আমার জীবনের মূল্যবান মানুষ গুলোর মধ্যে থেকে একটা মানুষকে হারিয়ে ফেললাম।
এই ছোট জীবনে অনেক কিছু শিখেছি, অনেক কিছু পেয়েছি, অনেক কিছু হারিয়েছি। তবে হারানোর চাইতে পাওয়ার সংখ্যা গুলোই বেশি ছিলো।তবে, কোন কিছু পাওয়ার আনন্দের চাইতে মূল্যবান মানুষকে হারানোর যন্তনা কতখানি কতটা বেদনাময় হতে পারে, তাই এই কয়দিনে বুঝিয়ে দিয়ে গিয়েছে আমার শ্বশুর না ফেরার দেশে গিয়ে।
বিবাহিত প্রত্যেক টা মেয়ের জীবন হয় খানিকটা কষ্টের খানিকটা আনন্দের, ভালো মন্দ মিলেই যেহেতু আমাদের এই জীবনটা তাই এই দুই এর সমন্বয়ে হবে এটাই স্বাভাবিক। তবে আমার ক্ষেত্রে হয়তো সৃষ্টিকর্তা আনন্দ ভালোবাসা দিয়েই রেখেছিল এই কয়টা বছর, প্রত্যেকটা মেয়ের জীবন শ্বশুরবাড়ি যুদ্ধের বাড়ি বলে তবে আমি বলবো আমার জন্য ছিল সুখের বাড়ি।
আর এর জন্য অন্যতম কারণ হচ্ছে আমার শ্বশুর এই বাড়ি প্রত্যেকটা মানুষ আমাকে ভালোবাসে তবে শ্বশুরের যে ভালোবাসা আমি পেয়েছি যে আদর যে সেহ্ন সে আমাকে দিয়েছে, যতটুকু ভরসা আমি তার উপরে করতে পেরেছি।একটা আবদার করার মতন জায়গা ছিল আমার। প্রত্যেকটা কাজে আমাকে যে পরিমাণে সাপোর্ট করেছে তা হয়তো আর কোনদিন ও পাবো না।
pixabay
মানুষটা আমাকে এত বেশি ভালবাসেছে, যদি বলি কখনো বউ চোখে দেখিনি সব সময় মেয়ের মতো ভালোবেসে, এত বেশি ভালবেসেছে যে তার মৃত্যুতে যেন আমি এত বেশি আঘাত পেয়েছি যেন নিজেকে নিজেই ভুলে গিয়েছি। কি হবে আমার? কে আমার এত বেশি খেয়াল রাখবে? আমায় এত বেশি ভালো জেনেছে বুঝবে? আমি কোনটা পছন্দ করি কোনটা করি না আমার মন কে আমাকে সান্ত্বনা দিবে?এরকম হাজারো প্রশ্ন যেন আমার ভিতরে শুধু ঘুরপাক খাচ্ছে।
কত স্বপ্ন ছিল আমার বিয়ে হয়েছে খুবই কম বয়সে এখন অনার্স থার্ড ইয়ারে পড়ছি একটা বছর সে আমাকে দিয়ে এক বছর ও গ্যাপ দেয়নি। সব সময় বুঝেছ আমি কোনটা করতে বেশি পছন্দ করি তার অনেক ইচ্ছা ছিল আমি একদিন প্রাইমারি স্কুলে চাকরি করবো সব স্বপ্নগুলো কি ভেঙ্গে যাবে।
কখনো আমাকে একটু সময়ের জন্য মন খারাপ করতে দেয়নি, সব সময় আমার কোনটা লাগবে বলার আগে হাজির করেছেন। হয়তো তাদের থেকে দূরে ছিলাম, কিন্তু প্রত্যেকটা দিন আমার বাবার থেকেও আমার শশুর আমার বেশি খোঁজ নিয়েছে প্রতিটা দিন চার থেকে পাঁচ বার আমি তার সাথে কথা বলেছি, করণীয় কারণে আমার খোঁজ নিয়েছে।
বর্তমানে আমি মা হতে চলেছে সে অনেক আনন্দে ছিলো আমাদের পরিবার একটা নতুন সদস্য আসবে।তাকে ঘিরে কত স্বপ্ন ছিল তার, আমার এই সময়টা তে তিনি আমার এত যত্ন নিয়েছে এত খেয়াল করেছে, আমি কোনটা খেতে পছন্দ করি ফোনটা খেতে করি না, সব বিষয়গুলো তে তিনি নজর দিতো,তার এমন ভালোবাসা আমি আর কখনোই পাবো ন,,এটা ভাবতেই খুব খারাপ লাগে।
