গল্প পোস্ট-অবুঝ মনের ভালোবাসা || written by@maksudakar ||
আসসালামু আলাইকুম
আসসালামু আলাইকুম
শুভ রাত্রি ভালোবাসার আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি পরিবার। সকলের সুস্বাস্থ্য এবং সুন্দর জীবন কামনা করে আবার আজ চলে আসলাম নতুন আরও একটি ব্লগ নিয়ে। প্রেম চিরন্তন, প্রেম সত্য। প্রেম মানেনা কোন ধর্ম বর্ণ, মানেনা কোন বয়স। প্রেম হতে পারে যে কোন বয়সে আর যে কোন সময়ে। প্রেমের জন্য যুগে যুগে কত মানুষ যে জীবন বিসর্জন দিয়েছেন তার কোন হিসেব নেই। প্রেমে পড়ে মানুষ নিজেকে নতুন রূপে আবিস্কার করে। রঙ্গিন আলোয় দেখে পৃথিবীটাকে। সবকিছুই যেন তার কাছে নতুন লাগে।
তবে প্রেম যেমনই হোক না কেন তা হওয়া চাই সত্য এবং চিরন্তন। তাই প্রেম বা ভালোবাসা যাই বলি না কেন সত্যিকারের প্রেম না হলে জীবন হয়ে যায় দুর্বিসহ । আর এই দুর্বিষহ জীবন নিয়ে তখ0ন বেচেঁ থাকাটাও যেন বেশ কষ্টকর হয়ে যায়। বন্ধুরা আজও আবার চলে আসলাম আপনাদের মাঝে নতুন একটি গল্প নিয়ে। আশা করি আমার আজকের গল্পটিও আপনাদের ভালো লাগবে।
প্রিয়ন্তী বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে। বাবা একজন বেসরকারী চাকুরি জীবি এবং প্রিয়ন্তীর মা একজন স্কুল শিক্ষিকা। পরিবারে প্রিয়ন্তী, বাবা মা আর একটি মাত্র ভাই। প্রিয়ন্তী এবার এইচ এস সি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। বাবা মায়ের আদরের মেয়ে বলে প্রিয়ন্তীর জন্য বাসায় শিক্ষক রাখা হয়। সেই প্রথম বর্ষ হতেই ঠিক করা হয় গৃহ শিক্ষক কে। তবে ছেলেটি মেডিকেলের ছাত্র। নিজের খরচ চালানোর জন্য সে পড়াশুনার পাশা পাশি দুটো প্রাইভেট পড়ায়। ঢাকায় ছেলেটির কেউ নেই। মেডিকেল কলেজের হোস্টেলে থেকেই পড়াশুনা করে ছেলেটি। তাই প্রিয়ন্তীর বাবা মা ছেলেটিকে বেশ আদর করে। প্রায় রাতের খাবার না খাইয়ে ছাড়ে না। ছেলেটির নাম আবির।
প্রিয়ন্তী দেখতে যেমন সুন্দর , পড়াশুনায়ও তেমনি মেধাবী। টিচারের কাছে পড়তে পড়তে কখন যে আবির আর প্রিয়ন্তীর মধ্যে ভালোবাসা আর ভালোলাগার সম্পর্ক সৃষ্টি হয় সেটা তারা কেউ বলতে পারে না। তাই আবির প্রতিদিন একটু তাড়াতাড়িই চলে আসে প্রিয়ন্তী কে পড়াতে। পড়াতে আসার সময় আবির প্রায় প্রিয়ন্তীর জন্য এটা সেটা হাতে করে নিয়ে আসে। এতে কিন্তু প্রিয়ন্তীর বাবা মা এতটুকু রাগ করে না। তারা আবির কে বেশ ভালো চোখেই দেখে। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়েই পড়াশুনা করার পাশাপাশি চলে তাদের প্রেম আর ভালোবাসা। আর এভাবেই কেটে যায় সময়।
এদিকে প্রিয়ন্তীর এইচ এস সি পরীক্ষা শেষ হয়ে যায়। কিন্তু আবির তখনও আসে প্রিয়ন্তীদের বাসায়। কারন প্রিয়ন্তীর বাবা মা চায় প্রিয়ন্তী একটি ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাক। আবিরও প্রিয়ন্তীর জন্য জান প্রান দিয়ে চেষ্টা করে যাচেছ। কিন্তু এরই মধ্যে ঘটে যায় একটি ঘটনা। একদিন প্রিয়ন্তীর বাবা মা দুজনেই বাহিরে ছিল। তাদের ফিরতে একটু দেরি হয়। বাড়িতে ফিরে প্রিয়ন্তীর বাবা মা প্রিয়ন্তী এবং আবির কে ঘনিষ্ঠভাবে দেখে ফেলে। এই অবস্থা দেখে প্রিয়ন্তীর বাবা মা কি করবে কিছুই বুঝতে পারছিল না। তাই পরিচিত কাজী ঢেকে সেই রাতেই প্রিয়ন্তী আর আবিরের বিয়ে দিয়ে দেয়।আবিরও কোন আপত্তি করেনি। কারন আবির যে প্রিয়ন্তীকে ভালোবাসে।
