জীবনের প্রথম সাঁতার শেখার অনুভূতি
Copyright Free Image Source : PixaBay
আমার জন্ম গ্রামে, তাই আমি আপদমস্তক একজন গ্রামের ছেলে । এটি নিয়ে আমি গর্বই করি সবসময় । কারণ, গ্রামে যাদের জন্ম তারা প্রকৃতির কোলে জন্ম নিয়ে প্রকৃতির অফুরন্ত মমতায় বেড়ে ওঠে । তাদের মন হয় আকাশের মতো উদার । কঠোর পরিশ্রম, সত্যবাদিতা আর ন্যায়পরায়ণতা তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের মধ্যেই পড়ে ।
গ্রামের ছেলে হওয়ার সুবাদে গ্রামের আর পাঁচটা বাচ্চার মতোই খুবই কম বয়সেই আমি সাঁতার শিখি । আমাদের গ্রামে পুকুরের অভাব ছিল না কোনো । নিজেদেরই তো বড় বড় তিন-চারটে পুকুর ছিল । এর মধ্যে একটি পুকুর ছিল অনেক বড় । প্রায় দীঘিই বলা যায় তাকে ।
এই পুকুরের নাম ছিল "বড় পুকুর" । তো বড় পুকুর আসলেই অনেক বড় ছিল । এক পাড় থেকে অন্য পাড়ের দূরত্ব ৩০০-৪০০ গজের মতো । এই পুকুর পাড়ে ছিল বিশাল একটি বট গাছ এবং অন্য পাড়ে ছিল প্রকান্ড একটি তেঁতুল গাছ । শতাব্দী প্রাচীন বটগাছ ও তেঁতুল গাছটা একদিন বিশাল এক সাইক্লোনে ভেঙে পড়ে । খুব ছোটবেলার কথা. আমার তেমন মনে পড়ে না ।
এই পুকুর পাড়টা নতুন করে বাঁধাই করে বড় একটি শান বাঁধানো পুকুর ঘাট করা হয় । আমার স্পষ্ট মনে আছে, ঘাটের গায়ে পরিষ্কার করে লেখা ছিল "স্থাপিত ১৪০৩ সাল", অর্থাৎ বাংলা ১৪০৩ সালে ঘাটটি শান বাঁধানো করা হয় । খুব সম্ভবত তখন আমার বয়স পাঁচ কী ছয় বছর, ঠিক মনে নেই । ঘাট বাঁধানোর ফলে সাঁতারের ইচ্ছে খুব তীব্র হয়, এটুকুই শুধু মনে আছে ।
এত কম বয়সে আমার সাঁতার শেখার ব্যাপারে আমার মায়ের একটুও আগ্রহ ছিল না । কিন্তু, প্রতিদিন পুকুর ঘাটে তোলা জলে মায়ের হাতে স্নান করতে মন চাইতো না । ইচ্ছে করতো অন্যান্য ছেলেদের সাথে হুটোপাটি করে জল ছিটিয়ে আর ঘাটের পৈঠা থেকে জলে ডিগবাজি খেয়ে লাফিয়ে পড়ি । এছাড়া তখন আমার সমবয়সী সবাই সাঁতরাতে পারতো । তাদের জলের মধ্যে লুকোচুরি খেলা দেখে হিংসেয় আমার বুক ফেটে যেতো ।
তো প্রায় প্রতিদিনই মায়ের কাছে আবদার করতাম সাঁতার শেখার । মা ইটা সেটা বলে, মিথ্যে প্রতিশ্রুতি ও আশ্বাস দিয়ে আমাকে প্রবোধ দিতো । আর আমার শুধু কান্না পেতো । তো এভাবে দিন কাটে আমার । এরই মধ্যে একদিন পুকুর থেকে খুব বিপজ্জনকভাবে ফুটবল তুলতে দেখে ফেলে আমার বাবা । সাঁতার না জেনে জল থেকে ওভাবে কিছু তুলতে গেলে যদি পড়ে যাই তবে জলে ডুবে মরা আমার জন্য একপ্রকার নিশ্চিত ।
