প্রাপ্তি
নমস্কার বন্ধুরা। আশা করছি সকলে সুস্থ আছেন। গতকাল আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করেছিলাম বইমেলার বিষয়ে। আজকে বইমেলার একটা দুর্দান্ত মুহূর্ত আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চলেছি। যা আমার কাছে খুবই স্মরণীয় এবং যা আমার খুবই আনন্দের মুহূর্ত।
আসলে এবছর বইমেলা যাওয়ার সময় বার করতে পারছিলাম না। কারন আমার পরীক্ষা চলছিল ওই সময়। এর মধ্যেই একদিন পরীক্ষা দিতে যাচ্ছি যখন। হঠাৎ সকালবেলায় একটা ফোন আসলো। ফোনে যিনি ছিলেন। তিনি বললেন - " নমস্কার, আপনি কি ঈশা সরকার কথা বলছেন? "
আমি উত্তরে বললাম হ্যাঁ, বলুন।
তিনি বললেন - " আমি শুভেন্দু পাল বলছি। এবছরের নদীয়া জেলা বইমেলা কমিটির পক্ষ থেকে আগামী ২৩ শে ডিসেম্বর কবি সম্মেলনে আপনাকে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। আপনি আমাদের মধ্যে উপস্থিত থেকে আপনার লেখা কবিতা যদি পাঠ করেন আমরা খুব খুশি হব।"
আমি পুরো চুপ করে গিয়েছিলাম। কারণ এরমভাবে কবিতা পড়ার জন্য আমাকে কোন জায়গা থেকে আজ অবধি আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। আসলে আমি কবিতা লিখি এই ব্যাপারটাও অনেকে জানে না।। বেশিরভাগ মানুষ জানে আমি গান গাই। আর প্রোগ্রামে বেশিরভাগ সময় আমি গান গেয়েই থাকি। কবিতা কখনো কোন প্রোগ্রামে শোনায়নি। পরিচিত বা বাড়ির কোন প্রোগ্রাম থাকলে কবিতা পাঠ করেছি। তবে এরকম বড় মঞ্চে কখনো কবিতা পড়ার চেষ্টা করিনি।
হঠাৎ এইভাবে আমার নাম্বার নিয়ে এরকম ভাবে ফোন এসেছে, আমি সত্যিই ভেবেছি এটা কেউ আমার সাথে ঠাট্টা করছে। যখন উনি কথাগুলো বলে গেলেন তখনও আমার মনে হচ্ছিল উনি ঠাট্টা করছেন। কারণ আমার বন্ধুদের থেকেও আমার পরিচিত যারা আছেন তারা সকলেই আমার থেকে বড় বাবার বয়সী। বাবার প্রচুর বন্ধুরা এরকম আছে যারা আমার খুব কাছের এবং স্নেহের কাকা জেঠু। এবং তারা মাঝেমধ্যেই মজা করে থাকে নানান বিষয় নিয়ে। তাই আমি সেদিনও ভেবেছিলাম কথাটা মিথ্যে এবং ফোনের অপজিটে যিনি আছেন তিনি আমার সাথে ঠাট্টা করছেন।।
এর সত্য যাচাই করতে জিজ্ঞেস করে বসলাম," আপনি আমার নাম্বারটি কোথায় পেয়েছেন, একটু জানতে পারি,"
তিনি উত্তর দিলেন , রামকৃষ্ণ দে আপনার নাম্বারটা আমাকে দিয়েছেন।
এই সূত্রে বলি, আমার কবিতা আমি যদি খুব ভালোভাবে কারো সামনে পাঠ করে থাকি। তার মধ্যে একজন হলেন রামকৃষ্ণ দাদু। তিনি নিজেও লেখালেখি করেন। বাবার কাছ থেকে অনেকবার আমার লেখা সম্পর্কে শুনেছেন। রামকৃষ্ণ দাদু আমার ভীষণ পরিচিত।
