শৈশবের ফেলে আসা দিনগুলির স্মৃতি - ছেলেবেলার অমূল্য আনন্দ বউচি খেলা
আসসালামু আলাইকুম
কেমন আছেন সবাই? আশা করবো সবাই ভালো আছেন সৃষ্টিকর্তার রহমতে । আমিও আছি আপনাদের দোয়ার বরকতে জীবন নিয়ে ভালোই। দিন যায় কথা থাকে। দিন কিন্তু সত্যি সত্যি চলেই যাচ্ছে। চলে যাচ্ছে সময়। সময় কখন আসে আর কখনই বা যায় সেটা টেরই পাই না। তাই ব্যস্ততার পরিমানও দিনের পর দিন বেড়েই যাচ্ছে। আজকাল যেন জীবনের সাথে যুদ্ধ করেই জীবন পার করতে হচ্ছে। তবুও সময় করে বসে পড়লাম আপনাদের জন্য একটু লেখালেখি করার জন্য। আমি আশা করি আজকের ব্লগ আপনাদের সবার অনেক বেশি ভালো লাগবে। সব সময় চেষ্টা করি ভালো ভালো ব্লগগুলো আপনাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

AI Tools দিয়ে কভার ফটো তৈরি করা হয়েছে
প্রতিটি মানুষের জীবনে ছেলেবেলা হলো একটি স্বর্ণযুগ। আমরা কেউ কিন্তু আমাদের ছেলেবেলাকে ভুলতে পারি না।জীবনের প্রতিটি পদে পদে আমাদের কাছে আমাদের ছেলেবেলা ধরা দেয় স্মৃতি হয়ে। ছেলেবেলার সেই আনন্দঘন দিনগুলো আমাদের জীবনে মাঝে মাঝে মধুর স্মৃতি বিলিয়ে দেয়। নিয়ে যায় সেই শৈশবের কিছু সুন্দর মূহূর্তে। যেখান থেকে ফিরে আসাটাই বেশ মুশকিল। তবুও আমরা ফিরে আসি। আমাদের কে ফিরে আসতে হয়। তাই তো আজ আমি আবার চলে আসলাম আপনাদের মাঝে আমার সেই ছেলেবেলার আরও কিছু স্মৃতি ভাগাভাগি করে নেওয়ার জন্য।
ছেলেবেলার খেলার মাঝে বউচি ছিল আমার সবচেয়ে প্রিয় এবং জনপ্রিয় খেলা। এই খেলাটা শুধু আমাদের গ্রাম বা শহরেই নয়, বাংলাদেশের প্রায় সব জায়গায় ছেলেমেয়েরা খেলতো। বউচি খেলা মানেই ছিল দলবদ্ধভাবে একে অপরকে ধরার দৌড়ঝাঁপ, কৌশল আর বন্ধুদের সঙ্গে মজা। আমার স্মৃতিতে বউচির অজস্র রঙিন মুহূর্ত জড়িয়ে আছে, যা আজও মনে হলে একেকটি হাসির ঢেউ মন ভাসিয়ে দেয়। আমাদের কোয়ার্টারের ছোট ছোট গলিগুলো ছিল বউচির মাঠ। বউচির জন্য একেবারেই বড় জায়গা দরকার ছিল না, তাই যেকোনো ছোট্ট জায়গায় আমরা দল করে খেলা শুরু করতাম। খেলায় একজন বউচি, অর্থাৎ ধরার চেষ্টা করা খেলোয়াড়, বাকি সবাই পালিয়ে বেড়াতাম। বউচি ধরলে তার জায়গায় সে নতুন বউচি হয়ে যেত।
খেলাটা সবে শুরু হলে সবাই খুব সতর্ক থাকত, কিন্তু সময় যত বাড়ত, ধরা পড়া আর পালানো মিশিয়ে হত অনেক হাসি-ঠাট্টা, দৌড়ে ঘুরে বেড়ানো। আমাদের কোয়ার্টারের পাকা রাস্তার পাশ দিয়ে, গাছের ছায়ায়, সবাই লুকিয়ে থাকা শুরু করত। কখনো তো এমন হত যে, বউচি ধরে ফেলার জন্য সবার একত্রিত হওয়া, তার পেছনে ছুটে যাওয়া—সব মিলিয়ে অম্লান আনন্দ। আমাদের বউচি খেলার কিছু নিয়ম ছিল, কিন্তু সেসব নিয়ম ভাঙা হতো প্রায়ই। কেউ কেউ নিজেই নতুন নিয়ম বানিয়ে মজা বাড়াতো। যেমন কেউ কেউ বলতো, “যে বউচি শুধু দুই মিনিটের মধ্যে কাউকে ধরতে না পারবে, সে খেলায় থাকবে না।” আর কেউ কেউ বউচির জন্য ‘সহায়কারী’ বানাতো, যে দৌড়ানোর সময় বউচিকে সাহায্য করতো।
