হরযত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আমার ছোট ভাইকে রিসিভ করার অনুভূতি।।
আমাদের মাতৃভাষার একমাত্র কমিউনিটি
হ্যালো বন্ধুরা আপনারা সবাই কেমন আছেন। আশা করি আপনারা সবাই অনেক ভাল আছেন। আজকে আমি আপনাদের সাথে নতুন একটি ব্লগ নিয়ে হাজির হয়েছি। আজকে আপনাদের সাথে আমি ঢাকা হরযত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আমার ছোট ভাইকে রিসিভ করার অনুভূতি শেয়ার করবো।
বন্ধুরা আপনারা আমার ফ্যামিলি মেম্বার সম্পর্কে অনেকে হয়তো জানেন, আবার অনেকে হয়তো জানেন না। আমি আমার পরিচয় পড়বে সবকিছু বিস্তারিত উল্লেখ করেছিলাম। আমরা তিন ভাই দুই বোন। ভাই বোনদের মধ্যে আমি সবার বড়। আমার ছোট একটি বোন আছে, তারপরে দুই ভাই, সবার ছোট এক বোন। আমার ছোট বোনটি বর্তমানে ক্লাস সেভেনে পড়তেছে। আমার ছোট যে ভাইটি আছে ফ্যামিলির কথা চিন্তা করে, উন্নত জীবনের আশায়, ২০১৯ সালের শেষের দিকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবে পাড়ি জমায়। আমার ভাইয়ের মত লাখ লাখ প্রবাসী সৌদি আরবে কর্মরত আছে। মা বাবা ভাই বোন আত্মীয়-স্বজন আপনজন সবাইকে ছেড়ে প্রবাসীরা হাজার হাজার মাইল দূরে বছরের পর বছর অবস্থান করে। তাদের মাথার ঘাম পায়ে ফেলার রেমিটেন্স দিয়ে আজকে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। তারা হলো আমার বাংলাদেশের রেমিটেন্স যোদ্ধা। তারা রেমিটেন্স পাঠালেই আমাদের দেশের রিজার্ভ বাড়তে থাকে। তাদের রেমিটেন্স বন্ধ হয়ে গেলেই আমাদের দেশ অর্থনৈতিকভাবে চাপে পড়ে যায়। সেজন্য আমি সব সময় প্রবাসী ভাইদেরকে সম্মান ও শ্রদ্ধা জানাই। তাদের ত্যাগের বিনিময়ে বাংলাদেশের মানুষ কিছুটা হলেও উন্নত জীবন লাভ করেছে।
যাইহোক মূল কথায় আসতেছি, আমার ছোট ভাই দীর্ঘ প্রায় সাড়ে চার বছরের মত প্রবাসে ছিল। তবে যারা বিদেশে যাই সবার ভাগ্য যে ভালো হয় তা কিন্তু না। কিছু কিছু মানুষের ভাগ্য খুবই ভালো, তারা বিদেশে গিয়ে খুব তাড়াতাড়ি সফলতা অর্জন করতে পারে। আবার কেউ বছরের পর বছর চলে যায় ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে পারে না। আমার ভাইয়ের ডিউটি ছিল নাজরান প্রদেশের একটি বেসরকারি হসপিটালে। আর হসপিটালটি ছিল একেবারে গ্রাম সাইটে। যার ফলে নির্ধারিত ডিউটি করার পরে ওভার টাইম করার তেমন কোনো সুযোগ সুবিধা ছিল না। একেবারে যে খারাপ ছিল তা কিন্তু না, আবার একেবারে ভালোও না। মোটামুটি ভাবেই ছিল। যাইহোক এভাবেই দেখতে দেখতে প্রায় সাড়ে চার বছর অতিক্রম হয়ে গেছে। আমার ছোট ভাইয়ের কোম্পানি তাকে ২৭ শে অক্টোবর থেকে ১৬ই জানুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত দুই মাস ১৯ দিন ছুটি দিয়েছে। সে বাড়িতে আসবে আমাদেরকে আগেই জানিয়েছে। টিকিট কনফার্ম হওয়ার পরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আমরাও তাকে রিসিভ করার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করলাম। বাড়ি থেকে ছোট বোনরা বলেছে তারা গাড়ি নিয়ে আসবে। আমি তো ঢাকায় আছি, আমি যেকোনো সময় যেতে পারবো। আমি আমাদের গ্রামের এক পরিচিত লোকের মাধ্যমে একটি হাইস গাড়ি ভাড়া করলাম। সেই গাড়ির মাধ্যমে বাড়ি থেকে আমার আব্বু আমার দুই বোন এবং আমার ভাগ্নিরা আজকের সকাল বেলা ১১ টার সময় এয়ারপোর্টে এসে পৌঁছেছে।