মাঝেমধ্যেই লেখা শুনতে আমার বাড়িতে আসেন, আমাদের শোরুমেও আসেন। গত দু-তিন মাস আগেও আমার লেখা শোনার জন্য আমার শোরুমে অনেকক্ষণ বসে ছিলেন। আমি কেমন লিখছি না লিখছি।, কোন জায়গাটা ঠিক করলে আর একটু ভালো হবে। সে সবকিছু রামকৃষ্ণ দাদু আমাকে দেখিয়ে দেন।আমাদের শহরে এবং শহরের বাইরে ও রামকৃষ্ণ দাদুর বেশ একটা নাম রয়েছে। ওনার হাতের লেখা এবং উনার লেখালেখির জন্য।
যাইহোক যখন রামকৃষ্ণ দাদুর নাম শুনলাম । তখন বুঝলাম এ ব্যাপারটা একদম সত্য। আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে এটা কোন ঠাট্টা নয়। যাইহোক স্বাভাবিক আমি খুব খুশি হয়েছিলাম। ২৩ শে ডিসেম্বর দুপুরবেলায় তাই বইমেলাতে যাওয়া হলো। অনেক বড় বড় শিল্পীরা কবিরা ওখানে উপস্থিত ছিলেন। এবং যে কজন ওখানে কবিতা পাঠ করছিলেন সবাই আমন্ত্রিত। সব থেকে ভালো লাগার বিষয় হল সবার মধ্যে আমি একমাত্র অল্প বয়সী ছিলাম। বাকি সবাই ছিল আমার মা-বাবার বয়সী কিংবা তার থেকে আরো বয়স্ক।
তাদের সকলের মাঝে নিজের কবিতা আমি পাঠ করতে পেরেছি এটা আমার কাছে এক বিশাল বড় প্রাপ্তি। আমি তো কবিতা নিজের জন্য লিখি। নিজের খারাপ লাগা ভালো লাগার মুহূর্তগুলোকে একটু লেখা বন্দি করে নিই। কেউ ভালো মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দি করে, কেউ আবার ভালো মুহূর্ত লেখা বন্দি করে। আমি কখনোই কোন পত্রিকাতে দেওয়ার আকাঙ্খাই কবিতা লিখতে বসি না। নিজের জন্য কবিতা লিখতে থাকি প্রচুর। তবে বিগত কিছু বছর হল আমার কবিতা সবার এত ভালো লাগছে সবাই নিজে থেকে যেতে যেতেই আমার কবিতা পত্রিকার জন্য চেয়ে নেয়।
আমার ভীষণ ইচ্ছা আছে নিজের একটি বই বার করব কবিতার। তবে আরেকটু সময় নিয়ে। কারণ আমি লক্ষ্য করেছি যত দিন যাচ্ছে আমার কবিতার ধরন চেঞ্জ হচ্ছে। আগে যেমন কবিতা লিখতাম তার থেকে আরও মজবুত কবিতা লিখতে পারছি।
সবথেকে ভালো লাগার বিষয় হলো, আমার কবিতা পাঠ করার আগের যে মানুষটি ছিলেন। অর্থাৎ যে মানুষটি আমার আগে কবিতা পাঠ করলেন তিনি আমার শিক্ষক। তিনি আমার বাংলা শিক্ষক। বাংলা সাহিত্য চর্চা তার হাত ধরে। তিনি আমার পাড়াতেই থাকেন । এবং সেই সূত্রে তার সাথে অনেক অনেক বছর ধরে জানাশোনা। আর তার নাম হলো অমৃতাভ দে। অমৃতাভ কাকার কাছেই আমার বাংলা বিষয় নিয়ে চর্চা। এর সাথে লেখালেখির উপর ভালোবাসা তার কাছ থেকেই। এই কাকা কিন্তু রামকৃষ্ণ দাদুর ছেলে।
