জেনারেল রাইটিং// প্রকৃতি বনাম প্রগতি কোথায় আমাদের আসল ঠিকানা

🥰.. আসসালামুয়ালাইকুম ...🥰

প্রিয় হিন্দু ভাই-বোনদের জন্য আদাব ও ভালোবাসা 💗🙏। আমার প্রিয় আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির সকল বন্ধুদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও স্নেহ। আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করছি, মহান আল্লাহর রহমতে এবং একে অপরের ভালোবাসায় আপনারা সবাই ভালো ও সুস্থ আছেন। আলহামদুলিল্লাহ, আমিও বেশ ভালো আছি।আমি আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির একজন সদস্য,এই প্ল্যাটফর্মের সাথে আমার যাত্রা প্রায় এক বছর ধরে। সত্যি বলতে, এখানে আসতে পেরে আমার মনে হচ্ছে ! যেন নিজের আর একটি নতুন পরিবার খুঁজে পেয়েছি। প্রতিটি লেখা, প্রতিটি মন্তব্য, প্রতিটি বন্ধুত্ব আমাকে দিয়েছে আনন্দ, ভালোবাসা এক নতুন অধ্যায়ের স্বাদ।আজকে আমি আপনাদের সাথে জেনারেল রাইটিং শেয়ার করবো । " প্রকৃতি বনাম প্রগতি কোথায় আমাদের আসল ঠিকানা ?" ।আশাকরি আপনাদের প্রত্যেকের অনেক অনেক ভালো লাগবে। চলুন এবার শুরু করা যাক।

প্রকৃতি এক আশ্চর্য সৃষ্টি। এর প্রতিটি রূপে লুকিয়ে আছে প্রাণ, প্রশান্তি আর গভীর রহস্য। কখনো গ্রীষ্মের রোদ্দুরে সোনালি রঙ ছড়িয়ে পড়ে মাঠজুড়ে, আবার কখনো বর্ষার বৃষ্টিতে ধুয়ে যায় ধুলোমলিন পৃথিবী। প্রকৃতি শুধু নয়নাভিরাম দৃশ্যপট নয়, এটি আমাদের অস্তিত্বের ভিত্তি। কিন্তু এই প্রকৃতিই আজ সংকটের মুখে। মানুষের অতি লোভ, অবিবেচনা আর যান্ত্রিক উন্নয়নের অসংযত প্রতিযোগিতায় দিনদিন ধ্বংস হচ্ছে প্রকৃতির ভারসাম্য। পরিবেশে দেখা দিচ্ছে নানা সমস্যা, যার ফল ভোগ করতে হচ্ছে আমাদেরকেই। এই পরিস্থিতিতে প্রকৃতি ও পরিবেশ নিয়ে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে।ভাবতে হবে, ভালোবাসতে হবে, আর করতে হবে কিছু সত্যিকারের প্রয়াস।

আজকের দিনে দাঁড়িয়ে প্রকৃতি আর পরিবেশ একে অপরের সঙ্গে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। প্রকৃতি সৌন্দর্যের উৎস হলেও পরিবেশ এর ভিত্তি, তার শ্বাসপ্রশ্বাস। পরিবেশ দূষণের ভয়াবহ পরিণতি যেন আর শুধুই বইয়ের পাতায় আটকে নেই, বরং আমাদের প্রতিদিনের জীবনের বাস্তবতা হয়ে উঠেছে। শহরের আকাশ ধূসর, বাতাস ভারী, নদীগুলোতে জল নেই, কেবল কালো তরল বর্জ্য। গ্রীষ্ম যেন আগুন হয়ে নামে, বর্ষা সময়ে অসময়ে ভেঙে দেয় ছন্দ, শীত চলে আসে হঠাৎ করেই। এসবের পেছনে যে কেবল প্রকৃতির খেয়ালিপনা রয়েছে তা নয়, এর মূল কারণ মানুষের নিজেরই কর্মফল। উন্নয়নের নামে বন উজাড়, নদী ভরাট, অতিরিক্ত কারখানা স্থাপন, প্লাস্টিক ও রাসায়নিক বর্জ্যর ব্যবহার।এসবই আজ আমাদের পরিবেশকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাচ্ছে।

এত কিছুর মাঝেও প্রকৃতি যখন তার নিজস্ব গতিতে চোখ ধাঁধানো এক একটি মুহূর্ত উপহার দেয়, তখন মন যেন নিজেকে হারিয়ে ফেলে। একটি বিকেলের রোদ, পাতায় পাতায় নেমে আসা কুয়াশা, নদীর তীরে দাঁড়িয়ে একমুঠো বাতাসে চোখ বন্ধ করে দাঁড়ানো, কিংবা মাঠে ফুটে থাকা ছোট্ট একদল ফুল।এসব আমাদের বারবার মনে করিয়ে দেয় প্রকৃতির সঙ্গে আমাদের এক অদৃশ্য বন্ধন আছে। শহরের ব্যস্ত জীবন থেকে দূরে কোথাও গেলে টের পাওয়া যায়, প্রকৃতির কোলে ফিরে গেলে মন কেমন শান্ত হয়ে আসে। শিশুরা খেলতে চায় মাটির ওপর, আমরা হাঁটতে চাই দূর গ্রামে, পাখির ডাক শুনলে বুকের ভিতর একটা মায়া খেলে যায়।এই সবকিছুই বোঝায়, আমরা প্রকৃতির সন্তান, আর প্রকৃতি আমাদের মায়ের মতো।

