অবহেলা গল্প পর্ব ৩

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago (edited)

হ্যালো বন্ধুরা,

আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি,আপনারা সবাই ভালো আছেন সুস্থ আছেন।আজ আমি আপনাদের মাঝে আবারও হাজির হয়ে গেলাম অবহেলা গল্পের তৃতীয় পর্ব নিয়ে। আশা করি,আপনাদের সবার ভালো লাগবে তাই বিলম্ব না করে আমার পোস্ট লেখাটি শুরু করছি।

pexels-download-a-pic-donate-a-buck-^-54379 (1).jpg
সোর্স


পায়েল বাড়ি ফেরার পর তার মা তাকে জিজ্ঞাসা করে আজ তোমার কলেজে যেতে নাকি দেরি হয়েছে? মায়ের প্রশ্নের উত্তরে পায়েল বলে হ্যাঁ মা আজ কলেজে যাওয়ার সময় রাস্তায় গাড়িটি হঠাৎ নষ্ট হয়ে যায়। একটি ছেলে সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিল। ছেলেটি আমার কাছে এসে সাহায্যের কথা বলে আমি প্রথমে তাকে কিছু বলি না পরবর্তীতে অনেক ভেবে তাকে বললাম আমার সমস্যার কথা। তারপরে ওই ছেলেই গাড়িটি ঠিক করে দিল তারপর কলেজে যেতে পেরেছি। জানো মা গাড়িটি ঠিক করার পর ছেলেটিকে আমি টাকা দিতে গিয়েছিলাম ছেলেটি নেইনি উল্টে ছেলেটি আমাকে বলল। টাকার বিনিময় আমি আপনাকে সাহায্য করিনি আপনি বিপদে পড়েছেন তাই আপনাকে সাহায্য করেছি এই বলে ছেলেটি চলে গেল। পায়েলের মা তখন বলল ছেলেটিকে তুই কি চিনিস? না মা তবে ওর নাম বলেছে দুর্জয়। নামটি শোনার পর পায়েলের মা একটু চমকে যায়। সঙ্গে সঙ্গে পায়েলকে বলে ছেলেটি দেখতে কেমন সেটা কি দেখেছিস। হ্যাঁ মা ছেলেটি লম্বা ফর্সা জানো মা ও কিন্তু শিক্ষিত ছেলে। পায়েলের কথাটি শোনার পর তার মা বুঝতে পারে যে ছেলেটি আর কেউ নয় তাদের দোকানের গার্ডম্যান। পায়েলের মা পায়েলকে বলে ছেলেটি খুব ভালো খুব মেধাবী ছেলেটি চাকরির অভাবে ও আমাদের দোকানে গার্ডম্যানের কাজ করছে। সত্যি মা ও আমাদের দোকানে গার্ডম্যানের এর কাজ করে। মা তুমি ওকে একদিন আমাদের বাড়িতে নিমন্ত্রণ করে নিয়ে এসো যে ছেলে তোমার মেয়ের এত বড় উপকার করল একটু হলেও তো ঋণ শোধ করতে পারব। ঠিক আছে পায়েল আমি একদিন ওকে আমাদের বাড়িতে নিমন্ত্রণ করব তুমি যাও ফ্রেশ হয়ে খেতে এসো। ওকে মা আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।


এই বলে পায়েল তার নিজের রুমে চলে গেল আর ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলে খেতে এল। খাওয়া-দাওয়া শেষ করে বিকালে একটু ঘুরতে বের হলো আবার সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে এসে পড়তে বসলো পড়া শেষ করার পর খাওয়া দাওয়া শেষ করে ঘুমিয়ে পড়ল কিন্তু ঘুম যেন পায়েলের দু চোখের পাতায় ছিল না। তার মনে পড়ে যাচ্ছিল সেই ছেলেটির কথা। সে নিজেকে প্রশ্ন করতে থাকে কেন তার এমনটা হচ্ছে কেন তার কথা বারবার মনে পড়ছে। তাহলে আমি কি তাকে ভালোবেসে ফেলেছি। না না না না আমি কি ভাবছি সে কোথায় আর আমি কোথায় আর তার ব্যবহারও তো এমনটা মনে হল না সে খারাপ ছেলে। আমার মনে হয় আমি তাকে আমার ভালোবাসার কথাটা বললে সে আমাকে ফিরাবে না। যদি ফিরিয়ে দেয় তখন কি হবে। পায়েলের মনে এমন অনেক প্রশ্ন মনের মাঝে উথাল পাথাল করতে থাকে। একটা সময় সে সিদ্ধান্তই নিয়ে নেয় যা হবার হবে কিন্তু আমার পছন্দের কথা আমি ওকে বলবো।


