ম্যারেজ অ্যানিভার্সারি সেলিব্রেশন এর মুহুর্তগুলো
নমস্কার বন্ধুরা। আশা করছি আপনারা সকলে সুস্থ আছেন। গতকাল মা-বাবার অ্যানিভার্সারির কিছুটা মুহূর্ত আপনাদের সামনে তুলে ধরেছিলাম। আজকে সেলিব্রেশানের মুহূর্তগুলো আপনাদের সাথে শেয়ার করছি।
বাবার বন্ধুরা মিলে বাবা আর মাকে কপালে যেমন সুন্দর করে বিয়ের সময় ফেব্রিকের রং দিয়ে এঁকে দেয়, জোর জবরদস্তি ওদের দুজনকে কপালে তাই করে দিল। বাবা চুপচাপ সব সহ্য করছিল । কারণ বাবার কাছে করার কিছু ছিল না।।
যখন কেক দুটোকে টেবিলের উপর রাখা হল তার আগে থেকেই বাবার বন্ধুরা বাবা মার সাথে মজা করা শুরু করে দিয়েছিল ।আমার বাবার এক বন্ধু সুবীর জেঠু, বাবার জন্য যে পাঞ্জাবিটা নিয়ে এসেছিল, সেটা জোর করে বাবাকে পড়তে বলল। মায়ের জন্যেও বেনারসি এনেছিল, কিন্তু মা তো অলরেডি বৌভাতে যে শাড়িটা পড়েছিল, সেটাই স্মৃতি হিসেবে পড়েছিল। তাই ওরা সেটাকে চেঞ্জ করেনি।
বৌভাতের শাড়িটাই বেশি সুন্দর লাগছে আর সেটার সাথে আলাদা একটা ইমোশন জড়িয়ে আছে স্বাভাবিক ভাবেই। তাই সবাই মিলে বাবাকে নিয়ে বেশি টানাটানি করছিল।আর বাবা বাধ্য হয়ে পাঞ্জাবি পড়তে বাধ্য হলো ।
ওদিকে দেখলাম ওরা বরের টোপর আর কনের সোলার মুকুট কিনে নিয়ে এসেছে, বিয়ের সময় যেমন পড়ে। জোর জবরদস্তি করে বাবা আর মায়ের মাথায় পরিয়ে দিল। জেঠু যেহেতু বয়সে অনেকটা বড়, কথাও শুনতে হলো বাবা আর মাকে।
দুজনকে বিয়ের সাজে দেখে আমি এত লজ্জা পাচ্ছিলাম। বাবা মার বিয়ে দেখতে হবে, এ আমি কল্পনাও করতে পারিনি। আপনারা একটা ছবিতে দেখেই বুঝতে পারবেন আমার জেঠু কিভাবে আঙুল নাড়িয়ে নাড়িয়ে বাবাকে বকছে, যে বাবাকে টোপর পরে থাকতেই হবে। আর বাবা বার বার মাথা থেকে টোপরটা খুলে ফেলছিল।
সব থেকে আমার হাসি লাগছিল বাবাকে টোপরপড়ে দেখতে। টোপরের কদমগুলো যখন বাবার কানের কাছে দুলছিল ,আমার খুব হাসি লাগছিল। এ সব পাগলের পাগলামো।
তারপরে ওরা কোথা থেকে পান পাতা জোগাড় করে শুভদৃষ্টি করতে বলল। জোর জবরদস্তি দুজনকে ধরাধরি করে এসব করানো হচ্ছিল। আমি আর ঈশান দেখছিলাম আর হাসছিলাম। তারপর ওরা রজনীগন্ধার মালাও নিয়ে এসেছিল। এই বয়সে এসে বাবা মার মালা বদল টা দেখতে পেয়ে ধন্য হয়ে গেলাম।
বাবা যে প্রচন্ড লজ্জা পাচ্ছিল ,তা বাবাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছিল। এসব খুনসুটির সাথে সবাই মিলে ছবি তোলা হচ্ছিল। সবাই পরিবার সহকারে এক এক করে দাঁড়িয়ে ছবি তুলল। মহিলা পক্ষ একবার বিয়ের বরকনের সাথে, আবার বাবার বন্ধুরা শুধু বিয়ের বরকনের সাথে। এভাবে ছবি উঠছিল।
তারপর তো হল কেক কাটিং। সবাই মিলে মজা করে কেক কাটিং করা হলো। সবাই মিলে বাবা-মাকে ৩০ বছরের বিবাহ বার্ষিকীর শুভেচ্ছা জানালো। এসব পাগলামো করতে পেরে আমার বাবা-মা যতটা খুশি হয়েছে, তার থেকেও হাজার গুণ বেশি খুশি হয়েছিল বাবার বন্ধুরা এবং তাদের পরিবারের সকলে।
৩০ টা বছর একসাথে কাটিয়ে ফেলা সত্যিই সাংঘাতিক ব্যাপার। আমার যেহেতু বিয়ে হয়নি এখনো, আমি সত্যিই আমার বাবা মাকে দেখে অবাক হই। সবকিছু মেনে নিয়ে সহ্য করে একে অপরকে বুঝে এরা কি সুন্দর ভাবে বছরের পর বছর কাটিয়ে এসেছে। একসাথে থাকা মানিয়ে গুছিয়ে নিয়ে, সেটা শুধুমাত্র একতরফা নয়। দুজনের সমান হাত থাকে। ৩০ টা বছর পার করা আমার কাছে তো একটা বিরাট বড় ব্যাপার।। বাবার বন্ধুরা মিলে এত আয়োজন করেছে এবং বাবা মাকে এত স্পেশাল ফিল করিয়েছে। তার জন্য আমি সত্যিই ভগবানের কাছে কৃতজ্ঞ।দিনটা সত্যিই অসম্ভব সুন্দর ছিল। পরের পোস্টে খাওয়া দাওয়া নিয়ে অবশ্যই শেয়ার করব। আজকে এখানেই শেষ করছি।
সত্যি এ বছরে কাকু কাকিমা ম্যারেজ অ্যানিভার্সারি খুব সুন্দর ভাবে পালন করা হয়েছে। তবে কেক কাটার মুহূর্তটা আমি একেবারেই মিস করে গেছি। বুঝে উঠতেই পারিনি সেদিনও এত ধুমধাম করে সমস্ত সেলিব্রেশন করা হবে। আমি যে মুহূর্তে পৌঁছে গিয়েছিলাম সেই মুহূর্তে সমস্ত কিছু কমপ্লিট হয়ে গিয়েছিল। তোমার মা-বাবার অ্যানিভার্সারি কিছু সুন্দর মুহূর্ত শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।