'সাজানো সংসার গল্পের চতুর্দশ পর্ব'

in আমার বাংলা ব্লগ7 hours ago

হ্যালো বন্ধুরা,

আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি, আপনারা সবাই ভাল আছেন সুস্থ আছেন। আজ আমি আপনাদের মাঝে সাজানো সংসার গল্পে চতুর্দশ পর্বটি উপস্থাপন করছি। আশা করি, গল্পের চতুর্দশ পর্বটি আপনাদের সবার ভালো লাগবে। তাই বিলম্ব না করে আমার পোস্ট লেখাটি শুরু করছি।

pexels-fauxels-3184183 (2).jpg

সোর্স


রাকেশ দিশেহারা হয়ে পড়ে কারণ দিন যত যেতে থাকে ততই সংসারের খরচ বাড়তে শুরু করে। সারাদিন কষ্ট করার পরেও তার সংসার সে ঠিকভাবে চালাতে পারছে না। ওষুধের অভাবে তার বাবা দিন দিন অসুস্থ হয়ে পড়ছিল। অন্যদিকে পুষ্টিকর খাবারের অভাবে তার স্ত্রীর শরীরটাও খারাপ হতে শুরু করে। সবকিছু মিলিয়ে সে চোখে যেন সবকিছু অন্ধকার দেখতে শুরু করে। যে কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছিল না তার করণীয় কি। একদিন লক্ষ্মী রাকেশকে বলে, তুমি এমন ভাবে ভেঙে পড়ো না কারণ এই সংসারের একমাত্র ভরসা তুমি। তুমি কষ্ট করে না হয় শহরে যে প্রদীপের সঙ্গে দেখা কর ,তাকে সবটা জানাও,আমার বিশ্বাস প্রদীপ সবটা জানার পর সে আমাদের পাশে এসে দাঁড়াবে। রাকেশ বলে, এতদিন হয়ে গেল সে কোন রকম খোঁজ খবর রাখেনি তাকে ফোন করলেও সে ফোনটি রিসিভ করে না আর তুমি বলছো সে আমাদের পাশে এসে দাঁড়াবে। লক্ষী বলে, আমার বিশ্বাস সে আমাদের পাশে এসে দাঁড়াবে তুমি দেরি না করে কাল সকালে বেরিয়ে পড়ো। রাকেশ বলে, তুমি যখন এত করে বলছ আমি কাল যাব দেখি সে কি বলে।


পরের দিন রাকেশ সকালে প্রদীপের দেওয়া সেই কার্ডের ঠিকানায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। প্রদীপের দেওয়া সেই কার্ডের ঠিকানা ছিল প্রদীপের অফিসের। অনেক কষ্ট করে খোঁজাখুঁজি করে রাকেশ পৌঁছে যায় প্রদীপের অফিসে। অফিসে ঢুকতেই দারোয়ান রাকেশকে বাধা দেয়। দারোয়ান রাকেশ কে বলে, কে আপনি কার সাথে দেখা করতে চান?রাকেশ বলে, আমি আমার ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে চাই আমাকে ভিতরে যেতে দাও। দারোয়ান রাকেশের পা থেকে মাথা পর্যন্ত তাকিয়ে দেখে বলে, কে আপনার ভাই? রাকেশ বলে, আমার ভাইয়ের নাম প্রদীপ। দারোয়ান নামটি শোনার সঙ্গে সঙ্গে বলে, প্রদীপ স্যারের ভাই আপনি? আপনি কি আমার সাথে মজা করছেন? রাকেশ বলে, দেখো ভাই আমি গ্রামে থাকি আর আমার ভাই আমাকে এই কার্ড দিয়েছিল তুমি দয়া করে আমাকে আমার ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে দাও। দারোয়ান কার্ডটি দেখে বলে, আচ্ছা আপনি এখানে দাঁড়ান আমি স্যারের কাছ থেকে পারমিশন নিয়ে আসছি। দারোয়ান প্রদীপ কে ফোন দিয়ে বলে, স্যার আপনার সঙ্গে দেখা করার জন্য গ্রাম থেকে একটি লোক এসেছে সে বলছে সে নাকি আপনার ভাই। প্রদীপ দারোয়ানকে বলে, ঠিক আছে উনাকে ভিতরে ওয়েটিংরুমে অপেক্ষা করতে বল। এরপর দারোয়ান রাকেশ কে বলে, আপনি ওয়েটিং রুমে যে অপেক্ষা করুন।


