“১৫ বছর পর ফিরে দেখা সেই বিকেল”
১৫ বছর পর পরিবারের সাথে কাটানো সুন্দর একটি মুহূর্ত আজকে আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে আসলাম।আজকের ব্লগটি আমার কাছে খুবই স্পেশাল।কথা না বাড়িয়ে সরাসরি আজকের ব্লগটি শুরু করা যাক...
ছোটবেলা থেকেই আমরা সিরাজগঞ্জ শহরে থাকি। আমি, আমার মা এবং আমার ছোট বোন। তবে আমার শৈশবের শুরুটা ছিল গ্রামের আলো-হাওয়ায়। ক্লাস ওয়ান পর্যন্ত গ্রামের স্কুলেই পড়াশোনা করেছি। তারপর, পড়াশোনার আরও ভালো পরিবেশ আর সুযোগ সুবিধার আশায় বাবা-মা আমাকে আর আমার ছোট বোনকে শহরে নিয়ে আসেন।
সিরাজগঞ্জ শহরে এসে আমরা একই স্কুলে ভর্তি হই। আমি ভর্তি হই ক্লাস টু-তে আর আমার বোন প্লে গ্রুপে। শহরের এক ভাড়া বাসায় আমাদের ছোট্ট পরিবার তখন ছিল চারজনের আমি, মা, ছোট বোন, আর আমাদের ছোট মামা। বাবা তখন ঢাকায় চাকরি করতেন, তাই সবসময় আমাদের সাথে থাকতেন না। প্রতি মাসে দুই-একবার বাবার বাসায় ফেরা ছিল আমাদের অপেক্ষার প্রহর গোনা আনন্দ।
সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়লে এখনো মনটা কেমন করে ওঠে। আগে বাবা বাসায় ফিরলে, আমরা সবাই মিলে বের হতাম একটু ঘুরতে। বিশেষ করে যমুনা নদীর পাড় ছিল আমাদের পছন্দের জায়গা। আমি স্পষ্ট মনে করতে পারি, সর্বশেষ আমরা বাবা-মা আর ছোট বোন একসাথে পহেলা বৈশাখে, ২০১২ সালে, গিয়েছিলাম সেই যমুনার পাড়ে। চারজনের একসাথে সে আনন্দভ্রমণ আজো আমার মনের কোনো এক কোণে উজ্জ্বল হয়ে আছে।এরপর অবশ্য একবার আমরা কক্সবাজারেও গিয়েছিলাম পরিবারের চার সদস্য মিলে। কিন্তু সেই যাত্রার পর আর কখনো আমরা একসাথে কোথাও ঘুরতে যাইনি। সময়ের চাকা ঘুরেছে, জীবন বদলেছে। এখন আমি প্রায় সময় ঢাকায় থাকি, তবে সুযোগ পেলেই সিরাজগঞ্জে ফিরি। বাবা এখন থাকেন গাজীপুরে। কাজের চাপে, সময়ের অভাবে, আর কখনো হয়নি এমন একটি বিকেল।
এবার ঈদে বাবার ছুটি পড়েছিল একটু বেশি। হঠাৎ করেই গতকাল দুপুরবেলা আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম আবার একবার ফিরে যাব সেই পুরনো দিনে, সেই যমুনার পাড়ে। পরিকল্পনাটা ছিল একেবারেই হঠাৎ। আমি, মা, ছোট বোন আর বাবা; আমাদের সঙ্গে এবারও ছিলেন আমার সেই ছোট মামা,এখন মামা আর একা নেই মামি এবং আমার ছোট মামাতো ভাইও আমাদের সাথে ছিল।যমুনার পাড়ের সেই জায়গাটা যেন অনেক কিছুর সাক্ষী। পনেরো বছর আগের যে বিকেলটা সেখানে কাটিয়েছিলাম, তার ছায়া যেন মিশে আছে ওই বাতাসে, ওই পানির ঢেউয়ে, ওই সূর্যাস্তে। এবার আমরা সেখানে গিয়েছিলাম আবারও একসাথে পুরোনো চেনা মুখগুলো নিয়ে, যদিও পরিবারে এসেছে নতুন সদস্য।
