অবশেষে বিহারীর হোটেল ভরসা

in Incredible India3 months ago

গতকালকের পোস্টে আপনাদের যেটা বলেছিলাম, আজ তার পর থেকে শুরু করছি ।রাত সাড়ে বারোটা অব্দি আমরা বৌভাতের অনুষ্ঠানে গিয়ে চুপচাপ নিচে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলাম ।আবার কখনো গাড়ির মধ্যে উঠে বসে ছিলাম। বাবা আর জেঠু আর আমাদের ড্রাইভার কাকু বারবার গিয়ে গিয়ে দেখছিল ,যে খাওয়ার জায়গা ফাঁকা হয়েছে কিনা, একবার জেঠু বলে উঠলো যে মনে হচ্ছে আজকে রাতে এখানে খাওয়া-দাওয়া হবে না। চল আমরা কোন রেস্টুরেন্টে গিয়ে খেয়ে নিই । কিন্তু আমরা শেষ আশা ছাড়লাম না ।

20250306_013802.jpg

আমাদের ড্রাইভার কাকু খোঁজ নিল ওপরে অর্থাৎ তিন তলায় কিছু ব্যাচ বসছে আমরাও তার সাথে চলে গেলাম। গিয়ে দেখি হ্যাঁ ,সত্যি ওপরে তিন তলাতে কিছু ব্যাচকে বসানো হচ্ছে। তবে জায়গাটা অতটা ঠিকঠাক নয় ।মানুষকে খাওয়ানোর জায়গা দেয়া যাচ্ছে না তাই ওইভাবে তিন তালার ছাদে আয়োজন করা হয়েছে। আবার আমরা পাঁচ দশ মিনিটের মধ্যে সিট পেয়ে গেলাম ।ওখানেও অবাক ভাবে লাইন পড়ে গিয়েছিল ।তাও সিট ধরে আমরা সিট পেয়ে গেলাম আর খেতে বসে গেলাম। মনে মনে ভাবলাম যাক, এবার কপালে হয়তো খাবার জুটবে। সত্যি কথা বলতে অতক্ষণ না খেয়ে থেকে আমাদেরও প্রচন্ড পরিমানে খিদে পেয়ে গিয়েছিল। তার ওপর ঈশান ছিল আমাদের সাথে ,ও তো ছোট।

20250306_010558.jpg

খাওয়া-দাওয়া দেওয়া শুরু হলো ।খাওয়া-দাওয়া শুরু হওয়ার সাথে সাথে আর এক ঘটনা ঘটলো ।রান্না হয়েছিল অনেক কিছু। মেনু কার্ড ওরা দিয়ে গেল হাতে ধরিয়ে। কিন্তু খাবার যখন দিচ্ছে তখন দেখছি অর্ধেক জিনিস দিতে পারছে না। যেমন প্রথমদিকে চিকেন সাটে দিল না,ভাত দিয়েছে, ডাল দিয়েছে, কিন্তু আলুর চিপস নেই ।তাও না হয় মেনে নিলাম।। এরপরে দু'রকমের মাছ ছিল। মাছ কোনটাই নেই। চলে আসলো বাসন্তী পোলাও। মটন ছিল। সেটাও দেখি নেই। অবশেষে চিকেন আসছে।

এসব যখন ঘটছে, তখন আমরা চুপচাপ বসে, আমাদের টেবিলে আমি ,সহেলি দি, আমার মা আর জেঠি বসেছিলাম। আর অন্য টেবিলে বাবা, জেঠু ,ঈশান আর আমাদের গাড়ির ড্রাইভার বসেছিল।

20250306_013115.jpg

জেঠু অনেক কিছুই খায় না এর মধ্যে। যেমন চিকেন খায়না। পোলাও খায় না। যখন দেখতে পাচ্ছে খাবারের এরকম সমস্যা। জেঠু নিজে উঠে পড়ল। জেঠু উঠে পড়াতে স্বাভাবিকভাবে সবাই উঠে পড়েছে ।বাবা উঠে পড়েছে।

আসলে এতগুলো লোকজন নিমন্ত্রণ করা হয়েছে, কিন্তু ওরা কোনরকম খাবারের কতটা কোয়ান্টিটি লাগবে, সেটা বুঝতে পারেনি। তার ওপর সত্যি কথা বলতে এতগুলো টাকা পয়সা খরচ করেছে, তবে খাওয়ার দিকটাতে এরা সত্যিই কোনরকম ধ্যান দেয়নি। না হলে এতক্ষণ ধরে প্রায় তিন ঘন্টা ধরে এতগুলো মানুষ আমাদের মতন দাঁড়িয়ে থাকতো না। সবাই পরিষেবা ভালোভাবে না পেয়ে ঘুরেও গিয়েছে ।

