মামার বাড়িতে প্রথমদিনের সকাল
নমস্কার বন্ধুরা, আশা করছি সকলে সুস্থ আছেন। বেশ অনেকদিন আগে মামার বাড়ি নিয়ে পোস্ট লেখা শুরু করেছিলাম। প্রথম দিন দুটো পোস্ট করার পর তারপরে আর লেখা হয়নি। তাই আজকে তারপর থেকেই শুরু করছি।
মামার বাড়ি হঠাৎ করে যাওয়া কেমন ছিল সেই মুহূর্তগুলোই ওই দুটো পোস্টে শেয়ার করেছিলাম। তারপরের দিনের মুহূর্তগুলো আজকে তুলে ধরছি। প্রায় দুটো বছর পর যখন মামার বাড়িতে সকাল দেখতে পেলাম, এই আনন্দ বলে বোঝাবার নয়।
আসলে আমার মামার বাড়ি চারিদিকে গাছপালায় ভরপুর। সকালবেলা উঠেই জানলা খুলে শুধু গাছ আর গাছ দেখতে পেলে কার না ভালো লাগবে ,অন্তত আমার তো ভালো লাগে ।আমার সবুজ ভীষণ পছন্দের। আর এ কারণেই সবুজের সাথে মিশে থাকা আকাশটাকে দেখতে আরো বেশি ভালো লাগে ।তাই বারেবারে মামার বাড়ি যাওয়ার জন্য প্রচন্ড মনটা টানে।
মামার বাড়িতে একটা নিস্তব্ধতা রয়েছে। অদ্ভুত এক শান্তি আছে। যেটা শুধুমাত্র আমার অনুভূতি কিনা আমি জানিনা। তবে আমি যতদূর জানি সবারই সবার মামার বাড়ির প্রতি একটা আলাদা টান থাকে। কথায় আছে মামার বাড়ি ভারী মজা, কিল চড় নাই। কিন্তু আমার মামার বাড়ির যে গ্রামের বাড়ি ,সেখানে কিন্তু আমার মামাই থাকে না। আজ থেকে প্রায় ১১ বছর আগে বড় মামা মারা গেছে। গত পোস্টে জানিয়েছিলাম ছোট মামা শহরে থাকে ,তাই গ্রামের বাড়িতে শুধু থাকে, আমার বড় মামি ,আর দুই মেয়ে।
বড় মামার দুই মেয়ে অর্থাৎ আমার দুই মামাতো বোন, ওদের আমি ছোট থেকে কোলে পিঠে মানুষ করেছি। বড়টা তো আমার থেকে চার বছরের ছোট। আর তার পরেরটা পরের বছর মাধ্যমিক দেবে। ও আমার থেকে অনেকটাই ছোট। দুটো বোনকে আমি ছোটবেলা থেকেই খুবই ভালোবাসি।
ছোটবেলায় বেশিরভাগ সময় মামার বাড়িতে কাটতো। পড়াশোনার চাপ ছোটবেলায় এত কম থাকতো বলে ,মা এক মাস - দু মাস করে মামার বাড়িতে থাকতে পারতো।
গরমের ছুটিতে আর পুজোর ছুটিতে আমরা সোজা মামার বাড়ি চলে যেতাম। আর এখন গত ১০ বছর ধরে এসব বন্ধ হয়ে আছে।। তারপরেও যখন সাত আট দিনের সময় নিয়ে মামার বাড়ি হুট করে যাওয়া হয়, যাওয়ার সময় যতটা আনন্দে যাই,ফেরার সময় বুকের ভেতরটা হাহাকার করে। চোখের জল আপনা আপনি চলে আসে। এটা শুধু আমার ক্ষেত্রে নয় ,আমার দুই বোনের ক্ষেত্রেও হয় ।
কি অবাক ভাবে ওরা দুজনেই আমাকে খুব ভালবাসে, আর আমি ফিরে আসার সময় আমাকে জড়িয়ে ধরে দুজনেই কান্নাকাটি করে। এখন বড়টা গ্রাজুয়েশন শেষ করতে চলেছে ,তারপরেও এই মায়া জড়ানো মুহূর্তগুলো এখনো দূর হয়ে যায়নি।
যাই হোক প্রথম দিন সকালবেলায় ঘুম থেকে উঠে, ফ্রেশ হয়ে গ্রামের রাস্তা ধরে হাঁটতে লাগলাম।। জায়গাটা কতটা পরিবর্তন হয়ে গেছে। আগে রাস্তার দুই ধার দিয়ে খালি গাছ আর গাছ ছিল। সকলের জমি ছিল। সকলে চাষ করত। কিন্তু দেখলাম মামার বাড়ি ঢুকতেই যে রাস্তাটা পড়ে ,সেই রাস্তার দুই পাশে নতুন নতুন বাড়ি হয়েছে। জমি কিনে সবাই গাছ কেটে বাড়ি বানাচ্ছে। হয়তো আরো গাছ কাটা পড়বে , জায়গাটা কেমন যেন শহুরে শহুরে হয়ে যাবে।
এগুলো ভেবেই খারাপ লাগছিল। পুরনো জায়গাগুলো কত সুন্দর ছিল ।রাত হলে ওই জায়গা দিয়ে হেঁটে এদিক থেকে ওদিক করা যেত না। অন্ধকার ঘটকুট করত ।তারপরেও একটা বিশাল বড় এডভেঞ্চারাস জায়গা ছিল। সকালের ঠান্ডা হাওয়া প্রাণ জুড়িয়ে যেত।। দিনে দিনে যত গাছ কাঁটা পড়বে, আর বাড়ি তৈরি হবে, এই জায়গাটা হয়তো তার আভিজাত্য হারিয়ে ফেলবে।। ততদিন যতবার সময় পাবো এখানে এসে এসে মন ভরে দেখে যাবো এই জায়গার অদ্ভুত মায়াকে।