একদিন পায়েলের বাবা দুর্জয় কে ডাক দিয়ে বলে। দুর্জয় আজ তুমি রাত্রে আমাদের বাড়িতে খাবে এতে তোমার কোন প্রবলেম নেই তো। না না স্যার আমার কেন প্রবলেম হবে কিন্তু আমার সংকোচবোধ হচ্ছে আপনারা এত বড়লোক আর আমি কোথায় তাই ভাবছিলাম। একি বলছো দুর্জয় আমি ধনী তুমি গরিব এটা আমাদের পরিচয় নয় আমাদের পরিচয় তুমি একজন মানুষ আমি একজন মানুষ এটাই আমাদের পরিচয়।যাইহোক তুমি রাত্রে আমাদের বাড়িতে আছো। ঠিক আছে স্যার আমি রাত্রে আপনাদের বাড়িতে আসবো।এই বলে দুর্জয় তার ডিউটিতে চলে গেল।


এদিকে পায়েলের বাবা বাড়িতে পায়েলের মাকে ফোন করে জানিয়ে দেয় আজ দুর্জয় আমাদের বাড়িতে রাত্রে খাবে তুমি ব্যবস্থা কর। এই কথাটি আবার পায়েল শুনতে পায় যে দুর্জয় আজ রাতে তাদের বাড়িতে আসছে। সে মায়ের সাথে হাতে হাতে সাহায্য করে দিচ্ছিল তার মা একটু অবাক হয়ে যায় কারণ যে মেয়ে একটা কাজও করেনা সে আজ আমার সাথে হাতে হাতে কাজ করে দিচ্ছে। পায়েলের মা বেশি কিছু না ভেবে তার মন মতই কাজ করতে লাগলো।
সন্ধ্যা হয়ে এলো পায়েল নিজ ঘরে যে নিজেকে সুন্দর করে সাজিয়ে তুললো। পায়েল অপেক্ষা করছিল কখন তার সেই পছন্দের মানুষটি দরজায় নক করবে।আর সঙ্গে সঙ্গে যে পায়েল দরজাটি খুলবে আর অবাক চোখে তাকিয়ে থাকবে তার দু চোখে দিকে।
একটু পরে পায়েল শুনতে পেল দরজায় কে যেন নক করছে ।সে সঙ্গে সঙ্গে দৌড়ে যে দরজা খুলতেই দেখে দুর্জয়। অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে দুর্জয়ের দিকে পায়েল আর দুর্জয় ও অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে পায়েলের দিকে কারণ সে ভাবতেই পারেনি এটি তাদের বাড়ি আর এমন করে তার সাথে দেখা হয়ে যাবে। দুর্জয় পায়েলকে বলে আরে ম্যাডাম আপনি? এমন করে আপনার সাথে দেখা হয়ে যাবে আমি ভাবতেই পারিনি। পায়ের প্রশ্নের উত্তর দেয় হ্যাঁ এটি আমাদের বাড়ি আর আজ আপনার এই বাড়িতে নিমন্ত্রণ রয়েছে আসুন ভিতরে আসুন।


দুর্জয়ের ভিতর এসে বসে একটু বিশ্রাম নিতে থাকে তখন পায়েল তার জন্য জুস তৈরি করে নিয়ে আসে আর সেটি দুর্জয় কে দেয়। পায়েল আজ অনেক খুশি কারণ সে নিজ হাতে তার পছন্দের মানুষটির জন্য কিছু না কিছু করতে পেরেছে। যাইহোক একটু পরে পায়েলের মা সবাইকে খেতে ডাক দিল। সবাই খেতে বসলো দুর্জয়ের সামনে বসে ছিল পায়েল আর দুপাশে বসে ছিল পায়েলের বাবা-মা। খাওয়ার মধ্যে পায়েল তার পা দিয়ে দুর্জয়ের পায়ের উপর পা রাখে। এমন করে অনেকবারই রাখে আর দুর্জয় বুঝতে পেরে পাটি সরিয়ে নেয়। খাওয়া-দাওয়া শেষ করার পর দুর্জয় তার স্যারের কাছ থেকে বিদায় নেয় বাড়িতে ফেরার জন্য।


