সবজি বিক্রেতা বনাম সবজি চাষী
কপিরাইট ফ্রি ইমেজ সোর্স : পিক্সাবে
কৃষি এবং শিল্প । প্রধানত এই দুটি জিনিসের উপরেই যে কোনো দেশের অর্থনীতি কতটা স্ট্রং সেটা নির্ভর করে । উপমহাদেশের দেশগুলি মূলত আমেরিকান দেশগুলির মতো শিল্পনির্ভর অর্থনীতির দেশ নয় । উপমহাদেশের অর্থনীতির ব্যাকবোন কৃষি । আমাদের দেশ প্রায় পুরোটাই কৃষিনির্ভর অর্থনীতির দেশ । অথচ এই দেশেই কৃষির বেহাল দশা ।
আমাদের দেশে কৃষিতে অনেকগুলো অন্তরায় রয়েছে । প্রধান অন্তরায় গুলোর মধ্যে কৃষকদের দারিদ্রতা, ভূমিহীন বর্গাচাষ, আধুনিক কৃষি জ্ঞান থেকে কৃষকরা বঞ্চিত, কৃষকদের নিরক্ষরতা, উন্নত কৃষি সরঞ্জামের অভাব এবং সর্বোপরি কৃষিজাত পণ্যের ন্যায্য দাম পাওয়া থেকে বঞ্চিত হওয়া । এত গুলো বাধা কাটিয়ে উঠতে পারছে না আমাদের গ্রামীণ কৃষিসমাজ । ফলশ্রুতিতে কৃষিতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন শুধুমাত্র খাতা কলমে থেকে যাচ্ছে । বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন ।
আমাদের দেশে যে পরিমাণ সবজি চাষ হয় তাতে সবজির কাঁচা বাজারে আগুন লাগার কথা নয় । অথচ সেটাই হচ্ছে । তার মানে এই নয় যে কৃষকেরা বেশি দামে সবজি বিক্রি করে অত্যধিক লাভবান হচ্ছে । এটা সম্পূর্ণ ভুল । তাদের অবস্থা আমাদের চাইতেও করুণ । প্রায় ক্ষেত্রেই তারা সবজির ন্যায্য দাম থেকেই বঞ্চিত হচ্ছে । লাভবান হওয়া তো দূরের কথা । কিন্তু, কথা হচ্ছে গলদটা কোথায় ?
উত্তরটা সোজা । দালালবাজ এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার। আমরা সাধারণ জনগণ যে প্রতিদিন কাঁচা বাজারে গিয়ে সবজি কিনি সেটা যে কত হাত ঘুরে আমাদের হাতে আসে জানেন কি ? আপনি কি জানেন যে দু'টাকা কেজি দর পাওয়াতে আলু বেচতে না পেরে কৃষক কত মেট্রিক টন আলু নদীর জলে বিসর্জন দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফিরে যায় ? অথচ সেই একই আলু আমরা তখন চল্লিশ টাকা কেজি দরে কিনে খাই ? আপনি কি জানেন যে বাজারে প্রচুর যোগান থাকা সত্ত্বেও কৃত্রিমভাবে যোগান কম দেখিয়ে চাহিদা তুঙ্গে রেখে আমাদের পকেট লুঠ করছে দিনকে দিন একটা দালাল ও ফড়েচক্র ?