আমাদের দলের মধ্যে বউচি ধরার কৌশল নিয়ে আলোচনা হতো বেলা শেষে। কিভাবে দ্রুত পালানো যায়, কিভাবে হাত-পা ব্যবহার করে বউচিকে ফাঁকি দেওয়া যায়—এসব নিয়ে আমরা মজার মজার গল্প করতাম। বউচি খেলায় অনেক সময় আমরা মাটিতে পড়ে যেতাম, হাত-ঘাড়ে আঁচড় লাগতো, তবু আনন্দের সীমা ছিল না। বর্ষায় বউচি খেলার মজা একদম আলাদা। বৃষ্টির পানি জমে যাওয়া ছোট ছোট পুকুর আর কাদামাটির মধ্যে দৌড়ে পালানোর মজা ছিল অন্যরকম। বৃষ্টিতে ভিজে গিয়েও আমরা থামতাম না, বরং খুশি খুশি খেলতে থাকতাম। বর্ষার বউচি খেলার স্মৃতি আমাদের ছেলেবেলার অন্যতম সেরা।
শীতকালে আমরা গরম কাপড় পরে বউচি খেলতাম, শরীর গরম রাখতে দৌড়ঝাঁপ করতাম। হঠাৎ কেউ ধরলে সবাই মিলে হাসাহাসি শুরু হতো। একে অপরের সঙ্গে টিকটিকিও করতাম, আর এই টিকটিকির মধ্যেই তৈরি হতো বন্ধুত্বের সম্পর্ক। আমাদের বউচি খেলায় একটা বিশেষ দিক ছিল—দলবদ্ধতা। একা কেউ খুব বেশি মজা পেত না। সবাই মিলে খেলার মাঝে সহযোগিতা আর বোঝাপড়া ছিল মূল বিষয়। তাই বউচি কেবল খেলা নয়, একে অপরকে বোঝার ও সহযোগিতার পাঠও শিখিয়েছে।
আজ ভাবি, সেই বউচি খেলার দিনগুলো কতটা সোনা-মুখর ছিল! যেখানে জীবনের ছোট্ট টেনশনগুলো ছিল না, শুধু ছিল খেলা আর মজা। একটা সময় ছিল যখন আমরা শুধু খেলতাম, হেসে খেলতাম, আর একে অপরকে খুশি রাখতে চেষ্টা করতাম। বউচি খেলায় আমাদের বাল্যবন্ধুত্ব গড়েছিল অনেক শক্ত। আজও সেই বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হলে বউচির কথা উঠলে আমরা সবাই একসাথে হাসি। বউচি খেলা শুধু একটা খেলা ছিল না, এটি ছিল আমাদের জীবনের এক অমূল্য অধ্যায়, যা হৃদয়ের মধ্যে চিরকাল থাকবে।
জানিনা কেমন লাগলো আমার আজকের টপিকটি। আশা করি আপনাদের কাছে আজকের পোষ্টটি বেশ ভালা লাগলো। ভালো থাকবেন, সুখে থাকবেন। আর নিজেকে ভালো রাখার চেষ্টা করবেন।
আমার পরিচিতি
আমি মাকসুদা আক্তার। স্টিমিট প্লাটফর্মে আমি @maksudakawsar হিসাবে পরিচিত। ঢাকা হতে আমি আমার বাংলা ব্লগের সাথে যুক্ত আছি। আমি একজন গৃহিনী এবং চাকরিজীবী। তারপরও আমি ভালোবাসি আমার মাতৃভাষা বাংলায় নিজের মনের কথা গুলো আমার বাংলা ব্লগের প্লাটফর্মে শেয়ার করতে। আমি ভালোবাসি গান শুনতে এবং গাইতে। আমি অবসর সময়ে ভ্রমন করতে এবং সেই সাথে সুন্দর কিছু ফটোগ্রাফি নিজের ক্যামেরায় বন্দী করতে ও ভালোবাসি। মাঝে মাঝে নিজের মনের আবেগ দিয়ে দু চার লাইন কবিতা লিখতে কিন্তু আমার বেশ ভালোই লাগে। সর্বোপরি আমি ভালোবাসি আমার প্রাণপ্রিয় মাকে।
.gif)
VOTE @bangla.witness as witness
OR
SET @rme as your proxy

@tipu curate
Upvoted 👌 (Mana: 5/7) Get profit votes with @tipU :)