এটা বুঝে বাবা আমাকে বকাবকি না করে সাঁতার শেখানোর তোড়জোড় শুরু করলো । সম্ভবত বাবা বুঝতে পেরেছিলো যে আমাকে সব সময় চোখে চোখে রাখা বা জলে নামতে আমাকে নিষেধ করা - এসব করে আসলে তেমন কোনো লাভ নেই । এর একমাত্র সমাধান হলো আমাকে সাঁতার শেখানো ।
পরের দিন থেকেই শুরু হলো আমার "সাঁতার শেখা" । স্নানের সময় বাবা আমাকে নিয়ে জলে নামতো । বুক জল অব্দি গিয়ে আমাকে উপুড় করে আমার পেট আর বুকের নিচে হাত দিয়ে জলের মধ্যে ভাসিয়ে রাখতো । আর আমি প্রাণপণে পা ছুঁড়তাম জলের মধ্যে । এরকম ভাবে ৪-৫ দিন করেছিল বাবা । মাত্র ৪-৫ দিনে আমার জলের মধ্যে ভয় কেটে গেলো । ক্রমে আমি সমান তালে পা দিয়ে জল ঝাঁপানো আর হাত দিয়ে দু'পাশে জল ঠেলতে শিখে গেলাম ।
এর পরের কয়েকটা দিন বাবা আমাকে ঘাটের শেষ পৈঠা যেটা অর্ধেক জলে নিমগ্ন সেটির কাছে এনে অগভীর জলে ছেড়ে দিতো। আমি ঘাটের শেষ সোপানটা যেটা এক হাত জলের তলে ছিল সেটা ধরে প্রাণপণে দুই পা ছুঁড়ে জলের ওপর শরীরটাকে ভাসিয়ে রাখতাম । হুম, আমি পেরেছিলাম । নিজেকে ভাসিয়ে রাখতে এভাবে সক্ষম হয়েছিলাম । খুব আনন্দ হয়েছিল সেদিন ।
আরো ২-৩ দিন এভাবে কাটানোর পর বাবা একটি অদ্ভুত কাজ করলো । এক জোড়া শুকনো নারিকেল (ঝুনো) নিয়ে মাঝখানের একটুখানি ছোবড়া নিয়ে দুটি নারিকেল গিঁট দিয়ে বেঁধে একটি অদ্ভুত জিনিস বানালো । এবার জলে নিয়ে নারিকেল দুটো ছেড়ে দিলো । সুন্দর করে ভাসতে লাগলো সে দুটি । এরপরে বাবা আমাকে ওই ছোবড়ার গিঁটের উপরে আমার পেট রেখে ছেড়ে দিলো ।
ভয়ে একটা চিৎকার করে উঠলাম প্রথমে । পরে দেখি দুই ধুমসো ঝুনো নারিকেল আমার পেটের দু'পাশে অর্ধেক নিমজ্জিত অবস্থায় ভাসছে, আমাকে সুদ্ধ ভাসিয়ে নিয়ে । মুহূর্তে ভয় কেটে গেলো । এবার আস্তে আস্তে পা দিয়ে ঝাঁপাতে লাগলাম জলে আর হাত দিয়ে দু'পাশের জল কেটে সামনে এগোতে লাগলাম । দিব্যি ভেসে ভেসে এগোতে থাকলাম গভীর জলের দিকে । অবশ্য সাথে আমার বাবা আমার পাশে পাশে আসছিলো । এ এক অদ্ভুত, অনির্বচনীয় মুহূর্ত । আমার জীবনের এক অন্যতম স্মরণীয় মুহূর্ত ।
সেই দিনই আমি আবিষ্কার করেছিলাম যে আমি সাঁতরাতে শিখে গিয়েছি । নারিকেল দু'টো জাস্ট আমার সাহস বৃদ্ধির জন্য । ও দু'টো না থাকলেও আমি পারবো সাঁতরাতে ঠিকই । মনে আছে সেদিন খুশিতে আমি বার বার চিৎকার করছিলাম । কী যে আনন্দ হচ্ছিলো আমার তা বলবার নয় ।
পরবর্তী গোটা একটা সপ্তাহ জুড়ে নারিকেল ভাসিয়ে সাঁতরেছি, কিন্তু তারপরে আর কিছু লাগেনি । চিৎ সাঁতার, কাত সাঁতার, ভুট সাঁতার, ডুব সাঁতার - সব সাঁতারেই হয়ে উঠেছিলাম দারুন এক্সপার্ট । চোখ লাল না হওয়া অব্দি আর উঠতাম না জল ছেড়ে ।
------- ধন্যবাদ -------