এগুলো সবই একদম দিনের আলোর মতো সত্য । আমরা সাধারণ জনগণ এবং কৃষকশ্রেণী উভয়েই আসলে জিম্মি এখন এই মধ্যস্বত্বভোগী দালাল চক্রের হাতে । এই জিম্মিদশা কবে কাটবে ? কেউ জানে না । কোনো উত্তর নেই । কারণ যাদেরকে ভোট দিয়ে আমরা আমাদের শাসনকর্তা, রক্ষাকর্তা বানিয়েছি তারাই আসলে রক্ষকের বেশে ভক্ষক । তাদের প্রচ্ছন্ন মদতে এই দালালচক্র এতটা প্রকট এখন । মুনাফার একটা বড় অংশ যে এই সব দেশনেতাদের পকেটে ঢোকে তাই তারা এদের মদতদাতা ।
এই সংকট থেকে বেরোনোর পথ আসলে খুবই জটিল । দুটি মাত্র পথ খোলা আছে - এক. সচেতনতা বৃদ্ধি এবং একতা বজায় রাখা, দুই. যতটা সম্ভব সবজি চাষীদের কাছ থেকে সবজি সরাসরি কেনার প্রচেষ্টা । দুটি পথই ভীষণ কঠিন ।
প্রথমত জনগণের মধ্যে যদি মধ্যস্বত্বভোগী দালাল চক্রের বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি না করা যায় তবে সকল প্রচেষ্টাই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে । দ্বিতীয়ত যদি আমরা সাধারণ জনগণের মধ্যে একতা বৃদ্ধি না করতে পারি তবে খুব সহজেই আমরা এই সব দালালচক্রের সহজ টার্গেট হয়ে রয়ে যাবো ।
এরপরে আসি সবজি চাষীদের কথায় । এদের দুর্ভাগ্য সব চাইতে বেশি । অধিকাংশই নিরক্ষর এবং দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে । তাই খুব সহজেই এদেরকে বোকা বানিয়ে শোষণ করছে মধ্যস্বত্বভোগী দালাল চক্র । এরা চাইলেও এই প্রতারণার এই জাল ছিন্ন করতে পারছে না । মধ্যস্বত্বভোগী দালাল চক্র লোন দেয় কৃষি সরঞ্জাম ও বীজ কেনার জন্য । শর্ত থাকে সবজি তাদের কাছেই তাদেরই বেঁধে দেওয়া রেটে কৃষকদের সেল করতে হবে । কোনো কৃষক প্রতিবাদ করলে তার সবজি আর বিক্রিই হয় না । তাকে একঘরে করে রেখে দেয় মধ্যস্বত্বভোগী দালাল চক্র । সমস্যা হলো আমরা আমজনতা এক হতে না পারলেও এই মধ্যস্বত্বভোগী দালাল চক্রের মধ্যে কিন্তু দারুন একতা লক্ষ্য করা যায় ।
আমি নিজে সবজির ক্ষেত থেকে সবজি কিনেছি তিন ভাগের এক ভাগ দামে । যদিও কৃষকেরা সবাই এভাবে সবজি বিক্রি করতে ভয় পায় । আমি নিজে তাদের কথাবার্তা শুনেছি । নিজেরাই বলাবলি করছিলো আমার কাছে যে দামে তারা সবজি বিক্রি করলো সেই দামের অর্ধেকও তারা মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছে বিক্রি করতে পারে না । এই বছর জানুয়ারিতে আমি দশটাকার পালংশাক কিনে গাড়ির পেছনটা ভরে ফেলেছিলাম প্রায় । অথচ মার্কেটে ৪০ টাকা কিলো ছিল পালংশাক । ভাবতে পারেন ? কৃষকদের কাছ থেকে পালংশাক কেনে মধ্যস্বত্বভোগী দালাল চক্র মাত্র দু'টাকা দরে আঁটি । এক এক আঁটির ওজন প্রায় ৬০০-৭০০ গ্রাম । এবার নিজেরাই ক্যালকুলেশন করুন মধ্যস্বত্বভোগী দালাল চক্রের লাভ কেমন।
কৃষকদের কাছ থেকে সবজি কিনতে পারলে সাধারণ জনগণ এবং কৃষক দু'শ্রেণীর লোকই তাই সমান লাভবান হবে ।
------- ধন্যবাদ -------
পরিশিষ্ট
আজকের টার্গেট : ৫৫৫ ট্রন জমানো (Today's target : To collect 555 trx)
তারিখ : ০১ অক্টোবর ২০২৩
টাস্ক ৪০০ : ৫৫৫ ট্রন ডিপোজিট করা আমার একটি পার্সোনাল TRON HD WALLET এ যার নাম Tintin_tron
আমার ট্রন ওয়ালেট : TTXKunVJb12nkBRwPBq2PZ9787ikEQDQTx
৫৫৫ TRX ডিপোজিট হওয়ার ট্রানসাকশান আইডি :
TX ID : e8c521e32e02842dc1cc5b9819bcb59639de56c069121e2379331f44db9a355e
টাস্ক ৪০০ কমপ্লিটেড সাকসেসফুলি
Account QR Code
VOTE @bangla.witness as witness
OR


Thank you, friend!


