সরকারি কোয়াটারের জীবন-আমার ছোটবেলার প্রিয় ঠিকানা

in আমার বাংলা ব্লগ16 hours ago

আসসালামু আলাইকুম

কেমন আছেন আমার প্রিয় সহযাত্রী ভাই বোনেরা? আশা করি সবাই আল্লাহর রহমতে অনেক ভালো আছেন। আমিও আপনাদের সবার দোয়ায় আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি। তবে মনমানসিকতা ভালো নেই। আর মনমানসিকতা যদি ভালো না থাকে তাহলে শরীর মন অচল হয়ে পড়ে। তারপরেও আপনাদের সবার মাঝে আমার আরও একটি পোস্ট নিয়ে হাজির হলাম। আজ আমি একটি শৈশবের কিছু কথা নিয়ে আপনাদের সবার মাঝে হাজির হয়েছি।আশা করি আপনাদের সবার কাছে অনেক ভালো লাগবে। তাহলে চলুন আজ আমার শৈশবের কিছু স্মৃতির অনুভূতি জেনে আসি।

image.png

Created by AI Tools
আসলে শৈশবকাল আমাদের সবার জীবনে একটি স্মৃতিমধুর। আমি মনে করি শৈশবের স্মৃতি আমাদের সবার জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যা আমাদের প্রতিটিদিন প্রতিটি মুহূর্ত ফিরিয়ে নিয়ে যায় সেই শৈশবের দিনগুলোর মাঝে। শৈশবে আমাদের ছিল না কোন ভাবনা, ছিলনা কোন দুঃশ্চিন্তা বা কোন দায়িত্ববোধ। তখন আমাদের প্রতিটি দিন ও মুহূর্ত ছিল একদম সাদাসিদে ও আনন্দ পূর্ণ। এখনো সেই দিনগুলোর প্রতিটা সময় ও মুহূর্তগুলো মনে পড়লে মনে হয় যেন সেদিনের সেই দিন গুলোই অনেক সুন্দর ছিল। এখন ভাবী কেন বড় হতে গেলাম। চাইলেও ফিরে যেতে পারবো না সেই শৈশবে ফেলে আসা দিনগুলোতে। তাইতো আজও চলে গিয়েছিলাম শৈশবের কিছু মধুর স্মৃতিতে। আর সেই মধুর স্মৃতির কিছু অংশ আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে এলাম।

[Source](AI দিয়ে তৈরি)

ছেলেবেলার কথা যখন মনে পড়ে, তখন সবচেয়ে উজ্জ্বল একটা স্মৃতি আমার সরকারি কোয়ার্টারের জীবন। আমার বাবা ছিলেন একজন সরকারি চাকুরিজীবী। সেই কারণেই আমাদের বসবাস হয়েছিল এক সরকারি কোয়ার্টারে, যেখানে কাটিয়েছি আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দঘন দিনগুলো। সরকারি কোয়ার্টার মানেই শুধু একটা বাড়ি নয়, বরং এক গোটা কমিউনিটি, যেখানে প্রতিবেশী থেকে শুরু করে বন্ধু-বান্ধব সবাই একে অপরের মতোই, আর একসাথে কাটানো সময়গুলো হয়ে ওঠে অবিস্মরণীয়।

আমাদের কোয়ার্টারটি ছিল এক মধ্যম মাপের বাড়ি, যার চারপাশে গাছপালা, রাস্তা আর ছোট্ট খেলার মাঠ ছিল। সেই মাঠ ছিল আমাদের খেলার ঠিকানা, যেখানে আমরা প্রতিদিন স্কুল থেকে ফিরে দৌড়ে যেতাম। আমাদের বাসার সামনের রাস্তা ছিল এক ধরনের চেনাজানা সড়ক, যেখানে সকালের আলো থেকে শুরু করে সন্ধ্যার মিষ্টি আলো পর্যন্ত বাচ্চাদের কণ্ঠস্বর আর খেলার আওয়াজ শুনতে পাওয়া যেত। এই রাস্তা ছিল আমাদের ছোট ছোট খেলার স্হান, যেখানে আমরা লুকোচুরি, বউচি, চোর-পুলিশ, গোল্লাছোটসহ বিভিন্ন খেলা খেলতাম। সরকারি কোয়ার্টারে থাকার সবচেয়ে বড় সৌভাগ্য ছিল তার পরিবেশ এবং প্রতিবেশীরা। এখানে সবাই ছিল খুব ভালো মনের মানুষ। একে অপরের খোঁজখবর রাখা, একসঙ্গে উৎসবে মিলিত হওয়া, পরস্পরের ছোটখাটো কাজে সাহায্য করা এইসব ছিল আমাদের দৈনন্দিন অভ্যাস। বিশেষ করে বয়স্ক মানুষদের সঙ্গে আমার খুব ভাল সম্পর্ক ছিল। তারা আমাদের কাছে ছিল অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার, যাদের গল্প শুনে আমরা অনেক কিছু শিখতাম।

