মামার বাড়িতে কাটানো আরো কিছু মুহূর্ত
মামার বাড়িতে তৃতীয় দিন সকালবেলা থেকেই বেশ মজা শুরু হয়েছিল। সেদিন ছিল রং দোলের আগের দিন। আমরা তার আগের দিন ভেবেছিলাম যে রং খেলব, কিন্তু সকালবেলা থেকে কারোরই শরীরটা ভালো লাগছিল না । আমি এমনিতেই অনেকটা জার্নি করে এসেছি, তাই আমার দিক থেকে আমি ক্লান্ত ছিলাম।আমার বড় মামার ছোট মেয়ে তিথির কেমন যেন গাটা গরম গরম লাগছিল অর্থাৎ জ্বর জ্বর মতন। আর শর্মীর বন্ধুরা সেদিন ছিল না ,যে যার কলেজে গিয়েছিল ।তাই আমরা সেদিন ঠিক করলাম রঙ খেলবো না। আমরা সকাল থেকেই খাওয়া-দাওয়া করে স্নান টান করে ফ্রেশ হয়ে গল্প আড্ডা দিচ্ছিলাম।
মামার বাড়ির রান্নার আলাদা রকমের স্বাদ ।গ্রামের মধ্যে ভেজাল জিনিস পাওয়া যায় না ।সবকিছুই টাটকা পাওয়া যায় ।এই কারণেই সব শাকসবজির স্বাদ অন্যরকম হয়। এ ছাড়া উত্তরবঙ্গের দিকে ছোট আলুর স্বাদের একটা নাম ডাক রয়েছে। ওখানকার আলুগুলো এত সুন্দর খেতে ,বিশেষ করে চাল ।তাই মামার বাড়িতে কোন তরকারিতে আলু পরলে সেই তরকারি, আপনাতেই দারুন খেতে লাগে। আমি যেমন বাড়িতে খুব একটা মাছের ঝোল খাই না ,কিন্তু মামার বাড়িতে গেলে মামার বাড়ির আলু দিয়ে যখন মামি মাছের ঝোল রান্না করে, আমি স্বাদে স্বাদে খেয়ে ফেলি।।
খাওয়া দাওয়া করে আমরা বসে আছি তখন মোটামুটি বাজে দুপুর দেড়টা ।হঠাৎ করে জানলা দিয়ে দেখতে পেলাম শর্মির বন্ধুরা কলেজ থেকে ফিরেছে। ওরা রীতিমতো রং মেখে ভূত। শর্মি কেমন একটা খ্যাপা, ওর মাথাতেই খেলে নি, ওর সাথে কি হতে পারে। ও ওদের সাথে কথা বলতে, যেই না বাইরে গেছে ,ওরা ওকে সবাই ধরে বেঁধে আবির মাখিয়ে ভুত বানিয়ে দিয়েছে।। বেচারা স্নান করে পুরো ফ্রেশ হয়েছিল ।সেই মেয়েকে আবার স্নান করতে হলো। আমি ওকে বারন করবো কি ,ও তার আগেই ওদের কাছে চলে গিয়েছিল কথা বলতে। ওর মাথাতে খেলে নি যে ,ওরা ওকে রঙ মাখিয়ে দিতে পারে।
ও স্নানটান সেরে আবার বার হল, তারপর আমরা দুপুরের দিকে একটু রেস্ট করলাম ।বিকেল বেলায় শর্মির সাইকেলটা নিয়ে একটু সাইকেল চালাতে বেরিয়েছি ।আমি কিন্তু সাইকেল চালাতে একদম পারি না। ছোটবেলা থেকে সেই সুযোগ হয়ে ওঠেনি। তবে ঈশান সাইকেল চালাতে পারে। আমার দুই বোনও চালাতে পারে। সবাই ঠিক করলো আজকে ঈশা দিদিকে সাইকেল চালানো শেখাবে।
আমি শর্মির লেডিস সাইকেল টা নিয়ে কিছু দূর এগোই। আর যেই না পা দুটো প্যাটেলের উপর দিয়ে ব্যালেন্স করতে যাই ,তখনই পড়ে যেতে ধরি ,আবার পা দিয়ে নিজেকে আটকে নিই। কিন্তু শর্মি ,তিথি আর ঈশান মিলে একেবারেই পণ করে বসে ছিল আমাকে সাইকেল চালানো শেখাবে। ছবির ভাব দেখে আপনারাও বুঝতে পারছেন ওরা কি জোরটাই না দিচ্ছে আমার সাথে। বিশেষ করে ঈশানকে আপনারা খেয়াল করে দেখুন, ও ওর মন প্রাণ দিয়ে গায়ে যত জোর আছে, সবকিছু দিয়েই আমাকে ব্যালেন্স করে রাখার চেষ্টা করছে।।
