জেনারেল রাইটিং- আজকাল যেন নিজের ছায়া কেও বিশ্বাস হয় না
আসসালামু আলাইকুম
আসসালামু আলাইকুম
কেমন আছেন আমার প্রিয় সহযাত্রী ভাই বোনেরা? আশা করি সবাই আল্লাহর রহমতে অনেক ভালো আছেন। আমিও আপনাদের সবার দোয়ায় আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি। আশা করি সবার দিনটা ভাল কেটেছে। আজকে আপনাদের সবার মাঝে আমার আরও একটি পোস্ট নিয়ে হাজির হলাম। আজ আমি একটি জেনারেল রাইটিং নিয়ে আপনাদের সবার মাঝে হাজির হয়েছি।আশা করি আপনাদের সবার কাছে অনেক ভালো লাগবে। তাহলে চলুন আজ আমার জেনারেল রাইটিংটি দেখে আসি যে কি বিষয় নিয়ে লেখলাম। হ্যাঁ বন্ধুরা আজ আমার জেনারেল রাইটিং এর বিষয় হলো "রূপ বদলের মুখোশ: স্বার্থের দাস মানুষ ।"

আজকাল নিজের ছায়াকেও বিশ্বাস করা যায় না কথাটা অনেকের কাছে হয়তো অতিরঞ্জন মনে হতে পারে। কিন্তু বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা সমাজের অবক্ষয় আর মানুষের মুখোশপরা রূপ দেখলে এ কথাটি যেন আর কল্পনা মনে হয় না। এ এক এমন সময় যেখানে সত্য বলে কিছু নেই মুখ আর মনে আকাশ পাতাল ফারাক আর আত্মবিশ্বাসের জায়গাটুকুও ধীরে ধীরে হয়ে উঠছে সন্দেহে ভরা। এই লেখাটি তাই শুধুই একটি বক্তব্য নয় বরং সময়ের প্রতিচ্ছবি। যেখানে আমরা খুঁজে দেখব কেন মানুষ এমন হয়ে উঠেছে কেন আজ আর নিজের ছায়াটাও বিশ্বাসযোগ্য নয়
একসময় মানুষ মানুষের উপর আস্থা রাখত। বন্ধুত্ব ছিল হৃদয়ের প্রেম ছিল নিঃস্বার্থ পারিবারিক সম্পর্ক ছিল নির্ভরতার প্রতীক। বিশ্বাস শব্দটা তখন সম্মানের মতো ছিল। কেউ বললেই বিশ্বাস করা যেত এমনকি লিখিত প্রমাণ ছাড়াও। কিন্তু সময় পাল্টেছে আর সেই সঙ্গে পাল্টেছে বিশ্বাসের সংজ্ঞাও। এখন কেউ কথা দিলে প্রথমেই মনে হয় সত্যিই রাখবে তো। সামাজিক পারিবারিক এমনকি নিজস্ব অনুভবের ক্ষেত্রেও এখন তৈরি হয়েছে বিশাল ফাঁক যেখানে অনিশ্চয়তা আর সন্দেহ রাজত্ব করে
কখনো কি আপনি এমন অবস্থায় পড়েছেন যেখানে নিজেই নিজের সিদ্ধান্তে সন্দেহ করছেন। নিজের অনুভব নিজের ইচ্ছা নিজের কথা সবই আপনাকে দ্বিধায় ফেলছে। এটা নিছক মানসিক দ্বন্দ্ব নয় এটা হলো এক প্রকার আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলা। আর এর পেছনের কারণগুলো খুঁজলে আমরা যা পাই তা হলো চারপাশের প্রতারণা বারবার বিশ্বাসভঙ্গ নিজের ভুল করে প্রতারিত হওয়া সমাজে সত্যবাদীর উপহাস হওয়া এসব অভিজ্ঞতা একদিন এমন জায়গায় নিয়ে যায় যেখানে মনে হয় আমি তো নিজেকেই চিনতে পারছি না এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে মানুষ বুঝতে পারে আজকাল নিজের ছায়াটাও নির্ভরযোগ্য নয়
একজন মানুষ যখন তার প্রিয়জনের প্রতি বিশ্বাস হারায় তখন তার হৃদয়ের একাংশ যেন মরে যায়। প্রেম বন্ধুত্ব আত্মীয়তা যে সম্পর্কই হোক না কেন সেখানে বিশ্বাস না থাকলে তা কেবলই একটি মেকি সংযোগ। সুমি ভেবেছিল তার প্রেমিক তাকে সারাজীবন ভালোবাসবে। কিন্তু যখন সে জানল তার প্রেমিক অন্য কাউকে নিয়ে একই স্বপ্ন আঁকছে তখন তার ভরসার ভেতরটা চৌচির হয়ে গেল। সে এখন কারো দিকে তাকিয়ে কথা বলার আগেও ভাবে এটাও কি একদিন ফাঁকি দেবে। এমন বিশ্বাসভঙ্গ একজন মানুষকে ভেতর থেকে শেষ করে দেয়। এক সময় যে মুখে হাসি ছিল সে মুখে জমে যায় নিরবতা চোখে পড়ে অবিশ্বাস