I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় আজ শেয়ার করলেন দাদা। এটা খুব সত্যি দালালদের কারনে দরিদ্র কৃষক তার সবজির ন্যায্য মূল্য পায়না।এই দালালদের কারনে যেমন কৃষক ঠকছে,তেমনি আমরা সাধারন জনগন ও ঠকছি।সুন্দর এই বিষয়টিকে উপস্থাপন করার জন্য অনেক ধন্যবাদ দাদা আপনাকে।
একটা বিষয় কী জানেন ভাই আমাদের দেশে উদ্যোক্তা বা কৃষকের থেকে দালালের দাম বেশি। যেমনটা আপনার পোস্টেও ফুটে উঠেছে। একদিকে কৃষক যেমন নিজের সবজীর দাম না পেয়ে অবস্থা খারাপ অন্যদিকে আমরা দামের জন্য কিনতেই পারছি না। এখানে রয়েছে অনেক বড় একটা সিন্ডিকেট যারা আমাদের এবং কৃষকদের উভয়কেই প্রতিনিয়ত ঠকিয়ে যাচ্ছে। এবং কৃষকরা নিরক্ষর হওয়ার জন্য এই সুযোগ টা তারা আরও বেশি নিতে পারে। চমৎকার ছিল আপনার লেখাটা দাদা। এককথায় অসাধারণ। এখানে আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের সচেতন হতে হবে তাহলে কিছু একটা হবে।
আমাদের দেশেও একই অবস্থা। কৃষকরা দাম পায় না। আমরা এবারও দেখেছি কৃষকরা বাঁধাকপির দাম না পেয়ে সব বাঁধাকপি নষ্ট করে ফেলছে মনের দুঃখে । অথচ সেই বাঁধাকপি আমরা বাজারে গেলে ৬০-৭০ টাকার নিচে পাইনি। সরকারের সৎ উদ্যোগ আর জনগণের সচেতনতা ছাড়া এটা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া কঠিন।
দাদা আপনি একেবারে যথার্থ লিখেছেন। প্রতিটা দেশে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো কৃষি ক্ষেত্র। আর আমার মনে হয় এই জায়গাতে সব থেকে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয় কৃষকের। যেকোনো জিনিস কৃষকেরা উৎপাদন করে তার মূল্য দাম পায় না। আপনি যেমন আলোর উদাহরণ দিলেন ঠিক তেমনি গত বছরে আমরা তরমুজেরও এমন একটি উদাহরণ দেখেছি। যেখানে আমরা আশি টাকা কেজি তরমুজ কিনে খেয়েছি সেখানে চাষিরা বিক্রি করেছে মাত্র ২০ টাকা পিস। প্রতিটা জায়গায় কৃষক যেখানে লচ খেয়ে মুখ থুবড়ে পড়ছে সেখানে ব্যবসায়ী লাভবান হচ্ছে।
আমাদের দেশেও একই অবস্থা দাদা। কোন সব্জিই ৬০-৭০ টাকার নিচে নেই। কৃষক তার পণ্যের ন্যায্য মূল্য পায় না। আর আমরা জনগনও সঠিক মূল্যে বাজার করতে পারছি না। লাভ হচ্ছে মধ্য সত্ত্বভোগীদের। আর তাদের যারা মদদ দিচ্ছে তাদের। যেন দেখার কেউ নেই । সরকার যেন কাঠের পুতুল সেজে বসে আছে। বেশ সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ দাদা।
সব জায়গায় সিন্ডিকেট! এতো কষ্ট করে তারা সবজি চাষ করে দিনশেষে ন্যায্য মজুরিটা তারা পাচ্ছে না। একদম কুচক্র মহল লুটিয়ে নিচ্ছে সব। বাজারে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে। ১০ টাকার জিনিস বিক্রি করছে ব্যবসায়ীরা ৪০ টাকায়! অথচ কৃষকরা সঠিক মূল্য পাচ্ছে, তাদেরকে বোকা বানানো হচ্ছে। আমাদের মতো সাধারণ জনগণ যদি কৃষকদের কাছ থেকে সবজি কিনতে পারতাম তাহলে আমরাও যেমন লাভবান হতাম ঠিক তেমনি কৃষকরাও লাভবান হতো। আমাদের দেশেও দাদা একই অবস্থা।
দাদা আজকের পোস্টটি পড়ে মনটা জাস্ট ভরে গিয়েছে। প্রতিটি কথা একদম যথার্থ বলেছেন এবং সত্যি কথা বলেছেন। কৃষকেরা আমাদের মতো সাধারণ মানুষের চেয়েও বেশি কপাল পোড়া। তারা এতো কষ্ট করে ফলন ফলায়, কিন্তু ন্যায্য দাম তো পায় ই না,বরং নামমাত্র মুল্যে বিক্রি করে দেয় বেশিরভাগ সময়। চারিদিকে শুধু সিন্ডিকেট আর সিন্ডিকেট। তারা দিনদিন আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যাচ্ছে। যাইহোক সময়োপযোগী একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ দাদা।
দাদা আপনার আজকের পোস্ট পড়ে তো আমার একটি কথা মনে পড়ে গেল। বেশ কিছুদিন আগে গ্রামে গিয়েছিলাম সেখানে ১ কেজি পটল বিক্রি হয় মাত্র ১০-১২ টাকায়। আর দালালদের দৌরাতে সেই পটল আমরা কিনি ৬০-৭০ টাকায়। আসলে এর জন্য দেশের দালালরা বেশ দায়ী। কবে যে এর থেকে মুক্তি পাবো?