জেনারেল রাইটিং- সফলতা ও আত্মসম্মান

in আমার বাংলা ব্লগ6 days ago

আসসালামু আলাইকুম

কেমন আছেন সবাই? আশা করবো সবাই ভালো আছেন। সৃষ্টিকর্তার রহমতে আমিও আছি ভালোই। তবে ব্যস্ত এ নগরে কতটুকু সময় ভালো থাকতে পারবো সেটা বলা মুশকিল। শত ঘাত প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে কাটাতে হয় যান্ত্রিক জীবন। মাঝে মাঝে মনে হয় সব কিছুকে বন্ধ করে দিয়ে দূরে কোথাও সবুজ গাছের ছায়ায় নিজেকে একটু স্বস্থির ছায়া দিতে। কিন্তু ঐ যে বাস্তবতা, সেটা তো বড়ই নিষ্ঠুর আর নির্মম। কোন কিছুতেই ছাড় দিতে চায় না। সে যাই হোক বাবা । চলুন মূল পোস্টে ফিরে যাওয়া যাক।

প্রতিদিনই চেষ্টা করি আপনাদের মাঝে সুন্দর করে কিছু লিখে উপহার দেওয়ার জন্য। চাই চারদিকের মানুষগুলোর মধ্যে লুকিয়ে থাকা কষ্টগুলো কে আমার লেখার যাদুতে আপনাদের মাঝে তুলে ধরতে। জানিনা কতটুকু আপনাদের মাঝে নিজের মনের কথা গুলো কে শেয়ার করতে পারি। আজ চেষ্টা করলাম আপনাদের মাঝে নতুন একটি জেনারেল রাইটিং শেয়ার করার জন্য। আশা করি প্রতিদিনের মত করে আমার আজকের জেনারেল রাইটিংটিও আপনাদের কাছে বেশ ভালো লাগবে।


image.png

যে কোনো কাজে নিজস্ব পরিকল্পনা না থাকলে সাফল্য অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। আমরা সবাই চাই আমাদের প্রচেষ্টা যেন ফলপ্রসূ হয়, কিন্তু শুধু পরিশ্রম করলেই হয় না, সঠিক পরিকল্পনা ছাড়া সাফল্য ধরা দেয় না। পরিকল্পনা হলো কীভাবে কাজ করবেন, কত সময়ে শেষ করবেন, কী কী প্রয়োজন এবং কোন পথে এগোবেন—এই সব কিছুর আগাম রূপরেখা। এটি যেকোনো কাজকে দিকনির্দেশনা দেয়। ব্যবসা শুরু করে যদি না জানেন গ্রাহক কারা বা প্রতিযোগিতা কেমন, তাহলে সেই ব্যবসা টিকবে না। পরীক্ষা পড়ার জন্যও রুটিন দরকার, না হলে ভালো ফল পাওয়া কঠিন। পরিকল্পনাহীন কাজ মানেই দিকহীন নৌকা—চলছেন, কিন্তু গন্তব্য অজানা।

পরিকল্পনা ছাড়া কাজের ভিত শক্ত হয় না। এতে সময় ও শ্রম নষ্ট হয়, ভুলের সম্ভাবনা বাড়ে এবং একের পর এক ব্যর্থতা মনোবল ভেঙে দেয়। পরিকল্পনা থাকলে লক্ষ্য স্থির হয়, সময় সঠিকভাবে ভাগ করা যায়, সৃজনশীল চিন্তা তৈরি হয় এবং ভবিষ্যতের সমস্যার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া যায়। সবচেয়ে বড় কথা, পরিকল্পনা আত্মবিশ্বাস দেয়। উদাহরণস্বরূপ, দুটি ছাত্র সমান সময় পড়াশোনা করল, একজন রুটিন মেনে আরেকজন এলোমেলোভাবে। শেষমেষ রুটিন মেনে চলা ছাত্রের ফলাফল ভালো হলো, কারণ সে পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রস্তুতি নিয়েছে।

ব্যক্তিগত জীবন হোক বা পেশাগত, সাফল্যের চাবিকাঠি হলো পরিকল্পনা। আপনি কী অর্জন করতে চান সেটি নির্ধারণ করে ধাপে ধাপে লিখে ফেলুন, সময়সীমা ঠিক করুন, অগ্রগতি যাচাই করুন। প্রয়োজনে পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনুন। এলন মাস্কের মাস্টারপ্ল্যান, স্টিভ জবসের নিখুঁত বাজার পরিকল্পনা বা মালালা ইউসুফজাইয়ের শিক্ষার লক্ষ্য—সবই সাফল্যের বড় উদাহরণ। এমনকি ব্যক্তিগত ক্ষেত্রেও মাসিক বাজেট, স্বাস্থ্য সচেতনতার ডায়েট ও ব্যায়াম বা অবসর সময়ে বই পড়া—সবকিছুর জন্য পরিকল্পনা দরকার। যে গন্তব্য ঠিক করে না, তার গাড়ি যতই চলুক, কোথাও পৌঁছাবে না। তাই প্রতিটি কাজ শুরু করার আগে নিজস্ব পরিকল্পনা করুন—এটাই সাফল্যের প্রথম ধাপ।

