অক্ষয় তৃতীয়া উপলক্ষে আমাদের শোরুমে পুজো

in Incredible India3 months ago

নমস্কার বন্ধুরা, আশা করছি সকলে সুস্থ আছেন। আজকে আমি আপনাদের সকলের সাথে শেয়ার করতে চলেছি অক্ষয় তৃতীয়ার মুহূর্ত।

আজ অক্ষয় তৃতীয়া । বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষের তৃতীয়া তিথিকেই অক্ষয় তৃতীয়া বলা হয়। হিন্দু মতে এই শুভ দিনে মহাভারতের রচনা আরম্ভ হয়েছিল ।এদিনই ক্রেতা যুগের শুরু হয়। হিন্দু পুরান মতে এদিন অনেক ধরনের শুভ কাজ হয়েছিল। তাই বাঙালির ঘরে ঘরে এবং হিন্দু ধর্ম অবলম্বনকারী সকলে এই দিনকে বিশেষভাবে পালন করে থাকেন।

কেউ কোন শুভ কাজ সূচনা করার জন্য এই দিনকে বেছে নেন। যেমন অনেকেই এই দিন নিজের প্রথম ব্যবসা শুরু করেন অথবা নিজস্ব কোন দোকান যদি খুলতে হয়, সেটা আজকের দিনেই খুলে থাকেন। ' অক্ষয় ' শব্দের অর্থ হলো যেটা ক্ষয় হয় না। তাই এই দিন সেই সমস্ত কাজ করা হয়, যে কাজের কখনো ক্ষয় হবেনা ।সেটা অক্ষয় অর্থাৎ চিরকালের জন্য রয়ে যাবে। এই প্রার্থনাতেই এই দিনকে উদযাপন করা হয় ।এছাড়াও অক্ষয় তৃতীয়ার দিন বিষ্ণুর ষষ্ঠ অবতার পরশুরাম জন্ম নিয়েছিলেন। তাই এই দিনটিকে পরশুরাম জয়ন্তী হিসেবেও পালন করা হয়ে থাকে।

20250430_132838.jpg
আলপনা দিতে মগ্ন আমি

আমাদের পুতুলপট্টিতে যে দুটো শোরুম রয়েছে। তাতে অক্ষয় তৃতীয়াতে পুজো হয়ে থাকে। যে শোরুমটা প্রথম কেনা কেনা হয়েছিল, সেই শোরুম এই আমাদের পূজো হয়। আমাদের পুজোতে তিন জোড়া লক্ষী গণেশ রাখা হয়। লাল লক্ষী গণেশগুলি আমাদের কারখানা থেকেই তৈরি ।প্রত্যেক বছর এই তিন জোড়া লক্ষী গণেশ ব্রাহ্মণ এসে পুজো করেন। তিন জোড়া লক্ষ্মী গণেশ কারণ একটি কারখানার জন্য, একটি বড় দোকানের জন্য, আরেকটি ছোট দোকানের জন্য।

পহেলা বৈশাখের দিন যেমন দোকানে দোকানে পুজো হয়ে থাকে ,অনেকে আবার অক্ষয় তৃতীয়ার দিনকে শুভ বলে মেনে নিয়ে অক্ষয় তৃতীয়াতেই পুজো করে থাকেন ,ঠিক যেমন আমাদের দোকানে হয়।।

20250430_094227.jpg

গত দুদিন ধরে প্রচন্ড শরীর খারাপ। এমনকি আমার প্র্যাকটিক্যালের কাজ আমি সম্পূর্ণ করতে পারিনি। এদিকে পাঁচ তারিখে পরীক্ষা।। বাঁধাই করে পরীক্ষার হলে সমস্ত খাতা নিয়ে ঢুকতে হবে। এখনো ৬০ পাতা লেখা বাকি। দুদিন এমন শরীর খারাপ হলো যে , বিছানা থেকে উঠতেও পর্যন্ত পারছিলাম না। তাই আজকে সকাল বেলা থেকে খুব একটা হুটোপাটা আমাকে করতে হয়নি। প্রত্যেক বছরের মত আমি ঠিক করেছিলাম এবারেও পুরোটা নিজের হাতেই বাজার করব ।সাথে মাকেও সকাল থেকে সাহায্য করবো। কিন্তু বাজার আমার দ্বারা সম্ভব হলো না শরীর অসুস্থ থাকায়। গতকাল সন্ধ্যেবেলায় দোকানের স্টাফরা গিয়েই বাজার করেছে। দেখলাম ওরা ভালোই বাজার করতে পারে।