দুর্জয় যখন পায়েলদের বাড়ি থেকে বের হবে তখন পায়েল দৌড়ে এসে দুর্জয়ের হাতটি টেনে ধরে বলে। খাওয়ার সময় আপনি পা সরিয়ে রাখলেন কেন? আপনি কি বোঝেন না কিছু না বুঝতে চান না? পায়েলের প্রশ্নের উত্তরে দুর্জয় বলে। পায়েল আমি বুঝতে পারি তুমি আমাকে কি বলতে চাচ্ছ কিন্তু আমার পক্ষে তোমার প্রস্তাবটা মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। পায়েল সঙ্গে সঙ্গে রেগে গিয়ে বলে কেন সম্ভব নয়? পায়েল একটু বোঝার চেষ্টা করো আমি তোমার বাবার দোকানের একজন কর্মচারী।আমার যখন খুব খারাপ অবস্থা তখন তোমার বাবা আমাকে চাকরিটা দেয় আর আমি তার সাথে বেইমানি করতে পারিনা। প্রথম দেখাতে আমিও তোমাকে ভালবেসে ফেলি সারাটাক্ষণ তোমার কথা মনে করেছি। কিন্তু আজ যখন তোমাকে দেখতে পেলাম আর জানতে পারলাম। তুমি আমার মালিকের মেয়ে তখন থেকে আমার ভালোবাসাটা আমার মাঝে মেরে ফেলে দিয়েছি। পায়েল দুর্জয় কে জড়িয়ে ধরে বলে আমি আপনাকে মনের অজান্তে অনেক ভালবেসে ফেলেছি আমাকে ফিরিয়ে দেন না। দুর্জয় পায়েলকে চড় মেরে বলে দেখুন ম্যাডাম আপনি একটু বেশি বাড়াবাড়ি করছেন। আপনার বোঝা উচিত আপনি ধনী পরিবারের মেয়ে আর আমি গরিবের সন্তান আপনার আমার কোনদিন মিল হতে পারে না। আপনি আমাকে ভুলে যান মনে করুন আমি আপনার দুঃস্বপ্ন।


এই বলে দুর্জয় চলে যায় আর পায়েল তার রুমে যে দরজা বন্ধ করে কান্না করতে থাকে। সে কোনমতেই মানতে পারছিল না যে দুর্জয় তার সাথে এমন ব্যবহারটা করবে প্রথম দেখাতে এতটা ভালোবেসে ফেলবে সে কল্পনাও করতে পারেনি। আর অন্যদিকে দুর্জয় বাড়িতে ফিরে অনুসূচনায় ভুগতে থাকে কারণ সে পায়েলের গায়ে হাত তুলতে চাইনি কিন্তু রাগের মাথায় এটি করে ফেলে আর এটি করা তার উচিত হয়নি তার খুব মন খারাপ হয়ে যায়। আর সে ভাবতে থাকে আজ আমি আমার পছন্দের মানুষটির গায়ে হাত তুললাম সে আমাকে কাছে নিতে চেয়েছে আর আমি তাকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিলাম। সে ভাবতে থাকে ভালোবাসা তো অপরাধ নয় সে যদি আমাকে ভালোবাসে তাহলে আমার তাকে ভালবাসতে ক্ষতি কি। একটা কথা ঠিক মানুষ একজন একজনাকে কখন কিভাবে তাকে ভালোবেসে ফেলে সে নিজেও বলতে পারে না। শুধু সে জানে তাকে সে ভালোবাসে। যারা মন থেকে কাউকে ভালোবেসে থাকে তারা কখনোই বলতে পারে না তাকে কি দেখে এতটা ভালোবেসে ফেলেছে শুধু একটাই কথা বলবে তার সবকিছুই ভালো লাগে।

আজ এখানেই শেষ করছি আবার সবার সাথে দেখা হবে গল্পের বাকি পড়বে। সেই পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সৃষ্টিকর্তার কাছে এটাই প্রার্থনা করি।

Sort:  
 2 years ago 

ধন্যবাদ দাদা সময় করে আমার পোস্টটি দেখার জন্য আর খুব শীঘ্রই গল্পের চতুর্থ পর্বটি উপস্থাপন করব আশা করি,সবার ভালো লাগবে।