বাবা জলেশ্বর এর পুজো
নমস্কার বন্ধুরা, আশা করছি সকলে সুস্থ আছেন ।বেশ কিছুদিন আগে আমি বেনারস থেকে ঘুরে এসেছি।আসলে কুম্ভ মেলা গিয়েছিলাম ।আর এর সাথে বেনারাসটাও ঘুরে এসেছি ।ঘুরতে যাওয়ার আগেও বাড়ির পাশের শিবতলা বারোয়ারিতে পুজো দিয়ে এসেছিলাম। ওখানে বাবা জলেশ্বর এর মন্দির রয়েছে। তাই কোন শুভ কাজে যাওয়ার আগে অথবা ঘুরতে যাওয়ার আগে আমি চেষ্টা করি একবার হলেও পুজো দিয়ে আসার।
ঘুরে আসার পর আবারও একদিন যেতে হয়েছিল ।আমার ভেতর থেকে ইচ্ছা হল যে সুস্থভাবে ফিরে এসেছি, বাবার কাছে একবারও যাওয়া হয়নি। মন্দিরে একবার গিয়ে পুজো দিয়ে আসি। আর মাঝেমধ্যেই আমার যখন ইচ্ছা হয় ,মনে হয় তখন আমি পুজো দিতে চলে যাই। ওই জায়গাটাতে গিয়ে এত শান্তি লাগে যে আমার মাঝেমধ্যে ওখানে গিয়ে বসে থাকতেও ভালো লাগে।
মন্দির প্রাঙ্গণ যখন একেবারে ফাঁকা থাকে, তখন ঠাকুরের সামনে চুপচাপ বসে থেকে ধ্যান করতে, ঠাকুরের নাম জপ করতে অথবা ওই নিস্তব্ধতার মধ্যে শুধুমাত্র পরমআত্মার খোঁজে নিজেকে সমর্পণ করতে আমার বেশ ভালো লাগে। তাই বেনারস ঘুরে আসার পর দুই দিন আমার যাওয়া হয়ে গেছে ওখানে।
আমি লাস্ট যেদিনকে গিয়েছিলাম ,সেদিনকে পূর্ণিমা ছিল অর্থাৎ মাঘী পূর্ণিমা। মাঘ মাসের মধ্যে যে পূর্ণিমা পড়ে। তারিখটা ছিল ১২ ই ফেব্রুয়ারি, বুধবার। আর এর আগে যেদিন গিয়েছি , সেটা ছিল সোমবার।বাড়ির সমস্ত পুজোর কাজ হয়ে যাওয়ার পর আমি ঠাকুরের জন্য জিনিসপত্র গুছিয়ে পৌঁছে গেলাম মন্দিরে।
এর আগেও আমি পুজো দিতে গিয়ে দেখেছি যে ব্রাহ্মণ দেরি করে আসে। এই মন্দিরে তিনবার ব্রাহ্মণ আসে। একবার সকালে, একবার মাঝামাঝি সময় অর্থাৎ এগারোটা ,তারপরে আবার সন্ধ্যের দিকে। সকালের পুজোটা একবার হয়ে গিয়েছিল। তারপরে আবার এগারোটার সময় ব্রাহ্মণ আসার কথা। আমি আগে আগে গিয়েই বসেছিলাম ।
গিয়েই দেখি একজন কাকিমা সমস্ত পুজোর জোগাড় করছে। আসলে পূর্ণিমার রয়েছে বলে ওরা নারায়ণ পূজাও দেবে ।এ কারণে নারায়ণ ঠাকুরের সিন্নি প্রসাদ রেডি করছিলেন আর ফল কাটছিলেন । আমি আমার মতনআমার নিয়ে যাওয়া সমস্ত জিনিস এক জায়গায় রেখে দিলাম। তারপর কাকিমাদের সাথে সাহায্য করছিলাম।
এরপরে গল্প করতে করতেই ব্রাহ্মণ চলে আসলো। তখন আমরা মন্দিরে টোটাল চার, পাঁচজন। একটি ঠাম্মাও ততক্ষণে চলে এসেছে ।আমরা সবাই মিলে এক এক করে পূজো দিলাম ।ব্রাহ্মণ পূজা করল, আরতি করল, আমরা অঞ্জলি দিলাম ।সত্যনারায়ণের অঞ্জলি দিলাম, সাথে অঞ্জলি দিলাম শিব ঠাকুরের ।তারপরে ব্রাহ্মণ সত্য নারায়ণের পাঁচালী পড়ে শোনালো।