আমি আমার ওয়াইফ কে নিয়ে সকাল ৯ টার সময় বের হয়ে সাড়ে ১১ টার দিকে এয়ারপোর্টে গিয়ে পৌছালাম। আজকে যাওয়ার সময় তেমন কোন জ্যাম পড়ে নাই। আমার ভাই আগে আমাকে তার টিকেটটি পাঠিয়েছিল। সেই টিকিটের মধ্যে লেখা ছিল, এক নম্বর টার্মিনালে সকাল ১০ঃ৪৫ মিনিটে আসবে। কখন ল্যান্ড করেছে সেটা আমরা জানি না। তবে আমরা বারোটা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে লাগলাম। আমাদের মত আরো হাজার হাজার মানুষ তাদের আত্মীয়-স্বজন আপনজনদের জন্য অপেক্ষা করতেছে। কেউ ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, অনেক বাচ্চা আছে তাদের বাবাদের জন্য অপেক্ষা করছে। স্ত্রীরা তাদের স্বামীর জন্য অপেক্ষা করছে। এভাবে আমাদের মত অনেক ভাই-বোনরা, তাদের প্রবাসী ভাইবোনদের জন্য অপেক্ষা করছে।
অবশেষে ১২:১০ মিনিটে আমার ছোট ভাই তার লাগেজ নিয়ে ধীরে ধীরে বের হয়ে আসলো। তাকে রিসিভ করে কুশল বিনিময় করে, গাড়ির ড্রাইভারকে ফোন দিলাম। গাড়ি আসার পরে সব লাগেজ গাড়িতে তুলে দিলাম। যারা এসেছিল সবাইকে ঠিকঠাকভাবে বসিয়ে গাড়ি ছেড়ে দিতে বললাম। সাথে আমি যায়নি, কারন আমার অফিস থেকে ছুটি দেইনি। সামনের মাসে ১০ তারিখে দু একদিন ছুটি নিয়ে বাড়িতে যাবো ইনশাল্লাহ।
সবাই চলে যাবার পরে আমি এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে রেলওয়ে স্টেশনে গেলাম। সেখানে গিয়ে দাড়ানোর সাথে সাথে ঈশ্বরদী থেকে ছেড়ে আসা একটি কমিউটার ট্রেন দুই নাম্বার লাইনে এসে দাঁড়ালো। ভাবলাম বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর যেতে মাত্র ২০/ ২৫ মিনিট সময় লাগে। ইন্টারসিটি ট্রেনের জন্য না দাঁড়িয়ে লোকাল ট্রেনেই চলে যায়। এই কমিউটার ট্রেনটি বিমানবন্দর স্টেশন ছেড়ে, ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে এসে দুই মিনিট দাঁড়ালো। তারপরে সেখান থেকে তেজগাঁও স্টেশনে এসে প্রায় ৪০ মিনিট দাঁড়িয়ে রইল। আমি জীবনে আর কোনদিন এই ট্রেনে আসবো না। এ ট্রেনে উঠে আমার শিক্ষা হয়ে গেছে। যাইহোক বিমানবন্দর স্টেশন থেকে সাড়ে বারোটার সময় বের হয়ে বাসায় আসতে আসতে আমার তিনটা বেজে গেছে। বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে একটু ঘুম দিলাম। ঘুম থেকে উঠে এখন ব্লগ লিখতে বসলাম। এ হলো আমার আজকের সারাদিনের কর্ম।
তো বন্ধুরা অনেক কথা আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম। কেমন হলো আমার আজকের ব্লগ। আশা করি সবার কাছেই ভালো লাগবে। আবার আগামীকাল আপনাদের সাথে দেখা হবে, ইনশাআল্লাহ। সবাই ভালো থাকবেন। সুস্থ থাকবেন।
সবাইকে ধন্যবাদ। আল্লাহ হাফেজ।।
ফটোগ্রাফির বিবরণ:
ডিভাইস | মোবাইল |
---|---|
মডেল | realme-53 |
নাম | হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ছোট ভাইকে রিসিভ করার অনুভূতি ।। |
স্থান | নারায়নগঞ্জ, ঢাকা, বাংলাদেশ। |
তারিখ | ২৮/১০/২০২৪ |
কমিউনিটি | আমার বাংলা ব্লগ |