আজকাল এমন সময় এসেছে যেখানে বন্ধুরা সবচেয়ে বড় বিশ্বাসঘাতক হয়ে উঠতে পারে। আপনার মনের কথা দুর্বলতা চাওয়া পাওয়া সবকিছু যদি কেউ জানে তবে সেও হতে পারে সবচেয়ে বিপজ্জনক যদি তার মন না থাকে সৎ। অনেকেই এমন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেছে যেখানে তারা বন্ধুকে বিশ্বাস করে সর্বনাশ ডেকে এনেছে। বন্ধুত্বে সন্দেহ ঢুকলে সেই সম্পর্ক আর হৃদয় ছোঁয় না তা হয়ে যায় কেবল স্মৃতির ধ্বংসাবশেষ। বিশ্বাসহীনতা আজ এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে নিজের রক্তের সম্পর্কেও মানুষ দ্বিধা করে। জমি জমার লোভ হিংসা দাম্পত্য কলহ কিংবা সম্পত্তির দ্বন্দ্ব এসব যেন মানুষের চোখ থেকে আস্থার আলো কেড়ে নিয়েছে। অনেকে বলেন আবার ভাইই যদি দালাল হয় তাহলে তো বাইরের মানুষকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। এই কথার মধ্যে লুকিয়ে আছে গভীর ক্ষত যে ক্ষত থেকে জন্ম নেয় নতুন এক সিদ্ধান্ত কাউকে নয় শুধু নিজেকে বিশ্বাস করো। কিন্তু আজকের দিনে এসে নিজেকেও আর বিশ্বাস করা যাচ্ছে না
এই বিশ্বাসহীনতা সমাজের ভিতটাকেই নড়িয়ে দিয়েছে। মানুষ এখন মুখে কিছু মনে কিছু। স্বার্থের জন্য সম্পর্ক গড়ে প্রয়োজন ফুরালেই ভেঙে দেয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভালোবাসা ভ্রাতৃত্ব বন্ধুত্ব নিয়ে বড় বড় কথা বলা মানুষগুলোই বাস্তবে সবচেয়ে ঠাণ্ডা হিসেবি আর মুখোশধারী। এই বাস্তবতা দেখে মনে হয় আমার ছায়াও কি তাহলে আমাকে ফাঁকি দিচ্ছে। ছায়া এখানে প্রতীকী। ছায়া কখনো মানুষকে ছেড়ে যায় না। সব জায়গায় সব পরিবেশে দিনের আলোয় সে পাশে থাকে। কিন্তু যদি এমন সময় আসে যেখানে নিজের চিন্তাকেই সন্দেহ হয় নিজের চোখে যা দেখি তাও প্রশ্নবিদ্ধ হয় তখন সেই ছায়াও হয়ে যায় দুর্বল অস্পষ্ট। নিজের ছায়াকে অবিশ্বাস করার মানে নিজেকেই আর চিনতে পারছি না নিজেকে নিয়ে কোনো ভরসা নেই এ এক ভয়ানক মানসিক অবস্থা যার পরিণাম হতে পারে আত্মবিরোধ একাকিত্ব হতাশা এমনকি মানসিক অবসাদ
না বিশ্বাস শেষ হয়ে যায়নি। এখনও কিছু মানুষ আছে যারা হৃদয় দিয়ে ভালোবাসে নিঃস্বার্থভাবে পাশে থাকে। তবে তাদের খুঁজে পেতে হলে নিজের চোখকে তীক্ষ্ণ করতে হবে হৃদয়কে সতর্ক রাখতে হবে। নিজের ছায়াও যদি বিশ্বাসযোগ্য না হয় এই কথা যেন না বলতে হয় ভবিষ্যতের প্রজন্মকে। তার জন্য আমাদেরই শুরু করতে হবে এখন সত্যের পাশে দাঁড়িয়ে বিশ্বাসের ভিত্তি আবার গড়ে তুলে
আমার পরিচিতি
আমার পরিচিতি
আমি মাহফুজা আক্তার নীলা। আমার ইউজার নাম @mahfuzanila। আমি একজন বাংলাদেশী ইউজার। আমি স্টিমিট প্লাটফর্মে যোগদান করি ২০২২ সালের মার্চ মাসে। আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিতে যোগদান করে আমি অনেক বিষয় শিখেছি। আগামীতে আরও ভালো কিছু শেখার ইচ্ছে আছে। আমি পছন্দ করি ভ্রমন করতে, ছবি আঁকতে, বিভিন্ন ধরনের মজার মাজার গল্পের বই পড়তে, ফটোগ্রাফি করতে, ডাই প্রজেক্ট বানাতে ও আর্ট করতে। এছাড়াও আমি বেশী পছন্দ করি মজার রেসিপি করতে। মন খারাপ থাকলে গান শুননি। তবে সব কিছুর পাশাপাশি আমি ঘুমাতে কিন্তু একটু বেশীই পছন্দ করি।