বাবা জলেশ্বর এর কাছে পুজো দিয়ে আমার সত্যি খুব শান্তি হল। নিজের গাছের ফুল নিয়ে গিয়েছিলাম পূজো দেয়ার জন্য। ফুল দিয়ে সাজিয়ে এত সুন্দর লাগছিল শিবলিঙ্গটি, যে বলে বোঝাবার নয়। ওইখানে বসে থাকার সময় একটা অদ্ভুত অনুভূতি অনুভব করছিলাম ।এত ঠান্ডা, এত শান্ত লাগছিল ভেতরটা। আমি জানিনা আপনাদের কখনো এরকম হয়েছে কিনা। চোখটা বন্ধ করলে মনে হচ্ছিল আমি অন্য কোন জগতে আছি। আর এই অনুভূতিটা পাওয়ার জন্যই বারে বারে এখানে ছুটে আসতে মন চায়।
এরপরে পুজো হয়ে যাওয়ার একটু পরে আমরা বেরিয়ে পড়লাম প্রণাম করে। বেরিয়ে মন্দিরের মেন ঘর যে ঘরে শিবলিঙ্গ আছে, সেই দরজা কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ রাখা হলো। তারপর গেট খুলে প্রসাদ গুলো এক জায়গায় করা হলো ।এইবার কথা হল,পুজোর সময় লোক পাওয়া যায় না ,কিন্তু ঠিক প্রসাদের সময় লোকজন এসে হাজির ।
আমার বাড়ি যেহেতু কাছেই, লোকজনকে যেহেতু ওই ভাবে হাতে করে প্রসাদ দেওয়া যাবে না, আমি শীঘ্রই প্রসাদের বাটি নিয়ে আসার ব্যবস্থা করলাম। ঈশান আমার সাথে যেহেতু গিয়েছিল ,আর ওর কাছে যেহেতু সাইকেল ছিল ,তাই ওই গিয়ে প্রসাদের প্লেটগুলো নিয়ে আসলো।
তারপর প্রসাদ ভাগ করতে করতে দেখি আরো লোকজন চলে এসেছে। প্রসাদের বাটিও শেষ। তখন আমরা সবাই হাতে হাতে কিছু জনকে প্রসাদ দিলাম। যেহেতু সত্যনারায়ণের পূজো হয়েছে। তাই আরো লোকজন ভিড় হয়ে গিয়েছিল। আমি আমার বাড়িতে যেহেতু পূজো দিয়ে এসেছিলাম ,বাড়িতে ফলপ্রসাদ অনেকটাই ছিল ,তাই আর আমি বেশি ফলপ্রসাদ নিইনি ।শুধুমাত্র সত্যনারায়ণের সিন্নি প্রসাদ নিয়েছিলাম আর এর সাথে কিছু ফলমূল।
সব মিলিয়ে সেদিনকে পুজোটা খুব সুন্দর হল ।ফেরার পথে ওখানকার কাকিমারা আমাকে বলছিল আমি যেন প্রত্যেক পূর্ণিমাতে বারোয়ারিতে যাই ,ওদেরও ভালো লাগবে। তা আমি ভেবে দেখলাম যাওয়া যেতেই পারে। বাড়ির পুজো সেরে প্রত্যেক পূর্ণিমাতে যদি যেতে পারি ,ভালোই হয় ,মন অনেক ভালো থাকে ।আর আমি সবকিছুর পরে এটা বিশ্বাস করি যে, আমাদের প্রত্যেকদিন কিছুটা সময় দেওয়া উচিত।
আজকে এখানেই শেষ করলাম সকলে ভালো থাকবেন। বাবা জলেশ্বর আপনাদের সকলের মঙ্গল করুক।।
Har har mahadev 🙏😊