আমাদের কোয়ার্টারে জীবন ছিল এক ধরনের পরিবারিক বন্ধন। যেখানে শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই একসঙ্গে মিলেমিশে থাকতাম। দোতলা বাড়িটির ছোট্ট বারান্দায় বসে আমাদের মা, বাবা, প্রতিবেশীরা নানা গল্প করতেন আর আমরা ছেলেরা খেলতাম। ছোটবেলায় আমি নিজেও বড় বাড়ির মতো মনে করতাম এই কোয়ার্টারটাকে, যেখানে প্রতিটি কোনায় স্মৃতি লুকিয়ে আছে। আমাদের কোয়ার্টারের আশেপাশে ছোট ছোট দোকান ছিল, যেখানে আমরা স্কুলের খরচের টাকা নিয়ে যেতাম। সেই দোকানের মালিকদের সাথে আমাদের একটা আলাদা সম্পর্ক ছিল। তারা কখনো দুঃখে কিংবা খুশিতে আমাদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করত, আমাদের খেলার সময় একটু স্ন্যাক্সও দিত। এসব ছোট ছোট ঘটনা আজও আমার মনে অম্লান হয়ে আছে।

এখানে বড় হওয়ার আনন্দ অন্যরকম ছিল। বাইরে যাওয়া-আসা সহজ ছিল, কারণ আমরা সবাই একে অপরকে চিনতাম। একবারে তো বাড়ির সবাই মিলে বেড়াতে যাওয়া, পিকনিক করা এমনকি সামান্য দুর্ঘটনার সময় সবাই মিলে সাহায্য করার মতো এক বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ গড়ে উঠেছিল। সবচেয়ে মজার সময় ছিল সন্ধ্যার পর, যখন ঘরের বাইরে আলো জ্বলতো, তখন আমরা দল বেঁধে খেলা করতাম। লুকোচুরি, চোর-পুলিশ কিংবা গোল্লাছোট, যেকোনো খেলা আমাদের আনন্দ দিত। সেই আনন্দের ঝলক এখনো চোখে ভাসে। যখন বাড়ির বাইরে থাকা গাছের নীচে বসে আমরা গল্প করতাম, নতুন নতুন স্বপ্ন বুনতাম, তখন মনে হত এই জীবনটাই সেরা।

সরকারি কোয়ার্টারের পরিবেশে নিরাপত্তার একটা আলাদা বোধ ছিল। বাবা-মা আমাদের নির্ভয়ে বাইরে খেলতে পাঠাতেন। কোয়ার্টারের পথচারীরা সবাই একে অপরের দিকে নজর রাখতেন। এটা ছোটদের জন্য এক বিশেষ সুরক্ষা ছিল। বর্ষাকালে কোয়ার্টারের পরিবেশ একদম ভিন্ন রূপ ধারণ করত। বৃষ্টি হলে চারপাশে সবুজ আর ঝরনা ঝরার মতো আওয়াজ, জল জমে থাকা ছোট ছোট পুকুরে আমরা খেলতাম। বৃষ্টির পানি আর কাদামাটির মধ্যে ডুব দিয়ে আমরা দারুণ সময় কাটাতাম। খেলার মাঝে ভিজে গিয়েও আমাদের মন খুব আনন্দে ভরপুর থাকত। তখন যে মায়া ছিল, সেটা আজকের জীবনের ব্যস্ততার মাঝে খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন।

শীতের সকালগুলোও ছিল আনন্দঘন। গরম কাপড় পরে আমরা মাঠে দৌড়াতাম, মাটির গন্ধ আর শীতের ঠান্ডা বাতাস আমাদের প্রাণে প্রাণ ভরে দিত। বিকেলে গরম চায়ের সঙ্গে বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করাও ছিল এক অন্যরকম আনন্দ। সরকারি কোয়ার্টারে আমার ছোটবেলা ছিল অনেক স্বপ্নময়। পরিবারের সবাই, প্রতিবেশী, বন্ধু—সবাই মিলে আমরা এক বিশেষ সমাজ তৈরি করেছিলাম, যেখানে বিশ্বাস আর ভালোবাসা ছিল মূল বিষয়। সেই জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত আজও আমাকে শক্তি দেয়, আমাকে স্মরণ করিয়ে দেয় বাঁচার অর্থ কী। আমার মনে হয়, সরকারি কোয়ার্টারের মতো জীবন পাওয়া বড় একটি সৌভাগ্যের ব্যাপার। সেই স্মৃতি আজও জীবনের দিকনির্দেশক। আমি কৃতজ্ঞ সেই সময়ের জন্য, সেই মানুষগুলোর জন্য, যারা আমার জীবনে এত সুন্দর একটা অধ্যায় গড়ে দিয়েছিল।

কেমন লেগেছে আপনাদের সবার কাছে আজ আমার শৈশবে ফেলে আসা সুন্দর কিছু স্মৃতি নিয়ে পোস্টটি। আশা করছি আপনাদের সবার কাছে আমার পোস্টটি পড়েও অনেক ভালো লেগেছে সবাই ভালো ও সুস্থ থাকবেন সে পর্যন্ত আগামীতে আবার নতুন ব্লগ নিয়ে আপনাদের মাঝে চলে আসবো ইনশাল্লাহ আল্লাহাফেজ।

❤️❤️ধন্যবাদ সকলকে❤️❤️

image.png