বৃষ্টির রাতে ভূতের গল্প: শৈশবের সেই ভয় আর ভালোবাসা
আসসালামু আলাইকুম
কেমন আছেন আমার প্রিয় সহযাত্রী ভাই বোনেরা? আশা করি সবাই আল্লাহর রহমতে অনেক ভালো আছেন। আমিও আপনাদের সবার দোয়ায় আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি। তবে মনমানসিকতা ভালো নেই। আর মনমানসিকতা যদি ভালো না থাকে তাহলে শরীর মন অচল হয়ে পড়ে। তারপরেও আপনাদের সবার মাঝে আমার আরও একটি পোস্ট নিয়ে হাজির হলাম। আজ আমি একটি শৈশবের কিছু কথা নিয়ে আপনাদের সবার মাঝে হাজির হয়েছি।আশা করি আপনাদের সবার কাছে অনেক ভালো লাগবে। তাহলে চলুন আজ আমার শৈশবের কিছু স্মৃতির অনুভূতি জেনে আসি।
আসলে শৈশবকাল আমাদের সবার জীবনে একটি স্মৃতিমধুর। আমি মনে করি শৈশবের স্মৃতি আমাদের সবার জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যা আমাদের প্রতিটিদিন প্রতিটি মুহূর্ত ফিরিয়ে নিয়ে যায় সেই শৈশবের দিনগুলোর মাঝে। শৈশবে আমাদের ছিল না কোন ভাবনা, ছিলনা কোন দুঃশ্চিন্তা বা কোন দায়িত্ববোধ। তখন আমাদের প্রতিটি দিন ও মুহূর্ত ছিল একদম সাদাসিদে ও আনন্দ পূর্ণ। এখনো সেই দিনগুলোর প্রতিটা সময় ও মুহূর্তগুলো মনে পড়লে মনে হয় যেন সেদিনের সেই দিন গুলোই অনেক সুন্দর ছিল। এখন ভাবী কেন বড় হতে গেলাম। চাইলেও ফিরে যেতে পারবো না সেই শৈশবে ফেলে আসা দিনগুলোতে। তাইতো আজও চলে গিয়েছিলাম শৈশবের কিছু মধুর স্মৃতিতে। আর সেই মধুর স্মৃতির কিছু অংশ আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে এলাম।

[Source](AI দিয়ে তৈরি)
ছেলেবেলা মানেই একরাশ স্মৃতি। কাদায় ভেজা পা, ছুটে বেড়ানো বিকেল, আর বৃষ্টির দিনে বাবার মুখে শোনা সেই ভূতের গল্পগুলো—যেগুলো আজও মনে পড়লে গায়ে কাঁটা দেয়। তখনকার দিনে গল্প মানেই ছিল একটা জীবন, একটা অনুভব। আজ যখন বৃষ্টির রাতে বিদ্যুৎ চলে যায়, চারপাশ নিস্তব্ধ হয়ে আসে, তখন হঠাৎ করেই যেন ফেলে আসা সেই দিনগুলো আবার ফিরে আসে চোখের সামনে।
আমার বাবা ছিলেন গল্প বলার এক জীবন্ত খনি। বিশেষ করে যখন বাইরে ঝুম বৃষ্টি পড়ত, আর চারপাশটা হঠাৎ বিদ্যুৎহীন হয়ে অন্ধকারে ঢেকে যেত, তখনই শুরু হত বাবার সেই বিখ্যাত ভূতের গল্পের আসর। সেই মুহূর্তগুলো ছিল যেমন ভয়ানক, তেমনি রোমাঞ্চকর। ভয় পেতে পেতেও আমরা গল্পের পর গল্প শুনে যেতাম। বাবার চোখে মুখে তখন এমন এক ভঙ্গি থাকত, যেন গল্পটা সত্যিই তার চোখের সামনেই ঘটেছে। আর আমরাও বিশ্বাস করতাম, পুরো মন দিয়ে।
সবচেয়ে মনে পড়ে সেই গল্পটা—যেখানে বৃষ্টির রাতে এক ভূত নাকি ইলিশ মাছ ভাজা খেতে এসেছিল! কী হাস্যকর, অথচ কতটা ভয়জাগানিয়া ছিল সেই গল্প। আমি ছোট ছিলাম, খুব সহজেই বিশ্বাস করতাম। মনে হত, সত্যিই যদি সে ভূত আমার বাড়িতে এসে পড়ে! এরপর ছিল সেই গল্প, যেখানে রাত গভীর হলে গ্রামের পুরনো গাছের নিচে সাদা কাপড় পরা ভূত দাঁড়িয়ে থাকত, কারও কারও নাম ধরে ডাকত। আর যে সাড়া দিত, সে নাকি হারিয়ে যেত চিরতরে।