অপমান এমন এক তীর, যতই ভুলতে চাইবেন, ততই হৃদয়ের গভীরে বিদ্ধ হবে। সম্পর্ক ও যোগাযোগের এই সামাজিক জীবনে অপমানের যন্ত্রণা অনেক গভীর। সামান্য শব্দ বা আচরণও বুকের মধ্যে কষ্ট জমিয়ে রাখে। অপমান আত্মসম্মানে আঘাত করে, স্মৃতিতে গেঁথে থাকে, নিজের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। শারীরিক আঘাত সেরে যায়, কিন্তু অপমানের দাগ মনের গভীরে থেকে যায়। কাছের মানুষ বা জনসমক্ষে অপমান মানসিকভাবে আরও ধাক্কা দেয়। তীর বের করলেও ক্ষত থেকে যায়—অপমানও ঠিক তেমন। অপমান নানা রূপে আসে: তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য, উপহাস, উপেক্ষা, যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন বা অবজ্ঞা। এর প্রভাবও ভয়ংকর। বারবার অপমানিত হলে আত্মবিশ্বাস কমে যায়, কেউ কেউ নীরবতা ও একাকীত্ব বেছে নেয়, আবার কারও মনে প্রতিশোধের আগুন জ্বলে ওঠে।

তাহলে কীভাবে সামলাবেন? প্রথমে নিজের মূল্য বুঝুন—আপনার সম্মান অন্যের কথায় নির্ধারিত নয়। অপমানকারীর মনোভাব বোঝার চেষ্টা করুন—অনেকেই নিজের ব্যর্থতা ঢাকতে অন্যকে হেয় করে। প্রতিশোধ নয়, নিজের উন্নতিতে মন দিন। আপনার সাফল্যই হবে সেরা জবাব। ক্ষমা করতে শিখুন, তবে শিক্ষা মনে রাখুন, যাতে ভবিষ্যতে নিজেকে রক্ষা করতে পারেন। ইতিহাসে বহু মানুষ অপমান জয় করেছেন। ড. এ. পি. জে. আব্দুল কালামকে বলা হয়েছিল তিনি বিজ্ঞানী হওয়ার যোগ্য নন, অথচ তিনি হলেন ভারতের ‘মিসাইল ম্যান’। মালালা ইউসুফজাই গুলি খেয়েও শিক্ষার আন্দোলন চালিয়ে গেছেন। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় অবজ্ঞাকে প্রেরণা বানিয়ে রচনা করেন “বন্দে মাতরম”।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হলো—নিজে যেন কাউকে অপমান না করি। কারো অবস্থান নিয়ে ব্যঙ্গ করবেন না, ভিন্নমতকে শ্রদ্ধা করুন, ছোটদের সামনে কঠিন শব্দ ব্যবহার এড়িয়ে চলুন, সামাজিক মাধ্যমে কাউকে লজ্জা দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। সামান্য কথায়ও কেউ সারাজীবনের মতো ভেঙে পড়তে পারে। অপমান শরীরে নয়, মনে লাগে। এটি রক্ত ঝরায় না, কিন্তু রাত জাগায়। জীবনে অপমান আসবেই, কেউ না কেউ ছোট করবে। কিন্তু আমরা কীভাবে তা মোকাবিলা করি, সেটিই আমাদের আসল পরিচয়। নিজের গুণ, মেধা, ভালোবাসা ও সৎপথে থাকা—এগুলোই আমাদের পুনরুদ্ধার করবে, আর একদিন সেই অপমানই হয়ে উঠবে আমাদের গড়ার ইন্ধন।

আমার পরিচিতি

আমি মাকসুদা আক্তার। স্টিমিট প্লাটফর্মে আমি @maksudakawsar হিসাবে পরিচিত। ঢাকা হতে আমি আমার বাংলা ব্লগের সাথে যুক্ত আছি। আমি একজন গৃহিনী এবং চাকরিজীবী। তারপরও আমি ভালোবাসি আমার মাতৃভাষা বাংলায় নিজের মনের কথা গুলো আমার বাংলা ব্লগের প্লাটফর্মে শেয়ার করতে। আমি ভালোবাসি গান শুনতে এবং গাইতে। আমি অবসর সময়ে ভ্রমন করতে এবং সেই সাথে সুন্দর কিছু ফটোগ্রাফি নিজের ক্যামেরায় বন্দী করতে ও ভালোবাসি। মাঝে মাঝে নিজের মনের আবেগ দিয়ে দু চার লাইন কবিতা লিখতে কিন্তু আমার বেশ ভালোই লাগে। সর্বোপরি আমি ভালোবাসি আমার প্রাণপ্রিয় মাকে।


3W72119s5BjVs3Hye1oHX44R9EcpQD5C9xXzj68nJaq3CeF5StuMqDPqgYjRhUxqFbXTvH2r2mDgNbWweA4YGBo825oLh4oqEqeynn5EZL11LdCrppngkM (1).gif

VOTE @bangla.witness as witness

witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy


witness_proxy_vote.png

1000206266.png

1000206267.png

❤️❤️ধন্যবাদ সকলকে❤️❤️