শৈশবে পুতুল খেলার গল্প
আসসালামু আলাইকুম
কেমন আছেন আমার প্রিয় সহযাত্রী ভাই বোনেরা? আশা করি সবাই আল্লাহর রহমতে অনেক ভালো আছেন। আমিও আপনাদের সবার দোয়ায় আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি। তবে মনমানসিকতা ভালো নেই। আর মনমানসিকতা যদি ভালো না থাকে তাহলে শরীর মন অচল হয়ে পড়ে। তারপরেও আপনাদের সবার মাঝে আমার আরও একটি পোস্ট নিয়ে হাজির হলাম। আজ আমি একটি শৈশবের কিছু কথা নিয়ে আপনাদের সবার মাঝে হাজির হয়েছি।আশা করি আপনাদের সবার কাছে অনেক ভালো লাগবে। তাহলে চলুন আজ আমার শৈশবের কিছু স্মৃতির অনুভূতি জেনে আসি।

শৈশবের স্মৃতি জীবনের এক অমূল্য সম্পদ। বয়স যত বাড়তে থাকে ততই এই স্মৃতিগুলো মনকে ঘিরে ধরে। ব্যস্ত জীবনের ভিড়ে থেকেও যখন একটু থেমে যাই তখন মনে পড়ে সেই সোনালী দিনগুলো। কত রকমের খেলা করেছি আমরা, কত ছোট ছোট আনন্দে ভরে উঠেছিল সেই সময়। আজকের মতো আধুনিক খেলনা, মোবাইল ফোন, টিভি কিংবা গেমস তখন ছিল না। তবুও আমাদের আনন্দের কোনো কমতি ছিল না। আমাদের আনন্দ ছিল নিজস্ব জগতে, নিজের কল্পনায়। সেই কল্পনার সবচেয়ে প্রিয় খেলা ছিল কাপড় দিয়ে পুতুল বানানো আর পুতুলের বিয়ে দেওয়া।
কাপড়ের টুকরো দিয়ে বানানো পুতুল আমাদের কাছে ছিল অমূল্য। রঙিন কাপড় থেকে কখনও ছেলে পুতুল কখনও মেয়ে পুতুল বানানো হতো। হাতে বানানো বলে প্রত্যেকটা পুতুল ছিল আলাদা। কারও চোখ আঁকা হতো কালো কালি দিয়ে, কারও মুখে থাকতো লাল টুকটুকে হাসি। সুতো দিয়ে বাঁধা চুল দেখে মনে হতো সত্যিই যেন কোনো বাচ্চা মেয়ে আমাদের কাছে এসে বসে আছে। সেই পুতুলকে আমরা খাওয়াতাম, সাজাতাম, ঘুম পাড়াতাম। ধীরে ধীরে তাদের নিয়ে গড়ে উঠেছিল আমাদের কল্পনার সংসার। সবচেয়ে আনন্দের বিষয় ছিল পুতুলের বিয়ে। আমরা ঠিক করতাম এক বান্ধবীর ছেলে পুতুলের সাথে আরেক বান্ধবীর মেয়ে পুতুলের বিয়ে দেবো। বিয়ের দিন সকাল থেকে আমাদের কেমন যেন উত্তেজনা কাজ করতো। মনে হতো সত্যিই একটা উৎসব হচ্ছে। পুতুলকে সাজানো হতো লাল কাপড় দিয়ে, মাথায় ফুলের মালা দেওয়া হতো। ছেলে পুতুলকে পরানো হতো গামছা কিংবা ছোট শার্ট। ঘর সাজানো হতো রঙিন কাগজ, ফুল আর কাপড় দিয়ে। আমাদের কাছে সবকিছুই ছিল নিখুঁত আর সত্যি।
বিয়ের দিন বাড়ির বড়দের কাছ থেকেও সাহায্য পাওয়া যেত। মাকে বললে মা রান্না করে দিতেন খিচুড়ি, ডিম ভাজা বা পায়েস। কখনও মিষ্টিও থাকতো। আমরা সেগুলো সাজিয়ে রাখতাম পুতুলের ভোজের জন্য। যদিও খেতাম আমরা নিজেরাই, তবুও কল্পনায় মনে হতো পুতুলগুলোও খাচ্ছে। কারও হাতে বানানো বাঁশির সুর বাজতো, কেউ আবার গান ধরতো। বিয়ে মানেই গান আর নাচ, আমরা সেটাও বাদ দিতাম না। সেই মুহূর্তগুলো ছিল আমাদের কাছে একেবারে স্বপ্নের মতো। তবে শুধু আনন্দই নয় এর সাথে থাকতো কিছুটা রাগ আর অভিমানও। কার পুতুল বর হবে, কার পুতুল কনে হবে, কে বেশি সুন্দর সাজিয়েছে, কার আয়োজন ভালো হয়েছে—এসব নিয়েই ঝগড়া শুরু হতো। ঝগড়ার কারণে অনেক সময় বন্ধুত্ব ভেঙে যেত। একে অপরের সাথে কথা বলা বন্ধ হয়ে যেত দিনের পর দিন। মনে হতো এটি জীবনের সবচেয়ে বড় রাগ। বন্ধু ছাড়া খেলতে যাওয়া বা গল্প করা তখন অসম্ভব মনে হতো। তবুও সময়ের সাথে সাথে সেই রাগ ভাঙতো। একদিন হঠাৎ আবার কথা শুরু হয়ে যেত, আবার মিলন হতো। সেই মিলনের আনন্দ ছিল আরও বেশি মধুর।