বড় মামীদের রাস্তার উপরে বাঁদিকে বাড়ি তৈরি হচ্ছে। দেখলাম বাড়িটা দেখতে দেখতে অনেকটা ইট গাঁথনি হয়ে গেছে। হয়তো আর দু তিন সপ্তাহ পরেই ঢালাই হবে। বোনেদের খুব ইচ্ছা ছিল বাড়ি করার। আসলে বড় মামা চেয়েছিল ওই জায়গাতেই বাড়ি করবে, তার কিছুদিন পর মামা মারা যাওয়ার পর, বাড়ির কাজে আর কেউ হাত দেয়নি। এখন দুই বোনের জেদাজেদিতেই বড় মামিকে করতে হচ্ছে। আসলেই তাই, গ্রামের বাড়িতে ওরাই বা কতদিন থাকবে ,ওদের বাড়িটা দেখে আমারও খুব ভালো লাগলো। আমিও চাই ওরা অনেক ভালো থাকুক।
বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় ঈশানকে দেখলাম বড় মামীর জানলায় হনুমানের মতন ঝু, মামার বাড়িতে গেলে ও রীতিমতো একটা হনুমানি তৈরি হয়ে যায়। তিরিং বিরিং এমনিতেই করতে থাকে ।বাড়িতে তো সারাক্ষণ খুচুর খুচুর, কিছু না কিছু নিয়ে ওর হাত চলছেই। আর ওখানে গেলে ওর হাতের সাথে শরীরের সবকটা অঙ্গ চলতে থাকে, এক জায়গায় স্থির একদম থাকে না। ওখানে ছাড়া গরুর মত দৌড়ে বেড়ায় ,আর জানেই মামার বাড়িতে কেউ বকার নেই।
যাইহোক যেখানে বাড়ি হচ্ছে ওদের ,সেখানে ঢুকে কোথায় কোথায় কটা করে ঘর হচ্ছে, রান্নাঘর কোনটা, বাথরুম কোনটা,কোথায় ড্রয়িং রুম ,সমস্ত আমার ছোট বোন বুঝিয়ে দিল। আমিও কিছু কিছু সাজেশন দিলাম। আমার বড় বোন শর্মী সেদিন কলেজ গিয়েছে। তাই ও আমাদের সাথে ছিল না। আর ছোট বোনের নাম হলো তিথি।
তারপর আমরা চলে গেলাম আমার আরেক দিদার বাড়িতে। সব হাঁটা পথে এক মিনিট করে। এই দাদু দিদাকে আমি মোটা দাদু আর মোটা দিদা বলে ডাকি। কারণ এরা খুব মোটা। দিদারাও নতুন বাড়ি করেছে গ্রামের মধ্যে। আমি সেই দু'বছর আগে এসেছিলাম ,তারপরে দু বছরের মধ্যে বাড়ি কমপ্লিট হয়ে ওদের গৃহপ্রবেশ হয়ে গেছে।। গৃহপ্রবেশের সময় নিমন্ত্রণ করলেও এত দূর থেকে যাওয়া সম্ভব হয়নি।
কিন্তু মোটাদিদার বাড়িতে একটা কাজই আমার খারাপ লেগেছে। সেটা হল বাড়ির বাইরে দেয়ালে টাইলস বসানো। টাইলসটা এমন বাজে কালারের চুজ করেছে, খুব বাজে দেখতে লাগে। বাড়ির বাইরে টাইলস বসালে ঝড়-বৃষ্টিতে রোদেও কোন সমস্যা হয় না। রং করলে সে জায়গায়, ঝড়-বৃষ্টি রোদে ফেড হয়ে যেতে থাকে। তাই জন্যই ওরা টাইলস বসিয়েছে। কিন্তু এরকম কালারের টাইলস না বসিয়ে অন্য কিছু বসাতে পারতো।
যাইহোক আজকের মত সকালের মামারবাড়ির মুহূর্তগুলো আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম ।মামার বাড়িতে অল্প কদিন থেকে আমরা অনেক মজা করেছি, সে সমস্ত কিছু নিয়ে পরপর পোস্টে লিখতে থাকব।।
Congratulations!
Your post has been manually upvoted by the SteemPro team! 🚀
This is an automated message.
If you wish to stop receiving these replies, simply reply to this comment with turn-off
Visit here.
https://www.steempro.com
SteemPro Official Discord Server
https://discord.gg/Bsf98vMg6U
এবার বেশ অনেকদিন পরই মামার বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলে। আমিও হঠাৎ করে শুনে অবাক হয়েছিলাম। কারণ তোমরা মামার বাড়িতে বেড়াতে যাবে আমি একদমই জানতাম না। গ্রামের স্নিগ্ধ পরিবেশ আমারও ভীষণ ভালো লাগে। তোমার মামার বাড়ি যেমন গ্রামে আমার বাপের বাড়ি শ্বশুরবাড়ি দুটোই গ্রামে তাই গ্রাম আমারও ভীষণ প্রিয়। তবে গ্রামে কিছু কিছু জায়গা যখন এরকম হয়ে যায়। তখন আর ভালো লাগেনা এখন সব জায়গাতেই গাছপালা কেটে বড় বড় বাড়ি ঘর তৈরি করা হচ্ছে। তাই আগের পরিবেশটা আর কোথাও ফিরে পাওয়া যায় না। ছোটবেলার সেই ফেলে আসা স্মৃতি আর এখনকার স্মৃতি একটু অন্যরকমই লাগে।