শৈশবের সেই রাত: বিদ্যুৎহীন কোয়ার্টারের এক অবিস্মরণীয় ঘটনা

in আমার বাংলা ব্লগlast month

আসসালামু আলাইকুম

কেমন আছেন সবাই? আশা করবো সবাই ভালো আছেন সৃষ্টিকর্তার রহমতে । আমিও আছি আপনাদের দোয়ার বরকতে জীবন নিয়ে ভালোই। দিন যায় কথা থাকে। দিন কিন্তু সত্যি সত্যি চলেই যাচ্ছে। চলে যাচ্ছে সময়। সময় কখন আসে আর কখনই বা যায় সেটা টেরই পাই না। তাই ব্যস্ততার পরিমানও দিনের পর দিন বেড়েই যাচ্ছে। আজকাল যেন জীবনের সাথে যুদ্ধ করেই জীবন পার করতে হচ্ছে। তবুও সময় করে বসে পড়লাম আপনাদের জন্য একটু লেখালেখি করার জন্য। আমি আশা করি আজকের ব্লগ আপনাদের সবার অনেক বেশি ভালো লাগবে। সব সময় চেষ্টা করি ভালো ভালো ব্লগগুলো আপনাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।


image.png

AI Tools দিয়ে কভার ফটো তৈরি করা হয়েছে

প্রতিটি মানুষের জীবনে ছেলেবেলা হলো একটি স্বর্ণযুগ। আমরা কেউ কিন্তু আমাদের ছেলেবেলাকে ভুলতে পারি না।জীবনের প্রতিটি পদে পদে আমাদের কাছে আমাদের ছেলেবেলা ধরা দেয় স্মৃতি হয়ে। ছেলেবেলার সেই আনন্দঘন দিনগুলো আমাদের জীবনে মাঝে মাঝে মধুর স্মৃতি বিলিয়ে দেয়। নিয়ে যায় সেই শৈশবের কিছু সুন্দর মূহূর্তে। যেখান থেকে ফিরে আসাটাই বেশ মুশকিল। তবুও আমরা ফিরে আসি। আমাদের কে ফিরে আসতে হয়। তাই তো আজ আমি আবার চলে আসলাম আপনাদের মাঝে আমার সেই ছেলেবেলার আরও কিছু স্মৃতি ভাগাভাগি করে নেওয়ার জন্য।

শৈশব—শব্দটি শুনলেই মনে ভেসে ওঠে এক অদ্ভুত নির্ভার সময়। কোনো চিন্তা নেই, কোনো দায় নেই, শুধু খেলা, হাসি আর কৌতূহল ভরা চোখে পৃথিবীকে দেখা। আমার ছোটবেলার স্মৃতিগুলোর মধ্যে কিছু ঘটনা আছে, যা আজও মনে পড়লে মনটা একদিকে যেমন আনন্দে ভরে ওঠে, তেমনি একধরনের শিহরণও জাগে। আজ সেই রকমই একটি ঘটনার কথা বলব—এক রাতের কথা, যখন আমাদের সরকারি কোয়ার্টারে বিদ্যুৎ চলে গিয়েছিল, আর আমি অজান্তেই মুখোমুখি হয়েছিলাম এক চোরের।

আমাদের পরিবার তখন সরকারি কোয়ার্টারে থাকত। কোয়ার্টারের জীবন ছিল অনেকটা বড় পরিবারের মতো—প্রতিটি বাসা আলাদা হলেও সবাই একে অপরের সঙ্গে মিশে যেতাম, সুখে-দুঃখে ভাগাভাগি করতাম। আমাদের পাশের বাসায় থাকতেন এক পরিবার, যাদের বাড়ি ছিল গ্রামের দিকে। প্রতি শুক্রবার তারা গ্রামের বাড়িতে চলে যেতেন এবং বাসার চাবি রেখে যেতেন এক বিশ্বাসযোগ্য পরিচিতের কাছে। শৈশবের চোখে এই কোয়ার্টার ছিল যেন এক বিশাল খেলার মাঠ। রাস্তা, উঠান, সিঁড়ি—সব জায়গা ছিল আমাদের খেলাধুলার জন্য খোলা। আর তখনকার দিনে বিদ্যুৎ চলে যাওয়া ছিল খুবই সাধারণ ব্যাপার। বিশেষ করে গ্রীষ্মের রাতে প্রায়ই হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যেত, আর আমরা সবাই বাইরে বেরিয়ে খেলতে শুরু করতাম। চারপাশ অন্ধকারে ডুবে থাকত, আকাশ ভরা তারা দেখতে পাওয়া যেত, আর বাতাসে থাকত এক অদ্ভুত প্রশান্তি।

সেদিনও ঠিক এমনই একটি রাত ছিল। গরমে হাঁসফাঁস করা এক সন্ধ্যার পর হঠাৎ করে বিদ্যুৎ চলে গেল। ঘরের ভেতর আর থাকা যাচ্ছিল না, তাই আমরা সবাই বাইরে বেরিয়ে পড়লাম। শিশুরা হাসাহাসি করছে, দৌড়াদৌড়ি করছে, বড়রা গল্পগুজব করছে—সব মিলিয়ে এক প্রাণবন্ত দৃশ্য। আমি তখনও ছোট, কিন্তু স্বভাব ছিল ভীষণ কৌতূহলী। অন্ধকার হলেও ভয় লাগত না, বরং মনে হতো এটি একধরনের অভিযান। খেলা শেষে আমি সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামছিলাম, ভাবছিলাম রাস্তায় গিয়ে অন্যদের সঙ্গে যোগ দেব।