আজ বড় হয়ে যখন সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়ে তখন হৃদয় ভরে যায় এক অদ্ভুত আবেগে। মনে হয় কতো সাধারণ ছিল সেই সময় অথচ আনন্দ ছিল সীমাহীন। কাপড় দিয়ে বানানো পুতুল হয়তো আজকের চোখে খুব সাধারণ একটি জিনিস কিন্তু তখন সেটাই ছিল আমাদের সবচেয়ে প্রিয় খেলনা। সেই খেলনার মাঝেই লুকিয়ে ছিল হাসি, কাঁদা, অভিমান আর মিলনের গল্প। শৈশবের সেই অভিজ্ঞতাগুলো আসলে শুধু খেলার গল্প নয়। এগুলোর ভেতর দিয়ে আমরা অনেক কিছু শিখেছি। শিখেছি কল্পনা দিয়ে নিজের জগৎ সাজাতে, শিখেছি সম্পর্ক তৈরি করতে, শিখেছি ঝগড়া করেও আবার মিলে যেতে। এগুলো ছিল আমাদের জীবনের প্রথম পাঠ। জীবনে যত বড় হয়েছি তত বুঝতে পেরেছি আসলে সেই পাঠগুলো কত মূল্যবান ছিল।
আজকের দিনে শিশুদের হাতে আধুনিক খেলনা আছে, আছে মোবাইল ফোন, টিভি কিংবা কম্পিউটার গেমস। কিন্তু আমাদের সময়ে ছিল সেই সহজ সরল খেলাগুলো। হয়তো এখনকার শিশুদের কাছে সেগুলো সাধারণ মনে হবে কিন্তু আমাদের কাছে এগুলোই ছিল সবচেয়ে বড় আনন্দ। শৈশবের সেই সরলতা আর নির্মলতা হয়তো আর ফিরে পাওয়া যাবে না কিন্তু স্মৃতির ভেতর তারা বেঁচে আছে আজও। শৈশবের স্মৃতিগুলোই মানুষকে বার বার টেনে নিয়ে যায় অতীতে। কাপড় দিয়ে বানানো পুতুল, তার বিয়ে, বন্ধুর সাথে অভিমান আর মিলনের গল্প—এসবই মনে করিয়ে দেয় সেই সোনালী দিনগুলোর কথা। বয়স যতই বাড়ুক, সময় যতই পাল্টাক, সেই স্মৃতিগুলো চিরকাল হৃদয়ে রয়ে যাবে। শৈশব আসলে জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময়। সেই সরল আনন্দ আর মিষ্টি স্মৃতি আজও মনে করলে মন ভরে ওঠে অদ্ভুত শান্তি আর ভালোলাগায়।
কেমন লেগেছে আপনাদের সবার কাছে আজ আমার শৈশবে ফেলে আসা সুন্দর কিছু স্মৃতি নিয়ে পোস্টটি। আশা করছি আপনাদের সবার কাছে আমার পোস্টটি পড়েও অনেক ভালো লেগেছে সবাই ভালো ও সুস্থ থাকবেন সে পর্যন্ত আগামীতে আবার নতুন ব্লগ নিয়ে আপনাদের মাঝে চলে আসবো ইনশাল্লাহ আল্লাহাফেজ।
আমার পরিচিতি
আমার পরিচিতি
আমি মাহফুজা আক্তার নীলা। আমার ইউজার নাম @mahfuzanila। আমি একজন বাংলাদেশী ইউজার। আমি স্টিমিট প্লাটফর্মে যোগদান করি ২০২২ সালের মার্চ মাসে। আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিতে যোগদান করে আমি অনেক বিষয় শিখেছি। আগামীতে আরও ভালো কিছু শেখার ইচ্ছে আছে। আমি পছন্দ করি ভ্রমন করতে, ছবি আঁকতে, বিভিন্ন ধরনের মজার মাজার গল্পের বই পড়তে, ফটোগ্রাফি করতে, ডাই প্রজেক্ট বানাতে ও আর্ট করতে। এছাড়াও আমি বেশী পছন্দ করি মজার রেসিপি করতে। মন খারাপ থাকলে গান শুননি। তবে সব কিছুর পাশাপাশি আমি ঘুমাতে কিন্তু একটু বেশীই পছন্দ করি।