অনেক খারাপ লাগে আমি তার জন্য কতটুকু করেছি, তার স্বপ্নটাও পূরণ করা হলো না, নিজেকে বড্ড অসহায় লাগে, জীবনের সব আশা ভরসায় যেন এখানে থেমে গেলো,এত দায়িত্ব আমার মাথার উপরে কি হবে আমার। হঠাৎ করে তার এমন চলে যাওয়া আমি যেনো কোনো ভাবে এই মেনে নিতি পারছি না,,
pixabay
আজ পাঁচটা দিন হয়ে গেলো, তিনি এই পৃথিবী থেকে চলে গিয়েছে, কিন্তু আমি এই জিনিসটা মানতে পারছি না আমার মনে হয় তিনি আমাকে বাড়িতে ঢুকে যেভাবে ডাক দিতো সে রকম ডাকছে একটা কিছু নিয়ে এসে যেভাবে আমার হাতে দিতে ধরিয়ে সেটা কোনভাবেই জানি আমি ভুলতে পারছি না। এতটা আঘাত পেয়েছে যেন পাথর হয়ে গিয়েছে, কোন কিছুই প্রতি মায়া কোন কিছু পাওয়ার ইচ্ছা কোন কিছুর উপরেই যেন তেমন কোন স্বাদ নেই আমার।
এই খারাপ লাগার বিষয়গুলো হয়তো বোঝানো অসম্ভব, কেন জানিনা নিজেকে বারবার অসহায় মনে হচ্ছে। এসতো সুস্থ স্বাভাবিক একটা মানুষ যেদিন মারা গেল সেদিনও তার সাথে আমি দুই কথা বলেছি তার আগের দিন অনেকটা সময় কথা বলেছি। কত কথা আমার সাথে শেয়ার করতো এত জায়গা জমির মালিক তিনি ছিল কিন্তু কখনোই কোন কিছুর উপরে তার লোভ ছিলো না।তিনি আমাকে খুব বিশ্বাস করতো।
এত বড় বাড়ি এত বড় ঘর সংসার সবকিছু আমার কাছে যেন একদম ভেঙ্গে পড়েছে ,, পরিবারের গাছটা এই চলে গেল ,, হাসবেন্ড চাকরি ক্ষেত্রে দূরে থাকে হয়তো কিছুদিনের জন্য কাছে গিয়েছি এরপরে আমি কিভাবে শাশুড়িকে নিয়ে এত বড় সংসার সামলাবো। জীবনটা আমার কাছে মনে হয় একদম এলোমেলো হয়ে গেল।
আমার জীবনের একজন মূল্যবান ব্যক্তিকে আমি হারিয়ে ফেলেছি এই খারাপ লাগার ভাষা এভাবে লিখে বোঝানো যাবে না এটা কতটা বেদনাময় সেটা শুধু আমি উপলব্ধি করতে পারছি। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন যেন, সেই সাথে আমার শ্বশুরের জন্য ও সৃষ্টিকর্তার নিয়মে সবকিছু চলে, তিনি যা করে আমাদের মঙ্গলের জন্যই করে আর এটা বুঝেও কেন যেন বোঝানোর চেষ্টা করতে পারছি না মনকে, দোয়া করবেন সৃষ্টিকর্তা যেন তাকে জান্নাতুল ফেরদাউস দান করে।
ভালো থাকবেন, জানিনা আবার কবে থেকে নিজের মতো করে কাজ করতে পারবো,কারণ এখন আমার কোন কিছুই আর আগের মতো ভালো লাগে না, সবকিছু থেকে যেন আমি আনন্দ, আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি।
আমাদের জীবনের সবচাইতে মূল্যবান সম্পদ হচ্ছে আমাদের বাবা-মা এরপরে আমরা যাদেরকে বাবা-মায়ের জায়গায় রাখে তারা হচ্ছে আমাদের শশুর শাশুড়ি জীবনের এই মানুষগুলো যখন আমাদেরকে তাদের মেয়ের মত দেখে আমাদের ইচ্ছা গুলো পূরণ করে তখন মনে হয় এই মানুষগুলোই হচ্ছে আমাদের জীবনের সবচাইতে শ্রেষ্ঠ মানুষ।
