জেনারেল রাইটিং:- "মানুষ নয়, টাকাই আজ প্রাধান্য’’
আসসালামু আলাইকুম
কেমন আছেন সবাই? আশা করবো সবাই ভালো আছেন। সৃষ্টিকর্তার রহমতে আমিও আছি ভালোই। তবে ব্যস্ত এ নগরে কতটুকু সময় ভালো থাকতে পারবো সেটা বলা মুশকিল। শত ঘাত প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে কাটাতে হয় যান্ত্রিক জীবন। মাঝে মাঝে মনে হয় সব কিছুকে বন্ধ করে দিয়ে দূরে কোথাও সবুজ গাছের ছায়ায় নিজেকে একটু স্বস্থির ছায়া দিতে। কিন্তু ঐ যে বাস্তবতা, সেটা তো বড়ই নিষ্ঠুর আর নির্মম। কোন কিছুতেই ছাড় দিতে চায় না। সে যাই হোক বাবা । চলুন মূল পোস্টে ফিরে যাওয়া যাক।
প্রতিদিনই চেষ্টা করি আপনাদের মাঝে সুন্দর করে কিছু লিখে উপহার দেওয়ার জন্য। চাই চারদিকের মানুষগুলোর মধ্যে লুকিয়ে থাকা কষ্টগুলো কে আমার লেখার যাদুতে আপনাদের মাঝে তুলে ধরতে। জানিনা কতটুকু আপনাদের মাঝে নিজের মনের কথা গুলো কে শেয়ার করতে পারি। আজ চেষ্টা করলাম আপনাদের মাঝে নতুন একটি জেনারেল রাইটিং শেয়ার করার জন্য। আশা করি প্রতিদিনের মত করে আমার আজকের জেনারেল রাইটিংটিও আপনাদের কাছে বেশ ভালো লাগবে।

দিন যতই যাচ্ছে ততই মনে হচ্ছে মানুষের প্রতি বিশ্বাসগুলো ভেঙে পড়ছে। যে বিশ্বাস একসময় অটুট মনে হতো, এখন যেন অনেকটা ঠুনকো হয়ে গেছে। কেন যেন মনে হচ্ছে কাছের মানুষগুলো আর ততটা কাছের নেই। তারা হয়তো শারীরিকভাবে সামনে আছে, কিন্তু মনের দূরত্ব যেন ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে। আগে মানুষকে কাছের মানুষ ভাবা যেত, মনে হতো তারা সবসময় পাশে থাকবে, কিন্তু এখন বুঝতে পারছি সময় আর পরিস্থিতি মানুষের সম্পর্ককে কত সহজে বদলে দেয়।
সত্যি বলতে গেলে, যখন কারো হাতে ক্ষমতা থাকে, যখন অর্থের প্রাচুর্য থাকে, তখন চারদিক মানুষের ভিড়ে ভরে ওঠে। হাতের মুঠোয় থাকা ফোনটা সারাক্ষণ বাজতেই থাকে। সারাদিনে একবারও শান্ত থাকার সুযোগ পায় না। একেকটা ফোন কল, একেকটা মেসেজ যেন মানুষকে মনে করিয়ে দেয় সে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, কতটা দরকারি। কিন্তু যখন সেই ক্ষমতা আর টাকার প্রবাহ কমে আসে, তখন হঠাৎ করেই চারপাশ শুনশান হয়ে যায়। ফোন তখন আর বাজে না, মেসেজ আসে না, মানুষ খোঁজও নেয় না। তখন বোঝা যায়, আসলে মানুষ মানুষকে ভালোবাসে না, ভালোবাসে কেবল স্বার্থ আর টাকাকে।
মানুষের জীবনে এক অদ্ভুত পরিবর্তন এখন স্পষ্ট। প্রয়োজনে কেউ কারো পাশে থাকে না, পাশে থাকতে চায়ও না। যতক্ষণ পর্যন্ত না কোনো লাভ আছে, মানুষ তখন পর্যন্ত সম্পর্ককে আঁকড়ে ধরে রাখে। কিন্তু প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে সেই সম্পর্কের কোনো মূল্য থাকে না। তখন দেখা যায় মানুষ হঠাৎ ব্যস্ত হয়ে গেছে। পথে হঠাৎ দেখা হলে এমন ভান করে যেন তাকে চিনতেই পারে না, যেন মনে হয় তাড়া আছে, সময় নেই। অথচ একসময় সেই মানুষগুলোই ঘন্টার পর ঘন্টা পাশে বসে গল্প করেছে, আনন্দ ভাগ করেছে।
