জেনারেল রাইটিং:-"বিশ্বাসের রেখাচিত্রে ফাঁটল: এক ফোন কলের গল্প"

in আমার বাংলা ব্লগ7 days ago

আসসালামু আলাইকুম

কেমন আছেন সবাই? আশা করবো সবাই ভালো আছেন। সৃষ্টিকর্তার রহমতে আমিও আছি ভালোই। তবে ব্যস্ত এ নগরে কতটুকু সময় ভালো থাকতে পারবো সেটা বলা মুশকিল। শত ঘাত প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে কাটাতে হয় যান্ত্রিক জীবন। মাঝে মাঝে মনে হয় সব কিছুকে বন্ধ করে দিয়ে দূরে কোথাও সবুজ গাছের ছায়ায় নিজেকে একটু স্বস্থির ছায়া দিতে। কিন্তু ঐ যে বাস্তবতা, সেটা তো বড়ই নিষ্ঠুর আর নির্মম। কোন কিছুতেই ছাড় দিতে চায় না। সে যাই হোক বাবা । চলুন মূল পোস্টে ফিরে যাওয়া যাক।

প্রতিদিনই চেষ্টা করি আপনাদের মাঝে সুন্দর করে কিছু লিখে উপহার দেওয়ার জন্য। চাই চারদিকের মানুষগুলোর মধ্যে লুকিয়ে থাকা কষ্টগুলো কে আমার লেখার যাদুতে আপনাদের মাঝে তুলে ধরতে। জানিনা কতটুকু আপনাদের মাঝে নিজের মনের কথা গুলো কে শেয়ার করতে পারি। আজ চেষ্টা করলাম আপনাদের মাঝে নতুন একটি জেনারেল রাইটিং শেয়ার করার জন্য। আশা করি প্রতিদিনের মত করে আমার আজকের জেনারেল রাইটিংটিও আপনাদের কাছে বেশ ভালো লাগবে।

image.png

[source](AI Tool দিয়ে তৈরি)

মানুষের জীবনে সবচেয়ে মূল্যবান এবং একইসাথে সবচেয়ে নাজুক যে জিনিসটি, তা হলো বিশ্বাস। একটি সম্পর্ক গড়ে উঠতে সময় লাগে, কিন্তু সেটা ভাঙতে কখনও কখনও একটি মুহূর্তই যথেষ্ট। আমি এমনই একটি মুহূর্তের মধ্য দিয়ে হেঁটে এসেছি—যা হয়তো অনেকের কাছেই তুচ্ছ মনে হতে পারে, কিন্তু আমার কাছে সেটি ছিল এক বিষাক্ত অভিজ্ঞতা।

সেদিন ছিল সপ্তাহের মাঝামাঝি দিন। সকাল থেকেই অফিসে প্রচণ্ড ব্যস্ততা। জরুরি কিছু বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন হয়েছিল। কিছু অফিসীয় আলাপ, কিছু পরামর্শ—সব মিলিয়ে একটু কথা বলার প্রয়োজন পড়ে আমার এক সহকর্মীর সঙ্গে। সে আমার দীর্ঘদিনের কলিগ। একসাথে অনেক কাজ করেছি, অনেক সিদ্ধান্তেও একসাথে মত দিয়েছি। তার প্রতি আমার শ্রদ্ধা যেমন ছিল, তেমনি ছিল একরাশ আস্থা। এই আস্থার জায়গা থেকেই আমি তাকে ফোন করেছিলাম। প্রথমে সব ঠিকঠাকই চলছিল। আমরা অফিসের কাজ নিয়েই কথা বলছিলাম, কিছু ফাইল আপডেট, কিছু ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা। কিন্তু হঠাৎ করে ফোনে এক ধরনের ফিসফাস কণ্ঠ শোনা গেল। প্রথমে ভেবেছিলাম ভুলে হয়তো কোথাও কনফারেন্স চালু হয়ে গেছে।