1000240616.jpg

শরীর ভালো না থাকায় আজ সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে দেখি, মা অনেকটা কাজই এগিয়ে রেখেছে। আমি মোটামুটি সাতটা পনেরো নাগাদ ঘুম থেকে উঠে স্নান করে রেডি হয়ে নিলাম। তাও আজকে সকাল থেকে উঠে শরীরটা ভালো লাগছিল, তাই অনেকদিন পরে একটু ফ্রেশ হলাম, সাজুগুজু করলাম ,নতুন জামা পড়লাম। তারপর আমাদের দোকানের স্টাফ দুজন, আর কারখানা থেকে কিছু জন চলে আসলেন। তারা সকলেই স্নান করে এসেছিলেন। আমাদের বাড়ি থেকে সমস্ত পুজোর জোগাড় নিয়ে তারা দোকানে চলে গেলেন।

20250430_082741.jpg
পুজোর জিনিসপত্র নিয়ে দোকানের দিকে যাওয়া হচ্ছে

মা সমস্ত জোগাড় করে রেখেছিল ,শুধু নিয়ে গিয়ে দোকানে রেখে দেওয়া। ওদের সাথে আমিও চলে গেলাম এবং আমিও গোছাতে শুরু করলাম। সমস্ত গোছাতে গোছাতে গিয়ে দেখি ব্রাহ্মণ এসে হাজির। এই ব্রাহ্মণ আমাদের বাৎসরিক পুজো করে থাকেন সমস্ত। তাই আমাদের দেরি হচ্ছে দেখে সেও হাতে হাতে করতে শুরু করে দিল।

20250430_092215.jpg

পড়াশোনার চাপে মোটামুটি দেড় মাস হল ব্যবসার দিকে আমার আসা হয় না। বাবাকে বলে রেখেছি পনেরো তারিখটা গেলে আবার ব্যবসায় হাত দেব। আস্তে আস্তে পুজো শুরু হল। ঠাকুর মশাই খুব সুন্দর করে এক এক করে ধাপে ধাপে পূজো করতে লাগলেন। এই সমস্ত ছবিগুলি আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করব বলে তুলে রেখেছি। আর আমি ওই ফাঁকে আলপনা দিচ্ছিলাম ছোট দোকানের সদর দরজায়।

20250430_093717.jpg

আমাদের দোকান আমাদের বাড়ি থেকে হাঁটা পথে খুব জোর দু মিনিট।তাই বাড়ি থেকে যা যা ভুলে গিয়েছিলাম ,মাঝেমধ্যে আনতে পাঠাতে হচ্ছিল। আসলে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় পুজো করা সত্যিই অনেক চাপের ।সমস্ত জিনিস অত মনে করে নিয়ে যাওয়া যায় না । তাও আমার মা এতটাই সবকিছু গুছিয়ে রাখে ,যে আমাদের এত চিন্তাই করতে হয় না। আমি আজ অব্দি মায়ের মতন হতে পারলাম না। আমি পুরোপুরি মায়ের উল্টো, একদম অগোছালো।

20250430_093804.jpg

কিছুদিন পরে বাড়িতে বুদ্ধ পূর্ণিমার পুজো আছে। সেই পুজো আমাদের দোতলার নতুন ঘরগুলোতেই হবে। লোকজন নিমন্ত্রিত থাকবে এবং বেশ বড় করেই করা হবে। তাই অক্ষয় তৃতীয়ার দিন এই পুজোটা একটু ছোটখাটো মধ্যেই সারা হয়েছিল। বলতে গেলে বাড়িতে মিস্ত্রি কাজ করছে অনেকদিন ধরে। তাই শুধু আমার বলে নয়, মা বাবা সকলেরই শরীর প্রচন্ড খারাপ করে গেছে। বাড়িতে রঙের মিস্ত্রি ,কাঠের মিস্ত্রি, আবার লাইটের মিস্ত্রি একসাথে প্রত্যেকদিন কাজে আসে। তাই একটু ছোটখাটো করেই পুজোটা সারা হলো।

