শৈশবের কাঁচা আম ভর্তা খাওয়ার অনুভূতি

in আমার বাংলা ব্লগ7 days ago

আসসালামু আলাইকুম

কেমন আছেন আমার প্রিয় সহযাত্রী ভাই বোনেরা? আশা করি সবাই আল্লাহর রহমতে অনেক ভালো আছেন। আমিও আপনাদের সবার দোয়ায় আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি। তবে মনমানসিকতা ভালো নেই। আর মনমানসিকতা যদি ভালো না থাকে তাহলে শরীর মন অচল হয়ে পড়ে। তারপরেও আপনাদের সবার মাঝে আমার আরও একটি পোস্ট নিয়ে হাজির হলাম। আজ আমি একটি শৈশবের রোজার কিছু কথা নিয়ে আপনাদের সবার মাঝে হাজির হয়েছি।আশা করি আপনাদের সবার কাছে অনেক ভালো লাগবে। তাহলে চলুন আজ আমার শৈশবের রোজার কিছু স্মৃতি।

আসলে শৈশবকাল আমাদের সবার জীবনে একটি স্মৃতিমধুর। আমি মনে করি শৈশবের স্মৃতি আমাদের সবার জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যা আমাদের প্রতিটিদিন প্রতিটি মুহূর্ত ফিরিয়ে নিয়ে যায় সেই শৈশবের দিনগুলোর মাঝে। শৈশবে আমাদের ছিল না কোন ভাবনা, ছিলনা কোন দুঃশ্চিন্তা বা কোন দায়িত্ববোধ। তখন আমাদের প্রতিটি দিন ও মুহূর্ত ছিল একদম সাদাসিদে ও আনন্দ পূর্ণ। এখনো সেই দিনগুলোর প্রতিটা সময় ও মুহূর্তগুলো মনে পড়লে মনে হয় যেন সেদিনের সেই দিন গুলোই অনেক সুন্দর ছিল। এখন ভাবী কেন বড় হতে গেলাম। চাইলেও ফিরে যেতে পারবো না সেই শৈশবে ফেলে আসা দিনগুলোতে। তাইতো আজও চলে গিয়েছিলাম শৈশবের কিছু মধুর স্মৃতিতে। আর সেই মধুর স্মৃতির কিছু অংশ আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে এলাম।

WhatsApp Image 2025-04-09 at 00.11.53_b9f6fe27.jpg

শৈশব মানেই যেন এক টুকরো স্বপ্ন। কৌতূহল, আনন্দ, দুষ্টুমি আর সাদামাটা সুখের এক বিশাল ভান্ডার। আর সেই শৈশবের সঙ্গে যেসব স্মৃতি ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো কাঁচা আম ভর্তা খাওয়ার অভিজ্ঞতা। গ্রীষ্মের দুপুরে স্কুল ছুটির পরে কিংবা দুপুরবেলা বন্ধুদের সঙ্গে কাঁচা আম ভর্তা খাওয়ার যে আনন্দ, তা সত্যিই ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।

আমাদের কোয়াটারে বেশ বড় বড় আম গাছ ছিল। গ্রীষ্মকাল এলেই গাছে ঝুলতে শুরু করত কাঁচা আম। আর আমাদের চোখে-মুখে তখন শুধুই আম-আম খেলা। পাকা আমের মিষ্টি স্বাদ যেমন ভালো লাগত, তেমনি কাঁচা আমের টক স্বাদ যেন এক অন্যরকম আকর্ষণ তৈরি করত। বন্ধুদের সঙ্গে দলবেঁধে গাছে ঢিল ছুড়ে আম পাড়া, গাছের নিচে দাঁড়িয়ে হাতে ঝুড়ি বা ওড়না মেলে ধরে আম ধরা—সবই ছিল একেকটা রোমাঞ্চকর অভিযান।
অবশেষে সব বান্ধবীরা মিলে কোন এক নীরব জায়গায় বসে শুরু করে দিতাম তৈরি করা কাঁচা আমের ভর্তা। সেই ভর্তার উপাদান ছিল একেবারেই সহজ—কাঁচা আম, লবণ, শুকনা মরিচ, কখনো একটু সরিষার তেল। কখনো কখনো পেঁয়াজ কুচিও যোগ হত। সবকিছু হাতে পিষে তৈরি হত সেই অসাধারণ ভর্তা। তবে সব রকমের মসলা গুলো বাসা হতে চুরি করা আনা হতো। আর সেই টক-ঝাল-মসলা মাখানো ভর্তার গন্ধেই মুখে পানি চলে আসত।