এরপর রাকেশ ওয়েটিং রুমে যে অপেক্ষা করতে থাকে প্রদীপের জন্য। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পর প্রদীপ এসে দেখা করে রাকেশের সঙ্গে। প্রদীপ রাকেশের কাছে এসে বলে,কি ব্যাপার তুমি আমার অফিসে এসেছো কেনো? রাকেশ বলে, তুইতো বর্তমান আমাদের কোন খোঁজ খবর রাখিস না। আমরা মরে গেছি না বেঁচে আছি একটাবারও সে খবর রাখিস না। প্রদীপ বলে, অফিসের কাজের ব্যস্ততার কারণে সময় পাই না।তা এখন বল তুমি এখানে কি জন্য এসেছো? রাকেশ বলে, বাবা খুব অসুস্থ টাকার অভাবে বাবাকে ওষুধ কিনে খাওয়াতে পারছি না দিন যত যাচ্ছে বাবা আরও বেশি অসুস্থ হয়ে হয়ে পড়ছে। মা তোর জন্য চিন্তা করতে করতে সেও অসুস্থ হয়ে পড়ছে। এদিকে তোর বৌদি গর্ভবতী পুষ্টিকর খাবারের অভাবে সেও অসুস্থ হয়ে পড়ছে। আমি অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু আমি পেরে উঠছি না তাই বলছি। ঠিক তখন প্রদীপ হাসতে হাসতে বলে, এখন বুঝতে পেরেছি তুমি কেন আমার অফিসে এসেছো টাকার জন্য তাই তো দাদা। রাকেশ মাথা নিচু করে বলে, হ্যাঁ ভাই তুই যদি কিছু টাকা দিস তাহলে বাবা-মা তোর বৌদি সবাইকে আমি একটু ভালো রাখতে পারব।


তখন প্রদীপ বলে, আমার কাছে কোন টাকা নাই তখন প্রদীপের ফোনে তার স্ত্রীর ফোন আছে। ফোনটা রিসিভ করতেই তার স্ত্রী বলে আমার একাউন্টে ১০ লাখ টাকা পাঠাও আমি শপিং করতে বের হব। প্রদীপ সঙ্গে সঙ্গে তার স্ত্রীকে তার একাউন্টে ১০ লাখ টাকা পাঠিয়ে দেয়। তখন রাকেশ বলে, তুই তো বললি তোর কাছে টাকা নেই তাহলে এখন তোর বউকে ১০ লাখ টাকা কিভাবে দিলি? প্রদীপ রাগান্বিত কন্ঠে বলে, আমার বউয়ের জন্য টাকা আছে কিন্তু তোমাদের জন্য আমার কাছে কোন টাকা নেই আর হ্যাঁ বাবার তো বয়স হয়েছে যে কোন সময় মারা যাবে তার পিছনে টাকা ঢেলে কি লাভ। সঙ্গে সঙ্গে রাকেশ প্রদীপের গালে চড় বসিয়ে দেয় আর বলে, আমি ভাবতে পারিনি তুই এতটা নিচে নেমে যাবি। প্রদীপ রাকেশ কে বলে, তুমি কার গায়ে হাত দিয়েছো তুমি জান না। রাকেশ বলে আমি জানি আমি কার গায়ে হাত দিয়েছি আমি একটা অমানুষের গায়ে হাত দিয়েছি। প্রদীপ সঙ্গে সঙ্গে দারোয়ানকে ডাক দিয়ে বলে,এই মানুষটাকে ধাক্কা দিয়ে বাইরে বের করে দাও। তখন রাকেশ বলে, আমাকে দারোয়ান দিয়ে ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতে হবে না।আমি এমনিতেই চলে যাচ্ছি কিন্তু একটা কথা বলে যাচ্ছি এই পাপের ফল তুই অবশ্যই একদিন পাবি।

আজ এখানে শেষ করছি সবাই খুব ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সৃষ্টিকর্তার কাছে এটাই প্রার্থনা করি।