Story643485

in #busy7 years ago

সেদিন তানহার গালে থাপ্পড় টা খুব সজোরেই
মেরেছি।অবশ্য পরে একটু খারাপ
লেগেছে,কিন্তু এই খারাপ লাগাটা নিয়ে
সেদিন আমি আর মাথা খাটাতে যাই নি।যা
কিছু হয়েছে বেশ হয়েছে।জীবনটা বিষিয়ে
তুলেছে মেয়েটা আমার।...
.
.
দীর্ঘ ৬ বছরের সংসারে শুধু কর্তব্য দেখাতে
দেখাতে আমার জীবন টা মরটিন কয়েল করে
ফেলছে,শুধু আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে যাচ্ছে আর
আমি আরাফ জ্বলছি আর ধোঁয়া বের করে
যাচ্ছি।অথচ আমার বন্ধুরা এখনো কি দিব্বি
আছে।বিয়ে করে আমি শালা কুকুরের মতো
খেটে যাচ্ছি আর বন্ধুরা এখনো তাদের লাইফ
টা ইনজয় করে যাচ্ছে।
.
.সেদিন কেন যে মেয়েটার প্রেমে পড়েছি
আজ বারবার প্রশ্ন আসে..!! সেদিন প্রথম ওকে
খোলা চুলে দেখেছি অদ্ভুত সৌন্দর্য ঘিরে
ছিলো আমার চোখে।তার চোখের দিকে
তাকালে কি যে এক মায়া হতো তা আজকে
আর মিলছে না।দীর্ঘ ৯ মাস ২১দিন মেয়েটার
পিছু ঘুরার পর আমার জন্য তার মনে ভালোবাসা
জাগাতে পেরেছি।আমার এক বন্ধু তানহাকে
খুব পছন্দ করতো একদিন কলেজের এক সিনিয়র
ভাইকে দু'হাজার টাকা দিয়ে ইচ্ছে মতো
তাকে মাইর খাওয়াইলাম।এরপর অবশ্য কাজ টা
যে আমার ছিলো তা সবাই টের পেয়ে
গেলো।আজ সে বন্ধু আছে রাজার মতো আর
আমি তো নিজেকে কারাগারের কয়েদী
ভাবি।....
.
.
টানা তিন বছর প্রেম করার ফাঁকে হঠাৎ করেই
তানহার বিয়ের কথা শুনতে পেলাতম তার এক
বান্ধবীর কাছ।বুকের ভেতর টা ছিনছিনিয়ে
ব্যথা করতে শুরু করে দিল।তানহা কে ছাড়া
বাঁচতে পারবো না কিছুতেই না,,,,,।তিন টা বছর
ধরে তাকে জীবনের প্রতিটা মুহূর্তে জড়িয়ে
ফেলেছি।তার তাকে কি না অন্য কেউ
ছিনিয়ে নিবে..??না,,,, না,,,,না।তানহা কে
ফোন করে বললাম শুধু এক কাপড়ে আমার সাথে
চলে আসতে পারবে?? সেদিন তানহা আসতে
রাজি হচ্ছে না।অবশেষ আমি সুইসাইড করার
কথা বলাতে মেয়েটা রাজি হলো।আসলে কি
ভালোবাসার মানুষের মৃত্যু তা কেউ মেনে
নিতে চায় না।আমার কথা মতো তাহনা আমার
জন্য বাস ষ্টেশন এসে অপেক্ষা করে।আমি এসে
ওর হাতটা ধরে সেদিন নিজ শহর থেকে
পালিয়ে এসেছি।....
.
.
একটা কাজী অফিসে ঢুকে বিয়ের কাজ টা
সেরে নিলাম।এক বন্ধুর আত্মীয়ার সহযোগীতায়
ছোট্ট একটা রুম ভাড়া নিলাম।ভালোবাসায়
এতো পাগল ছিলাম যে কোন ধরনের কোন রকম
একটা চাকুরী পেয়ে তানহার সাথে জীবন টা
কাটিয়ে দিতে পারলেই স্বার্থক।দশ দিন পর
একটা ছোট চাকুরী পেয়ে গেলাম ৮ হাজার
৫০০ টাকা বেতনের তারপর ও সুখী ছিলাম।
নিজের ভালোবাসার মানুষের সাথে
থাকতে পারা কয়জনের ভাগ্যে জোটে...!!.
.
.
তানহা কখনো কোন অভিযোগ করেনি আমাকে
ভালোবেসে এটা পায়নি ওটা পায়নি এসব
নিয়ে।বরঞ্চ এমনি মনে হতো আমাকে কাছে
পেয়ে সে জেনো স্বর্গ পেয়েছে।এভাবে
ভালোবাসার ঘোরে জীবনের ৪টা বছর কেটে
গেলো কখন বুঝতেই পারিনি।....