এদিকে কাকা জানতোই না আমি আজকে আমন্ত্রিত কবিতা পাঠ করার জন্য। আমাকে দেখে কাকাতো ভীষণ অবাক এবং ভীষণ খুশি হয়েছিল। যখন তারপরেই আমার নাম অ্যানাউন্স করা হলো। কাকা ভীষণই অবাক হয়ে গিয়েছিল। যাইহোক আমার একটা বিশাল বড় প্রাপ্তি আজকে আমি আপনাদের সকলের সাথে শেয়ার করে নিলাম। যখন মাইকে " কবি ঈশা সরকার" বলে আমাকে সম্মোধন করে মঞ্চে আহ্বান জানানো হচ্ছিল। আমার যে কি লজ্জা লাগছিল, তা আমি জানি। কারণ এতদিন যতবার মঞ্চে উঠেছি। শুধুমাত্র নিজের গান নিয়ে উঠেছি। এভাবে কোনদিন যে নিজের কবিতা পড়তে মঞ্চে উঠতে হবে, তা আমার কল্পনার বাইরে ছিল।
যাই হোক, ভগবান মাঝেমধ্যে এরকম সুন্দর সুন্দর সারপ্রাইজ দেন আমাদের। জন্মদিনের আগে ভগবানের কাছ থেকে এরকম একটা সুন্দর সারপ্রাইজ পেয়েছি। আমার এই আনন্দঘন মুহূর্তটি আপনাদের সাথে শেয়ার করতে পেরে খুবই ভালো লাগলো।
সত্যি কথা বলতে আপনার প্রতিভা দেখে আমি অনেক বেশি অবাক হচ্ছি। প্রতিটা জায়গায় আপনার কার্যক্রম আপনার দক্ষতা সত্যিই অসাধারণ। বইমেলার অনুষ্ঠানে আপনি যোগদান করেছেন এবং আপনার মনের অনুভূতি সেখানে তুলে ধরেছেন। আপনার মত করে যদি নিজেদের কার্যক্রম গুলো এভাবেই গুছিয়ে নিতে পারতাম, তাহলে হয়তোবা অনেক বেশি ভালো হতো। ধন্যবাদ নিজের আনন্দঘন মুহূর্তটা আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য। ভালো থাকবেন।
দিদি তুমি চমৎকার গান করো আমি তোমার গানের অনেক বড় একজন ভক্ত, তুমি বেশ চমৎকার চমৎকার কবিতা লেখ এবং তোমার আবৃত্তি শোনারও সৌভাগ্য আমার হয়েছে, কিন্তু হ্যাঁ এটা সত্যি গানের জন্য তুমি বেশি পরিচিত, হঠাৎ করে এরকম একটা প্রোগ্রামে আমন্ত্রণ জানালে সবাই জিনিসটা ঠাট্টা করছে এমনটাই ভাবা স্বাভাবিক। তবে এটা তোমার জীবনে চমৎকার একটা স্মৃতি হয়ে উঠেছে। অনেক অনেক শুভকামনা রইল।
সত্যিই আপনার পোস্টটি পড়ে খুব আনন্দ উপভোগ করছি। কেননা আমি জানতাম না, আপনার মধ্যে এতগুলো প্রতিভা আছে!আপনি গান গাইতে পারেন, কবিতা লিখতে বা আবৃতি করতে পারেন, সত্যিই এইটা একটি মানুষের জীবনের অনেক বড় প্রাপ্তি।যা সৃষ্টি কর্তা আপনার মাঝে দিয়েছেন। আপনার পোস্টটি পরে জানতে পারলাম,আপনি সর্বপ্রথম এত বড় মঞ্চে কবিতা আবৃত্তি করেছেন,এবং কবিতা আবৃত্তি করেছেন আপনার স্কুলের এক শিক্ষকের সাথে এইটা একটা ছাত্রর জন্য,বিশাল বড় প্রাপ্তি যা সবার ভাগ্যে জোটে না! আপনার জন্য সব সময় দোয়া রইল দিদি, আপনি ভবিষ্যতে যেন আরো অনেক বড় হন, আর আপনার পোস্টটি পড়ে আরেকটি বিষয় জানতে পারলাম, আপনি অতি শীঘ্রই একটি কবিতার বই বের করবেন। এই কথা শুনে অনেক ভালো লাগলো , ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন।