গল্প - অভিশপ্ত জীবন||

in আমার বাংলা ব্লগ2 days ago

আসসালামু আলাইকুম/নমস্কার


আমি @monira999 বাংলাদেশ থেকে। মাঝে মাঝে গল্প লিখতে অনেক ভালো লাগে। গল্পের মাধ্যমে নতুন নতুন চরিত্র উপস্থাপন করতে ভালো লাগে। তাই আজকে আমি একটি গল্প লিখে আপনাদের মাঝে শেয়ার করবো। আশা করছি সবার ভালো লাগবে।


অভিশপ্ত জীবন:

IMG_20250726_225405.jpg


হেমি ভালোবেসে সোলায়মানকে বিয়ে করেছিল। সে নিজের পরিবার নিজের সবকিছুই ছেড়ে এসেছিল। নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে নিয়ে ভালো থাকতে চেয়েছিল। কিন্তু সময় যে তার বড্ড বেশি কঠিন হয়ে যায়। দেখতে দেখতে কেটে যায় বিয়ের কয়েকটি বছর। প্রথমদিকে বেশ হাসি খুশি ছিল মেয়েটি। কিন্তু কোথাও গিয়ে যেন আপনজন হারানোর ব্যাথা থাকে তিলে তিলে শেষ করে দিচ্ছিল


যেই মেয়েটি গাইতে ভালোবাসত সেই মেয়েটির গলায় যেন আজ সুর হারিয়ে গেছে। তার ভেতরের চাপা কষ্টগুলো যেন কথা বলার শক্তিকে বিলীন করে দিয়েছে। যাকে ভালোবেসে ঘর বেঁধেছিল তার কাছ থেকে পাওয়া অবহেলা থাকে শেষ করে দিচ্ছিল। প্রথমদিকে তাদের সম্পর্ক ভালো থাকলেও ধীরে ধীরে সময়ের সাথে সাথে সবকিছু বদলে যেতে শুরু করে। সোলায়মান এখন আর তাকে খুব একটা সহ্য করতে পারে না। সব সময় অপমান করে কথা বলে। মনে হয় যেন অপমান করতে পারলেই তার অনেক বেশি শান্তি।


দেখতে দেখতে বিয়ের কেটে যায় প্রায় সাতটি বছর। হেমি মা হতে পারেনি। মা হতে না পারার যন্ত্রণা তাকে তিলে তিলে শেষ করে দিয়েছিল। আর তার ভালোবাসার মানুষটির দেওয়া মানসিক যন্ত্রণা তার বেঁচে থাকার ইচ্ছে কেড়ে নিয়েছিল। সে যেন মৃত্যুটাকে আপন করে নিতে চাইছিল। সব সময় মৃত্যুর প্রত্যাশা করতো সে। হেমি যেন জীবন্ত লাশ হয়ে বেঁচে ছিল। একদিন ঘটে গেল অন্য রকমের ঘটনা। বাড়িতে সোলায়মানের দ্বিতীয় বিয়ের আলোচনা চলছে। পাত্রীপক্ষ দেখতে এসেছে তাকে। হেমিকে ঘরে বন্দি করে রাখা হয়েছে।


হেমি কিছুটা বুঝতে পেরেছিল। এরপর কাজের মেয়ের মুখে সবকিছুই জানতে পারে। বিয়েতে তার স্বামীর কোন আপত্তি নেই। কারণ সে সন্তানের মুখ দেখতে চায়। দেখতে দেখতে বিয়ে হয়ে যায়। কিন্তু হেমির যে আর যাওয়ার জায়গা নেই। নিজের বাবার বাড়ি ছেড়ে এসেছিল বহু বছর আগেই। তাদের সাথে সম্পর্কটা ঠিক ভালো নেই। কি করবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছিল না। আজ যেন নিজের ঘরেই তার দম বন্ধ লাগছে। মনে হচ্ছে এই ঘরটি ছেড়ে বেরিয়ে গেলে একটু বুক ভরে নিঃশ্বাস নিয়ে বাঁচতে পারবে সে।


আঁধার রাতে বেরিয়ে পড়েছিল হেমি। কোন কিছু না ভেবেই রাস্তার পাশে হেঁটে যাচ্ছিল সে। পেছন থেকে চলন্ত একটি ট্রাক ধাক্কা দিয়ে যায় তাকে। হেমি সেই মুহুর্তেই লুটিয়ে পড়ে রাস্তায়। যেহেতু রাতের বেলা তাই কেউ সেভাবে এগিয়ে আসে না। পরদিন ভোর হতেই যখন দেখে একটি মেয়ের লাশ পড়ে আছে তখন চারপাশে হৈচৈ পড়ে যায়। অন্যদিকে সোলাইমান একবারও হে খোঁজ করেনি। যখন খবরের কাগজে অজ্ঞাত ব্যক্তি হিসেবে হেমির মৃত্যুর কথা উল্লেখ করা হয় তখন শেষবারের মতো সোলায়মান তাকে দেখতে এসেছিল। নিজের স্ত্রীর পরিচয় দিতেও যেন তার মন চাইছিল না। হেমি বেঁচে গেছে। মৃত্যুর মধ্য দিয়ে অভিশপ্ত সেই জীবন থেকে মুক্তি পেয়েছে।



আমার পরিচয়

photo_2021-06-30_13-14-56.jpg

আমি মনিরা মুন্নী। আমার স্টিমিট আইডি নাম @monira999 । আমি ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স ও মাস্টার্স কমপ্লিট করেছি। গল্প লিখতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। মাঝে মাঝে পেইন্টিং করতে ভালো লাগে। অবসর সময়ে বাগান করতে অনেক ভালো লাগে। পাখি পালন করা আমার আরও একটি শখের কাজ। ২০২১ সালের জুলাই মাসে আমি স্টিমিট ব্লগিং ক্যারিয়ার শুরু করি। আমার এই ব্লগিং ক্যারিয়ারে আমার সবচেয়ে বড় অর্জন হলো আমি "আমার বাংলা ব্লগ" কমিউনিটির একজন সদস্য।