ফটোগ্রাফার | @joniprins |
আমি একজন বাংলাদেশের সাধারন নাগরিক। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে আমার বসবাস। সিম্পল আমার স্বপ্ন সিম্পল আমার জীবন। স্টিমিট আমার জীবনের একটি অংশ, আমার বাংলা ব্লগ আমার পরিবার। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া বলতে আমি স্টিমিটকেই চিনি। ভ্রমন করা, ফটেগ্রাফি করা আর বই পড়া আমার স্বপ্ন। আমি বিশ্বাস করি মানুষের জীবনে উত্তান পতন আছেই। সর্বপরি কাজ করতে হবে লেগে থাকতে হবে, তাহলেই একদিন সফলতা আসবে,এটাই আমি বিশ্বাস করি। সবাইকে ধন্যবাদ।।
Bangla Witness কে সাপোর্ট করতে এখানে ক্লিক করুন
এখানে ক্লিক করো ডিসকর্ড চ্যানেলে জয়েন করার জন্য
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP 500 SP 1000 SP 2000 SP 5000 SP
Click Here For Join Heroism Discord Server
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আমিও বেশ কয়েকবার গিয়েছিলাম, তবে শেষবার গিয়েছিলাম আমার মামাকে রিসিভ করার জন্য। আসলেই প্রবাস জীবন যদি নসিব ভালো হয় তাহলে অনেক সুখের হয় আবার যদি কপালে ভালো না থাকে তাহলে বিরম্বনার শেষ থাকে না। যাইহোক আপনার ভাইকে কোম্পানি প্রায় অনেকদিন ওই ছুটি দিয়েছে আশা করি আপনিও নেক্সট মানতে ছুটি নিয়ে বাসায় চলে যাবেন এবং সবাই মিলে আনন্দ উপভোগ করবেন। শুভকামনা রইল আপনাদের জন্য।
আমি যেখানে থাকি সেখান থেকে বেশি দুরে না। তবে আমি তেমন একটা যায় না। আপন ছোট ভাই এসেছে। তাই গেলাম। ধন্যবাদ।
আমাদের সবারই উচিৎ এই সকল রেমিটেন্স যোদ্ধাদের সম্মান জানানো। কিন্তু বিমান বন্দরে তারা বিভিন্ন অনাকাংখিত ঘটনার শিকার হয় যা মোটেও কাম্য নয়। তবে আপনার ভাই ভালভাবে দেশে আসতে পেরেছে জেনে বেশ ভালই লাগলো। এই সময় সে যেন ভালো সময় কাটাতে পারে সেই দিকে খেয়াল রাখা আপনার পরিবারের সকল সদস্যদের উচিৎ। আশা করছি বেশ ভালই সময় পার করবেন আপনার ভাইয়া ছোট ভাই এই ছুটিতে।
বিমানবন্দরে আগের থেকে অনেক হয়রানি কমেছে। আশা করি ভবিষ্যতে আরো কমবে। ধন্যবাদ।
প্রবাস জীবন সত্যি অনেক কষ্টের। পরিবারের সবাইকে ছেড়ে একা একা জীবন যাপন করা অনেক বেশি কঠিন। ভাইয়া আপনার ভাই সৌদি প্রবাসী জেনে ভালো লাগলো। আর উনার ফিরে আসার কথা শুনেও ভালো লাগলো ভাইয়া।
জী আপু প্রবাস জীবন সত্যিই অনেক কঠিন। ধন্যবাদ।
ভাই সত্যি বলছি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ছবি দেখে নস্টালজিক হয়ে গেলাম। তবে শুনুন, আমি জীবনে প্রথম যে এয়ারপোর্টটির ভেতর প্রবেশ করেছি তাহলে এটি। তাই এই বিমানবন্দরের সাথে আমার নস্টালজিয়া জুড়ে আছে। আমি কলকাতা বিমানবন্দরেও এরপরে ঢুকেছি। তাহলে বুঝুন কতটা ভালো লাগা আছে ঢাকার এই বিমানবন্দরটির প্রতি। মাঝরাতে বেরিয়ে প্লেন ধরেছিলাম ঢাকা থেকে কলকাতা আসবার জন্য। সেটাই ছিল জীবনে প্রথম প্লেন যাত্রা। আর সেই মাঝরাতে অচেনা ঢাকা শহরে অনেক অভিজ্ঞতা নিয়ে বিমানবন্দরে পৌঁছেছিলাম। সেইসব কখনো ভোলবার নয়।
এটা শুনে ভালো লাগলো যে, আপনি প্রথম আমাদের দেশের বিমানবন্দর ব্যবহার করেছেন। ভবিষ্যতে আবার আসার আমন্ত্রন রইল। ধন্যবাদ।