জেনারেল রাইটিং:- "টাকার কাছে হারিয়ে যায় সম্পর্ক "
আসসালামু আলাইকুম
কেমন আছেন সবাই? আশা করবো সবাই ভালো আছেন। সৃষ্টিকর্তার রহমতে আমিও আছি ভালোই। তবে ব্যস্ত এ নগরে কতটুকু সময় ভালো থাকতে পারবো সেটা বলা মুশকিল। শত ঘাত প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে কাটাতে হয় যান্ত্রিক জীবন। মাঝে মাঝে মনে হয় সব কিছুকে বন্ধ করে দিয়ে দূরে কোথাও সবুজ গাছের ছায়ায় নিজেকে একটু স্বস্থির ছায়া দিতে। কিন্তু ঐ যে বাস্তবতা, সেটা তো বড়ই নিষ্ঠুর আর নির্মম। কোন কিছুতেই ছাড় দিতে চায় না। সে যাই হোক বাবা । চলুন মূল পোস্টে ফিরে যাওয়া যাক।
প্রতিদিনই চেষ্টা করি আপনাদের মাঝে সুন্দর করে কিছু লিখে উপহার দেওয়ার জন্য। চাই চারদিকের মানুষগুলোর মধ্যে লুকিয়ে থাকা কষ্টগুলো কে আমার লেখার যাদুতে আপনাদের মাঝে তুলে ধরতে। জানিনা কতটুকু আপনাদের মাঝে নিজের মনের কথা গুলো কে শেয়ার করতে পারি। আজ চেষ্টা করলাম আপনাদের মাঝে নতুন একটি জেনারেল রাইটিং শেয়ার করার জন্য। আশা করি প্রতিদিনের মত করে আমার আজকের জেনারেল রাইটিংটিও আপনাদের কাছে বেশ ভালো লাগবে।

মানুষের জীবনে এমন কিছু সম্পর্ক থাকে যেগুলো হৃদয়ের খুব কাছের হয়। যাদের সঙ্গে সুখ-দুঃখ ভাগ করে নেওয়া যায়, যাদের পাশে দাঁড়ানোকে দায়িত্ব নয়, বরং ভালোবাসা মনে হয়। আমি একসময় এমনই একজন মানুষকে খুব আপন ভাবতাম—আমার এক আত্মীয়। আমাদের সম্পর্কটা ছিল দারুণ। প্রতিদিন কথা হতো না, কিন্তু অন্তর থেকে আন্তরিকতা ছিল। বিশেষ কোনো রান্না হলে সে আমাকে দাওয়াত করতো, উৎসবে পাশে থাকতো, ভালো-মন্দ খোঁজ নিতো। আমিও তাকে সমান শ্রদ্ধা, ভালোবাসা আর আন্তরিকতা দিয়ে আপন করে নিয়েছিলাম। কিন্তু সেই সম্পর্ক বদলে গেলো, যখন সেখানে “টাকা” প্রবেশ করলো।
ঘটনাটি আজ থেকে প্রায় দুই বছরেরও বেশি সময় আগের। একদিন হঠাৎ সেই আত্মীয় এসে জানালো—চরম অর্থকষ্টে আছে। কিছু টাকা পেলে একটা জরুরি কাজ সারতে পারবে। মুখে লজ্জা, চোখে ক্লান্তি আর গলায় অনুরোধ—সব মিলিয়ে তার কষ্টে মন কেঁদে উঠেছিল আমার। আমি অনেক ভেবে-চিন্তে আমার জমানো সঞ্চয় থেকে এক লক্ষ টাকা তাকে ধার দিলাম। কোনো লিখিত চুক্তি করিনি, কারণ আমার মনে ছিল ভরসা—সে তো আমার আপনজন। টাকা না দিলেই যেন ভুল করতাম। সে তখন আশ্বাস দিয়েছিল—মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই টাকা ফিরিয়ে দেবে।
প্রথমদিকে তার ব্যবহার আগের মতোই ছিল। মাঝে মাঝে ফোন করতো, বলতো—“ভাই/আপু, টাকা তো রেডি হচ্ছে, আপনি চিন্তা করবেন না।” আমি হাসিমুখে বলতাম—“না না, তাড়াহুড়ো নেই। তুমি যখন পারবে তখন দিও।” এই ধৈর্য আমার ছিল, কারণ আমি মানুষটাকে বিশ্বাস করতাম। আমি ভাবতাম—আমি তো স্বার্থপর নই, একটু সময় দিলেই হয়। কিন্তু সময় যতই এগোতে থাকলো, সেই ফোন কলগুলো কমতে লাগলো। একসময় দেখলাম—সে ফোন ধরেই না। মেসেজের উত্তর আসে না। হঠাৎ দেখলে মুখ ঘুরিয়ে নেয়। তখনও নিজেকে বোঝাতাম—হয়তো লজ্জা পাচ্ছে, হয়তো সংকটে আছে, হয়তো সময়টা খারাপ যাচ্ছে। আমি অনেক চেয়ে চেয়ে অনুরোধ করেছি, যোগাযোগ করেছি।
