ঝিলিক দিদির বিয়ে - ২য় পর্ব
নমস্কার বন্ধুরা, আশা করছি সকলে সুস্থ আছেন। গত দুদিন আগে আমি আপনাদের সাথে আমার ঝিলিক দিদির বিয়ের আইবুড়ো ভাত পর্বের পোস্ট শেয়ার করেছিলাম। এখানে আমার নিজের কিছু অনুভূতি শেয়ার করেছিলাম। আজকে বিয়ের কিছু মুহূর্ত শেয়ার করব ।
তবে পোষ্টের শুরুতে আবারো বলতে চাই, আমি জানিনা আপনারা কতটা বিশ্বাস করতে পারছেন তবে আইবুড়ো ভাতের দিনকে গিয়েও আমি কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না এত তাড়াতাড়ি ও চলে যাচ্ছে ওর বিয়ে হয়ে যাচ্ছে আসলে যে মেয়েটার সাথে হেসে খেলে বেড়ে ওঠা , তাকে যে একদিন বিয়ে করতে হবে একটা সংসারের দায়বদ্ধতা নিতে হবে এবং এত তাড়াতাড়ি গিন্নি হয়ে উঠবে, তা সত্যিই ভাবা অস্বাভাবিক। আমার মনে হয় প্রত্যেকটা মেয়েদের কাছেই এই কুমারী থেকে কারোর বাড়ির গিন্নি হয়ে ওঠার এই জার্নিটা এই পরিবর্তনটা একটা বড় ধাক্কার।
একটা রাতের মধ্যে একটা মেয়ে তার সমস্ত কুল গোত্র পরিবার ছেড়ে অন্য পরিবারের হয়ে যায়। নিজের বাড়ি ছেড়ে শশুর বাড়িতে চলে যায়। এ পরিবর্তন এক রাতের মধ্যে হলেও এডজাস্টমেন্ট করতে কিন্তু দীর্ঘ সময় লাগে।
মাঝেমধ্যে ভাবি তাড়াতাড়ি বিয়ে করব। কিন্তু যখন এই চিন্তা ভাবনা মাথায় আসে, তখন মনে হয় বিয়েটা একটু দেরি করেই করি। কারণ করলেই তো হয়ে গেল। আমি ভগবানের কাছে প্রার্থনা করি ওর জীবনের নতুন অধ্যায় সুন্দর হোক। ও অনেক ভালো থাকে। সুখে শান্তিতে সকলকে মিলিয়ে সকলকে নিয়ে ভালো থাকুক। ভগবান যেন ওকে মানসিক দিক দিয়ে শক্ত করে এবং ওর পাশে থাকে।
বিয়ের দিন যেহেতু সকাল থেকেই আমার ট্রেনিং ছিল। তাই ট্রেনিং শেষ হওয়ার পর বাড়িতে এসে কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে নিয়েছিলাম। এরপর রেডি হয়ে চলে গিয়েছিলাম ওর বিয়েতে। ওর বিয়ে হচ্ছিল আমাদের কৃষ্ণনগর পৌরসভা লজে ।ওখানে বেশ কিছু বছর আগে আমার ভাইয়েরও জন্মদিন পালন করা হয়েছিল। তাই লজ চেনা ।আর যেহেতু এলাকার মধ্যেই, তাই আরও চেনা। লজ থেকে আমার বাড়ির দূরত্ব গাড়িতে মাত্র পাঁচ মিনিট। আমি, মা ,ভাই ,বাবা সবাই রেডি হয়ে পৌঁছে গেলাম। গিয়ে দেখি বিয়ে শুরু হয়ে গেছে ।সাজনা তলায় পত্র পাত্রী এবং সাথে পিন্টু জেঠু । জেঠু কন্যা দান করছে। পিন্টু জেঠু হল ঝিলিক দিদির বাবা।