ভর্তা খাওয়ার সময় যে আনন্দটা পাওয়া যেত, তা কোনো রকমের বিলাসবহুল খাবার দিয়েও হয়তো হতো না। সেদিনের সেই ভর্তার স্বাদ এখনো জিভে লেগে আছে। সেই সময়টাতে মুখ টক করে আসলেও, হাসি থামত না। অনেক সময় টক খেয়ে চোখে পানি এসে যেত, কিন্তু তবুও খাওয়া থামত না। বন্ধুদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে খাওয়া, কার ভর্তা বেশি ঝাল, কে কতো টক খেতে পারে—এসব ছিল যেন একেকটা প্রতিযোগিতা।

শুধু স্বাদ নয়, এই কাঁচা আম ভর্তার সঙ্গে জড়িয়ে ছিল একধরনের আবেগ, ভালোবাসা। আজ বড় হয়ে নানা রকম খাবার খাই, রেস্টুরেন্টে গিয়ে বাহারি নামের পদ চেখে দেখি, কিন্তু শৈশবের সেই কাঁচা আম ভর্তার স্বাদ আর কোনো কিছুতেই পাই না। কাঁচা আম এখনো মেলে, ভর্তা এখনো হয়, কিন্তু সেই অনুভূতি, সেই পরিবেশ, সেই শৈশব আর ফিরে আসে না। মাঝে মাঝে চোখ বন্ধ করে স্মৃতি হাতড়াই—কাঁচা আমের ঝাল-টক স্বাদের সঙ্গে মিশে আসে বন্ধুদের কোলাহল।

শৈশবে কাঁচা আম ভর্তা খাওয়ার অভিজ্ঞতা কেবল খাদ্যগ্রহণ ছিল না, বরং তা ছিল এক সম্পূর্ণ অনুভব—স্বাদ, গন্ধ, স্পর্শ, স্মৃতি আর আবেগে পূর্ণ একটি পরিপূর্ণ মুহূর্ত। আজও যখন গ্রীষ্মে আমের মৌসুম আসে, মনটা হঠাৎ করে ফিরে যায় সেই ছেলেবেলার সময়ে। যেখানে বসে কাঁচা আমের ভর্তা খেতে খেতে আমরা বড় হওয়ার গল্পগুলো তৈরি করতাম। শৈশবের সেই সরল সুখগুলো আজও মনে গভীরভাবে দাগ কেটে আছে। এক বাটি কাঁচা আম ভর্তা, এক মুঠো শৈশব—এটাই হয়তো জীবনের সবচেয়ে টক-মিষ্টি স্মৃতি।

কেমন লেগেছে আপনাদের সবার কাছে আজ আমার শৈশবে ফেলে আসা সুন্দর কিছু স্মৃতি নিয়ে পোস্টটি। আশা করছি আপনাদের সবার কাছে আমার পোস্টটি পড়েও অানেক ভালো লেগেছে সবাই ভালো ও সুস্থ থাকবেন সে পর্যন্ত আগামীতে আবার নতুন ব্লগ নিয়ে আপনাদের মাঝে চলে আসবো ইনশাল্লাহ আল্লাহাফেজ।

❤️❤️ধন্যবাদ সকলকে❤️❤️

image.png