'সাজানো সংসার গল্পের তৃতীয় পর্ব'

in আমার বাংলা ব্লগ5 days ago

হ্যালো বন্ধুরা,

আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি, আপনারা সবাই ভাল আছেন সুস্থ আছেন। আজ আমি আপনাদের মাঝে সাজানো সংসার গল্পের তৃতীয় পর্বটি উপস্থাপন করছি। আশা করি, গল্পের তৃতীয় পর্বটি আপনাদের সবার ভালো লাগবে। তাই বিলম্ব না করে আমার পোস্ট লেখাটি শুরু করছি।

pexels-cottonbro-3171157.jpg
সোর্স


প্রদীপ ও রাকেশ তারা দুই ভাই কাজ শেষ করে বাড়িতে আসে। বাড়িতে আসতেই তাদের মা তাদেরকে বলে, তাড়াতাড়ি হাত মুখ ধুয়ে নে আমি খাবার নিয়ে আসছি। এরপর দুই ভাই হাত মুখ ধুয়ে খাবার খেতে বসে। প্রদীপ ভাত মাখিয়ে খাবার সময় চিৎকার করে ওঠে। মা সঙ্গে সঙ্গে বলে, কি হয়েছে এমন করে চিৎকার করে উঠলে কেন? প্রদীপ বলে, কিছু হয়নি মা। তখন রাকেশ তার মাকে বলে, এত করে বারণ করেছিলাম কাজে যেতে হবে না। মা বলে, কেন রে কাজে যে কোন ঝামেলা হয়েছে? রাকেশ বলে, না মা ঝামেলা হয়নি কিন্তু তোমার ছেলের হাতে ফোসকা পড়েছে। মা বলে, প্রথম প্রথম কাজ করলে ফোসকা পড়ে আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে। রাকেশ বলে, না মা কাল থেকে প্রদীপের আর কাজে যাওয়া লাগবে না। প্রদীপ বলে, কেন দাদা আমি গেলে আরো দুটো টাকা সংসারে বেশি আসবে। রাকেশ বলে, নারে ভাই তোর কিছু হলে আমি যে সহ্য করতে পারি না রে। যত কষ্ট হোক আমি সয়ে নেব কিন্তু আমি তোকে কোন কষ্ট করতে দেবো না। তোর এই সুন্দর হাতে কলম দেখতে চাই কোদাল নয়। তখন মা বলে, ও যখন যেতে চাইছে তুই না করিস না। তোর ছোট ভাই তোর সঙ্গে কাজে গেলে দুটো টাকা বেশি সংসারে আসবে। এতে তোর একটু কষ্ট কম হবে। রাকেশ রাগান্বিত কন্ঠে বলে, তোমাদের সবার কথা রাখতে যে আজ আমার ছোট ভাইয়ের হাতে ফোসকা পড়েছে আজ সে ভাত মাখিয়ে খেতে পারছে না। এই বলে রাকেশ ভাত ছেড়ে উঠে সোজা রুমে চলে যায়।


