শৈশবের ফেলে আসা দিনগুলির স্মৃতি-আনন্দ, মায়া আর কিছু অদেখা কান্না নিয়ে ছিল শৈশবের কোরবানির ঈদ
আসসালামু আলাইকুম
কেমন আছেন সবাই? আশা করবো সবাই ভালো আছেন সৃষ্টিকর্তার রহমতে । আমিও আছি আপনাদের দোয়ার বরকতে জীবন নিয়ে ভালোই। দিন যায় কথা থাকে। দিন কিন্তু সত্যি সত্যি চলেই যাচ্ছে। চলে যাচ্ছে সময়। সময় কখন আসে আর কখনই বা যায় সেটা টেরই পাই না। তাই ব্যস্ততার পরিমানও দিনের পর দিন বেড়েই যাচ্ছে। আজকাল যেন জীবনের সাথে যুদ্ধ করেই জীবন পার করতে হচ্ছে। তবুও সময় করে বসে পড়লাম আপনাদের জন্য একটু লেখালেখি করার জন্য। আমি আশা করি আজকের ব্লগ আপনাদের সবার অনেক বেশি ভালো লাগবে। সব সময় চেষ্টা করি ভালো ভালো ব্লগগুলো আপনাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

AI Tools দিয়ে কভার ফটো তৈরি করা হয়েছে
প্রতিটি মানুষের জীবনে ছেলেবেলা হলো একটি স্বর্ণযুগ। আমরা কেউ কিন্তু আমাদের ছেলেবেলাকে ভুলতে পারি না।জীবনের প্রতিটি পদে পদে আমাদের কাছে আমাদের ছেলেবেলা ধরা দেয় স্মৃতি হয়ে। ছেলেবেলার সেই আনন্দঘন দিনগুলো আমাদের জীবনে মাঝে মাঝে মধুর স্মৃতি বিলিয়ে দেয়। নিয়ে যায় সেই শৈশবের কিছু সুন্দর মূহূর্তে। যেখান থেকে ফিরে আসাটাই বেশ মুশকিল। তবুও আমরা ফিরে আসি। আমাদের কে ফিরে আসতে হয়। তাই তো আজ আমি আবার চলে আসলাম আপনাদের মাঝে আমার সেই ছেলেবেলার আরও কিছু স্মৃতি ভাগাভাগি করে নেওয়ার জন্য।
ঈদ মানেই খুশি, আর কোরবানির ঈদ মানেই শুধু খুশি নয়, মায়া, ত্যাগ আর অপেক্ষার গল্প। কিন্তু শৈশবের কোরবানির ঈদ যেন এক অন্যরকম অনুভূতির নাম। সময়ের সাথে আমরা বড় হয়েছি, কিন্তু মনের ভিতর সেই ছোট্ট ছেলেটা বা মেয়েটা আজও জমিয়ে রেখেছে ঈদের সেই সোনালি মুহূর্তগুলো। এই লেখাটি সেই শৈশবের ঈদের কথা, যেখানে আনন্দ ছিল খাঁটি, দুঃখ ছিল কোমল, আর ভালোবাসা ছিল নিঃস্বার্থ। ঈদের আগেই বাড়িতে এক অন্যরকমের উত্তেজনা শুরু হতো। পাড়ায় যার বাড়িতে আগে পশু আসত, আমরা দল বেঁধে সেখানে ভিড় করতাম। কেউ পশুর গায়ে হাত বোলাত, কেউ নাম ঠিক করে ফেলত "এটার নাম রাখি সুলতান!" সবার চোখে নিজের কোরবানীর পশুটা যেন রাজা।
আর যখন আমাদের বাড়িতে কোরবানীর পশু আসত, আমরা হইহই করে উঠতাম। বাসার সামনের মাঠে কোরবানীর পশু দাঁড়িয়ে থাকত, আমরা তাকে নিয়ে ঘোরাঘুরি করতাম, সে যেন আমাদের সেরা বন্ধু ছিল। ঈদের আগের রাত ছিল অনেকটা জাদুর মতো। তখন চারপাশে লাইট, বাড়িতে রান্নার গন্ধ, নতুন জামা-কাপড় — সব মিলিয়ে এক আনন্দঘন পরিবেশ। কিন্তু এই খুশির মাঝেও একটা চাপা কষ্ট থাকত। আমরা জানতাম, কাল যাকে নিয়ে এত আদর-যত্ন করছি, সে আর থাকবে না।
রাতে কোরবানীর পশুর মাথায় হাত বুলিয়ে বলতাম, “তোর জন্য খুব মন খারাপ করবে, জানিস তো?” সেই মায়া আজও চোখ ভিজিয়ে দেয়। ঈদের সকালে নতুন জামা পড়ে, আতর লাগিয়ে আমরা নামাজে যেতাম। নামাজ শেষে মোনাজাতে হাত তুলে বলতাম — “আমাদের কোরবানি কবুল করো।” এই দোয়া তখন তেমন বুঝতাম না, শুধু মনে হতো — "আমার গরুর যেন কিছু না হয়"। ঘরে ফিরে দেখি, গরুর গলায় মালা, সিঁথিতে সিদুরের রঙ, গলায় ঘন্টি — সে যেন সাজে সেজেছে বিদায়ের জন্য। এ সময় মনের মধ্যে এক ধরনের কষ্ট জমে উঠত — একপাশে ঈদের খুশি, আরেকপাশে বেদনার স্রোত।