আমি একটু থেমে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, "তুমি একা আছো তো?" সে খানিকটা ইতস্তত করে উত্তর দিলো, "আসলে… আমি কয়েকজনকে কানেক্ট করে রেখেছি, যাতে সবাই শুনতে পারে। তোমার কথাগুলো তো দরকারি, তাই ভেবেছি শেয়ার করাই ভালো।" এই এক কথায় যেন আমার মাথার উপর দিয়ে ঝড় বয়ে গেল। আমি নির্বাক হয়ে গেলাম। আমার অনুমতি ছাড়া, আমার একান্ত আলাপ, সেই কথোপকথন কীভাবে গ্রুপে পরিণত হলো? আমার কণ্ঠ তখন শুকনো, আর মন বিষণ্ন। একটা ছোট্ট আস্থা যে কতটা বিশাল জায়গা জুড়ে ছিল তা আমি তখন অনুভব করলাম। একজন মানুষ, যাকে আমি পেশাদার ও বিশ্বস্ত বলে মনে করতাম, সে কীভাবে এতটা দায়িত্বহীন হতে পারে?

এই ঘটনার পর সারাদিন যেন কিছুতেই মন বসলো না। ফাইল খুলে কাজ করার চেষ্টা করলাম, কিন্তু মাথায় কেবলই ঘুরপাক খেতে থাকলো সেই ফোন কলের কথা। ভাবতে লাগলাম—মানুষ কেন এমন করে? কেন এমন করে বিশ্বাসঘাতকতা? কেন গোপনীয়তা বজায় রাখা আজকালকার দিনে এত কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে? এই প্রশ্নগুলো শুধু ওই কলিগকে উদ্দেশ্য করে নয়, বরং চারপাশের সকল সম্পর্ককে নিয়েই আমার মনে সন্দেহ তৈরি করলো। মানুষের ভেতরে লুকিয়ে থাকা আত্মস্বার্থ আর সামাজিক দায়বদ্ধতার মধ্যকার দ্বন্দ্ব অনেক সময় এমন আচরণে প্রকাশ পায়। কেউ হয়তো ভাবে—“ভালো কিছু করছি”, কিন্তু সেই ভালো জিনিসের পেছনে যে অন্যের অনুভূতি, সম্মান, ও ব্যক্তিগত সীমারেখা লঙ্ঘন হচ্ছে, তা বোঝে না।

আমি একসময় চুপ করে গেলাম। কিছু বলিনি তাকে। হয়তো বললেও সে বুঝবে না। কিংবা বললেও তার কাছে ব্যাখ্যা থাকবে, “সবাই তো অফিসের লোক, এতে সমস্যা কোথায়?” কিন্তু আমি জানি—সমস্যা আসলে বিশ্বাসের জায়গায়। বিশ্বাস একটা আয়নার মতো—যখন সেটা ভাঙে, তার টুকরোগুলো বুকে বিঁধে থাকে। তারপর সেই আঘাতকে কেউ দেখতে পায় না, কিন্তু যার ওপর পড়ে সেই বোঝে, কতটা যন্ত্রণা হয়।আমার সেই কলিগ হয়তো বুঝতেই পারেনি যে, তার একটি ‘সোজাসাপটা’ সিদ্ধান্ত আমার হৃদয়ে কতটা গভীর প্রভাব ফেলেছে। এই যে আমি নিজের গলা নরম করে কিছু বলছিলাম, সেই কথাগুলো অচেনা কানে পৌঁছে যাবে—এটা আমার কোনোদিনই প্রত্যাশা ছিল না।

এখন আমি আগের চেয়ে অনেক সংযত। নিজের চারপাশটা বুঝে কথা বলি। ফোনে কিছু বলার আগে মনে মনে ভাবি—“এই কথাগুলো যদি আর কেউ শুনে ফেলে?” এভাবে প্রতিনিয়ত নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে শিখেছি। হয়তো এটাকেই বড়রা বলেন বাস্তবতা। হয়তো এটাকেই বলে পরিণত হওয়া। কিন্তু আমি জানি, এই পরিণত হওয়ার পেছনে রয়েছে একরাশ ব্যথা। অনেকেই বলে, “জীবনে শেখা শেষ হয় না।” হ্যাঁ, আমিও শেখার মধ্যেই আছি। শেখার একটা বড় পাঠ হলো—সবাইকে বিশ্বাস করতে নেই। বিশ্বাস তখনই দিতে হয়, যখন সময় আর আচরণ সেটা প্রমাণ করে।