গিয়েই প্রথমে ওর সাথে একটু কথা বলে নিলাম সাইট থেকে। তারপর পাশেই থাকা চেয়ারগুলোতে বসে পড়লাম আর বিয়ে দেখতে লাগলাম। মাঝে কিছুক্ষণ পরপর উঠে পকোড়া খেয়ে এসেছি।চিকেন পকোড়া হয়েছিল, ভেজ বল হয়েছিল। এর সাথে ছিল কফি , ফুচকার স্টল। ফুচকাটাও খুব সুন্দর ছিল। আমার তো সব থেকে ভালো লেগেছে ভেজ বল।
যিনি বিয়ে দিচ্ছিলেন ,যে ব্রাহ্মণ তিনি আসলে আমাদের ফ্যামিলির অ্যাস্ট্রলযার। যেহেতু তিনি ব্রাহ্মণ তাই তিনি পূজো- পাঠও করেন এবং সাথে বিবাহ দেন। এর সাথে তিনি একজন বিশিষ্ট জ্যোতিষী।আমি জন্ম হওয়ার আগে থেকে বাবার সাথে ওই জেঠুর খুব ভালো সম্পর্ক। নানান অসুবিধায় বাবা জেঠুর সাথে আলোচনা করে।
সঞ্জীব জেঠু কে ঝিলিক দির বিয়ে দিতে দেখে আমার সত্যিই অনেক ভালো লাগলো। কন্যাদান এর সমস্ত নিয়ম হয়ে যাওয়ার পর পাত্র-পাত্রীকে ঘরে পাঠিয়ে দেওয়া হলো। অর্থাৎ এরপরে বাসি বিয়ে শুরু হবে ।আমাদের বাঙ্গালদের নিয়মে বাসি বিয়ে পরের দিন হয়। কিন্তু এখানে দেখেছি অর্থাৎ আমাদের এলাকায় বাসি বিয়ে রাতের মধ্যেই হয়ে যায়। পাত্র-পাত্রীকে একটু জল ছিটিয়ে বাসি বিয়ের নিয়ম শুরু করে দেওয়া হয়। তবে আমার মামার বাড়ির ঐদিকে অর্থাৎ উত্তরবঙ্গের দিকে বাসি দিয়ে সকালে। বাসি বিয়েতে বাকি থাকে খই ফেলা, সিঁদুর দান। আর বাসি বিয়ে হওয়ার আগে হয়ে যায় শুভদৃষ্টি, মালা বদল।
আমি মা-বাবা সকলেই আমার বাবার আর এক বন্ধুর জন্য অপেক্ষা করছিলাম। তাই তাড়াতাড়ি সেদিনকে খাইনি। পুরো বিয়েটা দেখেছি। আর মুহূর্তগুলো ক্যামেরায় ক্যাপচার করেছি। যাইহোক আপনাদের সাথে বিয়ের মুহূর্তগুলো শেয়ার করতে পেরে ভালো লাগলো। অনেক ভালো থাকবেন। আজকে এখানেই শেষ করছি।পরের দিন কিছু ইন্টারেস্টিং ঘটনা শেয়ার করব ।
মেয়েদের জীবন তো এইরকমই হয়। মেয়েরা জন্মানোর পর হঠাৎ করে বড় হয়ে যাওয়া এরপর বিয়ে তারপর শুরু হয়ে যায় শশুর বাড়ি সংসার করার পালা। বিয়ে বাড়ি মানেই অনেক মজা আনন্দ অনেক খাওয়া-দাওয়া। তবে সঞ্জীব জেঠুর নাম অনেকবার শুনেছি। ওনার ছবিটা দেখতে পেলাম। যাই হোক বাসি বিয়ে আমি কখনোই দেখিনি কিন্তু আমিও শুনেছি বাঙালদের বাসি বিয়ে নিয়ম থাকে। যাই হোক পরের দিনের ইন্টারেস্টিং গল্প শোনার অপেক্ষায় রইলাম।