"গাছ লাগান, পরিবেশ বাঁচান"

আমি @arpita007 বাংলাদেশ থেকে। কেমন আছেন সকল বাংলাদেশী এবং ইন্ডিয়ান বন্ধু -বান্ধবীগণ? আশা করি সবাই ভালো আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।আজকে ফিরে এলাম আপনাদের মাঝে আবার নতুন একটি ব্লগ নিয়ে ।

সোর্স

প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গাছের গুরুত্ব অপরিসীম। গাছ আমাদের জীবনযাপনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। মানুষ, প্রাণী ও প্রকৃতির মাঝে যে চিরন্তন সম্পর্ক, তার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো গাছ। বর্তমান বিশ্বে পরিবেশ দূষণ, বৈশ্বিক উষ্ণতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিপর্যয়কর প্রভাব ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে "গাছ লাগান, পরিবেশ বাঁচান" শ্লোগানটি শুধু একটি বাক্য নয়; এটি একটি জরুরি কর্মসূচি, যা পরিবেশ রক্ষার অন্যতম কার্যকর উপায়।

গাছ আমাদের বাতাসে অক্সিজেন সরবরাহ করে। আমরা যা নিঃশ্বাস নিই, তা মূলত গাছের উপহার। একদিকে গাছ কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে, অন্যদিকে অক্সিজেন নিঃসরণ করে। ফলে বায়ুদূষণ রোধে গাছ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও, গাছ ধূলিকণা, বিষাক্ত গ্যাস ও অন্যান্য ক্ষতিকর পদার্থ শোষণ করে বায়ুকে পরিশুদ্ধ করে। গাছ না থাকলে পৃথিবীর পরিবেশ বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠত।

বৃষ্টিপাতের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণেও গাছের অবদান রয়েছে। গাছ জলীয় বাষ্প সৃষ্টি করে, যা মেঘ হয়ে পরে বৃষ্টি নামাতে সাহায্য করে। বৃক্ষরাজি মাটির ক্ষয় রোধ করে এবং ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ধরে রাখতে সাহায্য করে। ফলে খরা, বন্যা ও ভূমিধসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। বিশেষ করে পাহাড়ি ও উপকূলীয় অঞ্চলে গাছ ভূমিধস ও ঘূর্ণিঝড়ের ধ্বংসাত্মক প্রভাব থেকে রক্ষা করে।

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গাছ একটি শক্তিশালী অস্ত্র। শিল্পকারখানা, যানবাহন ও অন্যান্য মানবসৃষ্ট কার্যকলাপের ফলে যে পরিমাণ গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত হচ্ছে, তা বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি করছে। গাছ এসব গ্যাস শোষণ করে জলবায়ুর ভারসাম্য রক্ষা করতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে, একটি পরিপূর্ণ গাছ বছরে গড়ে ২০ কেজি কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করতে পারে।

পরিবেশ ছাড়াও গাছ অর্থনৈতিক, সামাজিক ও স্বাস্থ্যগত দিক থেকেও উপকারী। গাছ থেকে আমরা কাঠ, ফল, ঔষধি উপাদান, ছায়া ও সৌন্দর্য পাই। গ্রামের মানুষের জন্য গাছ একটি আয়ের উৎস। শহরের তাপমাত্রা কমাতে ও মানসিক প্রশান্তি দিতে গাছের বিকল্প নেই। গাছপালা ঘেরা পরিবেশে বসবাস করা মানুষের মধ্যে মানসিক চাপ, উদ্বেগ এবং ক্লান্তি অনেক কম দেখা যায়।

তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, মানুষ নানা কারণে বনাঞ্চল ধ্বংস করছে। নির্বিচারে গাছ কাটা, নগরায়ণ, শিল্পায়ন ও কৃষি জমি সম্প্রসারণের ফলে প্রকৃতি তার ভারসাম্য হারাচ্ছে। জলবায়ুর এই অস্বাভাবিক পরিবর্তন এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের অন্যতম কারণ হলো বৃক্ষ নিধন। তাই পরিবেশ রক্ষার প্রথম শর্ত হলো—গাছ রক্ষা করা এবং নতুন গাছ লাগানো।

আমাদের উচিত প্রতিটি বিদ্যালয়, কলেজ, অফিস, বাসা ও খোলা স্থানে গাছ লাগানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা। ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে গাছের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। সরকার ও বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা যদি সম্মিলিতভাবে বৃক্ষরোপণ কার্যক্রম পরিচালনা করে, তবে অচিরেই আমরা একটি সবুজ ও বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ে তুলতে পারব।

"গাছ লাগান, পরিবেশ বাঁচান"—এই শ্লোগান শুধু মুখে বললেই হবে না, এর বাস্তবায়ন করতে হবে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে। পরিবেশ রক্ষায় গাছ লাগানো একটি সহজ, সাশ্রয়ী এবং কার্যকর উপায়। তাই আসুন, আমরা সবাই মিলে প্রতিজ্ঞা করি—প্রতি বছর অন্তত একটি করে গাছ লাগাবো এবং অন্যকেও গাছ লাগাতে উৎসাহিত করবো। কারণ, সবুজ পৃথিবীই আমাদের টিকে থাকার একমাত্র ভরসা।

আমি অর্পিতা নওশিন তিশা। আমি বর্তমানে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়াশোনা করছি। আমার শখের মধ্যে রান্না করতে ভালোবাসি এবং গল্পের বই পড়তেও ভালোবাসি । তাছাড়া অবসর সময়ে ছবি আঁকতে,গান শুনতে এবং বিভিন্ন ধরনের কমেডি, থ্রিলার, হরর মুভি দেখতে পছন্দ করি। এছাড়াও হিন্দি ডাবিং করা নাটকগুলো দেখতে পছন্দ করি।