বাবা গল্প বলার সময় কখনো কখনো হঠাৎ চুপ করে যেতেন। গলার স্বর নিচু করতেন। বাতাসে হঠাৎ জানালা কাঁপলে আমরাও চমকে উঠতাম। মা পাশের ঘর থেকে বলতেন, “আর কত ভয় দেখাবে বাচ্চাদের?” কিন্তু আমরা কেউ থামাতে চাইতাম না। কারণ আমরা ভয় পেয়েও গল্পটা শুনে যেতে চাইতাম। যেন সেই ভয়েই ছিল একধরনের আনন্দ, এক অজানা টান।
বৃষ্টির রাতগুলোতে ঘরের চারপাশে যখন শুধুই ঝরো বাতাসের শব্দ, জানালায় পড়া টুপটাপ বৃষ্টির ছোঁয়া, তখন বাবার গলা ছিল একমাত্র শব্দ, যা আমাদের সেই নিঃস্তব্ধতার ভেতর বাঁচিয়ে রাখত। কেরোসিন বাতির আলোয় তাঁর মুখে ছায়া পড়ত, আর মনে হত তিনি যেন গল্পের মধ্যেকার কোনো চরিত্র হয়ে উঠেছেন।
গল্পগুলো ছিল নানা রকম—কখনো কুয়োর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা অদ্ভুত এক ছায়া, কখনো কারও স্বপ্নে আসা মৃত আত্মীয়, কখনোবা মাঝরাতে হেঁটে যাওয়া পায়ের আওয়াজ। এইসব গল্প শুনে রাতের অন্ধকারে টয়লেট যাওয়া রীতিমতো যুদ্ধ হয়ে যেত। অথচ সেসব দিনের ভয় এখন মধুর হয়ে গিয়েছে। ভোর হলে সব কিছু স্বাভাবিক। তখন গল্পের ভূত আর থাকে না, থাকে শুধু বাবার মুখের হাসি। তিনি বলতেন, “সবই গল্প! তবে কেউ কেউ বিশ্বাস করে, কেউ করে না।” কিন্তু আমাদের ছোট্ট মন তখনো দ্বিধায় থাকত—হয়তো সত্যিই কোথাও কিছু ছিল!
আজ, বড় হয়ে, শহরের এক কোণে বসে যখন দেখি বৃষ্টি পড়ছে জানালার কাঁচে, আর চারপাশে অন্ধকার নেমে আসে—তখন মনে পড়ে সেই সময়গুলো। মনে পড়ে বাবার গল্প। আজ তিনি নেই। কিন্তু তাঁর বলা প্রতিটি গল্প যেন এখনো আমার চারপাশে ঘোরে। বাবার গল্পগুলোর মাঝে আমি খুঁজে পাই একটা সময়ের ছাপ, একরকম সম্পর্কের উষ্ণতা। গল্পের ভেতর দিয়ে বাবা যেন আমাদের সঙ্গে এক অন্য রকম বন্ধন গড়ে তুলতেন। সেই ভয়ের মধ্যেই ছিল তাঁর ভালোবাসার ছোঁয়া। ছিল আমাদের শৈশবের রঙ।
অনেক সময় ভাবি, এখনকার শিশুরা কি পায় এমন গল্পের স্বাদ? আধুনিক প্রযুক্তির দুনিয়ায় তারা কি খুঁজে পায় এমন একরাশ ভয়, যেটা আনন্দও দেয়? নাকি তাদের ভয় আজ কেবল ভিডিও গেম কিংবা হরর মুভির দৃশ্যে আটকে আছে? আমি ভাগ্যবান যে আমার বাবার মতো একজন গল্পকার ছিল, যিনি কেবল ভূতের গল্প বলেননি, আমার শৈশবকে করেছেন আরও রঙিন, আরও গভীর। এখনো যখন মনে পড়ে সেই সব বৃষ্টির রাত, কাঁপা আলো, বাবার ভয়ের হাসি—তখন চোখের কোণ ভিজে ওঠে।
ভয় পাওয়ার মধ্যেও ছিল যে ভালোলাগা, তা আজো আমার মনে দাগ কেটে আছে। তাই আজ যখন লিখছি, মনে হচ্ছে, আমি যেন সেই রাতগুলোকেই আবার জীবন্ত করছি। যেন আবার বাবার গলায় শুনছি—"জানো, সেই রাতে যখন ইলিশ ভাজা হচ্ছিল, তখন কে যেন দরজার সামনে এসে দাঁড়াল…" । আজ আর সে গল্প শোনার মানুষটি নেই, কিন্তু গল্পগুলো আছে, আমার মনে, আমার স্মৃতিতে। আর আমি জানি, যতদিন বৃষ্টি পড়বে আর যতদিন আমি লিখে যেতে পারবো, ততদিন বাবার গল্পগুলো হারাবে না।
কেমন লেগেছে আপনাদের সবার কাছে আজ আমার শৈশবে ফেলে আসা সুন্দর কিছু স্মৃতি নিয়ে পোস্টটি। আশা করছি আপনাদের সবার কাছে আমার পোস্টটি পড়েও অনেক ভালো লেগেছে সবাই ভালো ও সুস্থ থাকবেন সে পর্যন্ত আগামীতে আবার নতুন ব্লগ নিয়ে আপনাদের মাঝে চলে আসবো ইনশাল্লাহ আল্লাহাফেজ।
