"মন খারাপের সন্ধ্যায় চন্দ্রিমা উদ্যানে"

in আমার বাংলা ব্লগ13 days ago

আসসালামু-আলাইকুম/আদাব।

হ্যালো বন্ধুরা, আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি আপনারা সবাই অনেক ভালো আছেন।হ্যাঁ, আমিও অনেক ভালো আছি।

জীবন কখনো কখনো এমন এক সময় নিয়ে আসে, যখন চারপাশের কোলাহল থেকে কিছু সময়ের জন্য দূরে যেতে ইচ্ছে করে। মনের মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা, ক্লান্তি কিংবা অজানা ব্যথা জমে থাকে। তখন সেই ক্লান্তি কিংবা ভারমুক্ত হতে একটা নিরিবিলি, শান্ত জায়গার খুব দরকার পড়ে। আমার জন্য তেমনই এক আশ্রয়ের নাম- চন্দ্রিমা উদ্যান।

20250629_193300.jpg

আমার বাসা থেকে এই উদ্যানের দূরত্ব খুব বেশি নয়। হেঁটে গেলে মাত্র ১০-১৫ মিনিট সময় লাগে। দিনের কোনো এক সময় যখন মনে হয় চারপাশটা যেন ভারী হয়ে উঠছে, তখন আমি আমার প্রিয় বন্ধুটিকে ডেকে নিয়ে নিই এই চন্দ্রিমা উদ্যানে। বেশিরভাগ সময়ই সন্ধ্যার পরে যাই। কারণ তখন মানুষের ভিড় কমে আসে, আশপাশটা কিছুটা নিরিবিলি হয় আর বাতাসও বেশ ঠান্ডা থাকে। দিনের ব্যস্ততা শেষে সন্ধ্যার এই শান্ত পরিবেশটা আমার ভীষণ ভালো লাগে।চন্দ্রিমা উদ্যান ঢাকার প্রাণকেন্দ্রের এমন একটা জায়গা, যেখানে নগরের কোলাহলের মধ্যেও প্রকৃতির ছোঁয়া পাওয়া যায়। খোলা জায়গা, সবুজ গাছগাছালি, মাঝখানে বিশাল লেক আর তার ওপর ঝুলন্ত সেতু সব মিলিয়ে দারুণ এক পরিবেশ। আমি যতবারই যাই, প্রতিবার নতুন করে সেই পরিবেশের প্রেমে পড়ে যাই। কখনো গাছের ছায়ায় বসে, কখনো লেকের পাড়ে, আবার কখনো সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে সময় কাটাই। আমার জীবনের অনেক আবেগঘন মুহূর্ত এই উদ্যানে জড়িয়ে আছে।

20250629_193412.jpg

20250629_193256.jpg

বিশেষ করে ঝুলন্ত ব্রিজটা আমার খুব প্রিয়। সেই সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে রাতে যখন লেকের পানিতে আলো-ছায়ার খেলাটা দেখি, তখন যেন সমস্ত ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। এই ব্রিজের ওপর আমার অনেক স্মৃতি আছে, যেগুলো কারো সাথে নয়, শুধু নিজের সাথে। কখনো একা, কখনো প্রিয় বন্ধুকে নিয়ে, কখনো বা ভেতরে জমে থাকা কথা বলতে না পারার যন্ত্রণা নিয়ে এখানে এসেছি। এই সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে নিজের মনের কথা নিজের সাথে বলেছি। এমন এক জায়গা, যেখানে থাকলেও মনে হয় এই শহরে এখনো কিছু জায়গা আছে, যেখানে একটু প্রশান্তি পাওয়া যায়।এখানে বসে যখন সংসদ ভবনটা দেখি, মনে পড়ে যায় দেশের নানা ঘটনা, সময়ের বিবর্তন, জীবনের গল্প। ছোটবেলায় যেসব স্বপ্ন দেখতাম, বড় হয়ে সেসবের কতটুকুই বা পূরণ হলো? কিছু স্মৃতি মনে পড়লে হাসি আসে, কিছু মনে পড়লে মনটা ভারী হয়ে যায়। তারপর আবার চারপাশের বাতাস, গাছের পাতার নড়াচড়া আর জোনাকির আলো সব ভুলিয়ে দেয়।