.
.
আজ অফিস থেকে ফিরে আসার পর দেখলাম
তানহার খুব মন খারাপ।কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস
করলাম কি হয়েছে?তানহা বললো শরীর খারাপ
লাগছে।আমি তানহাকে ডাঃ কাছে নিয়ে
গেলাম।ডাঃ একটা টেস্ট করতে
দিলেন....তারপর জানতে পারলাম আমি বাবা
হতে যাচ্ছি।এক অন্য রকমের অনুভূতি জম্ম হলো।
তারপর থেকেই প্রিপারেশন শুরু..
.
.
আজ আমি এক কন্যা সন্তানের বাবা হয়েছি।
নার্স বলছে চোখগুলো নাকি আমার মতো।
আমিও মিল খুঁজে দেখি হুম ঠিকই তো আমার
মতো।তানহা আজকাল খুব বদলে যাচ্ছে আগের
মতো আর নেই।আমার থেকেও মেয়ের প্রতি
কেয়ার বেশি।প্রথম প্রথম মেনে নিলেও এখন আর
পারছি না।মনে হতে যাচ্ছে আমি শুধু মা আর
মেয়ের জন্য একটা ইনকাম মেশিন আর কিছু না।
আজকাল আমার খুব খিটেখিটে মেজাজ থাকে।
আর সবকিছু তানহা কে ঘিরেই,আগে অফিস
থেকে আসলে মেয়েটা আমার কাছে ছুটে
এসে এক গ্লাস সরবত বা ঠান্ডা পানি নিয়ে
আসতো।আর এখন মাঝে মাঝে টেবিলে রেখে
দেয়,,কখনো তো টেবিলে পানিও পাওয়া যায়
না।...
.
.
সারাক্ষন শুধু মেয়েকে আঁকড়ে থাকে, আমার
কখন কি দরকার তার কোন খেয়াল নেই আজকাল।
সারাদিন অফিস করে সন্ধ্যায় বাসা ফিরে এক
কাপ চা ছেয়েছি।কিন্তু মহারাণী আধা ঘন্টা
ধরে চা করতে গিয়ে আর চা নিয়ে আসলেন
না।মেয়ের খাওয়ার টাইম হয়ে গেছে।আমিও
বুঝে ফেলছি আমার চা হয়তো আজ বাহিরের
টং দোকানে।তানহাকে কিছু না বলেই
বেরিয়ে গেলাম চা খেতে।চা খাওয়ার
ফাঁকে টং দোকানে ভালোই আড্ডা জমে
আমিও বসে বসে নানান কথার ফাঁকে দু'একটা
উত্তর দিয়ে যাচ্ছি।এভাবে প্রতিদিন সন্ধ্যার
পরের চা টা করিম চাচার টং দোকানে
খেয়ে নেই।
.
.
জীবনটা উপলব্ধি করতে গিয়ে সেখানে শুধু পুরুষ
হয়ে কর্তব্য ছাড়া কিছুই পাইনি।আমিও তো
মানুষ,,,আমিও নিজেকে একটু ভালোবাসতে
চাই।কিন্তু আমার সংসার জীবনে এসবের
হাওয়া বদলে গিয়েছে।তানহার প্রতি আমার
আগের মতো ফিলিংস কাজ করে না।কলেজ
জীবনে প্রথম আমি ওকে পেছন থেকে ওর
খোলা চুললে দেখতে পাই।খুব অসাধারণ
লাগছিলো সেদিন।ওর চুলের প্রেমেই আগে
পড়েছি সেদিন। কিন্তু এই ৬ বছরে অনেক কিছু
বদলে গেছে।আজকাল ওকে খোলা চুলে জটলার
মতো লাগে,বুকের ভেতরটা ও শিহরিত হয় না।
.
.
এক সময় কলেজ ক্যান্টনি ঘন্টার পর ঘন্টা বসে
থাকতাম কখন তানহা এসে কফি খাবে আর আমি
তার স্নিগ্ধ হাসিটা দেখবো।..কিন্তু আজকে
সে হাসি টা আমার চোখে আকর্ষিত লাগে
না।আজকাল তানহার কোন কিছুতেই আমি
মুগ্ধতা পাই না সবকিছুই অগোছালো লাগে।....
.
.