আমরা এই পৃথিবীতে থাকবো না সবাই চলে যাব তবে প্রিয় মানুষগুলোকে হারানোর বেদনা সবাই সহ্য করতে পারে না আপনি আপনার শ্বশুরকে হারিয়ে অনেক বেশি আঘাত পেয়েছেন আসলে আঘাত পাওয়াটা স্বাভাবিক যে মানুষটা আপনাকে মেয়ের মতো করে ভালোবেসেছে আপনার ইচ্ছা আমার ইচ্ছার মূল্য দিয়েছে সে যখন হারিয়ে গেছে তখন অনেক কিছুই আপনার জীবন থেকে চলে গেছে।
আমি ঠিক জানিনা তারপরেও বলছি হয়তোবা আপনার শ্বশুরেরর রূপে আপনার ঘরে একটা পুত্র সন্তান আসবে তাকে আপনার শ্বশুরের মত করেই লালন পালন করে বড় করে তুলবেন যে চলে গেছে তার জন্য দোয়া করেন যেন পরকালে তিনি ভালো থাকতে পারে।
একদম ঠিক কথা বলেছেন, আমার এই জীবন থেকে অনেক কিছু হারিয়ে ফেলেছি যেটা হয়তো আর কখনো ওভাবে পাবো না,, খুব দুঃখ লাগে আপসোস হয় কিন্তু একটা কোথাও গিয়ে বিশ্বাস করি সৃষ্টিকর্তা যেটা করে হয়তো তিনি আমার ভালোর জন্যই করেছে,,।
তাই চেষ্টা করছি নিজেকে আবার নিজের জায়গায় ফিরিয়ে আনার সব আঘাতগুলোকে ভুলে যাওয়ার সব দুঃখ কষ্ট ভুলে নতুন করে শুরু করার যদিও জানি সামনে আমার অনেক সংগ্রাম রয়েছে, অনেক কিছু সম্মুখীন হতে হবে আমাকে, তাই উপরওয়ালার উপরেই সবকিছু এর ভরসা রাখছি।
একজন কাছের মানুষকে হারানোর কষ্ট সত্যিই অবর্ণনীয়। আপনার শ্বশুর যে আপনাকে মেয়ের মতো ভালোবাসতেন, আপনাকে সাহস দিতেন, যত্ন নিতেন এটা নিঃসন্দেহে অনেক বড় আশীর্বাদ ছিল। তার স্মৃতি আপনাকে সারাজীবন পথ দেখাবে, আপনাকে শক্তি দেবে।
আপনার জন্য দোয়া রইলো, আল্লাহ যেন আপনাকে এই শূন্যতা কাটিয়ে ওঠার শক্তি দেন এবং আপনার আগামীর পথ সহজ করে দেন। আপনি মা হতে চলেছেন, এই সময়টায় আপনাকে আরও বেশি সচেতন ও শক্ত থাকতে হবে। আপনার শ্বশুরের স্বপ্ন যেন বাস্তবায়িত করতে পারেন, সে শক্তি আল্লাহ আপনাকে দিন এই কামনা করি।
আল্লাহ আপনাকে শান্তি দিন, ভালো রাখুন।
পরিবারের যে কোন সদস্যকে হারানোর যন্ত্রণা সত্যিই খুব বেদনাদায়ক। সকলের জীবনে এমন এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয় সেখান থেকে নিজেকে বের করা খুবই কঠিন হয়ে পড়ে। তবুও পৃথিবীতে প্রত্যেক মানুষ যেমন জন্মেছে তাদের কে একদিন না একদিন পৃথিবী ছেড়ে স্বর্গলোকে যেতেই হবে। এটাই তো নিয়তির লেখা। আপনার শ্বশুরমশাই আপনাকে ভীষণ ভালোবাসতো। আসলে ভালোবাসার মানুষগুলোই এরকম ভাবে চলে যাই। এরকম পরিস্থিতির মুখে সকলকেই পড়তে হবে একদিন না একদিন। আপনার শ্বশুর মশায়ের মত আমার শ্বশুরমশাই আমাকে ভীষণ ভালোবাসে নিজের ছেলের থেকে আমাকে বেশি ভালবাসে এমনকি নিজের সমস্ত কথা আমাকে শেয়ার করে। পরিবারের মধ্যে একটা মানুষ থাকতে থাকতে হঠাৎই তার চলে যাওয়া একদমই মেনে নেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। যাই হোক আপনার শ্বশুরমশাই আর তার শান্তি কামনা করি। ভালো থাকবেন। সুস্থ থাকবেন।