ধীরে ধীরে বুঝতে পারলাম—তার সংকট নেই, তার ইচ্ছা নেই। সে চায় না টাকাটা ফেরত দিতে। অথবা চায় না সম্পর্কটা বজায় রাখতে। একসময় বাধ্য হয়ে আমি পরিবারের কিছু ঘনিষ্ঠ আত্মীয়কে জানালাম। তখন অনেক নাটক, বিব্রতকর মুহূর্ত, প্রশ্নোত্তরের ভেতর দিয়ে অবশেষে প্রায় দুই বছর পরে আমি আমার টাকাটা ফিরে পেলাম। সেই আত্মীয় এখন আর আমাকে ফোন করে না, কোনো উৎসবে ডাকে না, এমনকি চোখের সামনেও কথা বলে না। আগের সেই দাওয়াত, খোঁজখবর, আন্তরিকতার কিছুই আর নেই। এই অভিজ্ঞতা আমাকে দারুণ কিছু শেখালো। আমরা প্রায়শই বিশ্বাস করি—টাকা মানুষের প্রকৃতি বদলায় না, কিন্তু বাস্তবে অনেক ক্ষেত্রেই টাকা মানুষকে চেনায়। একজনের প্রতি আমার যে আন্তরিকতা ছিল, সেই জায়গায় আজ রয়ে গেছে অপূর্ণতা, কষ্ট আর কিছু প্রশ্ন। আমি তখন বুঝেছিলাম—মানুষ বিপদে পড়লে, পাশে দাঁড়ানো উচিত। কিন্তু আজ বুঝি—সব মানুষের পাশে দাঁড়ানো উচিত নয়। কারণ, অনেকে সাহায্য চায়, কিন্তু কৃতজ্ঞতা রাখতে জানে না।
এমন না যে আমি টাকার পেছনে পাগল। আমি চাইনি টাকাটা ফেরত দিয়ে সে প্রতিদিন আমার পা ছুঁয়ে সালাম করুক। আমি শুধু চাইছিলাম—যে শ্রদ্ধা ও সম্পর্ক আমি দিয়েছিলাম, সেটা যেন বজায় থাকে। কিন্তু হায়, টাকার গন্ধে সম্পর্কের ফুল শুকিয়ে গেলো। অনেকে বলে—টাকা দিলে সম্পর্ক নষ্ট হয়। আমি আগে এ কথাকে অতিরঞ্জিত মনে করতাম। আজ বলি—ঠিক বলেছিল। কারণ অনেকেই টাকা নেওয়ার সময় সম্পর্কের নাটক করে, আর পাওনা শোধের সময় সেই নাটক ভুলে যায়। আমার সেই আত্মীয় এখন তার দিক থেকে হয়তো ভাবে—"টাকা ফেরত দিয়েছি তো, আর কী?" কিন্তু সে জানে না—আমি শুধু টাকা চাইনি, আমি একটা আত্মিক সম্পর্ক চেয়েছিলাম।
এখন আমি সেই মানুষটিকে এড়িয়ে চলি। আমার হৃদয়ে তার জন্য এখন আর কোনো রাগ নেই, কিন্তু সম্মানও নেই। আমি তার মুখ দেখলে অনুভব করি—মানুষ কত সহজে নিজেকে ছোট করে ফেলে। আমি কৃতজ্ঞ—আমি তার মুখোশ দেখতে পেয়েছি। এই কৃতজ্ঞতাই এখন আমার শক্তি। আমি এখন শিখেছি, কারো আর্থিক অনুরোধে সাড়া দেওয়ার আগে ভাবতে হবে। চোখের জল আর মিষ্টি কথায় এখন আর মন গলে না। কারণ, চোখের জল অভিনয় হতে পারে—কিন্তু চরিত্র কখনো অভিনয় করতে পারে না। টাকা দিলে এখন আমি লিখিত রাখি, সাক্ষী রাখি। আমি এখন জানি—যা দিয়েছি সেটা ফিরে নাও আসতে পারে, কিন্তু সেটার কারণে নিজেকে হারাতে দেওয়া যায় না।
আজ অনেকেই টাকার বিনিময়ে সম্পর্ক তৈরি করে, আবার টাকায় সেই সম্পর্ক শেষ করে। আমার সেই আত্মীয়ও এখন হয়তো নতুন মানুষকে বিশ্বাসে নিচ্ছে, তারাও হয়তো একদিন এই অভিজ্ঞতার ভুক্তভোগী হবে। আমি কাউকে বদলাতে পারি না। আমি শুধু নিজেকে বদলেছি—সচেতন হয়েছি। আমি শিখেছি, ভালোবাসা চোখে নয়, কাজে প্রকাশ পায়। আর কাজ যদি প্রতারণার হয়, তবে সেটি আর সম্পর্ক নয়, সেটা এক ধরনের আত্মিক প্রতারকতা। না, চারপাশে তাকালে এমন অসংখ্য গল্প শোনা যায়। বন্ধুকে ধার দেওয়া টাকা নিয়ে বন্ধুত্ব শেষ, আত্মীয়ের সঙ্গে দীর্ঘ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন—এসব ঘটনা আমাদের আশেপাশেই প্রতিনিয়ত ঘটছে। আমাদের সমাজে একটা সমস্যা হচ্ছে—টাকা চাওয়া সহজ, ফেরত দেওয়া কঠিন, আর কৃতজ্ঞ থাকা আরও কঠিন।মানুষ এখন অর্থের চেয়েও বড় ক্ষতি করে মানুষের বিশ্বাস নষ্ট করে। এটা শুধু একটি ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতা নয়, এটা পুরো সমাজ ব্যবস্থার প্রতিচ্ছবি।
আমি এখন সবকিছুকে ক্ষমা করে দিয়েছি। কারণ রাগ পুষে রাখা মানে নিজেকেই বিষ খাওয়ানো। আমি শুধু শিখে নিয়েছি—জীবনের প্রতিটি সম্পর্ককে এখন যাচাই করে বিশ্বাস করতে হবে। কাউকে টাকা দিলে ধরে নিতে হবে—সেটা আর ফিরবে না। ফিরলে সেটা অতিরিক্ত পাওয়া। আমার জীবনের এই শিক্ষাটা আমি ভবিষ্যতের প্রতিটি সম্পর্কে প্রয়োগ করি। আমি এখন সম্পর্ককে সম্পর্ক হিসেবে রাখতে চাই—টাকার ছায়া ছাড়া।
সবাইকে হয়তো টাকা ধার দেওয়া যাবে না, কিন্তু মানুষের সম্মান ও আন্তরিকতা যদি থাকে—তবে সম্পর্ক টিকে যায়, টাকাও ফেরত আসে। তবে কেউ যদি সম্পর্কের মূল্য বোঝে না—তাহলে তার জন্য শ্রদ্ধা রাখার কোনো কারণ নেই। টাকা ফেরত না পেলে কষ্ট হয়, কিন্তু বিশ্বাস হারালে হৃদয় ভেঙে যায়। আমরা যেন এমন কাউকে কখনও আমাদের হৃদয় দিয়ে বিশ্বাস না করি, যে সেই বিশ্বাসটাকেই ব্যবসা ভাববে।
কেমন লাগলো আপনাদের কাছে আমার আজকের ব্লগটি। আশা করি আপনাদের মতামত জানিয়ে ধন্য করবেন।
আমার পরিচিতি
আমি মাকসুদা আক্তার। স্টিমিট প্লাটফর্মে আমি @maksudakawsar হিসাবে পরিচিত। ঢাকা হতে আমি আমার বাংলা ব্লগের সাথে যুক্ত আছি। আমি একজন গৃহিনী এবং চাকরিজীবী। তারপরও আমি ভালোবাসি আমার মাতৃভাষা বাংলায় নিজের মনের কথা গুলো আমার বাংলা ব্লগের প্লাটফর্মে শেয়ার করতে। আমি ভালোবাসি গান শুনতে এবং গাইতে। আমি অবসর সময়ে ভ্রমন করতে এবং সেই সাথে সুন্দর কিছু ফটোগ্রাফি নিজের ক্যামেরায় বন্দী করতে ও ভালোবাসি। মাঝে মাঝে নিজের মনের আবেগ দিয়ে দু চার লাইন কবিতা লিখতে কিন্তু আমার বেশ ভালোই লাগে। সর্বোপরি আমি ভালোবাসি আমার প্রাণপ্রিয় মাকে।
.gif)
VOTE @bangla.witness as witness
OR
SET @rme as your proxy

@tipu curate
Upvoted 👌 (Mana: 4/8) Get profit votes with @tipU :)