নিজেকে নিজের মতো নিয়ন্ত্রন করতেই
বেশী ভালো লাগে।কিন্তু মহারাণী মাঝে
মাঝে এমন ভাব দেখায় মনে হয় আমি তার
কেনা সম্পত্তি।রাত করে ঘরে ফেরা তার বড্ড
আপত্তি। আমি কি মেয়ে মানুষ নাকি??যে
সন্ধ্যে নামার সাথে আমাকে ঘরে ফিরতে
হবে?মাঝে মাঝে খুব করে বলতে ইচ্ছে করে
ঘরে আসলে তো নিজেকে চিড়িয়াখানার
প্রাণি ছাড়া কিছুই মনে হয় না।
.
.
সংসার নিয়ে যখন তুমি এতোই ব্যস্ত তাহলে
থাকো তোমার ব্যস্ততাকে ঘিরে!! বাসায়
আসলে এই সেই প্রয়োজন এর লিস্ট থাকে এর
ছেয়ে আর কিছু না।মেয়েকে ঘিরেই যখন ও
ভালো থাকতে শিখে গেছে।তাহলে তো
তানহা ওর মতো করে ভালো আছে...?আর আমি
আরাফ কেনো ভালো নেই..??জীবনের এই
হিসেব টা আমাকে পাগলা ঘোড়ার মতো
দৌড় করিয়ে ছাড়ছে।...নিজের প্রতি
নিজেকে খুব বিরক্ত লাগছে।না এভাবে আর হয়
না,, আমি তো পারি জীবনের কিছু মুহূর্ত
বন্ধুদের সাথে কাটাতে...!!
.
.
আজ থেকে আমি আমার জীবনের সব হিসেব
কষে কষে করবো।বিয়ে করার পর জীবনটাকে এক
ধরনের রোবটের মতো নিয়ন্ত্রন করেই চলছি...আর
পারছি না...।এভাবে একদিন একদিন করে ধরনের
রোবটের মতো নিয়ন্ত্রন করেই চলছি...আর
পারছি না...।এভাবে একদিন একদিন করে আমার
আর তানহার দূরত্ব চলে আসে।তানহা ও হয়তো
আমার বদলে যাওয়া টা মেনে নিয়েছে কখনো
মুখ ফুটে কিছুই জানতে চায় নি।আর আমি তো
নিজেকে বন্ধু, আড্ডা,সবকিছুতে মাতিয়ে
রেখেছি।এখন আর নিজেকে বয়ে বেড়াতে
ভারী মনে হয় না খুব হাল্কা লাগে।জীবনের
সাথে পাল্লা দিয়ে আমি আরাফ আমাকে
বয়ে বেড়াচ্ছি...
.
.
আস্তে আস্তে তানহার প্রতি আমার সব
ফিলিংস এর দরজা-জানালা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
মাঝে মাঝে ভাবি ওকে হয়তো বিয়ে না
করলেও পারতাম....তাহলে হয়তো ওর প্রতি
ভালোবাসাটা বিলীন হয়ে যেত না।কিছু
ভালোবাসা না পাওয়াই ভালো,পেয়ে
গেলে তা তার ভালোবাসাই থাকেনা।...
.
.
আজকাল প্রায়ই রাত ২:০০টায় বাসায় ফিরি।
তানহার এতে কিছু যায় আসে না।আমি কয়েক
সাপ্তাহ ধরে ওর সাথে কথাও বলি না।তাতেও
ওর কোন রিয়েক্ট দেখি না।তবে ওর যে
পরিবর্তন হয়নি তাও না।
এখন আর তাকে খুব একটা হাসতে দেখা যায় না।
মুখের মধ্যে ক্লান্তিরেখা বিরাজমান
করছে।...
.
.
আমি ও নিজেকে ওর থেকে বহুদূর এগিয়ে
নিয়ে এসেছি।রাত করে বাসায় ফিরে
নিজের বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লাম।সকালে
৭:৩০ অফিস থেকে কল আসলো আজকে
তাড়াতাড়ি করে অফিস যেতে হবে।
তানহাকে কিছু না বলেই অফিস চলে গেলাম।
অফিস যাওয়ার পর বস আমাকে শহরের বাহিরে
একটা কাজে পাঠাবে শুনে বাসায় এসে ব্যাগ
গুছিয়ে চলে গেলাম।পিছনে তাকিয়ে
দেখলাম তানহা দাঁড়িয়ে আছে।আমি নিজ
থেকে কথা বলতে চাইনি বলেই কিছু না বলে
চলে আসলাম।......
.
.