এভাবেই কেটে যাচিছল তাদের জীবন। আবির এখন প্রিয়ন্তীদের বাড়িতেই থাকে। এক সময় প্রিয়ন্তী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বোটানীতে চান্স পায়। আবিরও এতদিনে ডাক্তার হয়ে যায়। এরই মধ্যে প্রিয়ন্তীর জীবনে নতুন মেহমানের আগমন প্রিয়ন্তী উপলব্দি করে। বেশ খুশি সবাই। আবির, প্রিয়ন্তীর বাবা মা প্রিয়ন্তীকে বেশ আদরও করে। দিন যতই যাচেছ প্রিয়ন্তী অসুস্থ হয়ে পড়ছে। এদিকে আবিরের ব্যস্ততাও বেড়েই যাচেছ। আবির এখন প্রায় রাতে নাইট ডিউটি করতে রাতে বাসার বাহিরে থাকে। এ নিয়ে প্রিয়ন্তী বা তার বাবা মায়ের কোন অভিযোগ নেই। কারন তাদের কাছে আবির বেশ ভালো একজন ছেলে।
এক সময়ে প্রিয়ন্তীর কোল জুড়ে একটি ফুটফটে কন্যা সন্তান আসে। আর এই কন্যা সন্তান কে পৃথিবীতে আনতে প্রিয়ন্তীকে বেশ দখল পোহাতে হয়। হাসপাতালে থাকতে হয় প্রায় সাতদিন। এরই মধ্যে যে হাসপাতালে প্রিয়ন্তী চিকিৎসা নেন সেখানে আবির একদিন বিকেলে প্রিয়ন্তী কে দেখতে আসে। হঠাৎ সেখানে একজন মহিলা ডাক্তার আসেনি। তিনি আবির কে দেখে তাকে দুলাভাই করে সম্ভধোন করলে প্রিয়ন্তীর একটু সন্দেহ হয়। কিন্তু আবির সেই কথাটিকে পাশ কাটিয়ে বাহিরে চলে যায়। ফিরে এসে আবির প্রিয়ন্তীকে বলে যে মেয়েটি তার ইয়ার মেট। তাই তাকে দেখে দুষ্টুমী করে দুলাভাই করে ডেকেছে। প্রিয়ন্তীও তাই বিশ্বাস করে।
কিন্তু প্রিয়ন্তী যেদিন রিলিজ নিয়ে বাড়ি ফিরবে সেদিন আবার সেই ডাক্তার মহিলার সাথে দেখা। এবার কিন্তু সেই ডাক্তার ভদ্র মহিলাই প্রিয়ন্তীকে জিজ্ঞেস করলো যে সে আবির কে কি করে চিনে। প্রিয়ন্তী তখন একটু অবাক হলো এবং ভদ্র মহিলা কে জিজ্ঞেস করলো যে সে আবির কে কি করে চিনে। ভদ্র মহিলার কথা শুনে তো প্রিয়ন্তীর পায়ের নিচের মাটি সরে গেল। ভদ্র মহিলা প্রিয়ন্তী কে বলল যে, আবির তারই এক ইয়ার মেটের হাসবেন্ড এবং তাদের সংসারে একটি সন্তানও আছে। মেডিকেল কলেজে পড়ার সময় ফাস্ট ইয়ার থেকে তাদের প্রেম এবং সবশেষ বিয়ে। ভদ্র মহিলার কথা শুনে প্রিয়ন্তী আর নিজের পরিচয়টা তার কাছে দিলো না। বাড়িতে এসে প্রিয়ন্তী আবির কে কিছুই জিজ্ঞেস করেনি এই বিষয়ে। বেশ কিছুদিন পর প্রিয়ন্তী একটু সুস্থ হলে আবিরের গোপনে আবিরের অফিসে যায় এবং অন্যান্য কলিগদের কাছে এর সত্যতা জানতে পারে। এরপর প্রিয়ন্তী আবিরের প্রথম স্ত্রীর বাড়ীর ঠিকানা নিয়ে সেখানে যায় এবং সব কিছুর সত্যতা জানতে পারে। প্রিয়ন্তী এও জানতে পারে যে সেই মেয়ের বাবার টাকায় আবির আজ ডাক্তার। এক সময়ে আবির বাড়িতে আসে এবং প্রিয়ন্তীকে দেখে অবাক হয়ে যায়। তখন আবিরের প্রথম স্ত্রীও এসব বিষয়ে সবকিছু জানতে পারে।