জেঠু ওইভাবে উঠে আসাতে আমরাও ঠিকভাবে খেতে পারলাম না ।কারণ খাবার মতন সেরকম কিছু পাচ্ছিলাম না। মনই উঠে গিয়েছিল। অনেকটা রাতও হয়ে গিয়েছিল আবার খিদেও পাচ্ছিল। আমি একটা চিকেনের পিস নিয়ে বুঝতে পেরেছিলাম ,চিকেনটা এখানকার নয়। পরে যখন হাতমুখ ধুয়ে নিচে বাইরে বেরিয়ে এসছি সবার সাথে ,তখন জানতে পারলাম সব খাবার শর্ট পড়েছে বলে ওরা বাইরের হোটেল থেকে খাবার নিয়ে নিয়ে আসছে । তখন তো আমরা রীতিমতো হাসাহাসি শুরু করে দিলাম। কি এক অদ্ভুত কান্ড ।সত্যি কথা বলতে এতগুলো বছর এত এত বিয়ে বাড়ি খেয়েছি ,কোনদিন এরকম ঘটনা ঘটেনি ।

সুবীর জেঠু আর আমার বাবার আমাদের এই শহরে প্রচন্ড নাম ডাক রয়েছে। সারা লজ জুড়ে ছড়িয়ে গেল খেতে খেতে উঠে গেছে সঞ্জয় সরকার আর সুবীর পাল।। যাইহোক ,সেদিনকে যে মহাকাণ্ড হয়েছে তারপরে আমার মনে হয় না, আমার মা কখনো জেঠুদের সাথে ওইভাবে বিয়ে বাড়ি খেতে যাবে ।আর মনে হয় জেঠুরাও একটা শিক্ষা পেয়েছে ,যে অত রাতে বিয়ে বাড়িতে যেতে নেই।

যারা অনেক সকাল-সকাল এসছিল ,তারা হয়তো ঠিকভাবে খেতে পেয়েছে।। তবে আমি বাইরে এসে শুনছিলাম অনেকেই না খেতে পেয়ে ঘুরে গেছে এবং পরিষেবা এবং আপ্যায়ন ঠিকঠাক না পেয়ে চলে গেছে ।কৃষ্ণনগরের অনেক বড় বড় বিখ্যাত মানুষকে নিমন্ত্রণ করা হয়েছিল, তারাও যে ঠিকভাবে পরিষেবা পায়নি, সেটা আমরা বুঝতে পারলাম।

এখন ঘটনা হলো খিদে পেয়েছে, খাব কোথায়? বিয়ে বাড়ির লজটা ছিল কৃষ্ণনগর থেকে বেরিয়ে পাল পাড়ার মোড়ে ।পালপাড়া ছাড়িয়ে কালিরহাটে আমার বাবার খুব কাছের বন্ধুর বাড়ি। তার নাম হলো উত্তম জেঠু, উত্তম জেঠুর বাড়িতে আমরা রাত একটা নাগাত গাড়ি নিয়ে ঢুকে পড়লাম। প্রথমে কোনরকম প্ল্যান ছিল না। আমরা খুঁজছিলাম কোন রেস্টুরেন্ট। যেখানে খোলা পাবো ,খেয়ে নেব। কিন্তু বাবা মজা করার জন্য বলল গাড়িটা উত্তম জেঠুর বাড়িতে নিয়ে যেতে ।

বাড়ির সামনে বেশ খোলা জায়গা ।গাড়ি সোজা বাড়ির মধ্যে ঢুকিয়ে দিতেই রীতিমতো জোরে জোরে হর্ন দিতে লাগলো। আর উত্তম জেঠু আর জেঠি ভয়ের চোটে বেরিয়ে আসল। ওরা তো বুঝতেই পারেনি, এত রাতে কে এসেছে ,আমাদের দেখে ওরা তো পুরো অবাক। তারপর আমাদের কাছ থেকে বিয়ে বাড়ির খাওয়া নিয়ে এরকম গল্প শুনে প্রচন্ড হাসাহাসি শুরু করল।

1000230234.jpg

উত্তম জেঠুর বাড়ি থেকে হাঁটা পথে দুই মিনিট দূরে একটা ছোট্ট মত ধাবা আছে। ধাবা টার নাম বিহারির হোটেল। আমার বাবা জেঠুরা যখনই এখানে উত্তম জেঠুর সাথে দেখা করতে আসে, বিহারী হোটেলের তরকা রুটি খায়। তার সাথে বিহারী হোটেলে ক্ষীর আর দইটা দুর্দান্ত করে। উত্তম জেঠুকে গাড়ির মধ্যে বসিয়ে সোজা আমরা চলে গেলাম বিহারীর হোটেলে। আগে থেকেই ঠিক করা ছিল যদি আমরা বিহারী হোটেল খোলা না পাই ,বিহারী হোটেল যদি বন্ধ পাই ,তাহলে উত্তম জেঠুর বাড়িতে রান্না বান্না করে খাওয়া দাওয়া করব। কিন্তু ভগবান আমাদের হয়তো ডাক শুনেছে, বিহারীল হোটেল খোলাই ছিল।