তবে এই মা যদি কাঁদে, যদি ক্লান্ত হয়, তবে তার সন্তানও আর স্বস্তিতে থাকতে পারে না। পরিবেশের ওপর আমাদের নির্ভরশীলতা এতটাই বেশি, যে একটিবার বিশুদ্ধ বাতাস না পেলে আমরা দম নিতে পারি না, এক ফোঁটা বিশুদ্ধ পানি না পেলে জীবন থেমে যায়। অথচ এই মৌলিক বিষয়গুলোই আজ প্রশ্নবিদ্ধ। শীতল বাতাসের পরিবর্তে আসে ধোঁয়া, পানির জায়গায় আসে বিষাক্ত তরল, গাছের ছায়া হারিয়ে যায় কংক্রিটের জঙ্গলে। এটা কি আমরা চেয়েছিলাম? নাকি আমরা এতটাই অভ্যস্ত হয়ে গেছি এই ক্ষয়িষ্ণু পৃথিবীর চেহারায়, যে বুঝেও না বোঝার ভান করছি?

এই অবস্থায় শুধুই অভিযোগ করে বসে থাকলে চলবে না। প্রকৃতির সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক যেন শুধু ভালো লাগার পর্যায়ে সীমাবদ্ধ না থাকে, বরং তা হয়ে উঠুক দায়িত্ববোধের। প্রতিদিন একটু গাছের যত্ন নেওয়া, অপ্রয়োজনীয় জিনিস না ফেলা, প্রকৃতি নিয়ে সন্তানদের সঙ্গে কথা বলা, এবং নিজের চারপাশ পরিষ্কার রাখা।এই ছোট ছোট কাজগুলোই ভবিষ্যতের জন্য বড় একটা আশার আলো হতে পারে।

প্রকৃতি আমাদের সবচেয়ে বড় শিক্ষক, সবচেয়ে বড় আশ্রয়। সে আমাদের জীবনের প্রতিটি ধাপে শান্তি দেয়, শিক্ষা দেয়, আর ভালোবাসতে শেখায়। কিন্তু সে যখন বিপন্ন, তখন আমাদের হৃদয়ও বিপন্ন হয়। আজকের এই যুগে প্রকৃতি আর পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব শুধুমাত্র বিজ্ঞানী কিংবা সরকারি সংস্থার ওপর ছেড়ে দিলে চলবে না। প্রতিটি মানুষের মধ্যে থাকতে হবে এই অনুভব যে প্রকৃতি আমার, পরিবেশ আমার, এবং আমি চাইলে তবেই সে বাঁচবে। প্রকৃতির সৌন্দর্যকে রক্ষা করতে হলে তাকে ভালোবাসতে হবে, যত্ন নিতে হবে, এবং সবচেয়ে বড় কথা তাকে সময় দিতে হবে। প্রকৃতিকে ভালোবাসা মানে নিজেকেই ভালোবাসা, ভবিষ্যত প্রজন্মকে একটি জীবন্ত পৃথিবী উপহার দেওয়া। আর সেই জন্যই এখনই সময় ,ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে প্রকৃতির দিকে ফিরি, কারণ প্রকৃতিই জীবন।

এই ছিল আজকের ব্লগ । আশা করি আপনাদের কাছে ভালো লাগবে।কার কাছে কেমন লেগেছে তা অবশ্যই কমেন্টের মন্তব্য করে জানাবেন। কোন ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আজকের মত বিদায় নিচ্ছি, আবার নতুন কিছু নিয়ে হাজির হবো আপনাদের মাঝে।সেই পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন এবং সবার জন্য অনেক শুভকামনা রইল ।

আমার নাম মোছাঃ সামছুন্ নাহার সুইটি । আমি একজন বাংলাদেশী মুসলিম নাগরিক । আমি আমার মাতৃভাষা বাংলায় কথা বলতে ভালোবাসি। আমার বাড়ি বাংলাদেশের রংপুর জেলার বদরগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। আমি অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ালেখা করি । আমি পড়ালেখা করার পাশাপাশি স্টিমিট প্লাটফর্মে কাজ করার জন্য যুক্ত হয়েছি । আমি গত ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে এই প্লাটফর্মের মধ্যে যুক্ত হই । এই প্লাটফর্মের মধ্যে যুক্ত হতে পেরে নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে করি ।আমি ভ্রমণ করতে অনেক বেশি পছন্দ করি।সেই সাথে নতুন নতুন ফটোগ্রাফি করতে ও ইউনিক রেসিপি এবং নতুন নতুন ইউনিক ডাই তৈরি করতে বেশ পছন্দ করি । আর স্টিমিট প্ল্যাটফর্মকে আঁকড়ে ধরে ভবিষ্যতে আরো এগিয়ে যেতে চাই, এটাই আমার লক্ষ্য।