সেদিনের পর থেকে প্রদীপ আর কাজে যায়নি। সব সময় বাড়িতে বসেই তার সময় কাটতো। সন্ধ্যা হতে প্রদীপ অপেক্ষা করত তার দাদা কখন বাড়িতে ফিরবে।রাকেশ যেমন প্রদীপকে ভালোবাসে তেমন প্রদীপ রাকেশ কে ও খুব ভালোবাসে। রাকেশ বাড়িতে না আসা পর্যন্ত প্রদীপ ভাত খেত না। এইভাবে চলে যাচ্ছিল দিনগুলো। কয়েকদিন পর প্রদীপের রেজাল্ট বের হয় রেজাল্ট পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে সে দাদার কাছে ছুটে যায়। রাকেশ দেখে তার ভাই দৌড়ে তার দিকে আসছে সে ভেবেছিল হয়তো বা কোন কিছু হয়েছে। তাই সবকিছু ফেলে দিয়ে সে ছুটে যায় প্রদীপের কাছে। প্রদীপের কাছে যে রাকেশ বলে, কি হয়েছে এমন করে পাগলের মতন কেন দৌড়ে আসছিস সব ঠিক আছে তো? প্রদীপ কোন কথায় উত্তর না দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে তার দাদার পা উঁচিয়ে প্রণাম করে। রাকেশ একটু অবাক হয়ে যায় সে আবারো বলে, কি হয়েছে হঠাৎ প্রণাম করলি। প্রদীপ বলে, দাদা আজ আমার রেজাল্ট বের হয়েছে আমি ফার্স্ট ডিভিশন পেয়ে পাশ করেছি। কথাটা শোনার পর রাকেশের দু চোখ দিয়ে জল পড়তে থাকে। প্রদীপ রাকেশের দু চোখের জল মুছে দেয় আর বলে, দাদা তুমি কান্না করছো আমার রেজাল্ট শুনে খুশি হওনি? রাকেশ বলে, আরে পাগল এ তো আনন্দের কান্না আজ আমি খুব খুশি। রাকেশ বলে, মা বাবাকে জানিয়েছিস রেজাল্টের কথা। প্রদীপ বলে, না দাদা রেজাল্ট পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে তোমার কাছে ছুটে এসেছি। প্রদীপ বলে, দাদা আজ তোমার কাজ করতে হবে না চলো বাড়িতে যাই?


তখন রাকেশ বলে, ওরে পাগল এটা যে পরের কাজ কাজ শেষ না করে কিভাবে যাই বল। তুই বাড়িতে যে মা-বাবাকে তোর রেজাল্টের কথা জানা। আমি কাজ শেষ করে তাড়াতাড়ি আসছি। প্রদীপ দাদার কথা মত বাড়িতে যায় আর রাকেশ আবার কাজ করতে শুরু করে। কিন্তু রাকেশের সেদিন আর কাজের প্রতি মন ছিল না। তখন রাকেশের সদ্দার বলে, কি হয়েছে রাকেশ? রাকেশ বলে, কিছু হয়নি সদ্দার। সদ্দার আবারও বলে, তোমার ভাই আসার পর তোমার কাজের প্রতি মন নেই কি হয়েছে তুমি আমাকে খুলে বল? তখন রাকেশ বলে, আপনি ঠিকই বলেছেন আজ আমার ভাইয়ের রেজাল্ট দিয়েছে সে ফাস্ট ডিভিশন পেয়ে পাস করেছে। সদ্দার বলে, এতো খুব খুশির খবর তুমি যে তোমার ভাই জন্য এত কষ্ট করছ সেটার ফল তুমি পেয়েছো। এই খবরটা তুমি আমাকে এত পরে এসে দিলে যাইহোক, তুমি আজ বাড়িতে চলে যাও তোমার ভাইকে সময় দাও। তখন রাকেশ বলে, না সদ্দার আমি কাজ শেষ করে তারপর যাবো। সদ্দার বলে, আজ তোমার কাজ করতে হবে না আমি অন্য একজনকে ডেকে নিচ্ছি আজ এই খুশির দিনে তোমার ভাইকে তোমার পরিবারকে সময় দেওয়া উচিত তুমি যাও। এরপর সদ্দার তাকে কিছু টাকা দিয়ে বলে,বাজার থেকে মাছ,মাংস, মিষ্টি এগুলো কিনে নিয়ে তারপর যেও। রাকেশ বলে, আমার কাছে টাকা আছে সদ্দার। সদ্দার বলে, তোমার ভাই মানে আমারও ভাই আমার ছোট ভাইয়ের জন্য দিচ্ছি। এরপর রাকেশ বাজার থেকে বড় মাছ,মাংস ,ডিম এবং মিষ্টি কিনে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।

আজ গল্পের পর্বটি এখানে শেষ করছি। সবাই খুব ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সৃষ্টিকর্তার কাছে এটাই প্রার্থনা করি।