20250430_092208.jpg

পয়লা বৈশাখের দিন আমরা যেমন দোকানে দোকানে মিষ্টি আনতে যাই হালখাতা করতে গিয়ে। অক্ষয় তৃতীয়ার জন্য আমাদের দোকানেও মোটামুটি চল্লিশ প্যাকেট মত সন পাপড়ির প্যাকেট কেনা হয়েছিল। পরিচিত সকলের বাড়িতে বাড়িতে দেওয়ার জন্য। পূজো হতে হতে হঠাৎ করে লক্ষ্য করি , লাড্ডু কেনা হয়নি। আমি আবার মিষ্টির দোকান থেকে লাড্ডু কিনে নিয়ে আসলাম।

20250430_095017.jpg
পঞ্চপ্রদীপ এর আরতী

তারপর আমরা অঞ্জলি দিলাম। ঠাকুরমশাই নতুন খাতা উদ্বোধন করে দিলেন। সুন্দর করে আরতী করলেন। তারপর পুজো শেষ হয়ে যাওয়ার পর আমি সকলকে ফলপ্রসাদ এবং সাথে মিষ্টি দিলাম। আর সকলের বাড়িতে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হল সন পাপড়ির প্যাকেট।

20250430_094643.jpg
নতুন হিসেবের খাতা

প্রথমেই আমাদের পুতুল পট্টি এলাকায় যতগুলো দোকান রয়েছে, সব দোকানেই একটা করে প্যাকেট দিয়ে আসলো আমাদেরই একজন স্টাফ। পুজো চলাকালীন মোটামুটি চার থেকে পাঁচ বার বাবার কাছে ফোন এসেছে বাড়ি থেকে। যেহেতু মিস্ত্রি কাজ করছে ,বারবার ফোন করছে। মা বারণ করেছিল আজকের দিনে অন্তত মিস্ত্রিদের কাজ বন্ধ রাখতে, কিন্তু বাবা শোনেনি ,কারণ সামনে আবার পুজো আছে বাড়ির। তাই যত তাড়াতাড়ি কাজ কমপ্লিট করা যায়।

20250430_093732.jpg

সকাল বেলায় ঈশানকে পিঙ্কি দিদি পড়াতে এসেছিল। পিঙ্কি দিদি চলে যাওয়ার পরেই ঈশান পূজোতে যোগদান করেছে। ঈশান যখন গেল। তখন সবে ব্রাহ্মণ পূজোতে বসলো। মোটামুটি তখন নটা পার হয়েছে।যাইহোক ঠাকুরের আশীর্বাদে অক্ষয় তৃতীয়ার দিনের পুজোটি খুব সুন্দর ভাবে সম্পন্ন হয়েছে আজকে। আপনাদের সকলের সাথে পুজোর মুহূর্তগুলো শেয়ার করতে পেরে অনেক ভালো লাগলো।

Sort:  
Loading...

💦💥2️⃣0️⃣2️⃣5️⃣ This is a manual curation from the @tipu Curation Project

@tipu curate

Loading...
 3 months ago 

তোমাকে জানাই শুভ অক্ষয় তৃতীয়ার আন্তরিক প্রীতি শুভেচ্ছা। বাড়ির কাছাকাছি দুজনে থেকেও যেন অনেক যুগ পর পর দুজনে দেখা হয়। তাই তোমার শরীর খারাপ আমি একদমই জানি না। প্রত্যেকবার তোমাদের বাড়িতে এমন কি দোকানে অক্ষয় তৃতীয়ার পূজা হয় এটা আমি জানি। বাড়িতে পুজো হলেই প্রসাদ বাড়িতে হাজির হবে এটা দেখলেই বোঝা যায় তোমাদের বাড়িতে পুজো হয়েছে। দোকানে পুজোর সমস্ত জিনিস বাড়ি থেকে রেডি করে নিয়ে গিয়েছিলে। এখন তো বাড়িতে এমনকি দোকানে সব জায়গাতে পুজোর দায়িত্ব তোমার কাঁধেই পড়ে। আজকের অক্ষয় তৃতীয়ার পুজো খুব সুন্দর ভাবে কাটানোর মুহূর্ত শেয়ার করেছ। আশা করি আজকের দিনটি খুব ভালো কেটেছে।।