আজকাল মানুষকে আর চোখে দেখে চেনা যায় না, চেনা যায় স্বার্থের আচরণ দিয়ে। কেউ যদি তোমার সাথে যোগাযোগ রাখে, খোঁজ নেয়, তবে নিশ্চিত হও যে তার কোনো না কোনো প্রয়োজন আছে। তার প্রয়োজন শেষ হলে তোমার অস্তিত্বের কোনো মানেই থাকে না। তখন তুমি যেন এক বোঝা, এক অপ্রয়োজনীয় নাম। সমাজে এই ভণ্ডামি দিন দিন বেড়েই চলছে। সবাই মুখে ভালোবাসার কথা বলে, কিন্তু সেই ভালোবাসা হৃদয়ে থাকে না।
আমি প্রায়ই ভাবি, সম্পর্ক কি সত্যিই এখন টাকার উপর নির্ভরশীল হয়ে গেছে? আগে হয়তো মানুষ একে অপরের দুঃখ ভাগ করে নিত, বিপদে পাশে দাঁড়াত, কষ্টের সময় হাত বাড়িয়ে দিত। কিন্তু এখন পরিস্থিতি উল্টো। বিপদের সময়ে পাশে থাকার মতো কাউকে পাওয়া দুষ্কর হয়ে গেছে। সবাই তখন নানা অজুহাত খোঁজে। কেউ ব্যস্ততার দোহাই দেয়, কেউ সময়ের অভাব দেখায়। অথচ আনন্দের মুহূর্তে, যখন সবকিছু সহজ থাকে, তখন চারপাশে মানুষে মানুষে ভিড় লেগেই থাকে।
কখনও কখনও মনে হয় আমরা সবাই এক বিশাল প্রতিযোগিতার মধ্যে আটকে আছি। যেখানে সম্পর্কের চেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে অর্থ, ক্ষমতা আর স্বার্থ। প্রতিযোগিতার কারণে মানুষ একে অপরকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যেতে চাইছে। যে কারণে প্রকৃত সম্পর্কগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। এখন বন্ধুত্ব মানেই সুবিধার আদান প্রদান, ভালোবাসা মানেই শর্তসাপেক্ষ, আত্মীয়তার মানেই প্রয়োজনের সীমাবদ্ধতা। সত্যিকারের অনুভূতি যেন কেবল গল্পের বইয়ে বন্দী হয়ে আছে।
আমার নিজের জীবনেও অনেকবার এই অভিজ্ঞতা হয়েছে। যখন কাজ ভালো চলছিল, তখন অসংখ্য মানুষ পাশে ছিল। ফোনে প্রতিদিন কত মানুষ কথা বলতো, কত খোঁজখবর নিত। মনে হতো আমি হয়তো সত্যিই সবার কাছে অনেক প্রিয়। কিন্তু সময় বদলালো, পরিস্থিতি পরিবর্তন হলো। তখন আর সেই মানুষগুলোকে খুঁজে পাওয়া গেল না। ফোনও নীরব হয়ে গেল। বুঝলাম আসলে তারা আমাকে ভালোবাসেনি, ভালোবেসেছিল আমার অবস্থানকে, আমার সামর্থ্যকে।
এখন তাই খুব সহজে কাউকে বিশ্বাস করতে মন চায় না। কারণ বিশ্বাস করলেই হতাশ হতে হয়। হতাশা যেন জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে এর মাঝেও কিছু মানুষ আছে যারা সত্যিই সম্পর্ককে গুরুত্ব দেয়, যারা এখনো ভালোবাসা দিয়ে মানুষকে মূল্যায়ন করে। যদিও সংখ্যা খুবই কম, তবুও তারাই আশা জাগায়। তারাই মনে করিয়ে দেয় মানুষ এখনো পুরোপুরি বদলায়নি, এখনো কিছু মানুষ আছে যারা স্বার্থ ছাড়াই ভালোবাসতে জানে।
