আত্মকেন্দ্রিকতা
নমস্কার বন্ধুরা,
আত্মকেন্দ্রিকতা নিয়ে আলোচনা করতে হলে প্রথমেই স্বীকার করতে হয় যে এটি একটি বহুমাত্রিক বাস্তবতা।মনোবৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে আত্মকেন্দ্রিকতা তখনই অসুখের রূপ নেয় যখন একজন মানুষ নিজের চাহিদা ও স্বার্থকে এতটাই প্রাধান্য দেয় যে অন্যের অনুভূতি,কষ্ট বা অধিকারকে সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করতে শুরু করে।
এ অবস্থায় ব্যক্তি সহজাত সহানুভূতি হারিয়ে ফেলে, নিজের শ্রেষ্ঠত্বে বিশ্বাসী হয়ে ওঠে, এবং সামাজিক বা পারিবারিক সম্পর্ক ভেঙে পড়ে।মনস্তাত্ত্বিক চিকিৎসাশাস্ত্রে এটি নারসিসিস্টিক পার্সোন্যালিটি ডিসঅর্ডার বা অনুরূপ ব্যাধির মধ্যে গণ্য করা হয়,যেখানে আত্মকেন্দ্রিকতা কেবল একটি চরিত্র বৈশিষ্ট্য নয় বরং গভীর মানসিক সমস্যার বহিঃপ্রকাশ।এই অসুখের প্রভাবে ব্যক্তি কেবল নিজেই ক্ষতিগ্রস্ত হয় না,বরং তার চারপাশের মানুষের জীবনকেও দুর্বিষহ করে তোলে।
অন্যদিকে সামাজিক প্রেক্ষাপটে আত্মকেন্দ্রিকতা একটি বড় অবক্ষয়ের ইঙ্গিত বহন করে।বর্তমান সমাজে ভোগবাদী সংস্কৃতি, প্রতিযোগিতামূলক অর্থনীতি, পুঁজিবাদী বাজারনীতি এবং সোশ্যাল মিডিয়ার আত্মপ্রদর্শনের সংস্কৃতি মানুষকে ক্রমেই বেশি স্বকেন্দ্রিক করে তুলছে। আজকের দিনে “নিজেকে বিক্রি করা” বা “নিজেকে ব্র্যান্ড করা” একধরনের সামাজিক দক্ষতা হিসেবে গণ্য হচ্ছে।অথচ এর ফলে মানুষ ক্রমশ কমিউনিটি, পরিবার বা বৃহত্তর সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ হারাচ্ছে।প্রতিযোগিতা ও ভোগবাদ মানুষকে শেখাচ্ছে—“আমি আগে”, “আমার সাফল্য আগে”, আর এই প্রবণতাই দীর্ঘমেয়াদে সহমর্মিতা, পারস্পরিক সহযোগিতা ও সামাজিক আস্থাকে ধ্বংস করছে।ফলে আত্মকেন্দ্রিকতা শুধু ব্যক্তির সমস্যা নয়, বরং সমাজব্যবস্থার গভীরে ছড়িয়ে পড়া একধরনের অবক্ষয়ের প্রতিফলন।
এছাড়া আত্মকেন্দ্রিকতা সংস্কৃতি ও শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গেও গভীরভাবে যুক্ত।
পরিবার ও বিদ্যালয় যদি শিশুদের কেবল প্রতিযোগিতায় জেতার শিক্ষা দেয় অথচ সহমর্মিতা, ভাগাভাগি, সহযোগিতা ও নৈতিকতার শিক্ষা না দেয় তবে তাদের বড় হওয়ার সাথে সাথেই আত্মকেন্দ্রিক প্রবণতা বাড়ে।প্রযুক্তিনির্ভর জীবনে মানুষ যেভাবে ক্রমে একা হচ্ছে, ভার্চুয়াল স্বীকৃতির ওপর নির্ভরশীল হচ্ছে, তা সমাজকে আরও বিচ্ছিন্ন ও ব্যক্তিমুখী করে তুলছে।এ অবস্থায় আত্মকেন্দ্রিকতা শুধুমাত্র অসুখের সীমারেখায় থেকে যায় না; এটি একটি বৃহৎ সামাজিক সংকটের রূপ নেয়।
সবশেষে বলা যায়, আত্মকেন্দ্রিকতা একইসাথে ব্যক্তিগত অসুখ এবং সামাজিক অবক্ষয়—কোন পরিস্থিতিতে কোন রূপটি বেশি প্রকাশ পাচ্ছে,সেটিই মূলত নির্ধারণ করে সমাধানের পথ।যদি এটি ব্যক্তির মানসিক ভারসাম্যের সমস্যা হয় তবে মনোচিকিৎসা, কাউন্সেলিং ও আত্মচর্চা জরুরি; আর যদি এটি বৃহৎ সামাজিক অবক্ষয়ের প্রতিফলন হয় তবে প্রয়োজন সংস্কৃতি ও শিক্ষা ব্যবস্থার পুনর্গঠন, সামাজিক সহযোগিতা ও নৈতিকতার চর্চা বাড়ানো এবং এমন নীতি গ্রহণ করা যা প্রতিযোগিতার পাশাপাশি সহযোগিতাকেও গুরুত্ব দেয়।আত্মকেন্দ্রিকতাকে এই দ্বিমুখী দৃষ্টিতে না দেখলে আমরা কেবল এর অর্ধেক সত্যকেই ধরতে পারব।
VOTE @bangla.witness as witness

OR
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |


Congratulations, your post has been upvoted by @nixiee with a 8.519196590624212 % upvote Vote may not be displayed on Steemit due to the current Steemit API issue, but there is a normal upvote record in the blockchain data, so don't worry.