হঠাৎ চোখে পড়ল—সিঁড়ির পাশে দাঁড়িয়ে আছে লম্বা এক মানুষ। চারপাশে কোনো আলো নেই, কেবল দূরের কোনো বাসা থেকে আসা ক্ষীণ আলোয় তার অবয়বটা বোঝা যাচ্ছিল। তার হাতে একটি বড়সড় ডেকসেট। আমার চোখ সঙ্গে সঙ্গে সেটার দিকে আটকে গেল। আমি ডেকসেটটি চিনে ফেলেছিলাম—এটা আমাদের পাশের বাসার ভাইয়াদের। তারা প্রতি শুক্রবার গ্রামের বাড়ি চলে যায়, আর এই জিনিসটি সবসময় তাদের ঘরে দেখা যেত। মুহূর্তের মধ্যে বুঝে গেলাম, কিছু একটা ঠিক নেই। হৃদপিণ্ড যেন দ্রুত বেগে ধুকপুক করতে শুরু করল। শৈশবের সরলতায় ভয় আর সাহস মিলেমিশে অদ্ভুত এক শক্তি তৈরি করে। আমি নিজের অজান্তেই চিৎকার করে উঠলাম— “চোর! চোর!”আমার চিৎকার শুনে আশপাশের কয়েকজন ছুটে আসার আগেই সেই মানুষটি ডেকসেটটা মাটিতে ফেলে দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে গেল। আমি তখনও শ্বাস ফেলার সময় পাইনি। মনের ভেতরে ভয় আর উত্তেজনার ঢেউ উঠছিল একসঙ্গে। আমার কণ্ঠে হয়তো শিশুতোষ সরলতা ছিল, কিন্তু চোরের জন্য তা যথেষ্ট ছিল। সে জানত, একবার ধরা পড়লে আর রক্ষা নেই।

চারপাশে হৈচৈ পড়ে গেল। সবাই মিলে পাশের বাসায় গিয়ে দরজা-জানালা পরীক্ষা করল। দেখা গেল, জানালা ভেঙে ভেতরে ঢুকেছিল সে। ভাগ্য ভালো, আমি দেখায় সে কিছু বড় ক্ষতি করার আগেই পালিয়েছে। প্রতিবেশীরা আমাকে বাহবা দিল। অনেকে হাসতে হাসতে বলল, “এই বয়সে এমন সাহস! বড় হয়ে পুলিশ না হয়ে যায়।” আমি তখন গর্বে বুক ফুলিয়ে হাঁটছিলাম, যদিও ভিতরে ভিতরে এখনও ভয় কাটেনি। কিছুক্ষণের মধ্যেই বিদ্যুৎ ফিরে এলো। আলো জ্বলে উঠতেই সবকিছু যেন স্বাভাবিক হয়ে গেল। কিন্তু সেই রাতের ঘটনা সবার মুখে মুখে রইল অনেকদিন। পাশের বাসার ভাইয়ারা পরে এসে আমাকে ধন্যবাদ দিয়েছিল, আর বলেছিল—
“তুমি না থাকলে হয়তো আমাদের ডেকসেটটাই হারিয়ে যেত।”

আজ এত বছর পরে দাঁড়িয়ে ভাবি—এই ঘটনাটি আমাকে শিখিয়েছে সাহস মানে ভয় না পাওয়া নয়, বরং ভয় পেলেও সঠিক কাজ করা। শৈশবের সেই বিদ্যুৎহীন কোয়ার্টার, অন্ধকার সিঁড়ি, হাতে ডেকসেট ধরা লম্বা মানুষ—সব যেন চোখের সামনে ভেসে ওঠে এখনও। আমাদের ছোট্ট জীবনের ছোট্ট ঘটনাগুলোই আসলে বড় শিক্ষা দিয়ে যায়। তখন হয়তো বুঝিনি, কিন্তু এখন জানি—সাহস, সতর্কতা আর প্রতিবেশীসুলভ বন্ধন—এসবই জীবনের অমূল্য সম্পদ।

জানিনা কেমন লাগলো আমার আজকের টপিকটি। আশা করি আপনাদের কাছে আজকের পোষ্টটি বেশ ভালা লাগলো। ভালো থাকবেন, সুখে থাকবেন। আর নিজেকে ভালো রাখার চেষ্টা করবেন।

আমার পরিচিতি

আমি মাকসুদা আক্তার। স্টিমিট প্লাটফর্মে আমি @maksudakawsar হিসাবে পরিচিত। ঢাকা হতে আমি আমার বাংলা ব্লগের সাথে যুক্ত আছি। আমি একজন গৃহিনী এবং চাকরিজীবী। তারপরও আমি ভালোবাসি আমার মাতৃভাষা বাংলায় নিজের মনের কথা গুলো আমার বাংলা ব্লগের প্লাটফর্মে শেয়ার করতে। আমি ভালোবাসি গান শুনতে এবং গাইতে। আমি অবসর সময়ে ভ্রমন করতে এবং সেই সাথে সুন্দর কিছু ফটোগ্রাফি নিজের ক্যামেরায় বন্দী করতে ও ভালোবাসি। মাঝে মাঝে নিজের মনের আবেগ দিয়ে দু চার লাইন কবিতা লিখতে কিন্তু আমার বেশ ভালোই লাগে। সর্বোপরি আমি ভালোবাসি আমার প্রাণপ্রিয় মাকে।


3W72119s5BjVs3Hye1oHX44R9EcpQD5C9xXzj68nJaq3CeF5StuMqDPqgYjRhUxqFbXTvH2r2mDgNbWweA4YGBo825oLh4oqEqeynn5EZL11LdCrppngkM (1).gif

VOTE @bangla.witness as witness

witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy


witness_proxy_vote.png

1000206266.png

1000206267.png

❤️❤️ধন্যবাদ সকলকে❤️❤️