সারপ্রাইজ
নমস্কার বন্ধুরা, আশা করছি আপনারা সকলে সুস্থ আছেন। গতকালকে আমি আপনাদের সকলের সাথে শেয়ার করেছিলাম আমরা কিভাবে মজা করেছি নারায়ণ পূজোর প্রসাদ খেতে গিয়ে উত্তম জেঠুর বাড়িতে। আজকে আপনাদের এক হাস্যকর ঘটনা শেয়ার করতে চলেছি। সেদিন খিচুড়ি প্রসাদ খাওয়া হয়ে যাওয়ার পর কি কি হল ,সেটাই আজ শেয়ার করব।
আমার বাবার বন্ধুরা এবং বাকি আমরা যারা রয়েছি আমরা সবাই ভীষণই হাস্য রসিক, সবাই সকলের সাথে কথা বলতে এবং হাসতে ভীষণ ভালোবাসে। তাই আমরা যখন সবাই এক জায়গায় হই ,তখন রীতিমতো মনে হয় এটা একটা পাগলা গারদ। আমরা যে কি পরিমাণে হাসাহাসি করি সবাই মিলে, তা আমাদের সামনে থেকে কেউ না দেখে বুঝতে পারবে না কেউ।। আমাদের মধ্যে এই ভালোবাসার সম্পর্কটা অটুট থাকুক, এটাই আমি ভগবানের কাছে প্রার্থনা করি। যখন নিজের মা-বাবাকে দেখি সকলের সাথে এভাবে মন খুলে হাসতে, সত্যিই দুজনকে দেখতে অনেক ভালো লাগে।।
বলতে গেলে এখন মানুষ হাসি ভুলে গেছে, সব সময় মানুষের একটা প্রবল চিন্তা ,সব থেকে বড় চিন্তা কিভাবে ভালো থাকবো। কিন্তু ভালো থাকার উপায় যে শুধুমাত্র টাকা নয় ,সেটা মানুষ বোঝে না ।মানুষ রীতিমতো প্রতি নিয়ত টাকার পিছনেই ছুটতে থাকে। ভালো থাকতে গেলে যে মনটাকেও ভালো রাখতে জানতে হয়, অন্যের কথা ভাবতে জানতে হয় ,সেটা মানুষ আজকাল বোঝেনা।
মানুষ এখন এতই আত্মকেন্দ্রিক যে নিজেকে কখনোই শান্তি দিতে বা সন্তুষ্ট করতে পারেনা। আর সত্যিই আমরা কখনোই নিজেকে সবকিছু দিয়ে সন্তুষ্ট করতে পারবও না। সন্তুষ্ট তো তখন আসে, যখন আমরা অন্যের জন্য কোন কিছু করতে পারি ,অন্যকে ভাল রাখতে পারি, অন্যকে হাসাতে পারি।
যাই হোক সেদিন রাতে সকলে যখন প্রসাদ খেতে বসেছে, তখন হঠাৎ করে আমি জানতে পারি আমারই বাবার এক বন্ধুর বিজয় কাকা ,তার নাকি জন্মদিন ।মোটামুটি রাত তখন সাড়ে এগারোটা বাজে, তার মানে ৩০ মিনিট পরেই বিজয় কাকার জন্মদিন। এইজন্য আমি, পূজা আর নেহা প্ল্যানিং করা শুরু করে দিলাম ।আমরা ঠিক করলাম একটি কেক কিনে আনব। আর বিজয় কাকাকে সারপ্রাইজ দেব। পূজা,নেহা খেতে বসে গিয়েছিল। আমি শুধুমাত্র খেতে বসিনি ,কারণ বিহারী হোটেলের রুটি তড়কা খেয়েই আমার পেট ভরে গেছে।
দেখলাম লালু জেঠু বসে আছে, লালু জেঠুর বাইক ছিল ।আমাদের বড় গাড়িগুলো থাকলেও ,আমার বাবা জেঠুরা যেহেতু সবাই বসে পড়েছিল ,তাই বড় গাড়ি করে কেউ নিয়ে যাওয়ার ছিল না। উত্তম জেঠুর বাড়ি থেকে কৃষ্ণনগরের ফেমাস রেস্টুরেন্ট, ফ্যামিলি রেস্টুরেন্ট খুব কাছেই ।মোটামুটি গাড়িতে গেলে ৫ মিনিটে রাস্তা। তাই আমি কাউকে না বলে লালু জেঠুকে সঙ্গে নিয়ে চলে গেলাম Mothers hut এ ।
রেস্টুরেন্টের মালিক আমার বাবার বন্ধু হয় ,সে কারণে কাকাকে সাড়ে এগারোটার সময় ফোন করে শুনে নিলাম কোনরকম কেক আছে নাকি এবং রেস্টুরেন্ট খোলা আছে নাকি ,কাকা সাথে সাথে বলল সমস্ত কিছু। আর আমার জন্য আলাদা করে কেক রেখে দিল। সেদিনকে বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় আমি কত টাকা নিয়ে বেরোবো বুঝতে পারছিলাম না, কিন্তু বাবা আমাকে সব সময় শিখিয়েছে যখনই রাস্তায় বেরোবি, কাছে বেশি করে টাকা রাখবি ,কখন কার দরকার লাগে তার ঠিক নেই।