এদিকে প্রিয়ন্তী আবিরের ওখান থেকে কোন কথা না বলে চলে আসে। প্রিয়ন্তী তার সন্তান এবং বাবা মা কে নিয়ে শহর ছেড়ে চলে যায় বহুদূরে। যেখানে প্রিয়ন্তীর সাথে কোন যোগাযোগ করার উপায় নেই। এভাবে কেটে যায় প্রিয়ন্তীর জীবন আবির ব্যতীত ছোট একটি মেয়ে কে নিয়ে। আজ প্রিয়ন্তীর মেয়ে বেশ বড় হয়ে গেছে। দেখতে ঠিক বাবার মতই হয়েছে। আর প্রিয়ন্তী বেচেঁ আছে সেই আবিরের ছায়াকে বুকে নিয়ে। আর এটাই হলো অবুঝ মনের ভালোবাসার পরিনতি।
আজ এখানেই শেষ করছি। কেমন লাগলো আপনাদের কাছে আমার আজকের গল্পটি। আশা করি আপনাদের ভালো লাগা আর মন্দ লাগা মন্তব্যের মাধ্যমে জানতে পারবো। সকলেই ভালো থাকবেন।
আমার কাছে এই গল্পটা পড়তে অনেক বেশি ভালো লেগেছিল প্রথম দিকে। তবে শেষের দিকটা পড়তে অনেক বেশি খারাপ লেগেছে। আবিরের একটা স্ত্রী এবং সন্তান থাকার সত্ত্বেও সে প্রিয়ন্তীর সাথে সম্পর্ক করে এবং শেষ পর্যন্ত তাদেরও বিয়ে হয়, সেই সাথে তাদের ঘরেও একটা কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। প্রিয়ন্তী শহর ছেড়ে দিয়ে ভালোই করেছে।
আমিও বলি আপু প্রিয়ন্তী শহর ছেড়ে যেয়ে বেশ ভালোই করেছে। ধন্যবাদ আপু সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য।
আসলে প্রিয়ন্তীর জীবনটা আবির শেষ করে দিয়েছে। প্রিয়ন্তী যখন সবকিছু জানতে পারে, তখন তার দেহটা একেবারে মৃত হয়ে গিয়েছিল বুঝতেই পারছি। এখন প্রিয়ন্তী তার বাবা-মায়ের সাথে শহরের বাইরে গিয়ে থাকে বাচ্চাকে নিয়ে এটা ভালো লেগেছে জেনে। মেয়েটা অনেক বড় হয়েছে এবং বাবার মত হয়েছে তা বুঝতে পারছি পড়ে। আপনার লেখা গল্প গুলো আমার অনেক ভালো লাগে। তেমনি এটিও ভালো লেগেছে।
জানিনা ভাইয়া কেমন লিখি। তবে মুগ্ধ হলাম আপনার উৎসাহমূলক মন্তব্য পেয়ে। ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য।
আপু আপনার গল্পটি বেশ ভালো লেগেছে। কিন্তু প্রিয়ন্তীর আবির কে কোন শাস্তি না দিয়ে এভাবে চলে যাওয়াটা ঠিক হয়নি ।কারণ আবিরের তো কোন ক্ষতি হলো না। সে তো তার অন্য স্ত্রীকে নিয়ে জীবন কাটাতে থাকবে ।উচিত ছিল আবিরকে একটা শাস্তি দেওয়া। যাইহোক বেশ ভালো লেগেছে গল্পটি । ধন্যবাদ আপনাকে।
না আপু ভালোবাসার মানুষটিকে শাস্তি দেওয়া যায় না। প্রিয়ন্তী তার ভালোবাসা বুকে নিয়ে চলে গেল। ধন্যবাদ আপু সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য।
এমন ঘটনা শুনলে সত্যিই খুব খারাপ লাগে। আবির প্রিয়ন্তীর সাথে প্রতারণা করেছে,যা মোটেই ঠিক করেনি আবির। আগের সংসার রেখে প্রিয়ন্তীকে ভালোবাসা এবং বিয়ে করা মোটেই উচিত হয়নি। তবে প্রিয়ন্তী আবিরকে মন থেকে ভালোবেসেছিল বিধায়, নীরবে শহর ছেড়ে চলে গিয়েছে সবাইকে নিয়ে। আসলে মন থেকে ভালোবাসলে কাউকে কষ্ট দেওয়া যায় না। যাইহোক গল্পটি পড়ে খুব ভালো লাগলো আপু। শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
ধন্যবাদ সু্ন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য।