আমাদের চারপাশে এত মানুষ, এত ভিড়, কিন্তু মন থেকে কেউই কাউকে সময় দিতে চায় না। সবাই ব্যস্ত, সবাই ছুটছে। অথচ সময় বের করলে হয়তো সম্পর্কগুলো বেঁচে যেত। একটি ছোট্ট খোঁজখবর, একটি আন্তরিক কথাই অনেক কিছু বদলে দিতে পারে। কিন্তু আজকের সমাজে সেটা যেন খুবই দুর্লভ। আমরা সবাই প্রযুক্তির মধ্যে আটকে গেছি। হাতে থাকা ফোনটা আমাদের একদিকে কাছাকাছি এনেছে, আবার অন্যদিকে দূরে ঠেলে দিয়েছে।
আমি মাঝে মাঝে ভাবি, এই যে মানুষ এত দৌড়াচ্ছে, এত ব্যস্ত হয়ে আছে, আসলে এর শেষ কোথায়? অর্থ দিয়ে কি সত্যিই সম্পর্ক কেনা যায়? হয়তো কিছুদিনের জন্য সম্ভব, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে তা টেকে না। কারণ সম্পর্কের আসল সৌন্দর্য থাকে ভালোবাসায়, অনুভূতিতে, বিশ্বাসে। সেই বিশ্বাস ভেঙে গেলে আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না।
এখন মনে হয় সম্পর্ক গড়তে চাইলে আমাদের আগে নিজেদের বদলাতে হবে। স্বার্থ নয়, ভালোবাসা দিয়ে মানুষকে আঁকড়ে ধরতে হবে। পাশে থেকে, কষ্ট ভাগ করে, আন্তরিকতা দিয়ে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে হবে। অন্যথায় আমরা সবাই একসময় একা হয়ে যাব। তখন বুঝতে পারব ক্ষমতা আর টাকার ভিড়ে আমরা আসল মানুষকে হারিয়ে ফেলেছি।
আজকাল যখন দেখি মানুষ একে অপরকে এড়িয়ে চলে, তখন মনে হয় সমাজ থেকে মানবিকতা হারিয়ে যাচ্ছে। অথচ মানবিকতা ছাড়া মানুষ আসলে মানুষ নয়। জীবনের এই ব্যস্ততায় যদি আমরা একটু সময় বের করতে পারি, যদি স্বার্থের চেয়ে ভালোবাসাকে গুরুত্ব দিই, তবে হয়তো পরিস্থিতি কিছুটা বদলাতে পারে।
আমি চাই সম্পর্কগুলো হোক সত্যিকারের, যেখানে প্রয়োজন নয়, ভালোবাসাই প্রধান হবে। আমি চাই মানুষ একে অপরের সুখে দুঃখে পাশে থাকুক, শুধু কথায় নয় কাজে প্রমাণ করুক। কারণ দিনশেষে টাকাপয়সা নয়, আসল সম্পদ হলো সেই মানুষগুলো যারা নিঃস্বার্থভাবে আমাদের পাশে থাকে।
আমার পরিচিতি
আমি মাকসুদা আক্তার। স্টিমিট প্লাটফর্মে আমি @maksudakawsar হিসাবে পরিচিত। ঢাকা হতে আমি আমার বাংলা ব্লগের সাথে যুক্ত আছি। আমি একজন গৃহিনী এবং চাকরিজীবী। তারপরও আমি ভালোবাসি আমার মাতৃভাষা বাংলায় নিজের মনের কথা গুলো আমার বাংলা ব্লগের প্লাটফর্মে শেয়ার করতে। আমি ভালোবাসি গান শুনতে এবং গাইতে। আমি অবসর সময়ে ভ্রমন করতে এবং সেই সাথে সুন্দর কিছু ফটোগ্রাফি নিজের ক্যামেরায় বন্দী করতে ও ভালোবাসি। মাঝে মাঝে নিজের মনের আবেগ দিয়ে দু চার লাইন কবিতা লিখতে কিন্তু আমার বেশ ভালোই লাগে। সর্বোপরি আমি ভালোবাসি আমার প্রাণপ্রিয় মাকে।
.gif)
VOTE @bangla.witness as witness
OR
SET @rme as your proxy

মাঝে মাঝে মনে হয় টাকা অর্থহীন। আবার মাঝে মাঝে মনে হয় টাকা ছাড়া আমরাও অর্থহীন। আসলে বেঁচে থাকার জন্য সব কিছুরই প্রয়োজন। আপু আপনার লেখাগুলো পড়ে ভালো লাগলো।