সেই কথা মাথায় রেখে ছোটবেলা থেকেই যখনই রাস্তায় বেরোই ,কাছে নিজেকে ঠিক রাখার মতন টাকা অন্তত থাকে। সেদিনকে আমি কিছুতেই ব্যাগ নিতে চাইছিলাম না ,তাই মাকেই বারবার বলছিলাম তুমি টাকা নিয়ে নাও আমার হয়ে। পরে আবার কি মনে হল বাড়ি থেকে বেরোনোর আগে নিজেই আবার একটা ব্যাগ নিয়ে নিলাম।
সবাইকে সারপ্রাইজ দিতে গেলে কাউকে জানালেই হবে না, কারণ বাবাদের মধ্যে কেউ জেনে গেলে ,কানে কানে বিজয় কাকার কানেও চলে যাবে। আর আমি ব্যাপারটা পুরোপুরি সারপ্রাইজ রাখতে চেয়েছিলাম। তাই কি ভাগ্যিস কাছে টাকা ছিল সেদিন আমি এটাই ভাবছি, রেস্টুরেন্ট এ গিয়ে কিনে ফেললাম কেক। কেউ বুঝতেও পারল না ।আবার ফিরেও আসলাম তাড়াতাড়ি।
ফিরে এসে লুকিয়ে লুকিয়ে পূজা দের ডাইনিং টেবিলে কেক টা রেখে কেক টাকে ডেকোরেট করে নিলাম। আর তখন সবাইকে আমি কানে কানে জানিয়ে দিলাম যে আমি এই কাজটি করেছি। আমার বাবা তো শুনে ভীষণ খুশি হল, সবাই মিলে আবার আনন্দ করা হবে। বিজয় কাকা অন্যদিকে ছিল ,আমরা কেকটা নিয়ে উঠোনে একটা চেয়ারের উপর রাখলাম ।বিজয় কাকা আসতেই আমরা সবাই মিলে চেঁচিয়ে বিজয় কাকাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানালাম।। বিজয় কাকা দেখে ভীষণই অবাক এবং এত খুশি হয়েছে যে আপনাদের বলে বোঝাতে পারবো না।
ওরা সবাই মিলে অনেক অনেক মজা করলো। বিজয় কাকা সবাইকে প্রণাম করছিল । শুয়ে পড়ে ষষ্টাঙ্গে বিজয় কাকার প্রণাম করার আদব কায়দটা দেখে আমরা আরো হাসাহাসি করছিলাম। বাটার স্কচ ফ্লেভারের কেকটা ৬০০ গ্রাম এর ছিল। খুব সুন্দর খেতে হয়েছিল। ওরা নিরামিষ কেকই বিক্রি করে,তাও আবার ফ্রেশ ক্রিম দিয়ে তাই কেকগুলো দুর্দান্ত খেতে লাগে।
কেক খাওয়া হয়ে যাওয়ার পর যে ক্রিম বাকি ছিল। আমাদেরই এক ছোট বোন বৃষ্টি উত্তম জেঠুর গালে মাখাচ্ছিল। আর উত্তম জেঠুর গাল মনে হচ্ছিল দাড়ি কাটার আগে যেমন ফোম মাখে সেরকম। পুরো স্যান্টাক্লজ এর মত লাগছিল ,আমরা খুব হাসাহাসি করছিলাম।
আর যেহেতু জন্মদিন সেলিব্রেট করা হয়ে গেছে, বিজয় কাকাকে সবাই মিলে ধরলাম, এবার কিন্তু খাওয়াতে হবে কাকা। দিন পাক্কা করো ,ট্রিট দিতেই হবে।। মানে একটা কেক কিনে সারপ্রাইজ দেওয়া হলো, ট্রীট পাওয়ার বাহানা। হাহাহা।
যাইহোক, আজ এখানেই শেষ করছি। ট্রিটের গল্প অন্যদিন বলব।
এ বছরে যেন আমাদের সারপ্রাইজ দেওয়া শেষই হচ্ছে না। সকলকে সারপ্রাইজ দিতে দিতে আমরা নিজেরাও সারপ্রাইজ হয়ে যাচ্ছি। বাড়িতে গিয়ে সেখানে বিজয় কাকার জন্মদিন পালন করেছো। তোমার কাছে সমস্ত কিছুই সম্ভব। মাদ্রাসার থেকে অত রাত্রি বেলা কেক কিনে নিয়ে গিয়ে জন্মদিন পালন করেছো। জন্মদিনের সুন্দর মুহূর্ত তুলে ধরার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।