পরিশিষ্ট
আজকের টার্গেট : ৫১০ ট্রন জমানো (Today's target : To collect 510 trx)
তারিখ : ০১ মে ২০২৩
টাস্ক ২৫২ : ৫১০ ট্রন ডিপোজিট করা আমার একটি পার্সোনাল TRON HD WALLET এ যার নাম Tintin_tron
আমার ট্রন ওয়ালেট : TTXKunVJb12nkBRwPBq2PZ9787ikEQDQTx
৫১০ TRX ডিপোজিট হওয়ার ট্রানসাকশান আইডি :
TX ID : 1ba12e497b276f13a859f681c674f53aaf23f7a5abe73c4e3e4b1865cb44167e
টাস্ক ২৫২ কমপ্লিটেড সাকসেসফুলি
Account QR Code
VOTE @bangla.witness as witness
OR

Hello friends, if you support me, I will support you too. If you follow me, I trust you too.
Check here :- @ashutos
হ্যালো বন্ধুরা, আমাকে সমর্থন করলে আমি আপনাকেও সমর্থন করবো। আপনি আমাকে ফলো করলে, আমি আপনার উপর বিশ্বাস করবো
This post has been upvoted by @italygame witness curation trail
If you like our work and want to support us, please consider to approve our witness
Come and visit Italy Community
দাদা বেশ মজার একটি পোস্ট করলেন আজ। আপনার পোস্টটি পড়ে বেশ কিছুক্ষণ খিল খিল করে হাসলাম। সত্য বলতে কি সাঁতার আমিও জানিনা। আর প্রকৃতির মাঝে সাঁতারের বিষয়টি আমার জানা নেই। যেহেতু ছোটবেলা থেকে শহরে মানুষ। যাইহোক আপনার পোস্ট দিয়ে আজ অনেক বিষয় জানতে পারলাম। আর আপনার মজার দিনগুলোর কোথাও জানতে পারলাম।।হিহিহি
যারা পুকুরে সাঁতার কাটতে জানে না তারা কি করে জানবে ডুব দিয়ে সাঁতার কাটার আনন্দের মজা। ছোটকালের সেই সময়টা ছিল অসাধারণ যখন পুকুরে সাঁতার কাটতাম তখন মা পুকুর থেকে ধরে আনতো চোখ লাল হয়ে যেত আর ডুব দিয়ে একজন আরেকজনকে ধরাধরি খেলা মজাই ছিল আলাদা।
দাদা আপনার সাঁতার শেখার অনুভূতি পড়ে সত্যিই খুব ভালো লাগলো। গ্রামের ছোট ছোট বাচ্চারাও সাঁতার কাটতে পারে। তাদের সাঁতার কাটা, ব্রীজ থেকে লাফ দেওয়া দেখতে খুব ভালো লাগে। যদিও আমি সাঁতার কাটতে পারি না। কারণ ছোট থেকেই বাথরুমে গোসল করে অভ্যস্ত। তবে আপনার বাবার বিভিন্ন ধরনের টেকনিক এর জন্য আপনি খুব সহজেই সাঁতার শিখতে পেরেছেন। আপনার মতো আমারও যদি এমন সুযোগ থাকতো তখন, তাহলে হয়তোবা আমিও সাঁতার শিখে নিতে পারতাম। আত্মরক্ষার জন্য সবার উচিত সাঁতার শিখে রাখা। যাইহোক এতো সুন্দর একটি পোস্ট পড়ে খুব ভালো লাগলো দাদা। শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
