমে যাবে । আপনার এই সময় মাকে খুবই দরকার। আপনাদের জন্য রইল অনেক অনেক ভালোবাসা ও শুভকামনা