যাই হোক সাইকেল চালানো শেখা কিন্তু হয়নি ঠিকভাবে। কিছুটা দূরে এগোতে পারি ,আবার পড়ে যেতে ধরি। এই তো এখন বড় হয়ে গিয়েছি, সাইকেল পড়ে যেতে ধরলেও পা দিয়ে সামলে নিতে পারি।। এসব করতে করতে বিকেলটা প্রায় গড়িয়ে এলো। আমরা বাড়ির মধ্যে ঢুকে গেলাম ,তারপর ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে পড়লাম আবার।
যে গ্রামে আমার মামার বাড়ি, সেখানে খুব কাছাকাছি আমার অনেক দিদা দাদুর বাড়ি আছে ।তার মধ্যে সবথেকে যে বাড়িটা কাছে ,সেটা হাটা পথে খুব জোর দু মিনিট। আমি আপনাদের আগেই বলেছিলাম সেখানে আমার মোটাদাদু আর মোটা দিদা থাকে। মামার বাড়ি যাওয়ার পরের দিনকেই উনাদের সাথে একবার দেখা করতে গিয়েছিলাম ।মামার বাড়ি যে কদিন থাকি ,প্রায় প্রত্যেকদিনই ওদের বাড়িতে একবার করে যাওয়া হয়। হয় সকালে ,না হয় বিকেল বেলার দিকে। ওরা আমার দূর সম্পর্কে দাদু দিদা হয় । কিন্তু মনের সম্পর্কটা অনেকটা কাছের।সেদিনকে বেরিয়ে বিকেলবেলাতেই আবার দেখা করতে গিয়েছিলাম ।কিন্তু সাথে করে নিয়ে গেছিলাম আমার বড় মামী আর আমার মাকে।
দিদার বাড়িতে বেনারসের ছবি দেখাচ্ছিলাম
ওখানে গিয়ে দিদা দাদুর সাথে বেশ অনেকক্ষণ গল্প হল। আমার বেনারস ঘুরতে যাওয়ার ছবিগুলো ওদের টিভিতে আমি দেখাচ্ছিলাম । এর সাথেই কুম্ভ মেলা কিভাবে গেলাম ,বেনারস কিভাবে ঘুরলাম সমস্ত কথা ওদের সাথে শেয়ার করছিলাম।এর সাথেই একটু চা খাওয়া হলো। দিদার সাথে গল্প জুড়লে গল্প শেষ হয় না ।তাই পুরো গোটা সন্ধ্যেটাই ওদের বাড়িতে কেটেছে।
বাড়ি ফিরে এসে মা আর মামি যখন রান্নাঘরে কাজ করছে, আমি আর বুনু তখন আমাদের পুরনো ছবিগুলো পুনরাই দেখছিলাম। তার মধ্য থেকে তিনটে ছবি শেয়ার করছি। একটা ছবি আমার বড় মামী আর বড় মামার। বড় মামা এখন আর আমাদের মাঝে নেই। তাই মামার ছবিটা দেখে কিছুক্ষণের জন্য চুপ হয়ে গিয়েছিলাম। তারপর চোখে পড়লো আমাদের তিন বোনের ছবি। অর্থাৎ আমি শর্মি আর তিথি। এরপরে যে ছবিটা রয়েছে সেই ছবিটা চার বছর আগেকার, তাই মুখের মিল এখনো আছে।
যাইহোক আপনাদের সাথে মামার বাড়ির আরো কিছু মুহূর্ত শেয়ার করতে পেরে ভালো লাগলো। পরের দিন অন্য কোন পোস্টে হাজির হব।
💦💥2️⃣0️⃣2️⃣5️⃣ This is a manual curation from the @tipu Curation Project
@tipu curate
Upvoted 👌 (Mana: 2/8) Get profit votes with @tipU :)