দাদা প্রতিদিনের মতো আজ ও সাঁতার শেখার অনুভূতি গুলো পড়ে বেশ ভালোই লাগলো। আর হে আমিও দেখেছি আমার শ্বশুরকে ননদের ছেলেকে নারিকেল দুটো বেঁধে দিয়ে সাঁতার শেখাতে।যাক খুব ভালো ভাবেই বাবা আপনাকে সাঁতার শিখিয়েছিল।শেয়ার করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ। অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন রইলো আপনার জন্য।
খুব মজা লাগলো আর আমার নিজের সেই সাঁতার শেখার চেষ্টার কথাও মনে পরে গেলো। এভাবে সাঁতার শেখার আমিও চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আসলে শেখা হয়নি। কারণ বেশিদিন গ্রামে থাকা হয়নি। অর্থাৎ ঈদের ছুটিতে গিয়েছিলাম সে কারণেই বেশিদিন থাকা হয়নি। আর বিশেষ একটা কারণ হলো আমার ডুব দিতে প্রচন্ড পরিমাণ ভয় লাগে। অর্থাৎ আমি এখনো গ্রামে গেলে যদি পুকুরে কখনো স্নান করা হয়। তবে সে ক্ষেত্রে মগ নিয়ে যাই। কারণ ওই যে ডুবে দিতে আমার প্রচন্ড ভয় ।আপনার লেখাটি পড়ে আমার সেই সাঁতার শেখার চেষ্টার কথা মনে পরে গেলো। খুব সুন্দর লিখেছেন দাদা।
আপনার মত অন্যের সাঁতার দেখলে এখনো আমার হিংসে হয়। সাঁতার পারি না যে। ছোটবেলায় নানা বা দাদা বাড়িতে গেলে ভাই বোনেরা সাঁতরে যখন নদী পার হত তখন খুব কষ্ট নিয়ে পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকতাম। নারিকেল দিয়ে ছোটবেলায় অনেককেই সাঁতার শিখতে দেখেছি আমি কেন যেনো পারিনি। আসলে সাঁতার শিখতে পারলে অসম্ভব আনন্দ হওয়ারই কথা। তাই তো আপনারও এত আনন্দ লেগেছিলো।
এই কথাগুলো একদম ঠিক বলেছেন দাদা আসলে যতই আমরা শহরে থাকি না কেন বারবার ছুটে চলে যায় মনটা গ্রাম পানে।।
আপনার সাঁতার শেখার গল্পটা পড়ে খুবই ভালো লাগলো। আসলে সাঁতার শেখার জন্য মেন যেটা দরকার সেটা হচ্ছে আগে সাহস জোগাতে হবে এবং মুখ বন্ধ করে পানি কম করে খেতে হবে।।
আমিও আপনার মত করে বাবার কাছ থেকেই সাঁতার শিখেছি।।
তবে সাঁতার কাটতে আমার খুবই ভালো লাগে আমাদের বাড়ির পাশেই পদ্মা নদী এখনো বাড়িতে গেলে ছুটিতে পদ্মা নদীতে বন্ধুদের সাথে গোসল করা হয়।।
বাহ্ দাদা আপনি দেখছি সব সাঁতার ভালো ভাবেই শিখে গিয়েছিলেন। আপনার বাবার জন্য অবশেষে সাঁতার শেখা হয়ে গেলো। গ্রামীণ পরিবেশে গিয়ে পুকুরে সাঁতার কাটতে ভীষণ ভালো লাগে। আপনার পোস্ট পড়ে ভীষণ ভালো লাগলো। আপনার জন্য শুভ কামনা রইল ভালো থাকবেন।
দাদা আপনার সাঁতার শেখার অনুভূতি পড়ে ভীষণ ভালো লাগলো। আপনি বেশ ছোট্ট বেলায় সাঁতার শিখেছেন। আসলে আংকেল যেভাবে আপনাকে সাপোর্ট দিয়ে সাঁতার শিখিয়েছেন তা সত্যিই ভীষণ প্রশংসনীয় ব্যাপার। আর শেষ দিকে এক জোড়া শুকনো নারিকেল আপনার সাহস যুগিয়েছে কিন্তু তখন আপনি সাঁতার এমনিতেই পারতেন।
দারুন লাগলো পোস্টটা পড়ে।