কোরবানির সময় আমরা দূরে দাঁড়িয়ে থাকতাম। কোরবানীর পশু যখন শুয়ে পড়ত, চোখে জল এসে যেত। আমরা বুঝতাম, এটিই ঈদের মূল শিক্ষা — প্রিয়কে ত্যাগ করার মানসিকতা। তবুও শিশুমন তা মেনে নিতে পারত না। কান্না চেপে রাখতাম, আবার লুকিয়ে চোখ মুছতাম। ঈদের সকালটা তখন একটু চুপচাপ হয়ে যেত, আনন্দের ভেতরে একটা কষ্টের স্তর। একটু পরেই শুরু হতো মাংস কাটাকাটির ধুম। আব্বা, চাচা, বড় ভাই মিলে ব্যস্ত, আর আমরা বাচ্চারা চারপাশে দৌড়াদৌড়ি করতাম। “এই প্যাকেটটা নানুবাড়ি যাবে”, “এটা গরীবদের জন্য”— এমন দায়িত্ব পেতাম আমরা। মা বলতেন, “ঈদের আসল আনন্দ তো ভাগাভাগিতে।” এই শিক্ষাই ছিল আমাদের শৈশবের বড় সম্পদ। ঈদের দুপুর মানেই রেজালা, মাংস ভাজি — এমন সব পদ, যেগুলো শুধু খিদে বাড়াত না, মনের ভেতরেও খুশির ঢেউ তুলত। একসাথে পুরো পরিবার মাটিতে বসে খেতাম। বড়রা গল্প করত, আর আমরা লুকিয়ে বাড়তি টুকরো খুঁজতাম! তখন খাবারের স্বাদ শুধু মুখে নয়, হৃদয়েও থাকত।
ঈদির টাকা জমিয়ে খেলনা কেনা, আউটডোর খেলা, আত্মীয়দের বাড়িতে যাওয়া — এইসব মিলে ঈদের দিন ছিল সারা বছরের সবচেয়ে রঙিন দিন। আব্বার কাছ থেকে ২০ টাকা পাওয়া মানে ছিল বিশাল কিছু। এখন টাকায় বড় হয়েছি, কিন্তু তখনকার সেই ছোট আনন্দগুলো আজ বড় বেশি দামী।আজ যখন ঈদ আসে, তখন বাজারের চাপ, পশুর দামের হিসেব, সামাজিক দায় — সব কিছু মিলে ঈদ যেন একটু ভারী লাগে। শৈশবের মতো নিঃস্বার্থ খুশি খুঁজে পাই না। ঈদের আগের রাতে নির্ঘুম থাকি ঠিকই, তবে সেটি আর গরুর পাশে দাঁড়িয়ে নয় — বরং দুশ্চিন্তায় চোখ খুলে থাকে। সেই সরলতা, সেই ভালোবাসা, সেই ঈদের উঠোন আজ কোথায়?
শৈশবের কোরবানির ঈদ ছিল আনন্দের, কষ্টের, শিক্ষার, আর মায়ার এক অদ্ভুত মিশ্রণ। পশুর সঙ্গে গড়ে ওঠা সম্পর্ক, ঈদের আগের রাতের উত্তেজনা, কোরবানির সময়ের কান্না — সব মিলিয়ে সেই ঈদ ছিল হৃদয়ের এক খাঁটি অনুভূতি। আজ আমরা বড় হয়েছি, কিন্তু আমাদের শৈশবের ঈদ এখনো মনের কোণে বসে আছে — একটুকরো আলো হয়ে। সেই শিশুটি আজও অপেক্ষা করে, হয়তো কোনো এক ঈদে আবার দেখা হবে গরু ‘সুলতান’-এর সঙ্গে, আবার গলায় মালা পরিয়ে বলব —“তুই আমাদের সবার সবচেয়ে প্রিয় ছিলি।
জানিনা কেমন লাগলো আমার আজকের টপিকটি। আশা করি আপনাদের কাছে আজকের পোষ্টটি বেশ ভালা লাগলো। ভালো থাকবেন, সুখে থাকবেন। আর নিজেকে ভালো রাখার চেষ্টা করবেন।
আমার পরিচিতি
আমি মাকসুদা আক্তার। স্টিমিট প্লাটফর্মে আমি @maksudakawsar হিসাবে পরিচিত। ঢাকা হতে আমি আমার বাংলা ব্লগের সাথে যুক্ত আছি। আমি একজন গৃহিনী এবং চাকরিজীবী। তারপরও আমি ভালোবাসি আমার মাতৃভাষা বাংলায় নিজের মনের কথা গুলো আমার বাংলা ব্লগের প্লাটফর্মে শেয়ার করতে। আমি ভালোবাসি গান শুনতে এবং গাইতে। আমি অবসর সময়ে ভ্রমন করতে এবং সেই সাথে সুন্দর কিছু ফটোগ্রাফি নিজের ক্যামেরায় বন্দী করতে ও ভালোবাসি। মাঝে মাঝে নিজের মনের আবেগ দিয়ে দু চার লাইন কবিতা লিখতে কিন্তু আমার বেশ ভালোই লাগে। সর্বোপরি আমি ভালোবাসি আমার প্রাণপ্রিয় মাকে।
.gif)
VOTE @bangla.witness as witness
OR
SET @rme as your proxy
