ভ্রমন পোস্ট- ঈদের কেনাকাটার জন্য মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট

কেমন আছেন আমার প্রিয় সহযাত্রী ভাই বোনেরা? আশা করি সবাই আল্লাহর রহমতে অনেক ভালো আছেন। আমিও আপনাদের সবার দোয়ায় আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি। আশা করি সবার দিনটা ভাল কেটেছে। আজকে আপনাদের সবার মাঝে আমার আরও একটি পোস্ট নিয়ে হাজির হলাম। প্রতি সপ্তাহের মত আজও আমি একটি ভ্রমণ পোস্ট নিয়ে আপনাদের সবার মাঝে হাজির হয়েছি। আশা করি আপনাদের সবার কাছে অনেক ভালো লাগবে। তাহলে চলুন আজ আমার ভ্রমণ পোস্ট দেখে আসি কেমন হয়েছে।

দেখতে দেখতে রোজা শেষে চলে আসলো পবিত্র ঈদ। আর এই পবিত্র ঈদ ঘিরে চলছে ঘরে ঘরে শপিং করার পালা। আর সবার মত করে আমরাও দৌড় আর ঝাপের মধ্যে আছি শপিং নিয়ে। শুধু কি আর নিজের শপিং। যদিও আমি নিজে কোন কিছু কেনাকাটা করা পছন্দ করি না। মানে আমার ভালো লাগে না ঈদে কোন কিছু কেনাকাটা করতে। তারপরও সবাই যেহেতু খুব জোড় করেছিল তাই সেদিন গিয়েছিলাম মোহাম্মদপু কৃষ্টি মার্কেটে। যেই জ্যাম রাস্তায় তাতে করে দেহে আর কিছু নেই। হাড্ডি মাংস একাকার হয়ে গেছে।

ঢাকার মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের নাম শুনলেই প্রথমে মাথায় আসে সবজি, মাছ কিংবা কাঁচা বাজারের কথা। কিন্তু এই বাজারের একাংশ আছে যেটা ফ্যাশনপ্রেমী নারী ও তরুণীদের জন্য এক স্বপ্নের জায়গা। আমার মনে হয় এই কথাটি অনেকের জানা নেই। আমি আগে কখনো ভাবিনি যে কৃষি মার্কেটেই ফ্যাশনের এত আয়োজন থাকতে পারে। কিন্তু একদিন হঠাৎ করেই কাপড় আর কসমেটিকস কেনার জন্য সেখানে গিয়ে হাজির হই।

সেই দিনটা ছিল এক রোদঝলমলে শুক্রবার। সপ্তাহান্তের একটু ফ্রি সময় কাজে লাগিয়ে ভাবলাম কৃষি মার্কেটে ঢুঁ মারা যাক। বাজারে ঢুকেই বুঝতে পারলাম, এটা শুধু বাজার নয়, যেন এক জীবন্ত মেলা। চারপাশে মানুষের ভিড়, গলির পর গলি সাজানো দোকানে ঝুলছে রঙিন শাড়ি, থ্রি-পিস, বোরকা, কুর্তি, স্কার্ফ সহ আরও কত কি। বাজারে ঢুকেই প্রথম যেই দোকানে গেলাম, সেটি ছিল কাপড়ের। দোকানদারটি আন্তরিক ভঙ্গিতে সামনে তুলে ধরলেন রঙ বেরঙের লন, কটন আর সিল্কের থ্রি-পিস। দাম মোটামুটি ছিল নাগালের মধ্যেই, আর দরদাম করার সুযোগও ছিল স্বাভাবিক। মাত্র ৭৫০ টাকায় দারুণ একটা প্রিন্টেড থ্রি-পিস কিনে ফেললাম।

আশেপাশে দেখি মেয়েরা দল বেঁধে ঘুরছে, কেউ শাড়ি দেখছে, কেউ সেলোয়ার-কামিজ মিলিয়ে নিচ্ছে। দেখে মনে হচ্ছিল, ঈদ বা পূজার কেনাকাটা চলছে। এরপর গেলাম একটু ভিতরের দিকে। যেখানে বেশি কসমেটিক্সের দোকান। এখানে ছিল দেশিবিদেশি ব্র্যান্ডের মেকআপ, স্কিন কেয়ার, পারফিউম, নেইলপলিশ। যা ভাবা যায় সব কিছু! আমি একটা দোকানে গিয়ে দেখি মেবেলিন, লরিয়াল, হিমালয়া, এমনকি কিছু কোরিয়ান স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টও সাজানো আছে। দোকানদার জানালেন, “আপা, আমরা সব অরিজিনাল প্রোডাক্ট রাখি, চাইলে টেস্ট করেও দেখতে পারেন।” আমি একটা ম্যাট লিপস্টিক কিনলাম, সঙ্গে একটা অ্যালোভেরা জেল আর একটা পারফিউম। পুরোটা মিলিয়ে দাম পড়ল এক হাজার টাকার নিচে। দোকানদার নিজে প্যাকেট করে দিলেন সুন্দরভাবে, বললেন, “আপা, আবার আইসেন, কাপড় আর কসমেটিক্স কিনে যখন বের হচ্ছিলাম, চোখে পড়ল ছোট ছোট অ্যাক্সেসরিজের দোকানে।

ঝুমকা, চুড়ি, ব্যাগ, স্যান্ডেল সবই পাওয়া যায়। দরদাম করলে খুব ভালো দামে অনেক কিছুই মিলবে। একটু ঘুরে যখন হাতে একটা কাঁথার কাজ করা ব্যাগ উঠল, তখন আর নিজেকে সামলাতে পারিনি।সেটাও কিনে ফেললাম।তাই যাঁরা এখনও ভাবছেন ‘বাজার মানেই শুধু কাঁচা বাজার’, তাদের বলবো একবার গিয়ে ঘুরে আসুন কৃষি মার্কেটের কাপড় আর কসমেটিক্সের দিকটাও। দেখবেন, এই মার্কেটের সবচেয়ে ভালো দিক হলো। একই জায়গায় ফ্যাশন ও প্রয়োজনীয় সবকিছু একসাথে পাওয়া যায়। পণ্যগুলো যেমন দামে সাশ্রয়ী, তেমনি মানেও সন্তোষজনক।

সবচেয়ে দারুণ ব্যাপারটা হলো এখানকার মানুষজনের ব্যবহার একটা ঘরোয়া উষ্ণতা থাকে কথা বলার ধরনে, যা অনেক বড় মার্কেটে খুঁজে পাওয়া কঠিন। এই কেনাকাটার পুরো অভিজ্ঞতা আমাকে মনে করিয়ে দিয়েছে যে, স্টাইলিশ দেখাতে হলে ব্র্যান্ডেড শপিং মলে যেতেই হবে এমন কোনো নিয়ম নেই। মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটেও আপনি অনায়াসে খুঁজে পেতে পারেন নিজের মতো করে সাজিয়ে তোলার সব উপকরণ, তাও একদম বাজেটের মধ্যে।

আপনাদের ভাল লাগলেই আমার মনের উৎসাহ আরো বৃদ্ধি পাবে। আজ আপনাদের সবার সুস্থতা কামনা করে এখানে বিদায় নিচ্ছি। আবারও যে কোন সময় নতুন কোন জায়গার ভ্রমণ পোস্টের ব্লগ নিয়ে আপনাদের মাঝে চলে আসব। এ পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ।