জেনারেল রাইটিং- মানুষের স্বার্থপরতা অনেক নির্মম

in আমার বাংলা ব্লগ3 days ago

আসসালামু আলাইকুম

কেমন আছেন সবাই? আশা করবো সবাই ভালো আছেন। সৃষ্টিকর্তার রহমতে আমিও আছি ভালোই। তবে ব্যস্ত এ নগরে কতটুকু সময় ভালো থাকতে পারবো সেটা বলা মুশকিল। শত ঘাত প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে কাটাতে হয় যান্ত্রিক জীবন। মাঝে মাঝে মনে হয় সব কিছুকে বন্ধ করে দিয়ে দূরে কোথাও সবুজ গাছের ছায়ায় নিজেকে একটু স্বস্থির ছায়া দিতে। কিন্তু ঐ যে বাস্তবতা, সেটা তো বড়ই নিষ্ঠুর আর নির্মম। কোন কিছুতেই ছাড় দিতে চায় না। সে যাই হোক বাবা । চলুন মূল পোস্টে ফিরে যাওয়া যাক।

প্রতিদিনই চেষ্টা করি আপনাদের মাঝে সুন্দর করে কিছু লিখে উপহার দেওয়ার জন্য। চাই চারদিকের মানুষগুলোর মধ্যে লুকিয়ে থাকা কষ্টগুলো কে আমার লেখার যাদুতে আপনাদের মাঝে তুলে ধরতে। জানিনা কতটুকু আপনাদের মাঝে নিজের মনের কথা গুলো কে শেয়ার করতে পারি। আজ চেষ্টা করলাম আপনাদের মাঝে নতুন একটি জেনারেল রাইটিং শেয়ার করার জন্য। আশা করি প্রতিদিনের মত করে আমার আজকের জেনারেল রাইটিংটিও আপনাদের কাছে বেশ ভালো লাগবে।


1000025908.png

নিজের স্বার্থ দেখাই হলো মানুষের এক প্রকার স্বভাব। জন্মের পর থেকেই মানুষ তার প্রয়োজন মেটাতে সচেষ্ট হয়। একটি শিশু যখন ক্ষুধার্ত হয়, তখন সে কান্না করে মায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। সেটিই আসলে তার প্রথম স্বার্থরক্ষার প্রয়াস। বয়স যত বাড়তে থাকে, মানুষ ততই নিজের প্রয়োজন, স্বাচ্ছন্দ্য ও উন্নতির দিকে মনোযোগী হয়। তাই স্বার্থপরতা কোনো বাইরের কিছু নয়, বরং মানুষের ভেতরকার প্রাকৃতিক প্রবণতা।

তবে আমরা প্রায়ই স্বার্থপরতাকে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখি। মনে হয়, যে স্বার্থপর সে শুধুই খারাপ। কিন্তু বিষয়টি এত সরল নয়। নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার প্রবৃত্তি থেকেই মানুষ নিজের স্বার্থ আগে দেখে। আপনি যদি অসুস্থ হয়ে পড়েন, তবে প্রথমেই নিজের সুস্থতার চেষ্টা করবেন, অন্যের নয়। আপনি যদি একটি ভালো সুযোগ পান নিজের জীবন গড়ার জন্য, তবে সেটি হাতছাড়া করতে চাইবেন না। এগুলো কি খারাপ? মোটেই নয়। বরং এগুলোই আমাদের টিকে থাকার মূলভিত্তি।

আমাদের চারপাশে তাকালেই দেখা যায় প্রত্যেকে নিজের স্বার্থ রক্ষা করছে। ব্যবসায়ী চায় লাভ হোক, চাকরিজীবী চায় পদোন্নতি, কৃষক চায় ভালো ফলন, ছাত্র চায় পরীক্ষায় ভালো করতে। এগুলো সবই স্বার্থের প্রকাশ। কিন্তু সমস্যা তখনই দেখা দেয়, যখন নিজের স্বার্থ পূরণের জন্য অন্যের অধিকার বা স্বার্থকে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়। যেমন, একজন সহকর্মীর কাজের কৃতিত্ব নিজের নামে নেওয়া বা কারো প্রাপ্য সুযোগ কেড়ে নেওয়া—এসবই নেতিবাচক স্বার্থপরতার উদাহরণ।

