'সাজানো সংসার গল্পের দ্বিতীয় পর্ব'

in আমার বাংলা ব্লগ4 days ago

হ্যালো বন্ধুরা,

আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি, আপনারা সবাই ভাল আছেন সুস্থ আছেন। আজ আমি আপনাদের মাঝে সাজানো সংসার গল্পের দ্বিতীয় পর্বটি উপস্থাপন করছি। আশা করি, গল্পের দ্বিতীয় পর্বটি আপনাদের সবার ভালো লাগবে। তাই বিলম্ব না করে আমার পোস্ট লেখাটি শুরু করছি।

pexels-cottonbro-3171157.jpg
সোর্স


কয়েকদিন পর প্রদীপের মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হয়। স্কুল ছুটি হয়ে যাওয়ার কারণে প্রদীপ এখন বাড়িতেই বসে থাকে। একদিন প্রদীপ রাকেশ কে বলে, দাদা আমি তোমার সঙ্গে কাজে যেতে চাই। রাকেশ প্রদীপ কে না বলে দেয়। তখন প্রদীপ রাকেশ কে বলে,দাদা আমার পরীক্ষা এখন শেষ রেজাল্ট না বের হওয়া পর্যন্ত আমার বাড়িতেই বসে থাকতে হবে। সবসময় বাড়িতে বসে থাকতে ভালো লাগে না। আমি যদি তোমার সঙ্গে কাজে যেতাম তাহলে তোমার একটু কষ্টটা কম হবে। রাকেশ তবুও তার কথায় রাজি হয় না। রাকেশ প্রদীপ কে বলে, পড়াশুনা নেই কি হয়েছে যে কয়দিন ছুটি থাকে সে কয়দিন বাড়িতে বিশ্রাম নিতে লাগ। কিছুদিন পর তো আবার স্কুল খুললে পড়াশোনায় ব্যস্ত হয়ে পড়বি। কিন্তু প্রদীপ তার দাদার কোন কথা শোনে না। তখন তার মা এসে রাকেশ কে বলে, ও যখন তোর সঙ্গে কাজে যেতে চাইছে তখন নিয়ে যা না। দুই ভাই কাজ করলে তোর একটু কষ্টটা কম হবে। ওর স্কুল খুললে ও আবার পড়াশুনা করবে এ কয়দিন তোর সঙ্গে কাজে যাক। রাকেশ বলে, মা গো তুমিও ওর কথায় সায় দিচ্ছ। আচ্ছা ঠিক আছে সকালে আমার সঙ্গে ওকে কাজে নিয়ে যাব। এখন যাও আমাকে কিছু খেতে দাও খুব ক্ষুদা লেগেছে।


রাতে খাওয়া-দাওয়া শেষ করে রাকেশ ঘুমিয়ে পড়ে। ভোরে ঘুম থেকে উঠে রাকেশ প্রদীপ কে ডাক দেয়। দাদার কণ্ঠ শুনে প্রদীপ ঘুম থেকে উঠে পড়ে। ফ্রেশ হয়ে দু ভাই পান্তা ভাত খেয়ে কাজের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। প্রদীপের কাজের কোন অভিজ্ঞতা ছিল না তাই রাকেশ প্রদীপ কে বলে, সবসময় আমার পিছে পিছে থাকবি। রাকেশ যেহেতু রাজমিস্ত্রির হেল্পার ছিল। রাজমিস্ত্রির প্রধান বলে,এ কাকে নিয়ে এসেছো দেখে তো মনে হচ্ছে আগে কখনো কাজ করেনি। রাকেশ বলে ও আমার ছোট ভাই খুব ভালো মেধাবী ছাত্র পরীক্ষা শেষ বাড়ি বসে ছিল তাই জোর করলো আমার সঙ্গে কাজে আসবে তাই নিয়ে এলাম। রাজমিস্ত্রির প্রধান বলে, আচ্ছা ঠিক আছে ওকে ইট বইতে পাঠাও আর তুমি আমার সঙ্গে থাকো। এরপর রাকেশ প্রদীপ কে বলে, তুই ইট বইতে যা কষ্ট হলে একটু বিশ্রাম নিয়ে নিবি। প্রদীপ মনের আনন্দে ইট বইতে শুরু করে। রাকেশের প্রচুর টেনশন হচ্ছিল কারণ প্রদীপ কখনো কাজ করেনি ওর খুব কষ্ট হয়ে যাচ্ছে মনে হয়। তাই রাকেশ দেখতে যায় প্রদীপ কি করছে।


রাকেশ যে দেখতে পায় প্রদীপ হাত মুঠো করে বসে রয়েছে। রাকেশ দৌড়ে যে প্রদীপ কে বলে, কি হয়েছে? প্রদীপ বলে, তেমন কিছু হয়নি দাদা। রাকেশ বলে, আমি জানি কি হয়েছে হাতের মুঠো খোল। প্রদীপ হাতের মুঠোটা খুলে রাকেশ হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে প্রদীপের হাতে ফোসকা পড়েছে। রাকেশের চোখ থেকে জল বেরিয়ে আসে কারণ রাকেশ প্রদীপ কে খুব ভালোবাসে। প্রদীপ রাকেশ কে বলে, দাদা তুমি কান্না করছো কেন আমার কিছু হয়নি সামান্য ফোসকা পড়েছে। আমি তো কখনো কাজ করিনি তার জন্য ফুসকা পড়েছে। এই নিয়ে তুমি চিন্তা করো না তো ঠিক হয়ে যাবে। রাকেশ বলে, তোর আর কাজ করতে হবে না তুই বাড়িতে যা। প্রদীপ বলে, তাই বললে হয় দাদা আমরা দু ভাই কাজ করলে দিনে এক হাজার টাকা করে পাবো। আর এই ১০০০ টাকা প্রতিদিন আমাদের হলে এতে করে তোমার সংসার চালাতে কষ্টটা একটু কম হবে। রাকেশ বলে, আমার এমন টাকার প্রয়োজন নেই ভাই,যে টাকায় তোর রক্ত লেগে থাকে। আমার সোনা ভাই ভালো আমার কথা শোন তুই বাড়িতে চলে যা। প্রদীপ ছিল নাছোড় বাঁধা, সে কিছুতেই বাড়ি যাওয়ার জন্য রাজি ছিল না। তার কিছু হবে না এই বলে সে আবারো কাজ করতে শুরু করে। কিন্তু বড় ভাইরা বাবার সমান হয়ে থাকে। প্রদীপের কষ্ট রাকেশ দেখতে পারছিল না তাই সে নিজের কাজ বাদ দিয়ে ভাইকে সাহায্য করতে শুরু করে।

আজ গল্পের পর্বটি এখানে শেষ করছি। সবাই খুব ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সৃষ্টিকর্তার কাছে এটাই প্রার্থনা করি।