৩দিন পর ফোনের সুইচ অন করে একটা মেসেজ
দেখলাম।
"আরাফ তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়ে দিলাম এই
জীবনে"
সাথে সাথে তানহাকে কল দিলাম কিন্তু
কলটা রিসিভ হচ্ছে না।বুকের বাম পাশটা
কম্পিত অনুভব করলাম।মনের গহীনে কিছুটা
ঠান্ডা বাতাস বয়ে আসছে এই মনে হয় ঝড় তুলতে
যাচ্ছে।তানহার প্রতি রাগ,ঘৃণা, অভিমান
থেকেই ইচ্ছে করে ফোনের সুইচ অফ করে
রেখেছিলাম।কিন্তু এই দু'লাইনের ছোট্ট একটা
টেক্সট আমাকে বড্ড বেশি এলোমেলো করে
দিচ্ছি।সাথে সাথে বসের সাথে কন্টাক্ট করে
বাসের টিকেট কেটে রওনা হলাম।
.
.
সময়টা আমাকে অস্থির করে তুলছে।নিজেকে
নিয়ে ভাবতে গিয়ে সবকিছু এলোমেলো করে
দিলাম।আমি নিজেকে নিয়ে ভালো থাকতে
গিয়ে কখনো ভাবিনী একা একা ভালো
থাকা যায় না।ভালো থাকতে গেলে তার
পাশে একটা খুঁটির প্রয়োজন।সেই খুঁটি টা যদি
নড়বড় করে তাহলে ভালো থাকাটা ও স্রোতের
অনুকূলতায় ভেসে চলে।বাসায় গিয়ে দেখি
তানহা পড়ে আছে ফ্লোরে আমার ছোট্র
রাজকন্যা টা পাশে কাঁদছে।নিজেকে বড্ড
বেশি অপরাধী লাগছে এ কি করে ফেললাম
আমি!!?...
তানহাকে নিয়ে হসপিটালে রওনা হলাম...
.
.
ডাঃ বললো আপনার স্ত্রী দীর্ঘদিন ধরে ঘুমের
ঔষধ নিতেন?...আমি কিছুই বলতে পারিনি,কারন
কখনো আমি তার কষ্ট,অভিমান কিছুই বুঝিনি।
বুঝিনি বললে ভুল হবে ইচ্ছে করেই বুঝতে চাই
নি।আমি শুধু আমার পাওয়া না পাওয়া অনুভূতি
গুলো নিয়ে বিভোর মগ্নে ছিলাম। তানহা
ব্রেইন স্ট্রোক করেছে।তানহা এখনো
সেন্সলেস,আর কখনো তার ঘুম ভাঙবে কিনা
কেউ জানে না।ডাঃ বললো তার ব্রেইন ৮৫%
Hemorrhage হয়ে গেছে।তানহা কে
(আই.সি.ইউ)তে শিফট করা হলো।৭৪ ঘন্টার ভেতর
আমার তানহা স্লিপ বার্ড এ পরিণত হয়ে যাচ্ছে
শরীর অর্ধাংশই চিরোতরে ঘুমিয়ে গেছে।
আমার ছোট্ট রাজকন্যাটা আমার হাতের মুঠো
শক্ত করে ধরে কাঁদছে।বাবা মামনি মামনি
বলছে আর কাঁচের ওই পাশে মায়ের দিকে
ইশারা করছে। হয়তো ওর না বলা ভাষাটা ওর
মা ঠিক বুঝতে পারতো??...বাবা হয়ে আমি
বুঝতে পারছি না।নিঃস্তব্ধ হয়ে আছি কি করে
বলবো এই ছোট্র রাজকন্যাকে যে তোমার
মামনি আর ফিরবে না আমাদের কাছে।....
.
.
হৃদপিন্ড টা এখনো নড়ছে মৃত্যুর খুব কাছাকাছি
দাঁড়িয়ে আছে।একটা কাঁচের দেয়াল অতিক্রম
করেই মৃত্যু তানহা কে বরণ করে নিবে।আমি
কাঁচের দেয়ালের অপর প্রান্তে আমার
রাজকন্যাকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি।আজ
থেকে ৬ বছর আগে তানহা আমার জন্য বাস
ষ্টেশনে অপেক্ষা করছিলো কখন আমি এসে
তার হাতটা ধরে ভালোবাসার পৃথিবীতে
পাড়ি দিবো।আজ আমি তার অপেক্ষা কখন
(আই.সি.ইউ)থেকে তার নিথর দেহ টা আমাকে
ছুঁতে দিবে...!!

Sort:  

Follow my other id @srvoter to get upvote daily.

Your Post Has Been Featured on @Resteemable!
Feature any Steemit post using resteemit.com!
How It Works:
1. Take Any Steemit URL
2. Erase https://
3. Type re
Get Featured Instantly & Featured Posts are voted every 2.4hrs
Join the Curation Team Here | Vote Resteemable for Witness