এ ঘটনা থেকে আমার শিক্ষা, সব কলিগ বন্ধু নয়, আর সবাই বন্ধু হলেও সব বন্ধুত্ব সমান নয়। কারো সঙ্গে কথা বলার আগে, কোন পরিসরে বলছি—সেটা বোঝা খুব জরুরি। তবে আমি দুঃখিত হলেও, তিক্ত হয়ে যাইনি। আমি এখনও বিশ্বাস করি—মানুষ ভালো হতে পারে, যদি সে চায়। আমি চাই—আমার এই অভিজ্ঞতা হয়তো কোনো এক পাঠকের চোখ খুলে দেবে। যাতে ভবিষ্যতে আর কেউ এমন হঠাৎ বিশ্বাস ভাঙার ক্ষত না পায়। বিশ্বাস হচ্ছে মাটি—যেখানে সম্পর্কের গাছ বড় হয়। আর সেই গাছ বড় হতে গেলে নিয়মিত যত্ন, সততা, ও সম্মান দরকার হয়। একটু অবহেলা, একটু গোপন ফাঁকি—এই গাছটা মরে যায়, ভেঙে পড়ে, আর কখনও মাথা তোলে না।

জীবনে যতোই ব্যস্ততা থাকুক, যতোই পেশাদারিত্ব দাবি করুক—মানুষের মৌলিক অধিকার, সম্মান এবং বিশ্বাসের জায়গাটুকু যেন কেউ লঙ্ঘন না করে। আর যদি কেউ করে, তবে তা যেন তার নিজের ব্যক্তিত্বকে ছোট না করে দেয়।

কেমন লাগলো আপনাদের কাছে আমার আজকের ব্লগটি। আশা করি আপনাদের মতামত জানিয়ে ধন্য করবেন।

আমার পরিচিতি

আমি মাকসুদা আক্তার। স্টিমিট প্লাটফর্মে আমি @maksudakawsar হিসাবে পরিচিত। ঢাকা হতে আমি আমার বাংলা ব্লগের সাথে যুক্ত আছি। আমি একজন গৃহিনী এবং চাকরিজীবী। তারপরও আমি ভালোবাসি আমার মাতৃভাষা বাংলায় নিজের মনের কথা গুলো আমার বাংলা ব্লগের প্লাটফর্মে শেয়ার করতে। আমি ভালোবাসি গান শুনতে এবং গাইতে। আমি অবসর সময়ে ভ্রমন করতে এবং সেই সাথে সুন্দর কিছু ফটোগ্রাফি নিজের ক্যামেরায় বন্দী করতে ও ভালোবাসি। মাঝে মাঝে নিজের মনের আবেগ দিয়ে দু চার লাইন কবিতা লিখতে কিন্তু আমার বেশ ভালোই লাগে। সর্বোপরি আমি ভালোবাসি আমার প্রাণপ্রিয় মাকে।


3W72119s5BjVs3Hye1oHX44R9EcpQD5C9xXzj68nJaq3CeF5StuMqDPqgYjRhUxqFbXTvH2r2mDgNbWweA4YGBo825oLh4oqEqeynn5EZL11LdCrppngkM (1).gif

VOTE @bangla.witness as witness

witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy


witness_proxy_vote.png

1000206266.png

1000206267.png

❤️❤️ধন্যবাদ সকলকে❤️❤️

Sort:  
 7 days ago 

দিন দিন মানুষ গুলো ভয়ংকর হয়ে উঠছে । আর বিশ্বাস তো কত আগেই শেষ । দারুন লিখেছেন আপু।