20250306_012823.jpg

আমি কোনদিন ওই হোটেলে গিয়ে রুটি তড়কা খাইনি। সহেলি দিও খায় নি। তবে শুনেছি রুটি তর্কা দুর্দান্ত করে। হোটেলটা দেখে ভক্তি হবে না ।কিন্তু খাবার যা দারুন রান্না করে ধারণার বাইরে। আমাদের সবাইকে রুটি আর তরকা পরিবেশন করল খুব সুন্দর ভাবে। যেহেতু চেনা পরিচিত ,তাই পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতায় এবং সঠিক ভাবে খাবার পরিবেশনায় একদম খামতি রাখেনি ওখানকার লোকজন। বিহারী হোটেলের রুটি দেখে আমার তো চক্ষু চড়কগাছ। এরকম রুটি সত্যিই আমি কোন জায়গায় খাইনি। এত পরিষ্কার সাদা রুটি ,এত নরম। কোন হোটেলে আমি এর আগে দেখিনি। তার ওপর তরকাটাও ছিল দারুন।

20250306_011951.jpg

বিহারীর হোটেলে আমরা তৃপ্তি করে খেলাম। আমরা প্রচন্ড হাসাহাসি করছিলাম ।কারণ আমাদের নিজেদের অবস্থা দেখে হাসি পাচ্ছিল। সেজেগুজে এলাম বিয়ে বাড়ি খেতে আর খাচ্ছি বিহারীর হোটেলে। সত্যিই বিহারী হোটেল সেদিন আমাদের ভরসা ছিল। না হলে আমরা যে কি করতাম ,আর কি খেতাম ভগবান জানে, বিহারীর হোটেলেও খাবার না জুটলে অবশেষে রান্না করে আলু সিদ্ধ ভাত খেতে হতো অথবা মুড়ি খেতে হতো।

20250306_011240.jpg

আমরা অনেক ছবি তুললাম ওখানে। মেইন রোডের পাশেই বিহারীর হোটেল। বিহারীর হোটেলের সামনে দিয়েই কলকাতা যাওয়ার রাস্তা, রাস্তা দারুন। আর ফাঁকা রাস্তায় ছবিও ভালো উঠছিল। মাঝে রাস্তায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমরা ছবি তুলছিলাম। যদিও আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছিলাম ,সেটা পকেট রুট ছিল। এটা ফোর লেন রাস্তা।

বাড়ি ফিরতে ফিরতে আমাদের প্রায় রাত আড়াইটে। খাওয়া-দাওয়া করে আমরা ওখানে নাচানাচিও করেছি। জামাল কুদু গান চালিয়ে সবাই মিলে নাচ করেছি। সকলের সেদিনকে রাতের বেলায় মাথার মধ্যে ভূত চেপে গিয়েছিল। উত্তম জেঠুর অনেক জমি রয়েছে রাস্তার পাশে। প্রচুর কলাবাগান আছে।। উত্তম জেঠু বাড়ি যাওয়ার আগে আমাদের এক কাদি কলা দিয়ে দিল।

20250306_014525.jpg

সত্যি বলতে সেই দিন রাতে যে পরিমাণে খিদে পেয়ে গিয়েছিল, আর যে পরিমাণে সমস্যা হয়েছে, ওই বিয়েবাড়িতে ।আর তারপরে যে বিহারির হোটেলে এদিকে এসে এত আনন্দ করেছি, তা সত্যিই ভুলতে পারবো না।। তাই বলবো ভগবান যা করে মঙ্গলের জন্যই করেন।

20250306_014703.jpg

খাওয়াটা তৃপ্তি করে খাওয়া সব থেকে বড় ব্যাপার। বিহারীর হোটেল ছোট হলেও দেখতে ভালো না হলেও, খাওয়া-দাওয়া সেদিনকে দুর্দান্ত করেছি। আর রাতের বেলায় আমরা সবাই মিলে যেভাবে মজা করেছি, এই রাতটা সকলের কাছে স্মৃতিময় হয়ে গেছে।

Sort:  
Loading...

Congratulations!! Your post has been upvoted through steemcurator06. We encourage you to publish creative and quality content.

aaa.png

Curated By: @fantvwiki

Hello @isha.ish! 👋

Congratulations! This post has been upvoted through @steemcurator08. We support quality posts, good comments anywhere, and any tags.


1000420827.png
Curated by @mohammadfaisal

Loading...
 3 months ago 

খাবার খেতে বসে যখন খাবার সঠিকভাবে থাকে না তখন আসলে খাবার খেতে কেমন একটা ইচ্ছে করে না যাই হোক তারপরও থেকে আপনারা বিরহের হোটেলে গিয়ে খাবার খেয়েছেন যদিও জায়গাটা দেখতে অতটা সুন্দর না তবে তাদের খাবার আপনাদের জন্য অনেক বেশি স্পেশাল ছিল বিশেষ করে রুটির দরকার যেটা আপনি আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন যেটা দেখতে অনেক বেশি লোভনীয় দেখাচ্ছে যাই হোক সবাই মিলে তৃপ্তি সহকারে খাবার খেতে পেরেছেন এটা জানতে পেরে ভালো লাগলো ধন্যবাদ সবার সাথে খাবার খাওয়ার মুহূর্ত আমাদের সাথে তুলে ধরার জন্য ভালো থাকবেন।