20250629_201452.jpg

20250629_193313.jpg

অনেকেই আসে এই উদ্যানে। কেউ প্রেমিক-প্রেমিকা, কেউ পরিবার নিয়ে, কেউ বা বন্ধুবান্ধব। তবে আমি আসি নিজেকে সময় দিতে, নিজের সাথে সময় কাটাতে। চারপাশের কোলাহল থেকে পালিয়ে একটা একটু নিরবতা খুঁজে নিতে। দিনের শেষে এই নিরবতা আমাকে নতুনভাবে বাঁচতে শেখায়। মনে হয় আবারও নতুন করে সব শুরু করা যায়।একদিন এক বন্ধুকে বলছিলাম, “জীবনে যদি কোনোদিন খুব ক্লান্ত লাগে, কিছু ভালো না লাগে তাহলে একবার সন্ধ্যার পরে চন্দ্রিমা উদ্যানে চলে আসিস। তুই দেখবি, তোর মনটা এমনিতেই ভালো হয়ে যাবে।” সত্যি কথা বলতে, এই জায়গাটা আমার কাছে শুধু একটা পার্ক নয়, এক ধরনের মানসিক আশ্রয়। এমন এক নিরবতা, যা শব্দের মধ্যেও শব্দহীন।

IMG-20250629-WA0005.jpg

20250629_201458.jpg

আজ হঠাৎ করেই ইচ্ছে হলো, এই অনুভূতির কথাগুলো সবার সাথে ভাগ করে নিই। হয়তো আমার মতো অনেকেই আছেন, যারা এমন একটা নিরিবিলি জায়গার খোঁজ করেন। শহরের ভিড় আর ব্যস্ততার মাঝে একটা নির্জন বিকেল কিংবা সন্ধ্যা উপহার দিতে পারে চন্দ্রিমা উদ্যান। নিজের সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য, জীবনের নানা চাপ থেকে মুক্তির জন্য, কিংবা নিছক কিছুটা প্রশান্তির জন্য এই উদ্যানই যথেষ্ট।

সত্যি বলতে, এই উদ্যানে আমার যত আসা, যত স্মৃতি, তার বেশিরভাগই নিজের সাথে নিজের। কোনো ছবির অ্যালবামে নেই, কারো ফোনের গ্যালারিতে নেই। আছে শুধু আমার মনের ভেতর। হয়তো একদিন এসব স্মৃতি গল্প হবে, কিংবা গল্পের পাতায় হারিয়ে যাবে। তবে এই জায়গাটা থেকে পাওয়া প্রশান্তি, সেই অনুভূতিগুলো বেঁচে থাকবে আজীবন।


প্রত্যেকটা ছবি তোলার লোকেশন এবং ডিভাইসের নামঃ

Location
Device:Samsung A33 (5G)

আজ এখানেই শেষ করছি। অন্য কোন একদিন ভিন্ন ধরনের কনটেন্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হব। ততক্ষন পর্যন্ত আপনারা সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।

standard_Discord_Zip.gif

ফোনের বিবরণ

মোবাইলSamsung A33 (5G)
ধরণ"মন খারাপের সন্ধ্যায় চন্দ্রিমা উদ্যানে"
ক্যমেরা মডেলA33 (48+8+5+2)
ক্যাপচার@mohamad786
অবস্থানসিরাজগঞ্জ- বাংলাদেশ

আমার পরিচয়

1000024149.png

আমার নাম মোঃ ফয়সাল আহমেদ। আমি ঘোরাফেরা, লেখালেখি এবং ফটোগ্রাফি করতে ভালোবাসি। ভ্রমণের মাধ্যমে নতুন জায়গা ও সংস্কৃতি আবিষ্কার করতে আমার আনন্দ লাগে। বিভিন্ন মুহূর্ত ও দৃশ্যকে ক্যামেরার লেন্সে বন্দি করা আমার শখ। লেখালেখির মাধ্যমে আমি আমার ভাবনা, অভিজ্ঞতা ও অনুভূতিগুলো শেয়ার করতে ভালোবাসি। প্রকৃতির সৌন্দর্য, মানুষের জীবনধারা এবং ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আমার লেখার মূল অনুপ্রেরণা। আমি প্রতিটি মুহূর্তকে উপভোগ করার চেষ্টা করি এবং সেগুলোকে স্মৃতিতে ধরে রাখি। এসব অভিজ্ঞতা আমাকে নতুন করে জীবনকে দেখার অনুপ্রেরণা দেয়।

1000024154.png

1000024151.gif

Posted using SteemX

Sort:  
 13 days ago 

X-Promotion

Posted using SteemX

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

🎉 Congratulations!

Your post has been manually upvoted by the SteemX Team! 🚀

SteemX is a modern, user-friendly and powerful platform built for the Steem ecosystem.

🔗 Visit us: www.steemx.org

✅ Support our work — Vote for our witness: bountyking5

banner.jpg