পাহাড় কিংবা সমুদ্র নয়, এই নদীপাড়ের আলাদা একটা টান আছে। কাল বিকেলের সূর্য যখন ধীরে ধীরে পশ্চিমে হেলে পড়ছিল, আমরা তখন গল্পে মেতে ছিলাম।১৫ বছর আগের স্মৃতিগুলো স্মরণ করছিলাম। হালকা বাতাস বইছিল, চারপাশে ছিল মানুষের কোলাহল, আর আমরা ছিলাম আমাদের ছোট্ট দলে হাসিমুখে, নির্ভার মনে।আমি মাঝে মাঝে চারপাশে তাকাচ্ছিলাম। বাবা-মা’র হাসিমুখ দেখতে দেখতে যেন মনে হচ্ছিল, এইতো আমরা সেই পুরোনো দিনেই ফিরে গেছি। আমার ছোট বোন, যে এখন অনেক বড় হয়েছে, হাসতে হাসতে মামাতো ভাইয়ের পেছনে ছুটছে। মা শান্তভাবে নদীর দিকে তাকিয়ে ছিলেন, আর বাবা চুপচাপ আমাদের সবার হাসিখুশির দিকে তাকিয়ে ছিলেন।
সেই মুহূর্তগুলোর মধ্যে ছিল এক অপার্থিব প্রশান্তি। যেন জীবনের সমস্ত ক্লান্তি, সমস্ত দুশ্চিন্তা, সমস্ত জটিলতা ছুঁয়ে যেতে পারেনি আমাদের। শুধু এই কিছু ঘণ্টা আমাদের একান্ত সময়, আমাদের একসাথে থাকা, আমাদের সোনালি স্মৃতি।আমাদের ছোট মামা যেভাবে সবাইকে নিয়ে এলেন, হাসিমুখে সবার ছবি তুললেন, আর কেমন করে মামাতো ভাই আমাদের সবার আনন্দের উৎস হয়ে উঠল, সব মিলিয়ে বিকেলটা যেন হয়ে উঠেছিল এক অমূল্য রত্ন।অনেক সময় কিছু মুহূর্ত শব্দে ব্যাখ্যা করা যায় না। তবু এই লেখার মাধ্যমে আমি সেই অনুভূতির একটু ছায়া আঁকতে চেয়েছি। জীবনের অনেক ব্যস্ততা, অনেক দূরত্ব, অনেক অসম্পূর্ণতার মাঝেও এমন একটি বিকেল যে আমাদের মাঝে এখনো সম্ভব, তা যেন এই ছোট্ট এই ভ্রমণই প্রমাণ করে দিল।
আমার কাছে এটা কেবল একটি পারিবারিক ঘোরাঘুরি নয়, বরং একটি উপলব্ধি আমরা যতই আলাদা থাকি, যতই সময় চলে যাক, পরিবারের বন্ধন কখনোই আলগা হয় না। আমরা আবারও একসাথে হতে পারি, এক বিকেলে প্রাণ খুলে হাসতে পারি, আর সেটা হতে পারে সেই পুরনো নদীপাড়ে, যেখানে একদিন আমরা শৈশব রেখে এসেছিলাম।
এই বিকেলটা আমাদের জীবনে এক সোনালি ছোঁয়া হয়ে থাকবে। জীবনের হাজারো টেনশন আর ব্যস্ততার মাঝেও এই বিকেলটা মনে পড়লে একধরনের প্রশান্তি এসে ভর করবে মনে। এটাই হয়তো পরিবারের আসল সৌন্দর্য।বাবা-মা আর ছোট বোনকে নিয়ে সারা জীবন এভাবেই হাসি খুশিতে থাকতে চাই। আপনারা সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন। আজকের লেখায় এখানে শেষ করছি।
প্রত্যেকটা ছবি তোলার লোকেশন এবং ডিভাইসের নামঃ
Device:Samsung A33 (5G)
আজ এখানেই শেষ করছি। অন্য কোন একদিন ভিন্ন ধরনের কনটেন্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হব। ততক্ষন পর্যন্ত আপনারা সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।
ফোনের বিবরণ
মোবাইল | Samsung A33 (5G) |
---|---|
ধরণ | "১৫ বছর পর ফিরে দেখা সেই বিকেল" |
ক্যমেরা মডেল | A33 (48+8+5+2) |
ক্যাপচার | @mohamad786 |
অবস্থান | সিরাজগঞ্জ - বাংলাদেশ |
X-Promotion
Daily Tasks
Comment Link:-
https://x.com/mohamad786FA/status/1909632967149826080?t=5fDYXBH7Zlx_mgRaDOUS9A&s=19
https://x.com/mohamad786FA/status/1909633220418711925?t=pcO_q-NX3mt1YjsvSXGflQ&s=19
https://x.com/mohamad786FA/status/1909633517618704737?t=NUtV4cBUg1ey2CqzVMhpXg&s=19
Ss.