মানুষের মন এমনভাবেই গঠিত যে আগে নিজের নিরাপত্তা ও প্রয়োজনকে প্রাধান্য দেয়। এটি বেঁচে থাকার প্রবৃত্তি। মনোবিজ্ঞানী ফ্রয়েডের মতে, মানুষের মনের একটি অংশ সবসময় তাৎক্ষণিক চাহিদা পূরণের চেষ্টা করে, সেটিই অনেক সময় স্বার্থপর আচরণের জন্ম দেয়। তবে মনের অন্য অংশ তাকে শিখিয়ে দেয় কীভাবে সমাজ ও নৈতিকতার নিয়ম মেনে চলতে হবে। তাই মানুষ সবসময় অন্ধভাবে নিজের স্বার্থে ছুটে চলে না, বরং মাঝে মাঝে তা নিয়ন্ত্রণ করতেও শেখে।

নিজস্ব স্বার্থ ও সামষ্টিক স্বার্থের মধ্যে ভারসাম্য রাখা আসলেই বড় চ্যালেঞ্জ। একজন যদি সবসময় শুধু নিজের ভালো দেখে, তবে সমাজে সম্পর্ক ও বিশ্বাস নষ্ট হয়ে যায়। আবার একেবারেই যদি নিজের স্বার্থ ভুলে অন্যের জন্য সবকিছু বিলিয়ে দেয়, তবে সে নিজেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই দরকার সঠিক ভারসাম্য। নিজের স্বার্থ দেখা কোনো দোষের নয়, তবে তা যেন অন্যের ক্ষতির কারণ না হয়—এই বোধটাই মানুষকে প্রকৃত অর্থে নৈতিক করে তোলে।

এই ভারসাম্য রাখতে হলে কিছু সহজ অভ্যাস জরুরি। সহানুভূতিশীল হওয়া শিখতে হবে, যাতে অন্যের কষ্ট বা আনন্দ বোঝা যায়। নিজের প্রয়োজনের সীমা নির্ধারণ করতে হবে, কারণ সবকিছু পাওয়ার চেষ্টা করলে শেষ পর্যন্ত কিছুই স্থায়ী হয় না। পারস্পরিক লাভের চিন্তা করা জরুরি, যাতে নিজের উন্নতির পাশাপাশি অন্যও উপকৃত হয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, নিজের স্বার্থকে লজ্জাজনক কিছু না ভেবে সৎ পথে পূরণ করার চেষ্টা করা।

মানুষের স্বার্থপরতা তাই পুরোপুরি খারাপ বলা যায় না। বরং এটি মানুষের সহজাত প্রবণতা, যা তাকে টিকে থাকতে, উন্নতি করতে ও জীবন গড়তে সাহায্য করে। তবে স্বার্থপর না হয়ে স্বার্থসচেতন হওয়াই উচিত। যখন আমরা নিজেদের ভালো চাই, তখন অন্যের ভালোও যেন বাধাগ্রস্ত না হয়—এই মনোভাবই সমাজে ভারসাম্য আনে। তাই বলা যায়, নিজের স্বার্থ দেখা আসলে মানুষের স্বাভাবিক অভ্যাস, আর সেই অভ্যাসকেই ইতিবাচকভাবে কাজে লাগানো আমাদের দায়িত্ব।

আমার পরিচিতি

আমি মাকসুদা আক্তার। স্টিমিট প্লাটফর্মে আমি @maksudakawsar হিসাবে পরিচিত। ঢাকা হতে আমি আমার বাংলা ব্লগের সাথে যুক্ত আছি। আমি একজন গৃহিনী এবং চাকরিজীবী। তারপরও আমি ভালোবাসি আমার মাতৃভাষা বাংলায় নিজের মনের কথা গুলো আমার বাংলা ব্লগের প্লাটফর্মে শেয়ার করতে। আমি ভালোবাসি গান শুনতে এবং গাইতে। আমি অবসর সময়ে ভ্রমন করতে এবং সেই সাথে সুন্দর কিছু ফটোগ্রাফি নিজের ক্যামেরায় বন্দী করতে ও ভালোবাসি। মাঝে মাঝে নিজের মনের আবেগ দিয়ে দু চার লাইন কবিতা লিখতে কিন্তু আমার বেশ ভালোই লাগে। সর্বোপরি আমি ভালোবাসি আমার প্রাণপ্রিয় মাকে।


3W72119s5BjVs3Hye1oHX44R9EcpQD5C9xXzj68nJaq3CeF5StuMqDPqgYjRhUxqFbXTvH2r2mDgNbWweA4YGBo825oLh4oqEqeynn5EZL11LdCrppngkM (1).gif

VOTE @bangla.witness as witness

witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy


witness_proxy_vote.png

1000206266.png

1000206267.png

❤️❤️ধন্যবাদ সকলকে❤️❤️